৩. জৈন দর্শনে মুক্তিতত্ত্ব (Jaina Soteriology): জৈন-মতে, আত্মা চিরন্তন, কিন্তু কর্মাশ্রিত হয়ে বন্ধনে পতিত। এই বন্ধন মোচনের নামই মুক্তি বা কৈবল্য। তত্ত্বার্থসূত্রে (১.১) বলা হয়েছে—“সম্যগ্দর্শনজ্ঞানচারিত্রাণি মোক্ষমার্গঃ।” (Umāsvāti, Tattvārthasūtra, 1.1) অর্থাৎ, সম্যক দর্শন, সম্যক জ্ঞান ও সম্যক আচরণ—এই ত্রয়ীই মুক্তির পথ। এখানে মুক্তি এক প্রকার “কার্মিক শুদ্ধি”—যখন আত্মা সব কর্ম-আবরণ ঝেড়ে স্বপ্রভা চৈতন্যে উদ্ভাসিত হয়।
৪. খ্রিষ্টীয় ধর্মতত্ত্বে মুক্তিতত্ত্ব (Christian Soteriology): খ্রিষ্টধর্মে soteriology ঈশ্বর ও মানবের সম্পর্কের পরিত্রাণমূলক রূপে প্রকাশিত। নিউ টেস্টামেন্ট-এ বলা হয়েছে—“For by grace are ye saved through faith; and that not of yourselves: it is the gift of God.” (The New Testament, Ephesians 2:8) অর্থাৎ, মুক্তি ঈশ্বরের অনুগ্রহ ও বিশ্বাসের দ্বারা লাভযোগ্য। এখানে মুক্তি “পাপ থেকে পরিত্রাণ”—যীশুর আত্মবলিদান মানবজাতিকে ঈশ্বরের সঙ্গে পুনর্মিলিত করেছে।
৫. অস্তিত্ববাদে মুক্তিতত্ত্ব (Existentialist Soteriology): অস্তিত্ববাদী দর্শনে (Sartre, Heidegger, Kierkegaard) মুক্তি আর কোনো অতিলৌকিক ঈশ্বরীয় কৃপা নয়, বরং নিজস্ব “স্বচ্ছ অস্তিত্বে” ফিরে আসা। Jean-Paul Sartre বলেন—“Man is condemned to be free.” (L’Être et le Néant, 1943) এই স্বাধীনতার স্বীকৃতিই মুক্তি; নিজের সত্য অস্তিত্বকে অস্বীকার না করে গ্রহণ করাই মুক্তি। Kierkegaard-এর ভাষায়—“faith is the leap into the absurd” (Søren Kierkegaard, Fear and Trembling, 1843)—অর্থাৎ, বোধের সীমা অতিক্রম করে নিজ অস্তিত্বে সমর্পণই আত্মোদ্ধার।
সব দর্শনই কোনো না কোনোভাবে “অজ্ঞান, আসক্তি, বা বন্ধন” থেকে “চেতনার মুক্তি” পর্যন্ত যাত্রাকে ব্যাখ্যা করে—
অদ্বৈতবাদ বলে: জ্ঞানই মুক্তি—মুক্তি (মোক্ষ) হল আত্মার প্রকৃত স্বরূপের জ্ঞান—অর্থাৎ জানা যে “আমি ব্রহ্ম”—এই জ্ঞানেই অবিদ্যা ও বন্ধন নাশ হয়। এখানে soteriological লক্ষ্য হলো অভিন্ন আত্মজ্ঞান।
বৌদ্ধদর্শন বলে: দুঃখ-নিবৃত্তিই মুক্তি—মুক্তি (নির্বাণ) মানে দুঃখের নিবৃত্তি—আসক্তি ও অবিদ্যার অবসান। এর soteriology জ্ঞান ও অনাসক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।
জৈনদর্শন বলে: কর্মমোচনই মুক্তি—মুক্তি (কৈবল্য) অর্জিত হয় যখন আত্মা কর্ম-বন্ধন মুক্ত হয়ে স্বপ্রভা চৈতন্যে প্রতিষ্ঠিত হয়—এখানে soteriology নৈতিক অনুশাসন, তপস্যা ও সম্যক্ জ্ঞান-আচরণ-দর্শনের উপর নির্ভর করে।
খ্রিস্টদর্শন বলে: ঈশ্বরকৃপাই মুক্তি—soteriology মানে ঈশ্বর কর্তৃক প্রদত্ত পরিত্রাণ—খ্রিষ্টের আত্মবলিদানের মাধ্যমে মানুষের পাপ থেকে মুক্তি।
আধুনিক অস্তিত্ববাদ বলে: স্ব-অস্তিত্বের সত্য গ্রহণই মুক্তি—এটি “self-authenticity” বা নিজের অস্তিত্বের সত্য উপলব্ধির মধ্যেই নিহিত—একটি ধর্মনিরপেক্ষ মুক্তিতত্ত্ব, যেখানে মানুষ নিজের অর্থ ও স্বাধীনতা আবিষ্কারের মাধ্যমে মুক্ত হয়।
তাই soteriological inquiry মূলত মানুষের অস্তিত্বের চূড়ান্ত অর্থ ও মুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে এক শাশ্বত প্রশ্ন—“কীভাবে আমি বন্ধন থেকে মুক্ত হব?”—এর ভিন্ন ভিন্ন দার্শনিক উত্তরই মানবচেতনার বিকাশের ইতিহাসকে রচনা করেছে।
এইভাবে “soteriological” শব্দটি যে-কোনো দর্শন বা ধর্মে মুক্তির প্রশ্নের দার্শনিক কাঠামোকে নির্দেশ করে—যেখানে মানবচেতনা, জ্ঞান, নৈতিকতা ও অস্তিত্ব মিলিত হয়ে মুক্তির পথে অগ্রসর হয়।
অদ্বৈতবাদের সম্পূর্ণ বিপরীতে, জৈন দর্শন দাঁড়িয়ে আছে বহুত্ববাদী বাস্তবতা (pluralistic realism)-এর উপর। এখানে মহাবিশ্ব বা লোক অনাদি, চিরন্তন ও স্বয়ংসম্পূর্ণ—এর কোনো সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর নেই। জৈন দৃষ্টিতে বাস্তবতা চিরস্থায়ীভাবে দুটি মূল বিভাগে বিভক্ত: জীব (jīva) এবং অজীব (ajīva)। জীব সচেতন সত্তা, আর অজীব হলো অচেতন, জড় বা ভৌতিক উপাদান। এই দুইয়ের সম্পর্কই জগতের গঠন ও গতি নির্ধারণ করে।
Pluralistic Realism, বা বহুবিধতাবাদী বাস্তববাদ, এমন এক দার্শনিক দৃষ্টিকোণ, যা একই সঙ্গে বাস্তবতার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে না, আবার সেটিকে একক বা একমাত্রিক বলেও ধরে না। এই ভাবনার সবচেয়ে প্রভাবশালী রূপ পাওয়া যায় বিশ শতকের বিশিষ্ট দার্শনিক হিলারি পুটনাম-এর (Hilary Putnam) লেখায়—বিশেষত The Many Faces of Realism (১৯৮৭), Reason, Truth and History (১৯৮১) এবং Realism and Reason (১৯৮৩)-এ। পুটনাম এমন এক অবস্থান গঠন করেন, যা কঠোর রিয়ালিজম ও আপেক্ষিকবাদ—এই দুই বিপরীত প্রান্তকে একত্র করে। রিয়ালিজম বলে, একটি একক, মনের বাইরে স্বাধীন বাস্তবতা আছে; আমরা যেভাবেই চিন্তা করি না কেন, সেই বাস্তবতা তেমনই থাকে। অন্যদিকে আপেক্ষিকবাদ বলে, বাস্তবতা মানসিক, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর ফল—মানুষের ধারণা ছাড়া ‘বাস্তব’ কিছুই নেই। পুটনামের মতে, সত্য এই দুইয়ের মাঝখানে: বাস্তবতা আছে, কিন্তু আমরা তাকে যেভাবে জানি ও প্রকাশ করি, তা নানা কাঠামো, ভাষা ও প্রেক্ষিতের মাধ্যমে ঘটে। এইজন্যই তিনি বলেন, “there are many kinds of facts, but they are facts nonetheless”—বাস্তবতার রূপ অনেক হতে পারে, কিন্তু বাস্তবতার অস্তিত্ব অস্বীকার করা যায় না।
এই অবস্থানে “pluralism” মানে হচ্ছে বাস্তবতার বহুরূপতা—বিভিন্ন স্তর বা মাত্রায় সত্য প্রকাশিত হয়। যেমন পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান বা নৈতিকতা—সবই জগৎকে ব্যাখ্যা করে, কিন্তু তারা একটিমাত্র সত্যে মিলে যায় না; প্রত্যেকেই বাস্তবতার ভিন্ন রূপ উন্মোচন করে। পুটনামের “realism” এখানে সেই দিকটি ধরে রাখে যে, এসব বৈচিত্র্য কোনো কল্পনা নয়; এদের পেছনে এক বাস্তব জগৎ রয়েছে, যদিও তা আমাদের উপলব্ধির মাধ্যমে নানা আকারে প্রকাশিত হয়। তাই pluralistic realism এমন এক চিন্তা, যেখানে বাস্তবতা যেমন মনের বাইরে স্বতন্ত্র, তেমনি তা মানুষের ভাষা ও অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েও প্রবাহিত।
পুটনামের এই ভাবনা বিজ্ঞান-দর্শনের মধ্যেও এক বিশেষ স্থান পায়। একসময় ধারণা ছিল যে, বিজ্ঞানে একটিমাত্র সর্বজনীন তত্ত্বই শেষপর্যন্ত সব ব্যাখ্যা করবে—কিন্তু pluralistic realism বলে, জগৎ এত জটিল যে, কোনো একক তত্ত্ব তা ধারণ করতে পারে না; বরং নানা বৈজ্ঞানিক মডেল, ভিন্ন স্তরের ব্যাখ্যা—সব একসঙ্গে সত্য হতে পারে। রসায়নের সত্য পদার্থবিজ্ঞানের সত্যের মতো নয়, আবার জীববিজ্ঞানের সত্যও মনোবিজ্ঞানের মতো নয়; তবু প্রত্যেকটি নিজের প্রেক্ষিতে বৈধ ও বাস্তব। পুটনাম তাই বলেন, “convention is penetrated by fact”—অর্থাৎ, মানুষের ভাষা ও ধারণাগত রূপ (convention) বাস্তবতার দ্বারা অনুপ্রবিষ্ট; সত্য কেবল কনভেনশন নয়, বরং বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত এক জীবন্ত সম্পর্ক।
এইভাবে pluralistic realism একধারে epistemological—আমরা কীভাবে জানি—এবং অন্যধারে ontological—কী আছে—দুটো প্রশ্নেরই মিল ঘটায়। এটি কঠোর বাস্তববাদের যান্ত্রিক একত্ববাদকে ভেঙে দেয় এবং আপেক্ষিকবাদের অবসন্ন অনিশ্চয়তাকেও অতিক্রম করে। এর মূল অন্তর্দৃষ্টি হলো, সত্য এক নয়, বহু, কিন্তু সেই বহু সত্যের মধ্যেও এক গভীর ঐক্য রয়েছে—যেমন রংধনুর প্রতিটি রং আলাদা, অথচ আলোকই তাদের মূল।
তবে এই দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচকও আছেন। কেউ কেউ বলেন, যদি বহু সত্য স্বীকৃত হয়, তবে সত্যের চূড়ান্ততা কোথায়? সব দৃষ্টিকোণ কি সমানভাবে বৈধ? পুটনাম জবাবে বলেন—সত্য কোনো স্থির বস্তু নয়; এটি একটি প্রক্রিয়া, এক সংলাপ। মানুষ যুক্তি, অভিজ্ঞতা ও ভাষার মাধ্যমে ক্রমে সত্যকে পরিষ্কার করে তোলে, কিন্তু কখনোই একে চূড়ান্তভাবে ‘ধরে’ ফেলতে পারে না। তাই pluralistic realism-এর মুক্তির দিকটি epistemic humility—জানার বিনয়—যেখানে মানুষ সত্যের একাধিক দিক স্বীকার করে, কিন্তু তবুও সত্যের অস্তিত্বে বিশ্বাস রাখে।
Epistemic Humility—বাংলায় বলা যায় “জ্ঞান-বিনয়”, “জ্ঞানীয় বিনয়”, বা আরও গভীরভাবে, “জানার সীমা সম্পর্কে সচেতনতা”। এই ধারণাটি একাধারে জ্ঞানতত্ত্ব (epistemology), নৈতিকতা (ethics), এবং দর্শনের মানসিক শৈলীর (philosophical attitude) মধ্যে এক সেতুবন্ধন তৈরি করে।
শব্দটির ব্যুৎপত্তি থেকেই তা বোঝা যায়: epistēmē মানে জ্ঞান বা বোঝাপড়া, আর humilitas মানে বিনয়, নম্রতা, বা নতচিত্ততা। সুতরাং epistemic humility এমন এক বোধ, যা বলে—“মানবজ্ঞান সর্বদা আংশিক, অনিশ্চিত এবং পরিবর্তনশীল; তাই সত্যিকারের জ্ঞানী সেই, যে নিজের জানার সীমা জানে।”
এই মনোভাবটি প্রাচীন গ্রিক দর্শন থেকেই শুরু হয়। সক্রেটিস তাঁর আত্মবচনে বলেন, “I know that I know nothing.” এই উক্তি কোনো আত্ম-অস্বীকৃতি নয়; বরং এটি জ্ঞানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সততার প্রতীক। সক্রেটিস এখানে বলছেন—মানুষ যতই জানুক, সেই জ্ঞান কখনোই সম্পূর্ণ নয়; কারণ বাস্তবতা ও সত্য এমন বিশাল যে, মানবচেতনা তা কেবল আংশিকভাবে স্পর্শ করতে পারে। এই আত্মসচেতনতা—যে, আমি সম্পূর্ণ নই—এটাই হলো epistemic humility।
এমনই মনোভাব আমরা পাই ভারতীয় দর্শনের নানা ধারায়ও। উপনিষদীয় বচন—“নেতি নেতি” (“এ নয়, এ নয়”)—এই জ্ঞান-বিনয়ের গভীর রূপ। জ্ঞান যতই বাড়ুক, চূড়ান্ত সত্য সর্বদা ধারণার সীমার বাইরে থাকে। একইভাবে, বৌদ্ধ দর্শনের মধ্যম প্রতিপদ (madhyamā pratipad) বা “মধ্যপন্থা”ও একধরনের epistemic humility—যেখানে চেতনা একপাক্ষিক সত্যের দাবিকে ত্যাগ করে, সব দিক থেকে জিনিসকে দেখতে শেখে।
মধ্যম প্রতিপদ (madhyamā pratipadā)—বৌদ্ধ দর্শনের অন্যতম গভীর ও কেন্দ্রীয় ধারণা। “মধ্যম” অর্থ ‘মধ্যবর্তী’ বা ‘সমবিত্ত’, আর “প্রতিপদ” অর্থ ‘পথ’ বা ‘অনুশীলন’। মিলিয়ে অর্থ দাঁড়ায়—মধ্যপন্থা, অর্থাৎ এমন এক জীবনপথ, যা দুই চরম অবস্থাকে—ইন্দ্রিয়সুখে আসক্তি এবং আত্মনাশী তপস্যা—উভয়কেই অতিক্রম করে। এই ধারণাটিই গৌতম বুদ্ধের প্রথম ধর্মচক্র-প্রবর্তন সূত্রে প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে তিনি বলেন—“দুই চরম পথ ত্যাগ করে আমি মধ্যম প্রতিপদ আবিষ্কার করেছি, যা দুঃখের নিবৃত্তির দিকে নিয়ে যায়।”
বুদ্ধের জীবনেই এই উপলব্ধির জন্ম। রাজপুত্র সিদ্ধার্থ যখন বিলাস ও আনন্দে নিমজ্জিত জীবনযাপন করছিলেন, তখন তিনি বুঝলেন—ইন্দ্রিয়সুখ চিরস্থায়ী নয়; এটি তৃপ্তি নয়, বরং নতুন আকাঙ্ক্ষার জন্ম দেয়। এরপর তিনি যখন চরম তপস্যা ও আত্মনিগ্রহে নিজেকে ক্লিষ্ট করলেন, তখনও দেখলেন, এই পথও দুঃখের অবসান ঘটায় না, বরং শরীর ও মনকে দুর্বল করে তোলে। এই দুই প্রান্তিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তিনি উপলব্ধি করলেন—মুক্তি বা নির্বাণের পথ কোনো চরমে নয়, বরং সেই চরমদ্বয়ের মাঝের এক সমবিন্যস্ত, সজাগ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ পথেই নিহিত। এই উপলব্ধিই মধ্যম প্রতিপদ।
এই মধ্যম প্রতিপদ কেবল জীবনযাপনের একটি নীতি নয়; এটি এক গভীর দার্শনিক উপলব্ধিও। বৌদ্ধ তত্ত্বে ‘দ্বৈতবাদ’—অস্তি ও নাস্তি, সুখ ও দুঃখ, আত্মা ও অনাত্মা, জন্ম ও বিনাশ—এসব দ্বন্দ্বকে পরিহার করাই হলো এই মধ্যপন্থা। নাগার্জুন তাঁর মূলমধ্যমককারিকা-য় বলেন—“শূন্যতা” (śūnyatā) আসলে মধ্যম প্রতিপদই; এটি কোনো চরম নাস্তিবাদ নয়, আবার কোনো অনন্ত অস্তিবাদও নয়। বরং শূন্যতা হলো এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি, যা জগতের সব ঘটনার পরস্পরনির্ভর প্রকৃতি (pratītyasamutpāda) বোঝায়—যেখানে কিছুই স্বতন্ত্রভাবে বা স্থিরভাবে অস্তিত্বশীল নয়, কিন্তু কিছুই সম্পূর্ণভাবে শূন্যও নয়। এই অন্তর্দৃষ্টিই মধ্যম প্রতিপদর দার্শনিক রূপ।
অর্থাৎ, “মধ্যপন্থা” শুধু নৈতিকতা বা আচরণের মাঝারি মানে নয়; এটি জ্ঞানেরও এক অবস্থান। এখানে “মধ্য” মানে হলো সমন্বয়—যেখানে জীবনকে না দমন করা হয়, না লালসায় নিমজ্জিত করা হয়; বরং জীবনকে তার প্রকৃত ছন্দে, সচেতনভাবে অনুভব করা হয়। এটি হলো সচেতন ভারসাম্যের পথ—যেখানে মন “neither clinging (আসক্তি) nor aversion (বিরাগ)” দ্বারা পরিচালিত।
বুদ্ধ এই পথকে বাস্তব জীবনের অনুশীলনের রূপ দিয়েছিলেন অষ্টাঙ্গিক মার্গে (Ariya Aṭṭhaṅgika Magga)—সম্যক দ্রষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক, সম্যক কর্ম, সম্যক আজীবন, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি, ও সম্যক সমাধি—এই আটটি পদক্ষেপই মধ্যম প্রতিপদর বাস্তব রূপ। এগুলি কোনো চরম ত্যাগ বা চরম ভোগ নয়, বরং চেতনার পরিশুদ্ধি, মনোসংযম এবং বোধিতে উন্নীত হবার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।