অবিদ্যা-বিদ্যা: ১১৮



অতএব, ‘চিন্মাত্র’ মানে এমন এক নিঃশব্দ, অপরিবর্তনীয়, কিন্তু চিরজাগ্রত চেতনা—যিনি জগৎকে জানেন না জেনে, বরং তাঁর জানার মধ্যেই জগৎ প্রকাশিত হয়। এই দৃষ্টিতে জগৎ কোনো “বাহ্য” বস্তু নয়, বরং চেতনারই অন্তর্গত প্রতিচ্ছবি—যেমন আয়নায় প্রতিফলিত মুখ আসলে আয়না থেকে আলাদা নয়। তাই চিন্মাত্র চেতনা কোনো সীমানার মধ্যে আবদ্ধ নয়; সে-ই সমস্ত রূপের পেছনে নিঃরূপ, সমস্ত গতির পেছনে অচল, এবং সমস্ত জানার পেছনে সেই পরম “জানা”—যেখানে সব কিছু মিলেমিশে এক হয়ে যায়।

এভাবে ভাবলে, Unmoved Mover হলো সেই চূড়ান্ত বাস্তবতা—যিনি নিজে অপরিবর্তনীয়, তবু তাঁর উপস্থিতিতেই সব পরিবর্তন সম্ভব। তিনি গতি দেন, কিন্তু নিজে অচল; তিনি সৃষ্টি ঘটান, কিন্তু নিজে অনাসক্ত।

দার্শনিকভাবে এর তাৎপর্য গভীর—এখানে পরিবর্তন ও স্থায়িত্ব, গতি ও নীরবতা, পদার্থ ও রূপ—সব এক সুরে মিলেমিশে যায়। এই “অচল প্রবর্তক” কোনো ধর্মীয় ঈশ্বর নন, বরং চেতনার পরম স্তর, যেখানে কার্যকারণ, জানা ও হওয়া—সব একত্রিত হয়ে দাঁড়ায় অস্তিত্বের চূড়ান্ত ঐক্যে।

ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, এই Unmoved Mover ধারণা অনেকটা উপনিষদের “ব্রহ্মচেতনা”-র প্রতিরূপ—যিনি “অচল অথচ সর্বচালক”, “অসঙ্গ অথচ সর্বব্যাপ্ত” এবং যাঁর মধ্যে ক্রিয়া, জ্ঞান ও অস্তিত্ব একাকার। যেখানে অদ্বৈত বলে—“যতো বাচো নিবর্তন্তে, অপ্রাপ্য মনসা সহ, আনন্দং ব্রহ্মণো বিদ্বান্ ন বিভেতি কুতশ্চনেতি।” (তৈত্তিরীয় উপনিষদ, দ্বিতীয় অধ্যায়, চতুর্থ অনুবাক)—যতো (yato),যেখান থেকে,স্থান বা কারণ নির্দেশক। বাচো (vaˉco),কথা বা বাক্য,ভাষা বা শব্দ। নিবর্তন্তে (nivartante),ফিরে আসে,ফিরে যাওয়া বা ব্যর্থ হওয়া। অপ্রাপ্য (apraˉpya),"লাভ না করে, পৌঁছাতে না পেরে",লক্ষ্য অর্জন না করে। মনসা (manasaˉ),মন বা চিন্তা সহকারে,মন বা চিন্তাশক্তি দ্বারা। সহ (saha),সাথে,সঙ্গে। আনন্দং (aˉnandam˙),আনন্দস্বরূপকে,পরম সুখ বা ব্রহ্মকে। ব্রহ্মণঃ (Brahmaṇo),ব্রহ্মের,পরম সত্তার। বিদ্বান্ (vidvaˉn),যিনি জানেন বা উপলব্ধি করেন,জ্ঞানী ব্যক্তি। ন বিভেতি (na bibheti),ভয় পান না,নির্ভয় হন। কুতশ্চন (kutasˊcana),"কিছু থেকে, কোথাও থেকে",কোনো কিছু থেকেই। ইতি (iti),"এইভাবে, শেষ",পরিসমাপ্তি—"যেখান থেকে বাক্য বা কথা মন-সহ তাকে লাভ না করেই ফিরে আসে, সেই ব্রহ্মের আনন্দস্বরূপকে যিনি জানেন, তিনি আর কিছু থেকেই ভয় পান না।" সেখানেই প্রকাশের সীমা শেষ—অ্যারিস্টটলের Unmoved Mover সেখানে একই ‘নীরব কিন্তু সক্রিয় চেতনা’-র দার্শনিক প্রতিধ্বনি হয়ে ওঠে।

এভাবে Metaphysics গ্রন্থে অ্যারিস্টটল প্রথম বারের মতো “অস্তিত্ব”কে পদার্থের ঊর্ধ্বে তুললেন—এখানে জগৎ আর কেবল পদার্থ নয়, বরং রূপ, উদ্দেশ্য ও কারণের এক অভিন্ন সংগীত।

ভারতীয় তুলনায় দেখা যায়, অ্যারিস্টটলের এই “Unmoved Mover” অনেকটা উপনিষদীয় “ব্রহ্ম”-এর মতো—যিনি নিজে অপরিবর্তনীয়, তবু তাঁর থেকেই জগৎ উদ্ভূত। যেমন বলা হয়েছে—“যত্র বাচো নিবর্তন্তে”—যেখানে বাক্য ও মন ফিরে আসে, কারণ সেখানে প্রকাশের সীমা শেষ।

অতএব, Metaphysics শুধু একটি গ্রন্থগত বিদ্যা নয়, এটি সেই মুহূর্ত, যখন মানুষ প্রথম বুঝতে চেয়েছিল: “জগৎকে বোঝা মানে কেবল তার বস্তু নয়, তার অস্তিত্বকেও বোঝা”। আর এই অনুসন্ধানই পরবর্তীকালে হয়ে ওঠে সমগ্র দর্শনের ভিত্তি—হোক তা পশ্চিমের ontology, বা ভারতের সত্তাতত্ত্ব।

“দক্ষ কারণ” (Efficient Cause) এবং “উপাদান কারণ” (Material Cause)—এই দুটি ধারণা প্রাচীন দর্শনে সৃষ্টিতত্ত্ব বোঝার অন্যতম মৌল চাবিকাঠি। এর উৎস অ্যারিস্টটলের Metaphysics-এ, যেখানে তিনি “কারণ” (aitia)-এর চারটি মৌল রূপ নির্ধারণ করেছিলেন—উপাদান কারণ (material cause), রূপগত কারণ (formal cause), প্রবর্তক বা দক্ষ কারণ (efficient cause) এবং উদ্দেশ্য কারণ (final cause)। এই চারটি কারণ মিলেই কোনো সৃষ্ট বা ঘটনার সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দেয়, তবে এর মধ্যে উপাদান ও দক্ষ কারণ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই দুটি ব্যাখ্যা করে কীসের দ্বারা কোনো জিনিস গঠিত হয় এবং কে বা কীভাবে সেটি গঠিত হয়।

অ্যারিস্টটলীয় কাঠামোয় উপাদান কারণ বোঝায় সেই পদার্থ বা উপাদানকে, যা কোনো বস্তু বা সৃষ্টির ভিত্তি হিসেবে থাকে—যেমন মাটির হাঁড়ির উপাদান কারণ হলো মাটি, কাঠের টেবিলের উপাদান কারণ হলো কাঠ, সোনার আংটির উপাদান কারণ হলো সোনা। অর্থাৎ, এটি বস্তুর অস্তিত্বের ভৌত ও গঠনমূলক ভিত্তি। অন্যদিকে, দক্ষ কারণ হলো সেই শক্তি বা নীতি, যা সৃষ্টিকে কার্যকর করে তোলে—যেমন হাঁড়ির দক্ষ কারণ হলো কুমোর, আংটির দক্ষ কারণ হলো সোনার কারিগর এবং টেবিলের দক্ষ কারণ হলো কাঠমিস্ত্রি। উপাদান কারণ তাই বস্তুটির substrate, আর দক্ষ কারণ হলো তার initiating agent—যে কাজটি ঘটায় বা প্রক্রিয়াটি শুরু করে।

এই দুই কারণের সমন্বয়েই সৃষ্টি সম্পূর্ণ হয়। কোনো পদার্থ যদি থাকে, কিন্তু তাকে রূপ দেওয়ার কোনো প্রবর্তক না থাকে, তবে সৃষ্টি সম্ভব নয়; আবার প্রবর্তক থাকলেও যদি উপাদান না থাকে, তবে কার্য বাস্তবায়িত হয় না। তাই অ্যারিস্টটলের মতে, বিশ্ব ও এর সমস্ত পরিবর্তন এই দুই প্রকার কারণের সহযোগিতায় ঘটে—উপাদান সরবরাহ করে অস্তিত্বের ভিত্তি, আর দক্ষ জাগায় কার্যকারণগত গতি।

ভারতীয় দার্শনিক ঐতিহ্যে এই ধারণা একটি নতুন ব্যাখ্যা পায়, বিশেষত অদ্বৈত বেদান্ত ও সাংখ্য দর্শনে, যেখানে “উপাদান” ও “দক্ষ” কারণকে কেবল পদার্থগত বা যান্ত্রিক নয়, বরং চেতনা ও অস্তিত্বের স্তরে ব্যাখ্যা করা হয়। এইভাবে প্রাচীন গ্রিক দর্শনের কারণতত্ত্ব ভারতীয় দার্শনিক চিন্তায় এক গভীর অস্তিত্বতাত্ত্বিক ও আধ্যাত্মিক রূপ ধারণ করে।

অ্যারিস্টটলের দর্শনে “আইটিয়া” বা “আইতিয়া” (aitia) শব্দের অর্থ ও তাৎপর্য দেখা যাক। গ্রিক ভাষায় aitia সাধারণভাবে “কারণ” বা “উৎস” বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। তবে অ্যারিস্টটল নিজে এই শব্দটিকে “cause” (কারণ) বলে অনুবাদ করলেও তিনি সতর্ক ছিলেন—যে প্রত্যক্ষ অর্থে তিনি এটা ব্যবহার করছেন, তা পাশ্চাত্য “cause”-র অর্থের মতো একমাত্র “যে-জিনিস অন্য জিনিস সৃষ্টি করেছে” নয়। বরং aitia-এর অর্থ “ব্যাখ্যা” বা “কেন” (“why”)-র উত্তর হিসাবেও বেশি প্রচলিত, এ মর্মে ধরা যেতে পারে।

অ্যারিস্টটল লিখছেন—“তখনই আমরা কোনো জিনিসের জ্ঞান লাভ করি, যখন আমরা তার ‘কেন’ ধরে পেয়েছি; অর্থাৎ তার কারণ (aitia) ধরতে পেরেছি”। aitia ধারণাটি শুধুই কারণ সম্পর্কিত একটি মৌলিক ধারণা নয়; এটি ব্যাখ্যার কাঠামো-র অংশ। অ্যারিস্টটল দেখিয়েছেন, কোনো বস্তু বা পরিবর্তনকে পুরোপুরি বোঝার জন্য “কেন?” প্রশ্নের একাধিক ধরনের উত্তর থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:

উপাদান কারণ (material cause): “কীসের দ্বারা?”

রূপগত কারণ (formal cause): “কী রূপে?”

দক্ষ কারণ (efficient cause): “কে বা কীভাবে?”

উদ্দেশ্য কারণ (final cause): “কী-জন্য?”

অর্থাৎ, aitia হলো “কেন?” বা “কীসের দ্বারা?”-সহ প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার একটি সিস্টেম্যাটিক উপাদান। কারণ এটি “cause” শব্দের সাধারণ ব্যবহার থেকে একটু ভিন্ন: aiding the notion of explanation rather than only a triggering event. সংক্ষেপে, aitia মানে “cause” বা “explanation”—তবে অ্যারিস্টটলের মত অনুযায়ী শুধুই “triggering cause” নয়; বরং “কেন এবং কীভাবে” যাওয়ার কারণ বা বিশ্লেষণ।

এটি বিশ্বের যে-কোনো সৃষ্টির বা পরিবর্তনের একাধিক দিক একসাথে ধরে বোঝার জন্য একটি কাঠামো। ফলে, যখন আমরা কোনো বস্তু বা ঘটনাকে পুরোপুরি বোঝার চেষ্টা করি, তখন আমরা শুধু বলি না—“উপাদান কী?” বা “কারণ কী?”—বরং, এই চার কারণের মিশ্রণ খুঁজতে হয়।

গ্রিক aitia এবং ভারতীয় কারণতত্ত্ব (kāraṇa-tattva)—এই দুটি ধারণা যদিও দুটি ভিন্ন দার্শনিক সভ্যতার ভিন্ন ভাষায় উদ্ভূত, তবু তাদের অনুসন্ধানের কেন্দ্রে আছে একই প্রশ্ন—“কেন কিছু বিদ্যমান?” এবং “অস্তিত্বের প্রকৃতি কীভাবে বোঝা যায়?” অ্যারিস্টটলের Metaphysics-এ aitia বলতে বোঝানো হয়েছে কেবল কোনো ঘটনার যান্ত্রিক কারণ নয়, বরং তার সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা—অর্থাৎ, কীসের দ্বারা, কীভাবে, কোন রূপে এবং কেন কিছু সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর মতে, কোনো বস্তুর প্রকৃত জ্ঞান তখনই সম্ভব, যখন আমরা তার এই চারটি দিক জানতে পারি—উপাদান কারণ, রূপগত কারণ, দক্ষ কারণ এবং উদ্দেশ্য কারণ। এভাবেই অ্যারিস্টটল কারণকে একটি বহুস্তরীয় ব্যাখ্যার কাঠামো হিসেবে দাঁড় করান—একটি বস্তুর জন্ম ও অস্তিত্বের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত উপাদান, প্রক্রিয়া, প্রবর্তক এবং উদ্দেশ্য—সব মিলিয়ে গঠিত হয় তার aitia, অর্থাৎ তার “কেন”-এর পূর্ণাঙ্গ উত্তর।

ভারতীয় দর্শনে “কারণতত্ত্ব” একই ধরনের বহুমাত্রিক ভাবনার প্রতিফলন, যদিও এর ভাষা ও উদ্দেশ্য কিছুটা ভিন্ন। এখানে “কারণ” (kāraṇa) শব্দটি কেবল পদার্থগত বা প্রক্রিয়াগত কারণ নয়, বরং এক গভীর অস্তিত্বতাত্ত্বিক ও আধ্যাত্মিক ধারণা। সাংখ্য, ন্যায় ও বেদান্ত—এই তিন ধারায় কারণকে বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, কিন্তু প্রত্যেকেরই লক্ষ্য ছিল জগৎ-সৃষ্টির প্রক্রিয়া, পরিবর্তনের নিয়ম এবং চেতনার ভূমিকা ব্যাখ্যা করা।

সাংখ্য দর্শনে, বিশ্ব দুই চিরন্তন নীতির দ্বারা ব্যাখ্যাত—প্রকৃতি ও পুরুষ। প্রকৃতি হলো উপাদান কারণ, অর্থাৎ সমস্ত রূপ ও পদার্থের মূল ভিত্তি; আর পুরুষ হলো দক্ষ কারণ, অর্থাৎ সেই চৈতন্য উপস্থিতি যা প্রকৃতিকে ক্রিয়াশীল করে তোলে, যদিও নিজে কিছু করে না। এখানে সৃষ্টি কোনো ইচ্ছাকৃত কর্ম নয়, বরং প্রকৃতির স্বাভাবিক বিকাশ, পুরুষের উপস্থিতির আলোয়। এই ব্যাখ্যাটি অ্যারিস্টটলের “material” ও “efficient cause” ধারণার সঙ্গে অত্যন্ত সাদৃশ্যপূর্ণ—প্রকৃতি হলো পদার্থগত উপাদান, পুরুষ হলো প্রবর্তক শক্তি। তবে সাংখ্যে অ্যারিস্টটলের মতো কোনো “final cause” বা উদ্দেশ্য নেই; সৃষ্টি এখানে স্বয়ংক্রিয়, টেলিওলজিকাল নয়।

টেলিওলজিকাল (Teleological) শব্দটির উৎস গ্রিক দুটি শব্দ থেকে—telos অর্থাৎ “উদ্দেশ্য” বা “final goal”, এবং logos অর্থাৎ “যুক্তি”, “তত্ত্ব” বা “ব্যাখ্যা”। তাই Teleology মানে দাঁড়ায় — উদ্দেশ্যমূলক ব্যাখ্যা বা উদ্দেশ্যনির্ভর দর্শন।

দার্শনিকভাবে, টেলিওলজিকাল দৃষ্টিভঙ্গি হলো এমন এক পদ্ধতি, যা বলে—বিশ্বের প্রতিটি ঘটনা, পরিবর্তন, বা সত্তা কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বা পরিণতি (final cause)-এর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অর্থাৎ, কিছুই অকারণে ঘটে না; প্রতিটি প্রক্রিয়ার পেছনে একটি লক্ষ্য (purpose) কাজ করে।

অ্যারিস্টটলের দর্শনে এই ধারণা স্পষ্টভাবে দেখা যায়। তিনি বলেছিলেন, প্রকৃতিকে বোঝার জন্য শুধু উপাদান (material cause) ও প্রবর্তক (efficient cause) নয়, বরং চূড়ান্ত উদ্দেশ্য (final cause) জানতে হবে। যেমন—একটি বীজের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো গাছে পরিণত হওয়া; চোখের উদ্দেশ্য হলো দেখা; হৃদয়ের উদ্দেশ্য হলো রক্ত সঞ্চালন। অতএব, প্রকৃতিতে প্রতিটি জিনিসের অস্তিত্ব ও কার্যকারণ সেই চূড়ান্ত উদ্দেশ্য (telos)-এর দ্বারা নির্ধারিত।

আধুনিক বিজ্ঞানে যদিও অনেকাংশে টেলিওলজিকাল ব্যাখ্যার পরিবর্তে যান্ত্রিক (mechanistic) ব্যাখ্যা এসেছে—অর্থাৎ, ঘটনা “কেন ঘটছে” না দেখে “কীভাবে ঘটছে” প্রশ্নে জোর দেয়—তবুও জীববিজ্ঞান, নীতিশাস্ত্র, ও দর্শনের কিছু শাখায় টেলিওলজিকাল চিন্তা আজও সক্রিয়।

নৈতিক দর্শনে, টেলিওলজি মানে এমন নীতি, যেখানে কাজের ফলাফলই তার মূল্য নির্ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ, Utilitarianism (সর্বাধিক সুখবাদ)—“যে-কাজ অধিক সুখ আনে, সেটিই নৈতিক”—এটিও একধরনের টেলিওলজিকাল নীতিবাদ।

টেলিওলজিকাল দর্শন বলে—জগৎ কোনো অন্ধ গতির ফল নয়, বরং এক সচেতন, লক্ষ্যনির্ভর প্রক্রিয়া; প্রতিটি অস্তিত্ব তার নিজস্ব উদ্দেশ্যের দিকে গতি করছে, যেমন নদী সাগরের দিকে।