বেদান্তে বাসনা (ইচ্ছা) মানে হলো সেই সূক্ষ্ম মানসিক প্রবণতা বা চেতনার বীজ, যা অতীত অভিজ্ঞতা ও কর্মের ছাপ হিসেবে চিত্তে থেকে ভবিষ্যৎ চিন্তা, ইচ্ছা ও কর্মে প্রকাশ পায়। শব্দটি এসেছে “বাস্” ধাতু থেকে—যার অর্থ “থাকা” বা “স্থিত থাকা”; অর্থাৎ, বাসনা মানে যা মনের গভীরে “থেকে যায়”।
যখন কোনো কাজ, চিন্তা বা অনুভূতি সম্পূর্ণভাবে শেষ হয় না, তখন তার একটি গভীর ছাপ আমাদের মনের গভীরে, অর্থাৎ, চিত্তে থেকে যায়। এই অদৃশ্য কিন্তু শক্তিশালী চিহ্নকেই 'সংস্কার' বলা হয়। এটি অনেকটা অসম্পূর্ণ বা অব্যক্ত অভিজ্ঞতার স্মৃতিচিহ্নের মতো, যা ভবিষ্যতে আমাদের আচরণ এবং উপলব্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে। এই সংস্কারগুলি মনের সুপ্ত স্তরে বিদ্যমান থাকে, সচেতনভাবে আমরা সব সময় সেগুলিকে অনুভব করতে না পারলেও, সেগুলির প্রভাব সুদূরপ্রসারী।
আর যখন এই সুপ্ত সংস্কারগুলি কোনো নির্দিষ্ট উদ্দীপনা বা পরিস্থিতির কারণে পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন সেগুলি আমাদের মধ্যে কোনো কিছু অর্জন করার, কোনো অভিজ্ঞতা লাভ করার, বা কোনো নির্দিষ্ট বস্তুকে উপভোগ করার একটি প্রবল আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে। এই সক্রিয় রূপটিই 'বাসনা' নামে পরিচিত। বাসনা হলো সংস্কারের একটি সক্রিয় প্রকাশ, যা আমাদের কর্মপ্রবণ করে তোলে এবং বিভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের দিকে চালিত করে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি শৈশবের কোনো অপূর্ণ স্বপ্ন একটি সংস্কার হিসেবে মনে থেকে যায়, তবে পরবর্তীতে কোনো এক সময় সেই স্বপ্ন পূরণের তীব্র আকাঙ্ক্ষা একটি বাসনা হিসেবে প্রকাশিত হতে পারে। সংস্কার অতীত অভিজ্ঞতার ফলস্বরূপ উৎপন্ন হয়, আর বাসনা ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হয়, যা আমাদের জীবনে গতি ও উদ্দেশ্য যোগ করে।
বেদান্তে বলা হয়—বাসনাই জন্ম-মৃত্যুর মূল কারণ, কারণ বাসনাই সেই সূক্ষ্ম শক্তি, যা জীবকে এক জন্ম থেকে অন্য জন্মে, এক অভিজ্ঞতা থেকে অন্য অভিজ্ঞতায় ঠেলে নিয়ে যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত বাসনা থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত জীবচক্রের (সংসারের) গতি থামে না।
বাসনা মানে ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, বা কোনো কিছু পাওয়ার অভিলাষ। কিন্তু এটি শুধু চিন্তা নয়—এ এক গভীর মানসিক ছাপ, যা চিত্তে থেকে যায়। প্রতিটি অভিজ্ঞতা, প্রতিটি ইচ্ছা চিত্তে একটি সূক্ষ্ম চিহ্ন ফেলে যায়—এগুলোই সংস্কার। আর সেই সংস্কার থেকে যখন নতুন ইচ্ছা বা চাওয়া জাগে, সেটিই বাসনা।
এইভাবে বাসনা এক অদৃশ্য প্রবাহ তৈরি করে, যা আত্মাকে শরীর ও জন্মের বন্ধনে বেঁধে রাখে। বৃহদারণ্যক উপনিষদ (৪.৪.৫) এই সত্যটি এক অবিস্মরণীয় বাক্যে প্রকাশ করেছে—“যথা ক্রতুরস্মি তথা ভবতি। যৎ কর্ম কুরুতে, তদ্ অভিসংপদ্যতে।”
অর্থাৎ—মানুষ যেমন চিন্তা ও ইচ্ছা করে, তেমনই সে হয়ে ওঠে; যেমন কর্ম করে, তেমন ফল পায়। এখানে ‘ক্রতু’ শব্দের অর্থ ‘গভীর অভিপ্রায়’ বা ‘বাসনা’। এই বাসনাই চেতনার গতিপথ নির্ধারণ করে। যদি বাসনা থাকে ধনের, তবে মন সেই দিকে আকৃষ্ট হবে; যদি বাসনা থাকে মুক্তির, তবে মন জ্ঞানের দিকে যাবে।
বাসনা বা ইচ্ছা কখনও শরীরের সঙ্গে নষ্ট হয় না, কারণ এটি দেহ নয়, চিত্ত বা সূক্ষ্ম শরীরের (মন-বুদ্ধি-চিত্ত-অহংকারের) অংশ। যেমন লোহার টুকরো চুম্বকের টানে তার দিকে ছুটে যায়, তেমনি বাসনা আত্মাকে (যা প্রকৃতপক্ষে নির্লিপ্ত চৈতন্য) টেনে নিয়ে যায় তার পছন্দের অভিজ্ঞতার দিকে। আত্মা নিজে কিছু চায় না—সে শুদ্ধ ও নিঃস্পৃহ; কিন্তু যখন আত্মা অবিদ্যার আচ্ছাদনে জড় মনের সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন সেই মনের মধ্যে জমে থাকা বাসনাগুলি আত্মার ওপর ছায়া ফেলে, আর আত্মাকে ভোগ ও কর্মের দিকে চালিত করে।
শরীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হয়, কারণ এটি স্থূল দেহ—পাঁচটি স্থূল মহাভূত (পৃথিবী, জল, অগ্নি, বায়ু, আকাশ) দ্বারা গঠিত। কিন্তু সূক্ষ্ম শরীর—যা মন, বুদ্ধি, চিত্ত ও অহংকার দ্বারা গঠিত—তা মৃত্যুর সঙ্গে নষ্ট হয় না। এই সূক্ষ্ম শরীরই পরবর্তী জন্মে পুনরায় স্থূল দেহ ধারণ করে, আর এই পুনর্জন্মের চালিকা শক্তি হলো বাসনা।
যেমন নাটকের এক দৃশ্য শেষ হলে অভিনেতা মঞ্চ ছাড়ে, কিন্তু নাটক অসমাপ্ত থাকলে আবার পরের দৃশ্যে ফিরে আসে—তেমনি আত্মা যখন সমস্ত বাসনা পূর্ণ করতে পারেনি, তখন সে মৃত্যুর পরও সেই অসম্পূর্ণ ইচ্ছাগুলির বশে নতুন শরীর নেয়, যেন সেই ইচ্ছাগুলি পূর্ণ করার “পরবর্তী দৃশ্য” অভিনয় করতে পারে।
এই কারণেই উপনিষদ বলে—“যথাকামো ভবতি তৎ ক্রতুর্ভবতি, যৎ ক্রতুর্ভবতি তৎ কর্ম কুরুতে, যৎ কর্ম কুরুতে তদ্ অভিসংপদ্যতে।” (কঠ উপনিষদ, ২.৬.২) অর্থাৎ—মানুষ যেমন ইচ্ছা করে, তেমনই চিন্তা করে; যেমন চিন্তা, তেমনই কাজ করে; আর যেমন কাজ, তেমনই ফল পায়।
যতক্ষণ পর্যন্ত বাসনা থাকে, আত্মা স্থূল শরীর ত্যাগ করলেও জন্মচক্র থেকে মুক্ত হতে পারে না। বাসনা ম্লান হলে জন্মের প্রবণতা ক্ষীণ হয়, আর বাসনাহীন হলে আত্মা মুক্ত হয়—তখন সে আর কোনো দেহ ধারণ করে না, বরং ব্রহ্মের সঙ্গে একাত্ম হয়ে বিশ্রাম পায়।
এভাবেই বাসনা কর্মের জন্ম দেয়, কর্ম ফলের জন্ম দেয়, আর ফল আবার নতুন বাসনার জন্ম দেয়—এইভাবে সৃষ্টি হয় অন্তহীন চক্র, যাকে বেদান্ত বলে সংসার-বন্ধন।
গীতা (১৫.৭) এই সত্যকে আরও স্পষ্ট করে বলে—“শরীরং যদবাপ্নোতি, যচ্ছাপ্যুত্ক্রামতীশ্বরঃ, গৃহীতৈতানিসংযোগী বৈগুণ্যাণি।” অর্থাৎ, আত্মা যখন এক দেহ ত্যাগ করে অন্য দেহ গ্রহণ করে, তখন সে নিজের সঙ্গে নিয়ে যায় পূর্বজন্মের বাসনা ও সংস্কার—যেমন বাতাস ফুলের গন্ধ বহন করে, তেমনি চিত্ত নিজের বাসনাগুলি সঙ্গে নিয়ে যায়।
এই বাসনাগুলিই পুনর্জন্মের কারণ। যতক্ষণ বাসনা আছে, ততক্ষণ আত্মা আবার ফিরে আসে, নতুন দেহ ধারণ করে, নতুন কর্মের বীজ বোনে। বাসনা যত সূক্ষ্ম, জন্মও তত সূক্ষ্ম; বাসনা যত গভীর, বন্ধন তত দৃঢ়। এই কথার অর্থ খুব সূক্ষ্ম, কিন্তু গভীর।
ইচ্ছা বা কামনা যেমন প্রকৃতিতে সূক্ষ্ম হয়, তার ফল বা প্রকাশও তেমনি সূক্ষ্ম স্তরে ঘটে; আর ইচ্ছা যত প্রবল বা গভীরভাবে মনের ভিতর গেঁথে যায়, ততই আত্মা সেই ইচ্ছার দ্বারা শক্তভাবে আবদ্ধ থাকে।
স্থূল বাসনা—যেমন ধন, ভোগ, খ্যাতি, শরীরের সুখ—এইসব ইচ্ছার ফলও স্থূল জগতে প্রকাশ পায়। এই ইচ্ছাগুলি পূরণ করতে আত্মা স্থূল শরীর ধারণ করে, ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে জগতের অভিজ্ঞতা লাভ করে। কিন্তু যখন বাসনা সূক্ষ্ম হয়—যেমন জ্ঞানলাভের ইচ্ছা, সত্তার পরিশুদ্ধি, বা ঈশ্বরপ্রেম—তখন জন্মও সূক্ষ্ম হয়; এমন বাসনার ফলে জন্ম নেওয়া দেহ ও মন শুদ্ধতর হয়, যেমন ঋষি, যোগী বা সাধকের জন্ম।
অন্যদিকে, বাসনা যত গভীরে প্রোথিত থাকে, তত তা সহজে বিলীন হয় না। যেমন কোনো গাছের শিকড় যত গভীর, তা উপড়ে ফেলতে তত পরিশ্রম লাগে। তেমনি মনের গভীরে গেঁথে-থাকা বাসনা—যেমন অহংকার, দেহ-আসক্তি বা লালসা—এইগুলো আত্মাকে বার বার জন্মমৃত্যুর চক্রে টেনে আনে।
বেদান্ত বলে—বাসনা হলো কর্মের বীজ, আর কর্ম আবার নতুন বাসনা সৃষ্টি করে। এই বৃত্তটি যত গভীর হয়, বন্ধন তত শক্ত হয়। যদি বাসনা সূক্ষ্ম, নির্মল, ঈশ্বরমুখী হয়, তবে জন্মও সূক্ষ্ম স্তরে হয়, যেমন দেবলোক বা জ্ঞানমার্গে। কিন্তু যদি বাসনা স্থূল, স্বার্থপর ও কামনাময় হয়, তবে জন্মও স্থূল জগতে হয়, যেখানে দুঃখ, অভাব ও অশান্তি প্রবল।
অতএব, সূক্ষ্ম বাসনা মানে উচ্চস্তরের ইচ্ছা—যা আত্মাকে মুক্তির দিকে নিয়ে যায়; গভীর বাসনা মানে তীব্র আসক্তি—যা আত্মাকে পুনর্জন্মের গভীর ঘূর্ণিতে ফেলে। যখন সব বাসনা লয় পায়, তখনই আত্মা ব্রহ্মের সঙ্গে এক হয়ে যায়—তখন আর জন্ম বা মৃত্যু থাকে না, শুধু চিরশান্তি। তাই উপনিষদে বলা হয়েছে—“যদা সর্বে প্রমুচ্যন্তে কামা যে’স্য হৃদি শ্রিতাঃ, অথ মর্ত্যো’মৃতো ভবতি।” (কঠ উপনিষদ, ২.৩.১৪)
যখন হৃদয়ের সমস্ত বাসনা বিলীন হয়, তখনই মর্ত্য মানুষ অমরত্ব লাভ করে।
যখন জ্ঞানের আলোয় সাধক দেখে—“সব বাসনা ক্ষণস্থায়ী, সব অভিলাষই অবশেষে শূন্য”—তখন তার মন নিজেই বাসনা ত্যাগ করে। একে বলে বাসনাক্ষয়। ব্রহ্মসূত্রভাষ্যে শঙ্করাচার্য বলেন—“বাসনাক্ষয়ে ব্রহ্মজ্ঞানোদয়ঃ”—যখন বাসনা নিঃশেষ হয়, তখনই আত্মজ্ঞান উদিত হয়। বাসনাই জন্মের বীজ; বাসনাই মৃত্যুর কারণ; এবং বাসনাহীন অবস্থাই মুক্তি। যেখানে আর কিছু চাওয়ার নেই, সেখানে জন্মও নেই, মৃত্যু নেই—শুধু অবিচল শান্তি, যা ব্রহ্মের স্বরূপ।
“যদা সর্বে প্রমুচ্যন্তে কামা যে’স্য হৃদি শ্রিতাঃ, অথ মর্ত্যো’মৃতো ভবতি, অত্র ব্রহ্ম সমশ্নুতে”—এই শ্লোকটি কঠ উপনিষদের (দ্বিতীয় অধ্যায়, তৃতীয় বল্লী, ১৪তম মন্ত্র) অংশ। এতে মুক্তির চূড়ান্ত অবস্থাকে সংক্ষিপ্ত অথচ গভীরভাবে প্রকাশ করা হয়েছে।
যম মৃত্যুর প্রকৃত স্বরূপ বোঝাতে নচিকেতাকে বলেন—যে-ব্যক্তি তার অন্তরে আশ্রিত সমস্ত কামনা বা বাসনাকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করেছে, অর্থাৎ, যার হৃদয়ে আর কোনো ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, অভিলাষ, প্রেরণা অবশিষ্ট নেই, সেই ব্যক্তি তখনই অমর হয়। এখানে “প্রমুচ্যন্তে” মানে একেবারে ছিঁড়ে ফেলা, মুক্ত হওয়া। কামনা থাকলে মন গতিশীল থাকে; মন গতিশীল থাকলে চেতনা সীমাবদ্ধ হয়। তাই কামনার বিলোপ মানে চিত্তের নিঃস্পন্দতা, যেখানে আত্মা তার স্বরূপে অবিচল থাকে।
এই অবস্থায় মানুষ আর “মর্ত্য”-এ থাকে না—অর্থাৎ, দেহ ও মৃত্যুর সীমায় আবদ্ধ থাকে না। তখন সে নিজেকে দেহ, মন, ইন্দ্রিয় হিসেবে অনুভব করে না; বরং চেতনা-স্বরূপ ব্রহ্মরূপে জেগে থাকে। তাই উপনিষদ বলে, “অত্র ব্রহ্ম সমশ্নুতে”—অত্র অর্থাৎ, এখানেই, এই জীবদেহে, এই চৈতন্যেই সে ব্রহ্মকে উপলব্ধি করে, ব্রহ্মরূপে অবস্থান করে। মুক্তি কোনো মৃত্যুর পরের ঘটনা নয়; তা বর্তমান চেতনার মধ্যেই ঘটে, যখন কামনার সূত্র ছিঁড়ে যায়।
শঙ্করাচার্য এই মন্ত্রের ভাষ্যে ব্যাখ্যা করেছেন—যখন সমস্ত কামনা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়, তখন চিত্তও নিবৃত্ত হয়; চিত্তের নিবৃত্তিই ব্রহ্মবোধের উন্মেষ। এই অবস্থায় মানুষের মনের সঙ্গে চেতনার কোনো দ্বৈততা থাকে না; জ্ঞান ও অস্তিত্ব অভিন্ন হয়ে যায়। তখন “অহং ব্রহ্মাস্মি” উপলব্ধি সরাসরি সত্য হিসেবে উদ্ভাসিত হয়।
মুক্তি কোনো নতুন প্রাপ্তি নয়, বরং কামনাজাত সীমাবোধ থেকে মুক্ত হওয়া মাত্র। যখন হৃদয়ে আর কোনো আকাঙ্ক্ষা থাকে না, তখন আত্মা তার স্বরূপে স্বতঃসিদ্ধভাবে প্রকাশ পায়। তখন মানুষ অমর হয়—অর্থাৎ, সে ব্রহ্মের সঙ্গে এক হয়ে যায়, কারণ তার মধ্যে আর কোনো ভেদবুদ্ধি, অভাববোধ বা চাওয়া-পাওয়া থাকে না। এই অবস্থাই জীবন্মুক্তির নিদর্শন—যেখানে চেতনা নিজেই নিজের আনন্দে জেগে থাকে, কামনা ও মৃত্যুর সীমা ছাড়িয়ে।
বেদান্তে জীবন্মুক্তির নিদর্শন বা মুক্ত অবস্থার চিহ্নগুলি নানা শাস্ত্রে—উপনিষদ, ভগবদ্গীতা, ব্রহ্মসূত্র-ভাষ্য, অষ্টাভক্র গীতা, যোগবাসিষ্ঠ—অত্যন্ত স্পষ্টভাবে নির্ধারিত হয়েছে। এই অবস্থায় মানুষ শরীরধারণ করেও অবিদ্যা, কামনা ও কর্মফলের বন্ধন থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকে। জীবন্মুক্তি মানে জ্ঞানের এমন পরিণতি, যেখানে আত্মা দেহধারী থেকেও ব্রহ্মরূপে প্রতিষ্ঠিত থাকে।
কঠ উপনিষদ (২.৩.১৪) বলে—“যদা সর্বে প্রমুচ্যন্তে কামা যে’স্য হৃদি শ্রিতাঃ, অথ মর্ত্যো’মৃতো ভবতি, অত্র ব্রহ্ম সমশ্নুতে।” অর্থাৎ, যখন হৃদয়ে আসীন সমস্ত কামনা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়, তখন মর্ত্যেই মানুষ অমর হয়ে যায় এবং এই দেহেই ব্রহ্মকে উপভোগ করে। এখানে জীবন্মুক্তির প্রথম নিদর্শন বলা হয়েছে—কামনা-শূন্যতা। কামনা না থাকলে চিত্ত নিস্পন্দ হয়, আর চিত্ত নিস্পন্দ হলে আত্মা নিজের স্বরূপে প্রকাশ পায়।
ভগবদ্গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়, জ্ঞানযোগ, স্থিতপ্রজ্ঞের লক্ষণ বর্ণনা করে, যা আত্ম-সাক্ষাৎকারের এক উচ্চতর অবস্থা। শ্লোক ২.৫৫-২.৫৭ এই ধারণাকে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে, একজন জীবন্মুক্ত পুরুষের মানসিক ও আধ্যাত্মিক পরিচয় তুলে ধরে।