অবিদ্যা-বিদ্যা: ১২১



এ হচ্ছে জ্ঞানলাভের উপায়, চিন্তার প্রক্রিয়া, বা যৌক্তিক যন্ত্র—যার মাধ্যমে মানুষ অজানা থেকে জানা, অনুমান থেকে নিশ্চিতি, আর সম্ভাবনা থেকে সত্যে পৌঁছায়।

দার্শনিকভাবে, ন্যায় দর্শন যেখানে বলে, জগৎ কারণ-কার্যের যৌক্তিক শৃঙ্খলায় গঠিত এক বাস্তব সত্তা; অদ্বৈত বেদান্ত সেখানে বলে, জগৎ কারণ-কার্যের মায়িক প্রতিফলনে প্রতীয়মান এক চৈতন্যসত্তা। ন্যায় দর্শনে causality-র মূল উদ্দেশ্য জগতের ঘটনার “কীভাবে” ও “কেন”-এর যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা; অদ্বৈতে সেই ব্যাখ্যাই অতিক্রমের পথ—যেখানে বোঝা যায় যে, কারণ ও কার্য উভয়ই মায়ার স্তরে সীমাবদ্ধ, আর চূড়ান্তভাবে একমাত্র ব্রহ্মই সত্য।

তবু, এই দুই দর্শনের মধ্যে গভীর সম্পর্কও আছে—উভয়ের লক্ষ্য জ্ঞান দ্বারা মুক্তি। ন্যায় জগৎকে বিশ্লেষণ করে জ্ঞান অর্জনের পথ দেখায়; অদ্বৈত সেই জ্ঞানকেই পরিশুদ্ধ করে আত্ম-ব্রহ্ম ঐক্যের উপলব্ধিতে রূপান্তরিত করে। ন্যায় বলে, “কারণ জানলে ফল বোঝা যায়”; অদ্বৈত বলে, “যিনি জানেন, সেই চেতনা জানাই চূড়ান্ত কারণ।” ফলে, ন্যায় দর্শনের কার্যকারণ তত্ত্ব যেখানে জ্ঞানের সূচনা, অদ্বৈতের কারণতত্ত্ব সেখানে জ্ঞানের পরিপূর্ণতা। একটিতে জগতের যুক্তি, অন্যটিতে চেতনার ঐক্য—তবু উভয়ই সত্য-অন্বেষণের একই যাত্রাপথের দুই ধাপ।

ন্যায় দর্শন প্রকৃতপক্ষে অ্যারিস্টটলীয় উদ্দেশ্যবাদ (teleology)-এর প্রতিপক্ষ, কারণ এটি জগতের গঠন ও ঘটনাবলির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কখনোই “চূড়ান্ত কারণ” (final cause) বা উদ্দেশ্যনির্ভর নীতি (telos / finality) গ্রহণ করে না। অ্যারিস্টটল বলেছিলেন—প্রতিটি বস্তু বা প্রক্রিয়ার একটি চূড়ান্ত লক্ষ্য থাকে, যার জন্য তা বিদ্যমান; যেমন বীজের লক্ষ্য গাছ হওয়া, চোখের লক্ষ্য দেখা। কিন্তু ন্যায় দর্শন এই “উদ্দেশ্যনির্ভর বাস্তবতা”-ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে।

ন্যায় মতে, বাস্তবতার ব্যাখ্যা হয় কারণ-কার্যের যুক্তিক্রমে (causal necessity)—অর্থাৎ, এক বস্তু অন্য বস্তুর জন্মের জন্য যথাযথ কারণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে, এবং এই সম্পর্কটি অভিজ্ঞতাগত (empirical) ও যুক্তিসংগত (rational), কোনো অতীন্দ্রিয় উদ্দেশ্যনির্ভর নয়। কোনো ফল কেন ঘটল, তার উত্তর ন্যায় দেয় কার্যকর কারণ (efficient cause) ও উপাদান কারণ (material cause)-এর বিশ্লেষণের মাধ্যমে—“কেন ঘটল” নয়, বরং “কীভাবে ঘটল” এই প্রশ্নের মাধ্যমে।

এখানে ন্যায় দর্শনের কারণতত্ত্ব সম্পূর্ণভাবে অভিজ্ঞতামূলক (empirical) এবং যুক্তিনির্ভর (rational)। কোনো ঘটনা ঘটলে, তার পেছনে কী ধরনের সম্পর্ক—সমবায় কারণ (co-operative cause), অসমবায় কারণ (non-co-operative / indirect cause), নিমিত্ত কারণ (efficient / instrumental cause), এবং উপাদান কারণ (material cause)—কাজ করেছে, সেটিই বিশ্লেষণের মূল বিষয়। এর উদ্দেশ্য কেবল জ্ঞানতাত্ত্বিক নিশ্চয়তা (epistemological certainty) অর্জন, কোনো অধিবিদ্যাগত উদ্দেশ্য (metaphysical telos) বা ঈশ্বরনির্মিত নকশা (divine design) নয়।

অতএব, যেখানে অ্যারিস্টটলের চিন্তায় জগতের প্রতিটি রূপ ও পরিবর্তনের অন্তরালে থাকে এক চূড়ান্ত উদ্দেশ্য (finality), সেখানে ন্যায় দর্শন বলে—জগত স্বয়ং তার কারণীয় ক্রম (causal order)-এর মধ্যেই বোধগম্য; এর ব্যাখ্যার জন্য কোনো পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য বা “ঈশ্বরীয় উদ্দেশ্য (divine purpose)”-র আশ্রয় নেওয়ার প্রয়োজন নেই।

এভাবে, ন্যায় দর্শন উদ্দেশ্যনির্ভর বাস্তবতাবাদ (teleological realism)-এর পরিবর্তে প্রতিষ্ঠা করে এক কারণনির্ভর যুক্তিবাদ (causal rationalism)—যেখানে ঈশ্বরও কোনো নকশাকার দেবতা (designer deity) নন, বরং এক বুদ্ধিস্বরূপ নিয়ামক চেতনা (rational governing consciousness)—যিনি কর্ম, ফল, এবং নিয়ম-এর দ্বারা জগৎকে সচল রাখেন, কিন্তু নিজে কোনো উদ্দেশ্যমূলক ইচ্ছাশক্তি (purposive will)-এর অধিকারী নন। তাঁর ভূমিকা শাসন (dominion) নয়, বরং নিয়ন্ত্রণ (regulation); উদ্দেশ্য (purpose) নয়, বরং নিয়ম (law); এবং সৃষ্টি কোনো দেব-লক্ষ্যের বাস্তবায়ন (realization of a divine goal) নয়, বরং বস্তুর কারণীয় স্বভাবের স্বাভাবিক পরিণতি (natural consequence of causal nature)।

ন্যায় তাই জগৎকে দেখে যৌক্তিক কার্যকারণতার শৃঙ্খলা হিসেবে, কোনো দৈব উদ্দেশ্যের পরিকল্পনা হিসেবে নয়। এর উদ্দেশ্য বাস্তবতার নৈতিক বা আধ্যাত্মিক “অর্থ” নির্ণয় নয়, বরং তার জ্ঞানতাত্ত্বিক নিশ্চয়তা—কোনো বস্তু বা ঘটনার পেছনে কী কী নির্ভরতা (hetu), উপাদান (dravyāśraya), ও প্রমাণ (pramāṇa) আছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা।

অর্থাৎ, দার্শনিকভাবে বলতে গেলে, ন্যায় দর্শন causal necessity-কে গুরুত্ব দেয়, teleological finality-কে নয়। এটি এমন এক দর্শন, যা বলে—বিশ্ব এক ক্রমবদ্ধ কারণ-কার্য সম্পর্কের জাল, কিন্তু এই জালের পেছনে কোনো পূর্বনির্ধারিত উদ্দেশ্য বা “চূড়ান্ত অর্থ” অন্বেষণের প্রয়োজন নেই। জ্ঞানই এখানে লক্ষ্য, এবং সেই জ্ঞান আসে যুক্তি ও অভিজ্ঞতার বিশ্লেষণ থেকে, কোনো ঐশী উদ্দেশ্যের অনুমান থেকে নয়।

এই তিনটি ধারণা—হেতু (hetu), দ্রব্যাশ্রয় (dravyāśraya), এবং প্রমাণ (pramāṇa)—ভারতীয় জ্ঞানতত্ত্ব ও যুক্তিবিদ্যার তিনটি স্তম্ভ, যেগুলির উপর দাঁড়িয়ে ন্যায় দর্শন (এবং আংশিকভাবে বৌদ্ধ যুক্তিবিদ্যা) পুরো বাস্তবতাবোধের একটি সুসংবদ্ধ রূপ দেয়।

হেতু (কারণ বা যুক্তি): “হেতু” মানে কেবল “কারণ” নয়, বরং সেই যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ, যা দ্বারা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়। ন্যায় দর্শনের মতে, হেতুর মাধ্যমে আমরা “অনুমান” (anumāna) করি—অর্থাৎ, অদৃষ্ট বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করি। উদাহরণ: পাহাড়ে ধোঁয়া আছে, তাই সেখানে আগুনও আছে। এখানে ধোঁয়া হলো হেতু, আর আগুন হলো সাধ্য (যে-সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হলো)। (এর ভিন্ন ব্যাখ্যাও রয়েছে।) হেতু সেই যৌক্তিক সেতু, যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য তথ্য থেকে অবিদিত সত্যে পৌঁছায়।

দ্রব্যাশ্রয় (যে-সত্তায় গুণ ও ক্রিয়া অধিষ্ঠিত): ন্যায় মতে, গুণ (গুণ) ও ক্রিয়া (কর্ম) কখনোই স্বাধীনভাবে থাকে না—তাদের অবলম্বন বা আশ্রয় দরকার। যে-সত্তা সেই গুণ বা ক্রিয়ার ধারক, তাকেই বলে দ্রব্যাশ্রয়। উদাহরণ: রঙের দ্রব্যাশ্রয় ফুল, গতির দ্রব্যাশ্রয় দেহ, চিন্তার দ্রব্যাশ্রয় আত্মা। ন্যায় দর্শনে নয়টি দ্রব্য (পৃথিবী, জল, অগ্নি, বায়ু, আকাশ, কাল, দিক, আত্মা, মন) এই দ্রব্যাশ্রয়ের মৌল রূপ, যেগুলিতে সমগ্র বিশ্বজগৎ স্থিত। দ্রব্যাশ্রয় তাই অস্তিত্বের সত্তাগত ভিত্তি, যার মধ্যে কারণ ও কার্য—উভয়ই অবস্থিত।

প্রমাণ (বৈধ জ্ঞানের উপায়): প্রমাণ এসেছে “প্র + মা” ধাতু থেকে—অর্থাৎ “সঠিকভাবে জানা।” এটি সেই মাধ্যম, যার দ্বারা সত্য বা বৈধ জ্ঞান (প্রমা) লাভ হয়। ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার: প্রত্যক্ষ (pratyakṣa)—ইন্দ্রিয়ের দ্বারা প্রত্যক্ষ জ্ঞান। অনুমান (anumāna)—হেতুর দ্বারা সিদ্ধান্তমূলক জ্ঞান। উপমান (upamāna)—সাদৃশ্য বা তুলনার দ্বারা জ্ঞান। শব্দ (śabda)—বিশ্বাসযোগ্য কর্তৃকবচন বা শাস্ত্রবাণী দ্বারা জ্ঞান। অর্থাৎ, প্রমাণ হলো সেই জ্ঞানের পথ, যা আমাদের অজ্ঞতা থেকে জ্ঞানে নিয়ে যায়।

অর্থাৎ, হেতু দেয় জ্ঞানের যুক্তিগত ভিত্তি, দ্রব্যাশ্রয় দেয় অস্তিত্বের বাস্তব ভিত্তি, আর প্রমাণ দেয় জ্ঞানের বৈধতা। এই তিনটি একত্রে গঠন করে ভারতীয় দর্শনের ত্রিমাত্রিক কাঠামো—যা আছে (দ্রব্যাশ্রয়), কেন আছে (হেতু) এবং কীভাবে জানা যায় (প্রমাণ)। এভাবে, ন্যায় দর্শন বাস্তবতার যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা এবং জ্ঞানের নৈতিক শৃঙ্খল—দুইয়েরই এক অবিচ্ছিন্ন সংলাপ প্রতিষ্ঠা করে।

অন্যদিকে অদ্বৈত বেদান্তে কারণের ধারণা পৌঁছে যায় এক চূড়ান্ত একত্ববাদের পর্যায়ে। শঙ্করাচার্য বলেন, ব্রহ্মই জগতের উপাদান ও দক্ষ উভয় কারণ—অর্থাৎ, জগতের পদার্থগত উৎসও ব্রহ্ম, আর প্রবর্তক চেতনা বা শক্তিও সেই ব্রহ্ম। এই ধারণাকে বলা হয় অভিন্ননিমিতোপাদান কারণবাদ (abhinna-nimitta-upādāna kāraṇa vāda)—যেখানে একটিমাত্র চেতনা দুই ভূমিকায় প্রকাশিত: একদিকে সৃষ্টির উপাদান, অন্যদিকে তার প্রবর্তক শক্তি। যেমন স্বপ্নের জগৎ স্বপ্নদ্রষ্টার মন থেকেই গঠিত এবং সেই মনই আবার সেই জগৎকে সচল রাখে, তেমনি ব্রহ্মই সমগ্র সৃষ্টির পদার্থ ও স্রষ্টা। এখানে “final cause” বা উদ্দেশ্য কারণও আলাদা নয়—ব্রহ্ম নিজেই উদ্দেশ্য, নিজেই প্রক্রিয়া, নিজেই ফল।

অদ্বৈত বেদান্তের সৃষ্টিতত্ত্বের গভীরে যে-দর্শন নিহিত, তাকে বলা হয় অভিন্ন-নিমিত্ত-উপাদান কারণবাদ (Abhinna-nimitta-upādāna kāraṇa vāda)। এই তত্ত্ব ঘোষণা করে যে, জগৎ সৃষ্টির প্রবর্তক কারণ (দক্ষ বা নিমিত্ত কারণ) এবং পদার্থগত কারণ (উপাদান কারণ)—এই দুই কারণ আদতে এক ও অভিন্ন। যে-সত্তা এই বিশ্বকে প্রকাশিত করেন, সেই সত্তাই তাঁর উপাদান; সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টি, কারণ ও কার্য, ঈশ্বর ও জগৎ—সব এক পরম বাস্তবতারই নানা রূপ। এই সত্তা ব্রহ্ম—যিনি সর্বত্র বিরাজমান, অবিভাজ্য, ও চিরন্তন চেতনার স্বরূপ।

এই ধারণার দার্শনিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় ব্রহ্মসূত্রে (অধ্যায় ২, পাঠ ১), যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, ব্রহ্মই অভিন্ন-নিমিত্ত-উপাদান কারণ, অর্থাৎ তিনিই জগতের প্রবর্তক ও পদার্থ উভয়। একই কথা পাওয়া যায় শ্রুতি-গ্রন্থের ব্যাখ্যাতেও—“Brahman is described in Śruti as the abhinna-nimitta-upādāna-kāraṇa of the world”—যা এই সত্যকেই নিশ্চিত করে যে, জগতের সমস্ত কার্য ও পরিবর্তনের অন্তর্নিহিত কারণ একমাত্র ব্রহ্ম।

এই ধারণাটি বুঝতে গেলে প্রথমে মনে রাখতে হয়—অ্যারিস্টটল তাঁর Metaphysics-এ বলেছিলেন, কোনো বস্তুর অস্তিত্বকে বোঝার জন্য দুটি মৌল প্রশ্নের উত্তর প্রয়োজন—“কে বা কীভাবে এটি সৃষ্টি করল?” (দক্ষ বা efficient cause) এবং “কীসের দ্বারা এটি গঠিত?” (উপাদান বা material cause)। অদ্বৈত বেদান্ত এই দুটি প্রশ্নের উত্তর এক সত্তার মধ্যে খুঁজে পেয়েছে—ব্রহ্মে। ব্রহ্মই সেই পরম চেতনা, যিনি একদিকে সৃষ্টির প্রবর্তক শক্তি, আবার অন্যদিকে জগতের পদার্থগত ভিত্তি।

শঙ্করাচার্যের ব্যাখ্যায় এই ধারণার সার দাঁড়ায়—ব্রহ্মই জগতের কারণ ও কার্য উভয়। ব্রহ্ম সর্বব্যাপী ও অবিভাজ্য; তাই তাঁর বাইরে কোনো দ্বিতীয় উপাদান থাকতে পারে না। জগৎ ব্রহ্মের কোনো বাস্তব রূপান্তর নয়, বরং তাঁরই মায়িক প্রকাশ—যা আমাদের উপলব্ধিতে বাস্তব মনে হয়, কিন্তু পরম দৃষ্টিতে মিথ্যা। এই কারণেই শঙ্কর বলেন, জগৎ হলো “বিবর্ত” (vivarta)—অর্থাৎ, ব্রহ্ম অপরিবর্তিত থেকে জগতের রূপে প্রতীয়মান হন, যেমন অন্ধকারে দড়ি সাপ বলে মনে হয়। দড়ি যেমন পরিবর্তিত হয় না, তেমনি ব্রহ্মও অপরিবর্তিত থেকে এই বহুরূপ জগৎ হিসেবে প্রতীয়মান হন।

এই ধারণাটিকে সহজভাবে বোঝানো যায় স্বপ্ন-উপমায়। স্বপ্নের মানুষ, গাছ, নদী—সবই স্বপ্নদ্রষ্টার মন থেকেই গঠিত, এবং সেই মনই তাদের সঞ্চালন করছে। মন এখানে উপাদান কারণও, নিমিত্ত কারণও। কিন্তু মন নিজে অপরিবর্তিত থেকে যায়। তেমনি ব্রহ্ম—তিনি নিজে পরিবর্তিত হন না, অথচ জগৎ তাঁরই প্রকাশ। এই উদাহরণটি ব্রহ্মের সৃষ্টিশক্তি ও অভিন্নতার ধারণাকে দার্শনিকভাবে স্পষ্ট করে।

এই মতবাদের শ্রুতিপ্রমাণ আমরা পাই তৈত্তিরীয় উপনিষদে (৩.১), যেখানে বলা হয়েছে—“যতো বা ইমানি ভূতানি জায়ন্তে, যেন জাতানি জীবন্তি, যত্ প্রযন্ত্যভিসংবিশন্তি, তদ্ ব্রহ্ম।” অর্থাৎ—“যার থেকে সমস্ত সত্তা জন্মায়, যার দ্বারা তারা জীবিত থাকে, এবং যার মধ্যে বিলীন হয়, সেই-ই ব্রহ্ম।” এই একটি বাক্যেই অভিন্ন-নিমিত্ত-উপাদান কারণবাদের সার নিহিত। জগৎ ব্রহ্ম থেকে উদ্ভূত, তাঁর দ্বারাই সচল, আর তাঁর মধ্যেই লয়প্রাপ্ত।

শঙ্করাচার্য ব্রহ্মসূত্রভাষ্য (২.১.১৪)-এ এই তত্ত্বটি আরো স্পষ্ট করে বলেন—“Brahman is both the efficient (nimitta) and material (upādāna) cause of the universe.” অর্থাৎ, ব্রহ্মই জগতের উৎস ও ভরকেন্দ্র, যিনি নিজে অপরিবর্তিত থেকে সমস্ত পরিবর্তনের আশ্রয়। এই তত্ত্ব অদ্বৈত বেদান্তে পরম একত্বের ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টি, কারণ ও কার্য, চেতনা ও পদার্থ—সবই এক অভিন্ন সত্যের নানা দৃষ্টিকোণ।