অবিদ্যা-বিদ্যা: ১২৮



হাইডেগারের ভাষায়, “ডাজাইন যখন নিজের মৃত্যু সম্ভাবনাকে সত্যিকারভাবে গ্রহণ করে, তখনই সে ‘authentic’ হয়ে ওঠে।” মৃত্যুকে অস্বীকার করলে মানুষ “Das Man”—অর্থাৎ “অন্যদের জগতে”—হারিয়ে যায়, যেখানে সবাই ভাবে মৃত্যু দূরের কিছু, বা কেবল “অন্যদের” ব্যাপার। কিন্তু মৃত্যু-সচেতন মানুষ জানে, মৃত্যু সবসময়ই “আমার দিকেই আসছে”; তাই প্রতিটি মুহূর্তই হয়ে ওঠে শেষের সম্ভাবনা, আর প্রতিটি সিদ্ধান্ত পায় একধরনের অস্তিত্বগত ওজন।

Sein zum Tode কোনো নৈরাশ্য নয়; এটি মানুষকে জীবনের প্রকৃত গাম্ভীর্য শেখায়। এটি শেখায়—“সময় সীমিত, তাই এখন বাঁচো।” যখন মানুষ মৃত্যুকে প্রত্যাখ্যান না করে, বরং তাকে নিজের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করে, তখন সে শেখে “মৃত্যুর দিকে মুখ করে বাঁচা”—এটাই সত্যিকারের Being.

Angst—“অস্তিত্ব-ভয়” বা “অন্তর্গত শঙ্কা”: “Angst” শব্দটি হাইডেগারের কাছে সাধারণ “ভয়” (fear) নয়। “ভয়” সবসময় কোনো নির্দিষ্ট বস্তুর দিকে নির্দেশ করে—যেমন অন্ধকার, বাঘ, বিপদ। কিন্তু আংস্ট কোনো নির্দিষ্ট কিছুকে নিয়ে নয়; এটি এক “বস্তুশূন্য” উদ্‌বেগ (objectless anxiety)—যেখানে মানুষ হঠাৎ উপলব্ধি করে যে, সে এক সসীম সত্তা, নিক্ষিপ্ত হয়েছে এক রহস্যময় জগতে, যার কোনো স্থায়ী আশ্রয় নেই।

যখন “আংস্ট” আসে, তখন জগৎ যেন হঠাৎ ফাঁকা হয়ে যায়—সব পরিচিত জিনিস অর্থ হারায়। এই অভিজ্ঞতায় মানুষ বুঝতে পারে, সে যে-“জগতে আছে”, সেটি কোনো নিশ্চিত ভিত্তি নয়; সব কিছুই অনির্ভরশীল, ক্ষণস্থায়ী। এই মুহূর্তেই সে প্রথম উপলব্ধি করে নিজের নিক্ষিপ্ততা (Geworfenheit)—তাকে এমন এক জগতে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে, যা সে বেছে নেয়নি—এবং একই সঙ্গে নিজের সম্ভাবনাসমূহ (Seinkönnen) নিজেকেই বেছে নিতে হবে, কারণ তার জীবন অন্য কেউ বাঁচাবে না।

হাইডেগারের দর্শনে “Seinkönnen” (জার্মান: being able to be) অর্থাৎ “অস্তিত্ব করতে পারা” বা “অস্তিত্বের সক্ষমতা”—মানুষের সত্তার এক মৌল বৈশিষ্ট্য, যা তার অস্তিত্বকে স্থির কোনো অবস্থা নয়, বরং এক চলমান সম্ভাবনায় রূপ দেয়। দেকার্ত যেখানে মানুষকে “চিন্তাশীল পদার্থ” (res cogitans) হিসেবে স্থিরভাবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন—একটি “যে আছি”—হাইডেগার সেখানে বললেন, মানুষ মূলত “হওয়ার মধ্যে থাকা” (Becoming)। তার “আছে” হওয়া মানেই “হওয়ার পথে থাকা”—আর এই হওয়ার সক্ষমতাই হাইডেগার নাম দেন Seinkönnen (উচ্চারণ করা হয়—জাইন্-ক্যোনেন্)।

এই শব্দটি আক্ষরিকভাবে ভাঙলে—Sein (অস্তিত্ব, being) + können (ক্ষমতা থাকা, to be able)—অর্থাৎ “অস্তিত্বের ক্ষমতা”, “being-as-possibility”। মানুষের অস্তিত্ব তাই কেবল যা সে এখন আছে, তা নয়; বরং সে যা হতে পারে, তার সামগ্রিক সম্ভাবনার ক্ষেত্র। সে কোনো সম্পূর্ণ বস্তু নয়—এক অপূর্ণ, খোলা সত্তা, যে নিজের সিদ্ধান্ত, আকাঙ্ক্ষা ও পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে ক্রমাগত নিজেকে গঠন করে।

হাইডেগারের Sein und Zeit-এ বলা হয়েছে—“ডাজাইন (Dasein) নিজেকে বোঝে তার ‘সম্ভাবনা’-র মাধ্যমে।” অর্থাৎ, মানুষ নিজেকে জানে—কেবল যা সে এখন—তা দিয়ে নয়, বরং যে-সম্ভাবনাগুলির দিকে সে মুখ করে আছে, তার মাধ্যমে। একজন মানুষ “কী”, এবং সে “কী হতে পারে”—এই পার্থক্যটাই Seinkönnen-এর মর্ম। মানুষ কোনো নির্দিষ্ট স্বরূপ (essence) নিয়ে জন্মায় না; বরং প্রতিটি মুহূর্তে নিজের অস্তিত্বকে নির্মাণ করে—নিজের পছন্দ, প্রতিশ্রুতি ও কর্মের মধ্য দিয়ে।

এইভাবেই Seinkönnen হাইডেগারের কাছে স্বাধীনতার (freedom) দর্শন। মানুষ নিক্ষিপ্ত (Geworfenheit)—সে নিজের জন্ম, সংস্কৃতি, দেহ বা প্রেক্ষাপট বেছে নিতে পারে না; কিন্তু সেই নিক্ষিপ্ত অবস্থার মধ্যেও তার আছে সম্ভাবনা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা। সে যে পরিস্থিতিতে আছে, তা নির্ধারিত; কিন্তু সে তার মধ্যে কীভাবে “থাকবে”—তা সে নিজেই নির্ধারণ করে। তাই “Seinkönnen” ও “Geworfenheit”—দুটি বিপরীত নয়, বরং একে অপরের পরিপূরক।

যখন মানুষ এই সম্ভাবনাকে সচেতনভাবে গ্রহণ করে, নিজের ভবিষ্যৎকে দায়িত্বের সঙ্গে গড়ে তোলে, তখন সে “authentic being”-এ অবস্থান করে। কিন্তু যখন সে সমাজের নির্ধারিত পথে, “অন্যরা যেমন বাঁচে তেমন” (Das Man) ধরনে বাঁচে, তখন সে নিজের Seinkönnen হারায়—সে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও নিজেকে অনুকরণে আবদ্ধ করে। তাই হাইডেগার বলেন, সত্যিকার জীবন মানে নিজের সম্ভাবনাকে নিজের মতো করে উপলব্ধি করা—যে “আমি কী হতে পারি”, সেটি দেখা এবং তা বাস্তবায়নের সাহস রাখা।

Seinkönnen হাইডেগারের অস্তিত্ববাদের প্রাণকেন্দ্র। এটি বলে—মানুষ কোনো সম্পূর্ণ সত্তা নয়; সে এক চলমান প্রকল্প, এক অসমাপ্ত সৃষ্টি। “অস্তিত্ব করা” মানে স্থির হয়ে থাকা নয়, বরং নিজের সম্ভাবনাগুলির প্রতি মুক্ত ও দায়িত্বশীল থাকা। আমরা যেমন “নিক্ষিপ্ত” অবস্থায় জন্মাই, তেমনি “সম্ভাবনার” মধ্য দিয়েই আমাদের অর্থ গঠিত হয়। মৃত্যু পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে, কারণ মৃত্যু-সচেতনতাই (Sein zum Tode) আমাদের শেখায়—সময় সীমিত, আর সেই সীমার মধ্যেই নিজের সম্ভাবনাকে পূর্ণ করা-ই আসল “থাকা”। হাইডেগারের ভাষায়, মানুষ হলো সেই সত্তা “যে যা আছে তা নয়, বরং যা হতে পারে”—তাই Seinkönnen মানে অস্তিত্বের সেই উন্মুক্ত ক্ষমতা, যেখানে মানুষ নিজের ভবিষ্যৎকে নিজেই রচনা করে, আর প্রতিটি মুহূর্তেই নিজের “থাকা”-কে নতুন অর্থে গঠন করে চলে।

“আংস্ট” মানুষকে “Das Man”-এর ঘুম থেকে জাগায়। যখন সে সামাজিক আশ্রয় হারায়, যখন “অন্যদের দৃষ্টিতে নিরাপদ থাকা”-র মুখোশ খুলে যায়, তখনই সে একা নিজের অস্তিত্বের মুখোমুখি হয়। এই একাকিত্বের মুহূর্তে সে প্রথম বুঝতে পারে, “আমি আছি”—কিন্তু এই “থাকা”র কোনো নির্দিষ্ট অর্থ নেই; অর্থ তৈরি করতে হবে আমাকে নিজেকেই।

তাই হাইডেগারের কাছে “আংস্ট” কোনো দুর্বলতা নয়; এটি এক অস্তিত্বীয় প্রকাশ (existential revelation)। এটি মানুষের নিজের সত্তার দিকে উন্মুক্ত হওয়া—একধরনের অন্তর্গত নীরবতা, যেখানে সমস্ত ভরসা ভেঙে পড়ে, আর থেকে যায় কেবল নিজের সসীম উপস্থিতি। এই উপলব্ধিই মানুষকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়—Sein zum Tode—যেখানে “অস্তিত্বের ভয়” পরিণত হয় “অস্তিত্বের স্বচ্ছতায়”।

Sein zum Tode ও Angst একই অস্তিত্বগত অন্তর্দৃষ্টির দুই দিক। Angst মানুষকে জাগায়—সব অর্থ মুছে দিয়ে তাকে নিজের নিক্ষিপ্ত সত্তার সামনে দাঁড় করায়; আর Sein zum Tode তাকে শেখায়—এই সসীমতার ভেতরেই নিজের অর্থ তৈরি করো। মৃত্যু এখানে সমাপ্তি নয়, বরং জাগরণের দ্বার। আর আংস্ট সেই জাগরণের প্রথম কম্পন—যেখানে মানুষ বুঝতে শেখে, তার “থাকা” মানে শুধু বেঁচে থাকা নয়, বরং নিজেকে প্রতিনিয়ত নতুন করে সৃষ্টি করা।

এভাবে হাইডেগারের “দাস মান” শুধু দর্শনের ধারণা নয়; এর গভীরে আছে এক নৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক সতর্কতা। যখন আমরা “যেভাবে সবাই করে” এই মন্ত্রে বাঁচি, তখন আমরা নিজেদের চিন্তার ক্ষমতা ও দায়বোধ দুই-ই হারিয়ে ফেলি। আমরা বলতে শিখি, “আমি তো যা সবাই করছে, তা-ই করলাম”—এবং ঠিক এভাবেই আমরা নিজেদের অস্তিত্বের দায় থেকে পালিয়ে যাই। হাইডেগারের এই ধারণা আজকের প্রযুক্তিনির্ভর জগতে অবিশ্বাস্যভাবে প্রাসঙ্গিক, যেখানে সামাজিক মাধ্যম, ট্রেন্ড ও জনমত আমাদের চিন্তাকে অবচেতনে চালিত করে। আমরা ভাবি, আমরা স্বাধীন, কিন্তু বাস্তবে আমরা “দাস মান”-এর স্বরেই কথা বলছি।

“দাস মান” আমাদের শেখায় যে, অস্তিত্বের স্বাভাবিক ধারা অনুকরণের পথে বয়ে চলে, কিন্তু সত্যিকারের মুক্তি আসে যখন মানুষ নিজেকে প্রশ্ন করে—“আমি কি সত্যিই নিজে বাঁচছি, না কি শুধু সবাই যেভাবে বাঁচে, সেভাবেই?” এই প্রশ্নই হলো হাইডেগারের অস্তিত্ববাদী আহ্বান। নিজের অস্তিত্বকে নিজের মৃত্যুর দৃষ্টিতে দেখা, নিজের দায় নিজে নেওয়া, এবং সচেতনভাবে “দাস মান”-এর ছায়া অতিক্রম করা — এটাই হলো স্বকীয়তার (Authenticity) পথ। এই পথেই মানুষ “অন্যেরা যেমন বলে” নয়, বরং “আমি যেমন সত্য মনে করি”—এই বোধে নিজেকে প্রকাশ করে, এবং সেই হওয়াই হলো অস্তিত্বের সত্যিকারের মুক্তি।

কিন্তু যখন মানুষ মৃত্যুর মুখোমুখি হয়—সত্যিই উপলব্ধি করে যে, জীবন সসীম, সময় ফুরিয়ে আসছে—তখনই সে ভেতর থেকে সজাগ হয়ে ওঠে। এই সজাগতা কোনো আতঙ্ক নয়; এটি অস্তিত্বের স্বচ্ছতা (transparency of Being)। মৃত্যুর স্বীকৃতি মানুষকে ফিরিয়ে আনে নিজের কাছে, তাকে শেখায় সময়ের গুরুত্ব, সিদ্ধান্তের ভার, এবং জীবনকে এখন-এই-মুহূর্তে সত্যভাবে বাঁচার প্রয়োজনীয়তা। এই অবস্থাকেই হাইডেগার বলেন “Being-toward-death”—মৃত্যুর দিকে সচেতনভাবে বেঁচে থাকা।

“Being-toward-death” মানে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা নয়, বরং মৃত্যু-সচেতন জীবনযাপন—এমনভাবে বাঁচা, যেন প্রতিটি মুহূর্ত শেষ হতে পারে, এবং তাই প্রতিটি মুহূর্তেই নিজের সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করা দরকার। মৃত্যুর দিকে মুখ করে থাকা মানে জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তকে তার শেষতার পরিপ্রেক্ষিতে দেখা—তখনই জীবনের প্রতিটি ক্রিয়া পায় গাম্ভীর্য, প্রত্যেক সম্পর্ক পায় গভীরতা।

মৃত্যু তাই হাইডেগারের কাছে নিছক সমাপ্তি নয়; এটি জীবনের অন্তঃস্থ আয়না—যেখানে মানুষ নিজের সত্তাকে প্রথম বারের মতো সত্যভাবে দেখে। মৃত্যু আমাদের শেখায়, আমরা সময়ের ভেতরে নিক্ষিপ্ত, কিন্তু সময়ের ভেতরেই নিজেদের সম্ভাবনা বেছে নিতে পারি। এই উপলব্ধিই “ডাজাইন”-এর পরিপূর্ণতা: মৃত্যু যেমন সসীমতার প্রতীক, তেমনি অর্থবোধের উৎস—যে যত গভীরভাবে নিজের মৃত্যুকে স্বীকার করে, সে তত সত্যভাবে বাঁচে।

ডাজাইন কোনো আত্মা নয়, কোনো দেহ নয়, কোনো চিন্তার কেন্দ্রও নয়; এটি মানুষ নিজেই—যে বেঁচে থাকে, সম্পর্কিত থাকে, বোঝে, প্রশ্ন করে, এবং নিজের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে নিজের অস্তিত্বকে অর্থ দেয়। হাইডেগারের ভাষায়, “মানুষ এমন কোনো সত্তা নয়, যার মধ্যে অস্তিত্ব থাকে; মানুষ বরং সেই সত্তা, যার জন্য অস্তিত্বই প্রশ্ন হয়ে ওঠে।” এভাবে হাইডেগারের ডাজাইন দর্শন ডেকার্তের “আমি চিন্তা করি” থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক বোধের দিকে নিয়ে যায়—“আমি আছি”—কিন্তু সেই “থাকা” কোনো স্থির উপস্থিতি নয়; এটি এক উন্মুক্ত অবস্থান, এক “বিশ্বে থাকা”-র প্রক্রিয়া, যেখানে প্রতিটি মুহূর্তে মানুষ নিজের সম্ভাবনা ও সসীমতার মধ্যে দাঁড়িয়ে নিজেকে তৈরি করে চলেছে।

ফরাসি দার্শনিক মের্লো-পোঁতি (Maurice Merleau-Ponty) এই ধারাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান এবং ‘দেহের ফেনোমেনোলজি’ (Phenomenology of Perception) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, দেহই আত্মার ভাষা—আমরা দেহের মাধ্যমে অনুভব করি, আর সেই অনুভবের মধ্য দিয়েই আত্মা প্রকাশ পায়। মের্লো-পোঁতির মতে, দেহ কেবল একটি বস্তু নয়, এটি আমাদের অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধির কেন্দ্র। আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি শুধু তথ্য সংগ্রহ করে না, বরং তারা জগতকে আমাদের জন্য অর্থপূর্ণ করে তোলে। হাঁটা, কথা বলা, স্পর্শ করা—এসবই দেহের মাধ্যমে সম্পাদিত হয় এবং এগুলোর মাধ্যমেই আমরা নিজেদের এবং জগৎকে বুঝতে পারি।

দেহের মাধ্যমে আমরা স্থান ও কালের সাথে সংযুক্ত হই এবং আমাদের ব্যক্তিগত ইতিহাস ও ভবিষ্যতের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করি। অর্থাৎ, দেহ শুধু একটি জৈবিক কাঠামো নয়, এটি একটি জীবিত অভিজ্ঞতা, যা আমাদের মানসিক এবং আত্মিক অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ। দেহই আমাদের জগৎকে বোঝার এবং তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করার প্রাথমিক মাধ্যম।

তাই “আত্মার আসন” কেবল একটি শারীরিক স্থান নয়; এটি মানুষের দ্বৈত অস্তিত্বের প্রতীক—যেখানে চেতনা ও পদার্থ, মন ও দেহ, অভ্যন্তর ও বহির্জগত একে অপরের সীমানায় মিলিত হয়। দেকার্তের এই কল্পচিত্র আজ বৈজ্ঞানিকভাবে অপ্রমাণিত হলেও দার্শনিকভাবে এখনো গভীর তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি সেই প্রাচীন প্রশ্নেরই পুনরাবৃত্তি—“আমি কে?”—যার উত্তরে মানুষ এখনও ভাবছে, শরীরের ভেতর কোথায় বাস করে সেই আত্মা, যে চিন্তা করে, অনুভব করে, আর জগতের সঙ্গে এক অবিরাম সংলাপে বেঁচে থাকে।