শিষ্যের জ্ঞান পরিপক্ব হলে, আরোপিত বস্তুর অপনোদন বা বাতিল করার পর (যেমন: আলো এনে সাপের ভ্রম দূর করা এবং দড়িকেই সত্য বলে জানা) অদ্বৈত বেদান্ত দ্বিতীয় ধাপে ঘোষণা করে যে, পূর্বে আরোপিত জগৎ, ঈশ্বর এবং জীব—সবই মিথ্যা বা মায়া (ব্রহ্মজ্ঞান দ্বারা)। এই অপনোদনের মাধ্যমে শিষ্য জানতে পারে যে, একমাত্র ব্রহ্মই পরম সত্য। সত্য (ব্রহ্ম) শেখানোর জন্য প্রথমে ভ্রম (অধ্যারোপ) তৈরি করা এবং পরে তা দূর করা (অপবাদ) দোষের (দোষায়) নয়। এটি একটি প্রয়োজনীয় শিক্ষণ পদ্ধতি, কারণ সীমিত মন সরাসরি অসীম ব্রহ্মকে বুঝতে পারে না।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়—প্রথমে বলা হয়, “ঈশ্বর জগত সৃষ্টি করেছেন।” এটি অধ্যারোপ, কারণ এটি শিক্ষার্থীর মনকে কার্যকারণ সম্পর্কের ধারায় নিয়ে আসে। পরে বলা হয়, “ব্রহ্ম কখনও সৃষ্টি করেননি, কারণ সৃষ্টি ও প্রলয় দুটোই মায়ার প্রক্ষেপণ।” এটি অপবাদ, যা জগতের মায়াময়তা প্রকাশ করে এবং অজাতবাদের (Ajātavāda)—অর্থাৎ “কিছুই আসলে কখনও জন্মায়নি”—পথে পৌঁছে দেয়।
অধ্যারোপ-অপবাদ পদ্ধতির চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হলো, শিক্ষার্থী যেন উপলব্ধি করে—যে-ধারণাটি সত্য মনে হয়েছিল, সেটিই ছিল শিক্ষার কৌশল, সত্য নয়। ব্রহ্মকে গুণযুক্ত বলা, কার্যকারণ হিসেবে দেখা, বা ঈশ্বর হিসেবে কল্পনা করা—সবই ছিল মনের সোপান। যখন জ্ঞান পরিপূর্ণ হয়, তখন এই সমস্ত সোপান নিজে থেকেই অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায়।
শেষে শিক্ষার্থী দেখতে পান—যা-কিছু বলা হয়েছে, যা-কিছু ভাবা হয়েছে, সবই ছিল “অধ্যারোপ”; আর যে নির্গুণ, নিরাকার, নিরপেক্ষ আত্মা সব কিছুর অন্তরালে স্বপ্রকাশমান, তিনিই একমাত্র সত্য। এখানেই অপবাদের পরিণতি।
এইভাবে শঙ্করাচার্যের অধ্যারোপ-অপবাদ কৌশল শিক্ষার এক পরম দার্শনিক শিল্প—যেখানে শিক্ষক প্রথমে মনের সামনে একটি প্রতীক দাঁড় করান, তারপর নিজেই সেটি ভেঙে দেন। যেন শিষ্য বুঝতে পারে—যা ছিল সিঁড়ি, সেটিই পথ নয়; যা ছিল ধারণা, সেটিই সত্য নয়।
শেষে থাকে কেবল সেই এক—চিরনির্বিকার, চিরচেতনা, চিরসত্য ব্রহ্ম—যিনি সকল আরোপণ ও অপবাদেরও অতীত।
অদ্বৈত বেদান্তে এই “অধ্যারোপ-অপবাদ” প্রক্রিয়াটি নিছক কোনো দার্শনিক বিশ্লেষণ নয়—এটি অজ্ঞান-নিবৃত্তির (Avidyā-Nivṛtti) এক কার্যকর মাধ্যম। শঙ্করাচার্যের মতে, মিথ্যা আরোপণের একমাত্র উদ্দেশ্যই হলো তাকে শেষপর্যন্ত অপসারণ করা। ভুলটি শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করা হয় কেবল তার বিলোপের জন্যই। যেমন ভ্রমের মধ্যে সাপ দেখা মানে সাপের সৃষ্টিই নয়, বরং দড়ির জ্ঞানের প্রস্তুতি।
যখন আলো আসে—অর্থাৎ, যখন সত্যজ্ঞান উদয় হয়—তখন সাপকে আলাদা করে “ধ্বংস” করতে হয় না, কারণ সাপ কখনও ছিলই না। বরং সাপের মিথ্যা প্রতীতি নিজের থেকেই বিলীন হয়ে যায়। এখানে কোনো পরিবর্তন বা ধ্বংস ঘটে না; ঘটে কেবল অবিদ্যার অপসারণ (Āvaraṇa-Bhaṅga), যার ফলে বাস্তব বস্তু—দড়ি—নিজেই প্রকাশিত হয়।
এই উপমা দ্বারা শঙ্কর দেখিয়েছেন, ব্রহ্মজ্ঞান কোনো নতুন সৃষ্টি নয়; এটি কেবল অজ্ঞানতার আচ্ছাদন সরে যাওয়ার পর আত্মার স্বরূপের উদ্ভাসন। অজ্ঞান সরে গেলে যা প্রকাশিত হয়, তা পূর্বেও ছিল, এখনও আছে, এবং সর্বদা থাকবে—“যৎ সত্যম্, তৎ নিত্যম্।”
“যৎ সত্যম্, তৎ নিত্যম্” (Yat satyam, tat nityam)-এর অর্থ: "যা সত্য, তা-ই নিত্য (শাশ্বত বা চিরন্তন)" এটি কোনো একটি একক প্রাচীন মন্ত্র বা শ্লোক নয়, বরং অদ্বৈত বেদান্তের একটি মূল দার্শনিক সিদ্ধান্তকে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করে।
এই সূত্রটি অদ্বৈত বেদান্তের দুটি প্রধান ধারণাকে একে অপরের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত করে:
নিত্যতা হলো সত্যের প্রমাণ: এই দর্শন অনুসারে, সত্য (Satyam) হওয়ার প্রধান লক্ষণই হলো নিত্যতা (Nityam) বা ত্রিকালাতীত অস্তিত্ব। যা কোনো সময়ে ছিল, অন্য সময়ে নেই, বা পরিবর্তনশীল—তা কখনোই চরম সত্য হতে পারে না।
জগতের প্রকৃতি: এর মাধ্যমে জগৎ বা প্রকৃতিকে মিথ্যা (আপেক্ষিক সত্য) বলে ঘোষণা করা হয়, কারণ—জগৎ উৎপন্ন হয় এবং বিনষ্ট হয়; জগৎ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল—জগৎ নিত্য নয়, তাই এটি চরম সত্যও নয়।
ব্রহ্মের প্রকৃতি: একমাত্র ব্রহ্ম বা আত্মা-ই নিত্য (অপরিবর্তনীয়, অনাদি ও অনন্ত)। তাই ব্রহ্মই হলেন একমাত্র পরম সত্য।
এই উক্তিটি মূলত উপনিষদীয় জ্ঞান (যেমন: ছান্দোগ্য উপনিষদ ৬.২.১-এ "সৎ" বা একমাত্র বিদ্যমান সত্তার বর্ণনা) এবং আদি শঙ্করাচার্যের দর্শনের অদ্বৈত সিদ্ধান্তের সারসংক্ষেপ। এটি 'নেতি নেতি' বিচারের মাধ্যমে জগৎকে বাদ দিয়ে ব্রহ্মের নিত্যতাকে প্রতিষ্ঠা করে।
এই উপলব্ধির চূড়ান্ত রূপই অজাত-বাদ (Ajāta-vāda)—অর্থাৎ, “কিছুই কখনও জন্মায়নি।” এখানে দেখা যায়, সৃষ্টি, স্থিতি, ও লয়—সবই অবিদ্যার প্রক্ষেপণ। ব্রহ্ম কখনও কিছু সৃষ্টি করেননি, কিছু ধ্বংসও করেননি; সমস্ত সৃষ্টির ধারণা কেবল মনের ভুল দৃষ্টি। যেমন দড়ি সর্বদা দড়িই ছিল, কেবল অবিদ্যার ছায়ায় সেটি সাপ বলে মনে হয়েছিল—তেমনি ব্রহ্ম সর্বদা অবিকৃত, কেবল মায়ার বিকারে তিনি জগৎরূপে প্রতীয়মান।
অবিদ্যার দ্বারা উৎপন্ন সমস্ত প্রপঞ্চ বা কার্য-বিভাগ (Avidyā-Kārya-Bheda)—নাম, রূপ, কর্ম, সময়, স্থান—সবই জ্ঞানের উদয়ে ব্রহ্ম-সত্যে বিলীন হয়। তখন অভিজ্ঞ হয়—“যা সত্য, তা কখনও পরিবর্তিত হয়নি; যা পরিবর্তিত হয়, তা কখনও সত্য ছিল না।”
এই অধ্যারোপ-অপবাদ প্রক্রিয়া কেবল তত্ত্বচর্চার পদ্ধতি নয়; এটি অবিদ্যা থেকে বিদ্যায় উত্তরণের এক পরম সোপান। যখন সব ভ্রম সরে যায়, তখন যা অবশিষ্ট থাকে, সেটিই ব্রহ্ম—অপরিবর্তনীয়, চিরসত্য, স্বয়ংজ্যোতির্ময় চেতনা। জ্ঞান সেখানে কোনো নতুন সৃষ্টি নয়, বরং যা সর্বদা ছিল, সেই সত্যেরই স্বয়ং প্রকাশ।
অদ্বৈত বেদান্তের জ্ঞানতত্ত্বের “আশ্রয়-অনুপপত্তি” (Āśraya-Anupapatti)—অর্থাৎ, অবিদ্যা কোথায় থাকে?—প্রশ্নটি দর্শনের সবচেয়ে সূক্ষ্ম ও গভীর সমস্যাগুলির একটি। কারণ অবিদ্যা (Avidyā) নিজেই যদি ব্রহ্মের বিপরীতে থাকে, তবে সেটি কোথায় অবস্থান করে—এ প্রশ্নের উত্তর না পেলে অদ্বৈতের সম্পূর্ণ যুক্তি-গঠন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এই প্রশ্নের সূত্রে অদ্বৈত ব্যাখ্যার দুই প্রধান ধারা গঠিত হয়েছে—ভামতী (Bhāmatī) ও বিবরণ (Vivaraṇa)—যারা শঙ্করাচার্যের মূল ভাষ্যকে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করেছে।
ভামতী-ধারা (Bhāmatī School): অবিদ্যা জীবাশ্রয়ী
ভামতী প্রবর্তক বাচস্পতি মিশ্র (Vāchaspati Miśra) মনে করেন—অবিদ্যা জীবের (Jīva) মধ্যে থাকে; এটি ব্যক্তিগত অজ্ঞানতার অবস্থা। অবিদ্যা এমন এক মানসিক আচ্ছাদন (Āvaraṇa), যা প্রত্যেক জীবের নিজস্ব অন্তঃকরণকে আচ্ছন্ন করে রাখে। তাই বলা হয়—অবিদ্যা-আশ্রয়-ভেদ (Avidyā-Āśraya-Bheda)—অর্থাৎ, প্রত্যেক ব্যক্তির অজ্ঞানতার আশ্রয় ভিন্ন।
এই দৃষ্টিভঙ্গিতে, প্রত্যেক মানুষ নিজের নিজস্ব অবিদ্যার ভেতর দিয়ে জগৎ উপলব্ধি করে; তাই অভিজ্ঞতা ভিন্ন, দৃষ্টি ভিন্ন, ভুলও ভিন্ন। কেউ দড়িকে সাপ ভাবে, কেউ ছায়াকে ভূত ভাবে—অন্ধকারের উৎস এক, কিন্তু ভ্রমের প্রকাশ বহু। অবিদ্যা এখানে ব্যষ্টি-স্তরে (Vyasti-level) কাজ করে, এবং জ্ঞান উদয় হলে তা বিলীন হয়ে যায়। ভামতী মতে, জীবই অবিদ্যার অধিকারী (Avidyāvān Jīvaḥ), ব্রহ্ম নয়; কারণ ব্রহ্ম তো সর্বজ্ঞ ও অবিকৃত—তাঁর মধ্যে অবিদ্যার স্থান হতে পারে না। জীবই অবিদ্যার আশ্রয়, কারণ জীবই ভুলভাবে নিজেকে দেহ-মন-ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে অভিন্ন মনে করে।
বিবরণ-ধারা (Vivaraṇa School): অবিদ্যা ব্রহ্মাশ্রয়ী
অন্যদিকে, পদ্মপাদ (Padmapāda)—শঙ্করাচার্যের প্রধান শিষ্য ও Pañchapādikā-Vivaraṇa-এর গ্রন্থকার—এক ভিন্ন দৃষ্টিকোণ গ্রহণ করেন। তাঁর মতে, অবিদ্যার আশ্রয় ব্রহ্মই (Brahmāśraya Avidyā), কারণ ব্রহ্ম ছাড়া আর কোনো সত্য অস্তিত্বই নেই। যদি অবিদ্যা জীবের মধ্যে থাকে, তবে “জীব” নামক সত্তাটিকে অবিদ্যা আসার পূর্বেই স্বীকার করতে হয়; কিন্তু তখন প্রশ্ন ওঠে—অবিদ্যা আসার আগে জীব কোথা থেকে এল? তাই যুক্তিসংগতভাবে বলতে হয়, অবিদ্যা ব্রহ্মেই নিহিত; ব্রহ্মই তার অধিষ্ঠান, তবে অবিদ্যা তুষ্ট্যাভাস দ্বারা প্রতীয়মান, নিজস্বভাবে নয়।
তুষ্ট্যাভাস (Tuṣṭyābhāsa) হলো অদ্বৈত বেদান্ত ও সাংখ্য—উভয় দর্শনে ব্যবহৃত এক সূক্ষ্ম মনোবৈজ্ঞানিক ও আধ্যাত্মিক ধারণা, যার অর্থ “মিথ্যা তৃপ্তি” বা “তৃপ্তির ভ্রম”। শব্দটি দুটি অংশে গঠিত—তুষ্টি (সন্তুষ্টি, তৃপ্তি) এবং আভাস (প্রতীয়মানতা, ভ্রম)। অর্থাৎ, এটি এমন এক মানসিক বা বৌদ্ধিক অবস্থার নির্দেশ করে, যেখানে ব্যক্তি সাময়িক শান্তি বা আংশিক পূর্ণতা লাভ করেও ভুল করে তা-ই চূড়ান্ত মুক্তি বা আত্মজ্ঞান বলে মনে করে। এই অবস্থাকে বলা হয় তুষ্ট্যাভাস—তৃপ্তির কেবল প্রতিচ্ছবি, সত্য তৃপ্তি নয়।
তুষ্টি (Tuṣṭi) অর্থ তৃপ্তি বা মানসিক শান্তি—যা সাধনার ফলে, অর্জনের পর, বা কোনো ধারণাগত সফলতার অনুভূতিতে উদ্ভূত হয়। আভাস (Ābhāsa) অর্থ ভ্রম, ছায়া, বা মিথ্যা প্রতীয়মানতা। সুতরাং তুষ্ট্যাভাস মানে এমন এক ভ্রম, যেখানে মন বা বুদ্ধি সাময়িক প্রশান্তি লাভ করে এবং সেটিকেই চূড়ান্ত আত্মজ্ঞান বলে ভুল করে। এই অবস্থায় ব্যক্তি মনে করে—“আমি জেনেছি”, “আমি মুক্ত”, বা “আমি পরিপূর্ণ শান্তিতে আছি”—কিন্তু আসলে তার চেতনা এখনও অবিদ্যার আচ্ছাদনে আবৃত।
সাংখ্য দর্শনে তুষ্ট্যাভাসের ধারণাটি আট প্রকার তুষ্টির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সাংখ্য-মতে, তুষ্টি (Tuṣṭi) হলো একধরনের মানসিক সন্তুষ্টি বা শান্তি, যা বিবেক-জ্ঞান (প্রকৃতি ও পুরুষের পার্থক্যজ্ঞান) লাভের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে। যখন সাধক এই তুষ্টিকেই মুক্তি বা চূড়ান্ত লক্ষ্য বলে ভ্রম করে, তখন সে তুষ্ট্যাভাস-এ পতিত হয়।
এই আট প্রকার তুষ্টিকে সাধারণত দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়: আধ্যাত্মিক তুষ্টি (৪ প্রকার) এবং বাহ্যিক তুষ্টি (৪ প্রকার)।
আধ্যাত্মিক তুষ্টি (Adhyātmika Tuṣṭi)—প্রকৃতির প্রতি আসক্তিজনিত: এই চার প্রকার তুষ্টি প্রকৃতিকে (মূল উপাদান) জেনে তৃপ্ত হওয়াকে বোঝায়। এখানে প্রকৃতিকে ব্রহ্ম বা আত্মা বলে ভুল করে সাধক তৃপ্ত হন। এদেরকে সলিল (Salila) বা জলধারা-সদৃশ বলা হয়, কারণ এগুলো দ্বারা প্রবৃত্তি বা চেষ্টা থেকে সরে আসাকে বোঝায়:
১. অম্বু বা প্রবৃত্তি-প্রবাহ তুষ্টি (Ambū or Pravṛtti-pravāha Tuṣṭi): মনে করা যে, জগৎ ও জীবন নিজে থেকেই চলে, তাই আর চেষ্টার প্রয়োজন নেই।
২. সলিল বা অর্থ-লাভ তুষ্টি (Salila or Artha-lābha Tuṣṭi): মনে করা যে, অর্থ বা সম্পদ লাভই যথেষ্ট, তাই আর জ্ঞানার্জনের চেষ্টা অনাবশ্যক।
৩. ওঘ বা জ্ঞান-শক্তির তুষ্টি (Ogha or Jñāna-śakti Tuṣṭi): মনে করা যে, শাস্ত্রে সব জ্ঞান আছে, তাই আর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার বা গুরুর কাছে যাওয়ার দরকার নেই।
৪. বৃষ্টি বা সাধন-নিবৃত্তি তুষ্টি (Vṛṣṭi or Sādhana-nivṛtti Tuṣṭi): মনে করা যে, মোক্ষ আপনা থেকেই বা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আসবে, তাই আর কোনো সাধন বা তপস্যার প্রয়োজন নেই।
বাহ্যিক তুষ্টি (Bāhya Tuṣṭi)—উপভোক্তার প্রতি আসক্তিজনিত: এই চার প্রকার তুষ্টি উপভোগের বস্তু (যেমন—অর্থ ও ইন্দ্রিয়সুখ) ত্যাগ করার কারণে আসে। এই ত্যাগের ফলে যে সাময়িক শান্তি বা অহংকার সৃষ্টি হয়, তা মোক্ষ নয়, বরং তুষ্ট্যাভাস। এদেরকে পার (Pāra) বলা হয়, যা বস্তুকে অতিক্রম বা ত্যাগ করাকে বোঝায়:
৫. পার বা উপভোক্তা-ত্যাগ তুষ্টি (Pāra or Upabhoktā-tyāga Tuṣṭi): মনে করা যে, বস্তুর অর্জনে দোষ আছে, তাই কেবল বস্তু অর্জন না করলেই মুক্তি লাভ হবে।
৬. সুপার বা ভোগ-ত্যাগ তুষ্টি (Supāra or Bhoga-tyāga Tuṣṭi): মনে করা যে, বস্তুর ভোগে দোষ আছে, তাই কেবল ভোগ ত্যাগ করলেই মুক্তি লাভ হবে।
৭. পারাপার বা রক্ষা-নিবৃত্তি তুষ্টি (Parāpāra or Rakṣā-nivṛtti Tuṣṭi): মনে করা যে, বস্তু রক্ষা করার চেষ্টাতেই দোষ, তাই রক্ষা করা থেকে নিবৃত্ত হলেই শান্তি।