অবিদ্যা-বিদ্যা: ১৮




বেদান্তে “সংস্কার” ও “বাসনা”—এই দুই শব্দই মন ও চেতনার গভীর স্তরের প্রবণতা বোঝায়, কিন্তু তাদের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে, যা আত্মা-মন-কর্মচক্র বোঝার জন্য অপরিহার্য।


সংস্কার মানে পূর্বকৃত অভিজ্ঞতার ছাপ বা ছায়া। প্রতিটি কর্ম, চিন্তা, অনুভূতি বা অভিজ্ঞতা মনোজগতে একটি সূক্ষ্ম ছাপ রেখে যায়। যেমন পাথরে ধারালো বস্তু চালালে দাগ পড়ে, তেমনি অভিজ্ঞতা মনোবৃত্তিতে দাগ ফেলে—সেটিই সংস্কার। এটি স্মৃতির চেয়ে গভীর, কারণ স্মৃতি চেতন স্তরে প্রকাশিত হয়, কিন্তু সংস্কার অবচেতনের স্তরে থাকে, এবং উপযুক্ত পরিস্থিতি এলে পুনরায় প্রকাশিত হয়। উপনিষদে ইঙ্গিত আছে—“যথাকর্মণ্যথা শ্রুতম্” (বৃহদারণ্যক, ৪.৪.৫), অর্থাৎ, যেমন কর্ম, তেমনই তার অনুরণন—সেটিই ভবিষ্যৎ চেতনা ও জন্মের বীজ।


অন্যদিকে বাসনা হলো ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা বা তাড়না, যা সেই সংস্কার থেকেই উৎপন্ন হয়। সংস্কার হচ্ছে বীজ, আর বাসনা তার অঙ্কুর। পূর্ব অভিজ্ঞতার ছাপ যখন আবার অভিলাষ বা আকর্ষণরূপে জাগে, তখন সেটিই বাসনা। তাই শঙ্করাচার্য বলেন, “সংস্কারজাত ইচ্ছা বাসনা”—অর্থাৎ, বাসনা হলো সংস্কারের প্রকাশিত রূপ।


কেউ যদি বহুদিন আগে কোনো বিশেষ ভোগের আনন্দ পেয়ে থাকে, সেই অভিজ্ঞতা সংস্কার হিসেবে তার মনের গভীরে জমে থাকে। পরবর্তীকালে, সেই ছাপ থেকেই আবার সেই অভিজ্ঞতা লাভের ইচ্ছা জাগে—সেটিই বাসনা।


সংস্কার অচেতন সঞ্চিত বীজ; বাসনা সচেতন তাড়না। সংস্কার নীরব, কিন্তু সম্ভাবনাময়; বাসনা সক্রিয়, যা কর্মে প্রকাশ পেতে চায়।


বেদান্তে বলা হয়—এই দুইয়েরই ফল জন্ম-মৃত্যুর চক্র। সংস্কার কর্মফল সংরক্ষণ করে, বাসনা নতুন কর্মে প্রেরণা দেয়। একটির ফল, অন্যটির কারণ। গীতা (৩.৩৭)-এ কৃষ্ণ বলেন, “কাম এষ ক্রোধ এষ রজোগুণসমুদ্ভবঃ”—এই কামই বাসনা, যা অজ্ঞান ও সংস্কারের দ্বারা জন্মায় এবং মানুষকে বেঁধে রাখে।


তাই, সংস্কার হলো চেতনার অতীত ছাপ, বাসনা সেই ছাপের বর্তমান প্রকাশ। সংস্কার হচ্ছে, “আমি যা করেছি, তার অনুরণন”; আর বাসনা হলো, “আমি যা করতে চাই, তার আকাঙ্ক্ষা”। দুটোই অবিদ্যার শৃঙ্খল, কিন্তু জ্ঞানের দীপ্তিতে যখন আত্মা নিজের স্বরূপ উপলব্ধি করে, তখন সংস্কার নিঃশেষ হয়, বাসনা নিঃস্পন্দ হয়—আর সেখানেই মুক্তি।


বেদান্তে মনকে বলা হয় “অন্তঃকরণ”, আর এই অন্তঃকরণই প্রকাশিত অবস্থায় চেতন (জাগ্রত মন), আর লীন অবস্থায় অবচেতন (সুপ্ত মন) নামে পরিচিত। কিন্তু এই দুই অবস্থাই আত্মার প্রতিফলন মাত্র—আত্মা নিজে সর্বদা সচেতন, সর্বব্যাপী ও অপরিবর্তনীয়।


যখন আত্মার আলো মন, বুদ্ধি ও ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে বাহিরমুখ হয়, তখন তাকে বলা হয় চেতন স্তর। এখানে মন ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে বর্তমান অভিজ্ঞতাকে ধারণ করে, চিন্তা ও সিদ্ধান্তে অংশ নেয়। এই স্তরেই “স্মৃতি” কাজ করে—অর্থাৎ পূর্বের অভিজ্ঞতার পুনরায় জাগরণ। স্মৃতি হলো প্রকাশিত জ্ঞান, যা এখন আত্মপ্রকাশমান।


বেদান্তে মন আত্মার প্রতিফলনমাত্র—আত্মা সবসময় আলো দেয়, কিন্তু মন সেই আলো কতটা গ্রহণ করছে, তার উপরই নির্ভর করে আমরা চেতন না অবচেতন অবস্থায় আছি।


যখন মন আত্মার আলোয় সম্পূর্ণ আলোকিত থাকে, তখন তাকে বলা হয় চেতন স্তর। এ অবস্থায় মন ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বহির্বিশ্বে কার্যকর হয়—দেখে, শোনে, চিন্তা করে, সিদ্ধান্ত নেয়। এই অবস্থায় স্মৃতি জাগ্রত থাকে, কারণ চেতনার আলো সরাসরি মনের বৃত্তিগুলোয় পড়ছে। ফলে আমরা বলতে পারি—“আমি জানি”, “আমি ভাবছি”, “আমি স্মরণ করছি।”


কিন্তু যখন মন সেই আত্মার আলো থেকে আংশিকভাবে ঢেকে যায়—যেমন সূর্যের আলো মেঘে আচ্ছন্ন হলে আলো নিস্তেজ দেখায়—তখন মন নিস্পন্দ হয়, বাহ্য ক্রিয়াশীলতা থেমে যায়। এই অবস্থায় আত্মার আলো মন পর্যন্ত পুরোপুরি পৌঁছায় না, তাই সেখানে কোনো সক্রিয় জ্ঞান বা চিন্তা নেই। এ অবস্থায় মন অবচেতন স্তরে থাকে। অবচেতন মানে এখানে অন্ধকার নয়, বরং সুপ্তাবস্থা—চেতনা আছে, কিন্তু প্রতিফলিত হচ্ছে না।


যেমন একটি আয়না যদি কাপড়ে ঢাকা থাকে, সূর্য থাকলেও তার আলো পড়ে না; কিন্তু কাপড় সরিয়ে নিলেই আবার আলো প্রতিফলিত হয়। তেমনি আত্মার আলো সবসময় আছে, কেবল মনের আচ্ছাদন (অবিদ্যা, বাসনা, সংস্কার) সরলেই তা প্রতিফলিত হয়।


অতএব, অবচেতন মানে চেতনার অনুপস্থিতি নয়, বরং চেতনার অনাবির্ভাব। স্মৃতি থাকে চেতনার স্তরে, কারণ তা প্রকাশিত; সংস্কার থাকে অবচেতনের স্তরে, কারণ তা সুপ্ত। মাণ্ডূক্য উপনিষদে বলা হয়েছে—“একীবূতঃ প্রাজ্ঞঃ” (মাণ্ডূক্য উপনিষদ, মন্ত্র ৫)—সুষুপ্তিতে সমস্ত মনোবৃত্তি একীভূত ও নিস্পন্দ; অর্থাৎ সেখানে চেতনা লীন, কিন্তু বিলীন নয়। চেতন স্তরে মন বাহিরমুখ, অবচেতন স্তরে মন অন্তর্মুখ ও আচ্ছন্ন—কিন্তু উভয়ের মধ্যেই আত্মার আলো এক, অপরিবর্তনীয়।


এই অবস্থায় চেতনা নিজেকে কোনো ভাবেই পৃথক করে না—বাহ্য বা অন্তর কিছুই নেই, কেবল সম্ভাব্য অভিজ্ঞতার বীজরূপে চেতনা একীভূত। তাই বলা হয়—সমস্ত দ্বৈত অভিজ্ঞতার সংহারে একত্বে প্রতিষ্ঠিত চেতনা। এই একীবূত প্রাজ্ঞই পরে “চতুর্থ পদ” তুরীয়ের অধিষ্ঠান। তুরীয়ে এই একীভূত চেতনা জাগ্রত হয় আত্মজ্যোতিতে, যেখানে আর কোনো লয় বা বিভাজন নেই।


অন্যদিকে, যখন সেই মন অন্তর্মুখ হয়ে আত্মার আলো থেকে আচ্ছন্ন থাকে, তখন সে অবচেতন স্তরে থাকে। এখানে থাকে সংস্কার—অর্থাৎ অতীত অভিজ্ঞতার সূক্ষ্ম ছাপ, যা প্রকাশ পায়নি, কিন্তু মনের গভীরে বীজরূপে সঞ্চিত। এগুলোই পরে জাগ্রত মনের মাধ্যমে চিন্তা, বাসনা, স্বপ্ন বা আচরণে প্রকাশ পায়।


যেমন আগুনের তাপে লোহা লাল হয়ে আলো ছড়ায় (চেতন স্তর), কিন্তু তাপ নিভে গেলে সেই উত্তাপ কিছুক্ষণ লোহার মধ্যে সুপ্ত থাকে (অবচেতন স্তর)—বেদান্তের মতে, সংস্কারও তেমনই সুপ্ত তাপ।


স্মৃতি ও সংস্কারের পার্থক্য এভাবে বোঝানো যায়—স্মৃতি হচ্ছে সেই অভিজ্ঞতা, যা এখন চেতনার আলোয় প্রকাশিত, আর সংস্কার হচ্ছে সেই একই অভিজ্ঞতার ছাপ, যা অপ্রকাশিত অবস্থায় রয়েছে। সংস্কার বীজের মতো, স্মৃতি তার অঙ্কুর।


বৃহদারণ্যক উপনিষদ (১.৫.৩) বলছে—“মনোইব মনুষ্যানাং কারণং বন্দহমোক্ষয়োঃ”—অর্থাৎ মনই মানুষের বন্ধন ও মুক্তির কারণ। মন যদি সংস্কারের দাস হয়ে থাকে, তবে সে অবচেতনের অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে; কিন্তু মন যদি চেতনার দিকে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, তবে সে মুক্তির দ্বার খুলে দেয়।


সুষুপ্তির সময়, যখন মন সম্পূর্ণ লীন হয়ে যায়, তখনও আত্মা চেতনা হিসেবে থাকে, কিন্তু প্রতিফলন হয় না। মাণ্ডূক্য উপনিষদ (৫) এই অবস্থাকে বলে—“একীবূতঃ প্রাজ্ঞঃ”—অর্থাৎ সমস্ত মনোবৃত্তি একীভূত ও নিস্পন্দ। সেখানে সংস্কার থাকে, কিন্তু তারা প্রকাশ পায় না।


এইভাবে, বেদান্তে চেতন ও অবচেতন আলাদা সত্তা নয়—একই চৈতন্যের দুটি প্রতিফলন। চেতন স্তরে স্মৃতি কাজ করে, অবচেতন স্তরে সংস্কার জমে থাকে। যখন জ্ঞান উদয় হয়, তখন আত্মার আলো সেই অবচেতন অন্ধকারে প্রবেশ করে; সংস্কারগুলি দগ্ধ হয়, মন পরিশুদ্ধ হয়, এবং চেতনা তার নিজ স্বরূপে উদ্‌ভাসিত হয়—“প্রজ্ঞানের ব্রহ্ম” (বৃহদারণ্যক, ৪.৪.১৩)—এই উপলব্ধিতেই চেতন-অবচেতনের ভেদ লুপ্ত হয়ে যায়।





বাসনা মানে কোনো কাজের প্রতি আকর্ষণ, কোনো অনুভূতির পুনরাবৃত্তির ইচ্ছা। যেমন কেউ ধন চায়, কেউ খ্যাতি, কেউ প্রেম, কেউ জ্ঞান—এই প্রত্যেক আকাঙ্ক্ষাই বাসনা, কারণ এগুলি মনকে ভবিষ্যতের কোনো ফলের দিকে টানে।

বেদান্ত বলে—এই বাসনাই সংসারের বীজ। যতক্ষণ বাসনা থাকে, ততক্ষণ মন অস্থির, চিত্ত অশান্ত, এবং কর্মচক্র বন্ধ হয় না। গীতা (৩.৩৭) বলে—“কাম এইশ ক্রোধ এইশ রজোগুণসমুদ্ভবঃ”—অর্থাৎ, কামনা থেকেই ক্রোধ ও অশান্তি জন্ম নেয়। কামনা পূর্ণ হলে আসক্তি, অপূর্ণ হলে বিরক্তি—দু’টোই বন্ধন।

যখন জ্ঞান উদিত হয়, তখন মন দেখে—সব বাসনাই ক্ষণস্থায়ী, কোনোটি স্থায়ী তৃপ্তি দেয় না। তখন মন নিজেই বাসনা থেকে বিরত হয়। একে বলে বাসনাক্ষয়, যা মুক্তির পূর্বশর্ত। ব্রহ্মসূত্রভাষ্যে শঙ্করাচার্য বলেন—“বাসনাক্ষয়ে ব্রহ্মজ্ঞানোদয়ঃ”—অর্থাৎ, যখন বাসনা ক্ষয় হয়, তখনই আত্মজ্ঞান উদিত হয়।

অতএব, বাসনা হলো মনের গভীরে জমে থাকা ইচ্ছার বীজ—যা পুনরায় জন্ম, কর্ম ও চিন্তার কারণ হয়। বাসনা থাকলে মন বহির্মুখী; বাসনা ক্ষীণ হলে মন অন্তর্মুখী; আর বাসনা সম্পূর্ণ নিঃশেষ হলে আত্মা নিজের স্বরূপে স্থিত হয়—যেখানে আর কোনো চাওয়া নেই, কেবল শান্তি, নিত্য আনন্দ ও নিঃশেষ মুক্তি।


এইভাবে চিত্ত হয়ে ওঠে এক সংস্কারভাণ্ডার—যেখানে প্রতিজন্মে জমে থাকে সমস্ত অভিজ্ঞতার ছাপ। এগুলিই আমাদের প্রবৃত্তি, অভ্যাস, ইচ্ছা ও ভয়ের মূল। কেউ সংগীতে প্রাকৃতিক প্রতিভা নিয়ে জন্মায়, কেউ ভয়ে আচ্ছন্ন থাকে—সবই পূর্বসংস্কারের প্রকাশ।


যোগসূত্রে পতঞ্জলি বলেন—“সংশ্কারসাক্ষাৎকারণাত্ পূর্বজন্মকথনম্।” (যোগসূত্র, ৩.১৮) অর্থাৎ, যদি কেউ নিজের সংস্কারগুলি প্রত্যক্ষ করতে পারে, তবে সে নিজের পূর্বজন্ম সম্পর্কে জানতে পারে।


অদ্বৈত বেদান্তে চিত্তকে কারণ শরীরের অংশ বলা হয়, কারণ গভীর নিদ্রায় বা মৃত্যুর পরে সমস্ত বাসনা ও সংস্কার এই চিত্তেই সুপ্ত থাকে, এবং সেগুলিই পরবর্তী জন্মের কারণ হয়। তাই শাস্ত্রে বলা হয়—“যথা চিত্তং তদা ভবতি”—“যেমন চিত্ত, তেমনই ভবিষ্যৎ।”


চিত্ত সংস্কারভাণ্ডার মানে হচ্ছে সেই অদৃশ্য, সূক্ষ্ম মানসিক ভাণ্ডার, যেখানে সকল অভিজ্ঞতার বীজ সঞ্চিত থাকে। জ্ঞান ও সাধনার মাধ্যমে যখন এই ভাণ্ডার শুদ্ধ হয়, তখন পুরনো বাসনাগুলি ক্ষীণ হয়, নতুন সংস্কার আর জমে না—তখন মন স্থির ও নির্মল হয়, এবং সেই স্থির মনেই আত্মার দীপ্তি সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ পায়।


অহংকার (Ahaṅkāra) হলো সেই কেন্দ্র, যা বলে “আমি ভাবছি”, “আমি জানছি”, “আমি করছি”—অর্থাৎ, চেতনার ব্যক্তিগত সত্তার অনুভব। এটি আত্মার সঙ্গে দেহ-মন-ইন্দ্রিয়ের সম্পর্ক তৈরি করে। অহংকারের উপস্থিতিতেই “আমি” ও “আমার” বোধ জন্ম নেয়। বুদ্ধি সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু অহংকার বলে “আমি সিদ্ধান্ত নিলাম।” তাই অহংকার চেতনার সীমাবদ্ধ রূপ, যেখানে আত্মা নিজেকে দেহ ও মানসিক ক্রিয়ার সঙ্গে অভিন্ন মনে করে।


এই চারটি মিলেই তৈরি হয় অন্তঃকরণ—মানবচেতনার সূক্ষ্ম যন্ত্র। মন দোলায়, বুদ্ধি বিচার করে, চিত্ত স্মরণ করে, অহংকার নিজের বোধে তাদের একত্রিত করে। আত্মা নিজে এদের কেউ নয়; কিন্তু এদের মাধ্যমেই আত্মা জগৎ অভিজ্ঞতা করে, যেন আয়নার মাধ্যমে মুখ দেখা যায়।


মন হলো ভাবনার প্রবাহ, বুদ্ধি হলো সিদ্ধান্তের শক্তি, চিত্ত হলো স্মৃতির আধার, আর অহংকার হলো ব্যক্তিগত পরিচয়ের কেন্দ্র। এরা সবাই মিলেই সেই সূক্ষ্ম মানসিক অঙ্গ, যার দ্বারা জ্ঞানের প্রতিফলন সম্ভব হয়; এবং জ্ঞান উদিত হলে বোঝা যায়—এই চার অঙ্গই কেবল চেতনার যন্ত্র, আত্মা নিজে নয়।


মমতা (Mamatā) শব্দটি এসেছে “মম” অর্থাৎ, “আমার” থেকে। এটি অহংকারেরই পরিণতি—যখন “আমি” বলার সঙ্গে সঙ্গে কেউ কিছু জিনিস, সম্পর্ক, দেহ বা চিন্তাকে নিজের বলে দাবি করে, তখন জন্ম নেয় মমতা। যেমন “আমি দেহ” বলার পর বলে “আমার দেহ”, “আমার সন্তান”, “আমার ঘর”, “আমার মত”—এই “আমারত্ব”-এর বন্ধনই মমতা।


স্বামী সদানন্দ যোগীন্দ্র রচিত বেদান্তসার (Vedāntasāra) গ্রন্থের শ্লোক ৯৪ (অহঙ্কার-বিবরণ অংশ) বলে—“অহং মমাভিমানঃ সংসারহেতুঃ”—অর্থাৎ, অহং ও মমতার এই যুগলই সংসারের মূল কারণ। অহংকার আত্মাকে দেহে সীমাবদ্ধ করে, আর মমতা সেই দেহের চারপাশে জগতের জাল বুনে দেয়।


গীতা (২.৭১) এই অবস্থার বিপরীতে বলে—“বিহায় কামান্যঃ সর্বান্, পুমাংশ্চরতি নিঃস্পৃহঃ, নির্মমো নিরহংকারঃ স শান্তিমধিগচ্ছতি”—যিনি কামনা ত্যাগ করেন, মমতা ও অহংকারমুক্ত হয়ে চলেন, কেবল তিনিই শান্তি লাভ করেন।