অবিদ্যা-বিদ্যা: ১১৯



ন্যায় দর্শনে কারণতত্ত্ব আরও যৌক্তিক রূপে ব্যাখ্যাত হয়েছে। এখানে কারণ তিন প্রকার—সমবায়ী কারণ (inherent cause), যা সরাসরি কার্যরূপে রূপান্তরিত হয়; অসমবায়ী কারণ (non-inherent cause), যা সহায়ক শর্ত হিসেবে কাজ করে; এবং নিমিত্ত কারণ (instrumental or efficient cause), যা ক্রিয়ার প্রবর্তক। উদাহরণস্বরূপ, হাঁড়ির সমবায়ী কারণ হলো মাটি, অসমবায়ী কারণ হলো কুমোরের যন্ত্র এবং নিমিত্ত কারণ হলো কুমোর নিজে। ন্যায় দার্শনিকেরা তাই অ্যারিস্টটলের aitia-এর মতোই বলেন, কোনো প্রভাবকে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে হলে একাধিক ধরনের কারণ চিহ্নিত করতে হয়। তবে পার্থক্য হলো, ন্যায় দর্শন উদ্দেশ্যবাদে যায় না; এটি মূলত যুক্তিসংগত ও অভিজ্ঞতামূলক কারণ বিশ্লেষণ, যেখানে লক্ষ্য হলো কারণ-কার্য সম্পর্কের যৌক্তিক নিশ্চয়তা।

ন্যায় দর্শন (Nyāya Darśana) জগত ও অভিজ্ঞতার ব্যাখ্যায় teleology বা উদ্দেশ্যবাদী ব্যাখ্যা গ্রহণ করে না; বরং এটি একটি empirico-logical causalism—অর্থাৎ, এমন এক দর্শন, যা যুক্তি (reason) ও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা (experience)-এর ভিত্তিতে কারণ-কার্য সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়, কিন্তু কোনো চূড়ান্ত বা ঈশ্বরনির্ধারিত “উদ্দেশ্য” অনুমান করে না।

ন্যায়-দর্শনের মূল মনোভাব হলো বস্তুর স্বরূপ ও ঘটনার ক্রম বোঝা—“কীভাবে” (how) ও “কেন” (why) কোনো কিছু ঘটে, তা বিশ্লেষণ করা। কিন্তু এই “কেন”-এর অর্থ এখানে উদ্দেশ্যগত নয়, বরং কারণগত (causal)। যেমন—অ্যারিস্টটল বলেছিলেন যে, প্রতিটি বস্তুর একটি “final cause” আছে, অর্থাৎ একটি লক্ষ্য বা টেলোস, যার জন্য তা বিদ্যমান; কিন্তু ন্যায় দর্শনের মতে, কোনো বস্তু বা ঘটনা তার কারণগুলির যৌক্তিক ক্রমে ব্যাখ্যা করা যায়, উদ্দেশ্য বা পরিণতি ধরে নয়। এই বৈপরীত্য দুই সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির সংঘাতকে প্রকাশ করে: একদিকে টেলিওলজি (teleology), অন্যদিকে কজালিজম (causalism)।

অ্যারিস্টটলের final cause বা telos ধারণা মূলত বলে—প্রতিটি জিনিসের ভেতরে একটি অন্তর্নিহিত লক্ষ্য (inner purpose) কাজ করে, যা তার বিকাশ ও অস্তিত্বকে পরিচালিত করে। যেমন, বীজের লক্ষ্য হলো গাছ হওয়া; মানুষের লক্ষ্য হলো পরিপূর্ণ সুখ (eudaimonia) লাভ করা। এই দৃষ্টিতে বাস্তবতা মূলত উদ্দেশ্যনির্দেশিত (purpose-driven)—প্রকৃতি একধরনের যুক্তিসংগত পরিকল্পনা অনুসারে অগ্রসর হয়।

কিন্তু ন্যায় দর্শন সেই “উদ্দেশ্যমূলক অন্তর্নিহিততা”-কে অস্বীকার করে। এর মতে, বাস্তব জগত বা ঘটনা কোনো চূড়ান্ত উদ্দেশ্য বা “লক্ষ্যস্বরূপ নকশা” দ্বারা পরিচালিত নয়; বরং প্রতিটি ঘটনা কারণ ও কার্য-এর নিরপেক্ষ শৃঙ্খলায় ব্যাখ্যাত। অর্থাৎ, ন্যায় যুক্তি দেয় যে, বাস্তবতা বোঝার জন্য কারণতত্ত্বই যথেষ্ট—এর পেছনে কোনো “কেন এই ঘটল, কী উদ্দেশ্যে ঘটল” ধরনের metaphysical বা teleological ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই।

এই দৃষ্টিকোণ থেকে, ন্যায় দর্শন এক ধরনের logical realism: এটি বাস্তব জগতকে এমন একটি নিত্যসঙ্গত causal network হিসেবে দেখে, যেখানে প্রতিটি ফল (kārya) কোনো নির্দিষ্ট কারণ (kāraṇa)-এর যৌক্তিক ফলাফল। ঈশ্বর থাকলেও তিনি এখানে “নিমিত্ত কারণ” (efficient cause)—অর্থাৎ প্রবর্তক নীতি—কোনো “উদ্দেশ্যসিদ্ধ নকশাকার” নন। ফলে, ন্যায় দর্শনের ঈশ্বর “বিশ্বের পরিকল্পনাকারী বা নকশাকার (teleological designer)” নন, বরং “যৌক্তিক বিধি বা নিয়মের (rational order) রক্ষক”।

অর্থাৎ, ন্যায় দর্শনে ঈশ্বরকে এমন এক সত্তা হিসেবে দেখা হয়, যিনি বিশ্বের সৃষ্টির কারণ ঠিকই, কিন্তু তাঁর ভূমিকা পশ্চিমা “Design Argument”-এর ঈশ্বরের মতো নয়—যিনি নকশা তৈরি করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জগৎ নির্মাণ করেছেন। ন্যায় মতে, জগৎ ঈশ্বরের কল্পনা বা “design”-এর ফল নয়, বরং তিনি অনাদি পদার্থ, কাল, দিক, আত্মা ও মন—এই চিরন্তন উপাদানগুলিকে নির্দিষ্ট নিয়মে সংগঠিত করেন। তাঁর কাজ হলো প্রকৃতির শাশ্বত কারণ-কার্য নীতিগুলিকে সচল রাখা, যাতে বিশ্বব্যবস্থা যুক্তিসঙ্গত ও নৈতিকভাবে পরিচালিত হয়।

এই ঈশ্বর তাই সৃষ্টিশীল architect নন, বরং নিয়ম-সংরক্ষক (niyati-pālak)—এক এমন চেতনা, যিনি “কর্মফল-নিয়ম” (law of karma)-এর ন্যায়সংগত কার্যকারিতা নিশ্চিত করেন। ন্যায় শাস্ত্র বলে, ঈশ্বর “অদ্বৈত কারণ” নন, বরং “নিয়ন্তা”—যিনি যুক্তি-বিধির (rational order) পরিপালন করেন, কিন্তু নিজে তার বাইরে দাঁড়িয়ে তা ভঙ্গ করেন না।

ফলত, ন্যায় দর্শনের ঈশ্বরতত্ত্বে “ঈশ্বর” কোনো “teleological designer” নন—অর্থাৎ, তিনি জগৎকে কোনো পূর্বনির্ধারিত উদ্দেশ্য (telos) বা অন্তিম লক্ষ্য সামনে রেখে তৈরি করেননি। পাশ্চাত্যের teleological argument বা “design theory”-তে যেমন বলা হয়, ঈশ্বর এক “সচেতন পরিকল্পনাকারী” যিনি উদ্দেশ্যসহ সৃষ্টি ঘটিয়েছেন, ন্যায় তত্ত্বে সেই ভাব সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। এখানে ঈশ্বরের কাজ হলো জগতে কারণ-ফল সম্পর্কের যৌক্তিক শৃঙ্খলা (rational order) বজায় রাখা—যাতে প্রকৃতির নিয়ম ও নৈতিক ন্যায় দুই-ই টিকে থাকে। তাই ন্যায়-ঈশ্বর “creator” নয়, বরং “rational governor”—অর্থাৎ, এমন এক সর্বজ্ঞ বুদ্ধিসত্তা, যিনি জগৎ পরিচালনা করেন যুক্তি ও ন্যায়ের নিয়মে, কিন্তু নিজের ইচ্ছায় সেগুলিকে লঙ্ঘন করেন না।

এখানে “rational” শব্দের অর্থ যুক্তিনির্ভর বা বুদ্ধিগ্রাহ্য—যা কোনো আবেগ, আকাঙ্ক্ষা বা ইচ্ছার বশবর্তী নয়; আর “governor” মানে নিয়ামক বা নিয়ন্ত্রণকারী—যিনি বিধি স্থির করেন না, বরং সেই বিধিগুলির সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করেন। ন্যায় দর্শনে ঈশ্বর সেই নিয়ামক, যিনি কর্মফল-নীতির ভারসাম্য রক্ষা করেন; অর্থাৎ, প্রত্যেক জীব তার নিজের কর্মফল পায় নিরপেক্ষভাবে, কারণ ঈশ্বর সেই ন্যায়বোধের ধারক। এইভাবেই ঈশ্বর এখানে নৈতিক (ethical) এবং বুদ্ধিনির্ভর (rational)—তিনি জগতের ন্যায়বিচার ও বোধশৃঙ্খলার ভিত্তি।

কিন্তু তিনি anthropomorphic creator-god নন। এই শব্দের উৎস দুটি গ্রীক পদ থেকে—anthropos অর্থ “মানুষ” এবং morphē অর্থ “রূপ”। সুতরাং “anthropomorphic god” মানে এমন ঈশ্বর-ধারণা, যেখানে ঈশ্বরকে মানুষের মতো রূপ, চিন্তা, ইচ্ছা ও আবেগ দিয়ে কল্পনা করা হয়। পশ্চিমা ধর্মতত্ত্বে—বিশেষত আব্রাহামিক ঐতিহ্যে—ঈশ্বরকে এক সচেতন সৃষ্টিকর্তা (creator-god) হিসেবে দেখা হয়, যিনি ইচ্ছাশক্তি ও উদ্দেশ্য নিয়ে জগৎ সৃষ্টি করেছেন। তিনি যেন এক দৈব স্থপতি—একজন architect of creation—যিনি আগে “লক্ষ্য” (telos) স্থির করে সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী জগৎ গঠন করেন। এই “উদ্দেশ্যপূর্ণ সৃষ্টি”-ধারণাই teleological design নামে পরিচিত।

কিন্তু ন্যায় বা সাংখ্যের মতো ভারতীয় বিশ্লেষণধর্মী দর্শনে ঈশ্বরকে এইভাবে মানবসদৃশ ভাবে কল্পনা করা হয় না। ন্যায়ের ঈশ্বর চিন্তা বা ইচ্ছার দ্বারা নয়, জ্ঞানের দ্বারা কার্যসম্পন্ন করেন; তিনি “আমি ইচ্ছা করলাম, তাই জগৎ হোক”—এই anthropomorphic মনোবৃত্তি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। তাঁর প্রকৃতি নিস্পৃহ (dispassionate)—অর্থাৎ, কামনা বা ক্রোধের মতো কোনো আবেগ তাঁকে স্পর্শ করে না; সর্বজ্ঞ (omniscient)—অর্থাৎ, সমস্ত কারণ-ফল-ব্যবস্থার পূর্ণ জ্ঞান তাঁর মধ্যে অবস্থিত; এবং অবিকার (unchanging)—তিনি নিজের প্রকৃতিতে অপরিবর্তনীয়।

অতএব, ন্যায়-দর্শনের ঈশ্বরের ধারণা এক গভীর বুদ্ধিবাদী (rationalist) ঈশ্বরচেতনা, যা পাশ্চাত্যের "designer deity" ধারণা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। পাশ্চাত্য দর্শনে, বিশেষত আব্রাহামিক ধর্মতত্ত্বে, ঈশ্বরকে একজন সৃষ্টিকর্তা হিসেবে দেখা হয়, যিনি নিজ ইচ্ছামতো জগৎ সৃষ্টি করেছেন এবং এর ওপর তাঁর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এই ধারণা প্রায়শই ঈশ্বরের ব্যক্তিস্বভাব এবং জগতের প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যকে প্রাধান্য দেয়। এর বিপরীতে, ন্যায়-মতে, ঈশ্বর এমন কোনো স্রষ্টা নন, যিনি ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা উদ্দেশ্যে জগৎ রচনা করেছেন; বরং তিনি এক বুদ্ধিস্বরূপ নিয়ামক চেতনা (rational consciousness)—এক নিত্য জ্ঞানের নীতি।

ন্যায় দর্শন অনুসারে, ঈশ্বর কেবলমাত্র জগৎকে সৃষ্টি করেন না, বরং জগতের সমস্ত কার্যকারণ, শৃঙ্খলা এবং নৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখেন। তিনি কর্ম (karma), ফল (phala), নিয়ম (niyama) ও ন্যায় (justice)—এই চার স্তম্ভের মাধ্যমে জগতের ভারসাম্য রক্ষা করেন। ঈশ্বরকে এখানে একজন নিষ্ক্রিয় দর্শক হিসেবে দেখা হয় না, বরং একজন সক্রিয় সত্তা হিসেবে দেখা হয় যিনি জগতের প্রতিটি ঘটনাকে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মের অধীন রাখেন।

কর্ম: ন্যায়-মতে, প্রতিটি জীবের কর্মই তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। ঈশ্বর এই কর্মফল প্রদানের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ বিচারক হিসেবে কাজ করেন। তিনি নিজের ইচ্ছায় কাউকে পুরস্কৃত বা দণ্ডিত করেন না, বরং জীবের নিজস্ব কর্মের ফল নিশ্চিত করেন। এই প্রক্রিয়া জগতের নৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখে।

ফল: কর্মের অনিবার্য পরিণতি হলো ফল। ঈশ্বর নিশ্চিত করেন যে, প্রতিটি কর্মের যথাযথ ফল উৎপন্ন হয়, যা জীবের পরবর্তী জীবন বা অবস্থাকে প্রভাবিত করে। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে জীবের অতীত কর্মের উপর ভিত্তি করে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়।

নিয়ম: জগতের সমস্ত প্রাকৃতিক এবং নৈতিক নিয়মাবলী ঈশ্বরেরই অংশ। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি থেকে শুরু করে জীবের জীবনচক্র পর্যন্ত প্রতিটি নিয়ম ঈশ্বরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই নিয়মগুলি অনড় এবং অপরিবর্তনীয়, যা জগতের স্থায়িত্ব ও শৃঙ্খলার ভিত্তি।

ন্যায়: ঈশ্বরই চূড়ান্ত ন্যায় প্রতিষ্ঠাতা। তিনি নিশ্চিত করেন যে, জগতে কোনো অবিচার যেন চিরস্থায়ী না হয়। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে মনে হতে পারে যে অবিচার বিদ্যমান, দীর্ঘমেয়াদে প্রতিটি জীবের কর্মফল এবং তার উপর ভিত্তি করে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ঈশ্বর এখানে কোনো পক্ষপাতিত্ব করেন না, বরং এক নিরপেক্ষ বিচারক হিসেবে কাজ করেন।

তাই, ন্যায় দর্শনের ঈশ্বর কেবলমাত্র একজন স্রষ্টা নন, বরং একজন সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান এবং নিরপেক্ষ নিয়ামক, যিনি জগতের নৈতিক এবং কার্যকারণ শৃঙ্খলাকে সর্বদা বজায় রাখেন। তাঁর ভূমিকা ব্যক্তিগত ইচ্ছার চেয়েও জ্ঞান এবং নিয়মের উপর ভিত্তি করে গঠিত, যা পাশ্চাত্য "designer deity" ধারণার চেয়ে ভিন্ন একটি গভীর বুদ্ধিবাদী ঈশ্বরচেতনার দিকে ইঙ্গিত করে।

এই ঈশ্বর কোনো উদ্দেশ্যনির্ভর কারিগর নন; তিনি এক নিয়মের নীতি (principle of order)। তাঁর কাজ সৃষ্টির নকশা নির্মাণ নয়, বরং কসমিক ল'-এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। তিনি সব কিছুর মধ্যে উপস্থিত, কিন্তু নিজের সৃষ্টির কার্যপ্রবাহে হস্তক্ষেপ করেন না। এইভাবে ন্যায়-দর্শনের ঈশ্বর teleological designer নন, বরং এক cosmic rational regulator—যিনি জগতের মধ্যে নৈতিক-কার্যকারণ শৃঙ্খল বজায় রাখেন।

তাঁর মহিমা “সৃষ্টিতে” নয়, “শৃঙ্খলার ধারায়”; “উদ্দেশ্যে” নয়, “বুদ্ধিতে”; “আবেগে” নয়, “সত্তার ন্যায়সংগত স্বরূপে।” তিনি কোনো anthropomorphic দেবতা নন, বরং জ্ঞানের নীতিরই embodiment—এক চেতনা, যার উপস্থিতিতে কার্যকারণ নীতি অটল থাকে, কর্মফল অনিবার্য হয়, এবং জগৎ তার স্বয়ং-সংগত যুক্তিক্রমে স্থিতিশীল থাকে।

এইভাবে ন্যায়-দর্শনের ঈশ্বর বাস্তবতার “ethical-rational law”-এর প্রতিরূপ—যিনি কসমিক বিচার ও ভারসাম্যের নীরব নিয়ন্ত্রক। তাঁর অস্তিত্ব উদ্দেশ্যবাদের নয়, বরং বুদ্ধিবাদের ও ন্যায়বাদের পরম পরিণতি, যেখানে ঈশ্বর স্রষ্টা নয়, বরং নিয়মের চেতন সত্তা।

ন্যায় দর্শনের কারণতত্ত্ব ও অদ্বৈত বেদান্তের কারণতত্ত্ব—এই দুটি দর্শনই জগৎ ও বাস্তবতার ব্যাখ্যা দিতে চায়, কিন্তু তাদের লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি একেবারে আলাদা। ন্যায় দর্শন মূলত এক objectivist realism—যেখানে জগৎকে বাস্তব, স্বাধীন, ও কার্যকারণ নিয়মে পরিচালিত এক সত্তা হিসেবে দেখা হয়। অন্যদিকে, অদ্বৈত বেদান্ত এক অদ্বৈত ভাববাদ—যেখানে জগত কোনো স্বাধীন বাস্তব নয়, বরং এক পরম চেতনার (ব্রহ্মের) মায়িক প্রতিফলন মাত্র।