ফলে উৎপলদেবের প্রত্যভিজ্ঞান—“জ্ঞান মানে স্মরণ”—এই দর্শনে বাস্তবতায় রূপ পায়। জগৎ ত্যাগ নয়, জগৎ-মধ্যে চেতনার স্বরূপ চিনে নেওয়া—এটাই পথ। যখন দেখা, জানা, করা—সবই এক চৈতন্যের লীলার আভাস বলে ধরা পড়ে, তখনই ব্যক্তি-চেতনা নিজের সীমা ছাড়িয়ে পরম-চেতনার সঙ্গে একময় হয়। এই একময়ের আনন্দ—অভিনবগুপ্ত যাকে বলেন, “তদ্-এতদৈক্য-আনন্দ”—এটাই হলো কাশ্মীর শৈব দর্শনের সিদ্ধান্ত: শিবই চেতনা, জগৎ চেতনার আভাস; তাই জগৎ মায়া নয়—চৈতন্যের লীলাময় প্রকাশ।
“তদ্-এতদৈক্য-আনন্দ (tad-etad-aikya-ānanda)” শব্দবন্ধটি কাশ্মীর শৈব দর্শনের মূল অন্তর্দৃষ্টি প্রকাশ করে—যেখানে “তৎ (tad)” মানে পরম চেতনা, শিব বা চূড়ান্ত সত্য, আর “এতৎ (etat)” মানে এই জগৎ, শরীর, মন, ইন্দ্রিয় ও অভিজ্ঞতার সম্পূর্ণ ক্ষেত্র। সাধারণ জ্ঞানে মানুষ ভাবে—ঈশ্বর (তৎ) ও জগৎ (এতৎ) দুটি আলাদা বাস্তবতা। একদিকে নিত্য, অপরিবর্তনীয় পরম শিব, আর অন্যদিকে পরিবর্তনশীল, নশ্বর, জগৎ। কিন্তু কাশ্মীর শৈব দর্শন এই বিভাজনকে ভ্রান্ত বলে মনে করে।
অভিনবগুপ্ত বলেন—যখন চেতনা নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করে, তখন বোঝা যায় যে, তৎ ও এতৎ আসলে এক। অর্থাৎ, চেতনা (শিব) এবং তার প্রকাশ (জগৎ) আলাদা নয়। জগৎ কোনো ভিন্ন বস্তু নয়; এটি সেই চেতনারই প্রকাশমান দিক, তাঁর আনন্দময় স্পন্দন। এই একত্বের অনুভবই “তদ্-এতদৈক্য”—তৎ ও এতৎ-এর ঐক্য।
এই ঐক্য উপলব্ধি করার মুহূর্তেই সাধক বা জ্ঞানী অনুভব করেন এক অদ্ভুত পরিতৃপ্তি, এক সীমাহীন আনন্দ। কেননা তখন আর কোনো বিভেদ থাকে না—দ্রষ্টা, দর্শন ও দ্রষ্টব্য এক হয়ে যায়। এই আনন্দই “আনন্দ (ānanda)”—অর্থাৎ পরমানন্দ। এটি কোনো আবেগ বা সুখ নয়, বরং চেতনার নিজেরই স্ব-সচেতন উচ্ছ্বাস।
অভিনবগুপ্তের ভাষায়, এই অবস্থায় জ্ঞানী ব্যক্তি দেখে—“যা-কিছু আমি দেখি, জানি, বা অনুভব করি—সবই সেই এক চেতনার প্রকাশ; আমি ও বিশ্ব আলাদা নই।” এই উপলব্ধিই “তদ্-এতদৈক্য-আনন্দ”—অর্থাৎ “পরম চেতনা ও তার প্রকাশের একত্বের আনন্দ”।
সরলভাবে বলতে গেলে, এটি সেই অভ্যন্তরীণ অভিজ্ঞতা, যখন আপনি উপলব্ধি করেন—“ঈশ্বর কোথাও বাইরে নেই; এই মুহূর্তে আমি যে শ্বাস নিচ্ছি, আমি যে পৃথিবী দেখছি, আমি যে ভাবছি—সবই সেই চেতনারই প্রকাশ।” তখন আর কোনো দূরত্ব থাকে না, কোনো দ্বন্দ্ব থাকে না—থাকে কেবল এক নিঃশব্দ আনন্দ, যেখানে জগৎ ও শিব, দেখা ও জানা, অস্তিত্ব ও চেতনা—সব মিলে গেছে এক অনন্ত ঐক্যে।
এই অবস্থাই কাশ্মীর শৈব দর্শনের পরম লক্ষ্য—তদ্-এতদৈক্য-আনন্দ—যেখানে শিব ও শক্তি, ব্যক্তি ও পরম, দেখা ও হওয়া—সব এক হয়ে যায়। এই আনন্দই মুক্তি, এবং এই ঐক্যই জীবনের অন্তরতম সত্য।
অভিনবগুপ্ত বলেন—বোধমাত্রমিদং বিশ্বং (এই জগৎ কেবল বোধ মাত্র (Consciousness/Awareness alone)), শূন্যতা চিদ্রূপম্ ((এবং) শূন্যতা হলো চেতনা-স্বরূপ (Consciousness is its true form))—অর্থাৎ, "এই সমগ্র বিশ্ব কেবল বোধ বা উপলব্ধি মাত্র (মন থেকে ভিন্ন নয়), আর এই (মহাজাগতিক) শূন্যতা হলো বিশুদ্ধ চেতনার স্বরূপ।" বিশ্ব আসলে বোধেরই প্রকাশ, আর শূন্যতা সেই বোধের গভীরতম, অব্যক্ত স্তর। বাক্যটি হলো কাশ্মীর শৈবধর্মের (ত্রিকা বা ত্রিক দর্শন) একটি নীতি, যা যোগাচার বৌদ্ধ দর্শন এবং অদ্বৈত বেদান্তের ধারণার সমন্বয়ে গঠিত।
উক্তিটি দুটি প্রধান ধারণা প্রতিষ্ঠা করে—
১. জ্ঞানের দ্বারা জগৎ সৃষ্টি: "বোধমাত্রমিদং বিশ্বং"—এই অংশটি বৌদ্ধ দর্শনের যোগাচার শাখার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা বলে যে, বাহ্যিক জগৎ আমাদের মনেরই প্রতিভাস বা প্রপঞ্চ (Mind-Only)। কাশ্মীর শৈবধর্ম এই ধারণাকে গ্রহণ করে বলে, জগৎ শিবের বিমর্শ শক্তি (প্রতিফলন ক্ষমতা) দ্বারা সৃষ্ট একটি বোধ মাত্র। এটি বস্তুগতভাবে বিদ্যমান নয়, বরং চেতনার একটি প্রকাশ।
২. শূন্যতার ইতিবাচকতা: "শূন্যতা চিদ্রূপম্"—এই অংশটি কাশ্মীর শৈববাদের নিজস্ব মত। এখানে শূন্যতাকে অভাব বা অনস্তিত্ব (যেমন মধ্যমক বৌদ্ধমত) বলা হয়নি। বরং, এই শূন্যতা হলো সেই অব্যক্ত, সীমাহীন আধার, যা বিশুদ্ধ চেতনা বা চিৎ (চিৎস্বরূপ)। এটি হলো পরমশিবের সেই পূর্ণ নীরবতা (Plenum of Consciousness)।
বাক্যটি ঘোষণা করে: যা-কিছু দৃশ্যমান (জগৎ), তা চেতনার প্রকাশ; আর যা-কিছু অব্যক্ত (শূন্যতা), তা চেতনার স্বরূপ (শিব)।
“জগৎ আমাদের মনেরই প্রতিভাস”—এই ধারণাটি ভারতীয় অদ্বৈত চিন্তাধারার অন্যতম সূক্ষ্মতম উপলব্ধি, যার বিভিন্ন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় বেদান্ত, বৌদ্ধ যোগাচার, ও কাশ্মীর শৈব দর্শনে, এবং পরবর্তীতে আধুনিক অদ্বৈত দর্শনের নানা রূপে।
বেদান্ত মতে, ব্রহ্মই একমাত্র পরম সত্য; জগৎ সেই ব্রহ্মেরই নাম-রূপময় প্রকাশ। মাণ্ডূক্য উপনিষদ ও গৌড়পাদাচার্যের কারিকা-য় বলা হয়েছে—“চিত্তমাত্রম্ ইদং যদিদং ত্রৈধাতুকম্”—অর্থাৎ, যা-কিছু দেখা যায়, যা-কিছু অভিজ্ঞতায় আসে, তা আসলে চেতনারই প্রতিফলন। এখানে “মন” বলতে ব্যক্তিগত মস্তিষ্ক বা মানসিক ক্রিয়া বোঝানো হয় না, বরং সেই সার্বিক, সর্বব্যাপী চৈতন্যকে বোঝানো হয়, যা সব কিছুর ভিতরে ও বাইরে একই সঙ্গে বিদ্যমান। শংকরাচার্যের ভাষ্যে এই ধারণা প্রকাশ পায়—“জগত্ মিথ্যা, ব্রহ্ম সত্য”—এই “মিথ্যা” মানে অকার্যকর নয়, বরং নিরপেক্ষ, নির্ভরশীল বাস্তবতা; জগৎ কার্যকর, কিন্তু তার ভিত্তি চেতনা।
কাশ্মীর শৈব দর্শনে, বিশেষত অভিনবগুপ্তের তন্ত্রলোক ও উৎপলদেবের ঈশ্বর-প্রত্যভিজ্ঞান-এ জগৎকে বলা হয়েছে শিবচেতনার “আভাস”—অর্থাৎ চেতনার নিজেরই উদ্ভাসন। শিব এখানে নিস্তব্ধ আলোকচেতনা, আর তাঁর শক্তি, অর্থাৎ কালিকা, সেই আলোর স্পন্দিত প্রকাশ। ফলে বিশ্ব কোনো ভ্রম নয়, বরং শিবচেতনার আনন্দময় লীলা। যা-কিছু আমরা দেখি—রূপ, শব্দ, ভাবনা, শরীর, সময়—সবই সেই এক চেতনার প্রতিফলন। এখানেই “মাইন্ড-অনলি” ধারণাটি চূড়ান্ত মাত্রা পায়: সবই চেতনার ভেতর ঘটছে, চেতনার বাইরে কিছু নেই।
বৌদ্ধ যোগাচার তত্ত্বও এই ধারণাকে অন্য ভাষায় প্রকাশ করেছে—“বিজ্ঞানমাত্রবাদ” (vijñaptimātra)। বসুবন্ধু ও অসঙ্গের মতে, জগৎ কোনো বাহ্য বাস্তব নয়, এটি কেবল বোধের প্রবাহের প্রতিফলন—চেতনার একের পর এক প্রতীতি (cognitive event)। আমরা যা দেখি, তা বস্তু নয়, বরং আমাদের বোধের নির্মাণ। কিন্তু এই বোধ ব্যক্তিগত নয়; এটি সমষ্টিগত ও সর্বজনীন চৈতন্যপ্রবাহের অংশ, যেখানে সব প্রাণী এক অনন্ত জ্ঞানধারার মাধ্যমে যুক্ত।
আধুনিক অদ্বৈত দর্শনে রমন মহর্ষি, নিসর্গদত্ত মহারাজ, এবং আত্মানন্দ কৃষ্ণ মেননের মতো সাধকরা এই তত্ত্বকে আরও সরল ও প্রত্যক্ষ ভাষায় বলেন—“সব কিছু সচেতন উপস্থিতিতে উদ্ভাসিত।” রমন মহর্ষি বলেন, “মনস্তু কিম্?—মন কী?”—মন নিজ উৎসে ফিরে গেলে দেখা যায়, তা কোনো আলাদা সত্তা নয়; তার উৎসই চেতনা। নিসর্গদত্ত বলেন, “বিশ্ব তোমার ‘I-Am’-এর মধ্যে উদয় ও লয় পায়”—অর্থাৎ, এই ‘আমি আছি’-চেতনা থেকেই সমস্ত জগতের অভিজ্ঞতা জন্ম নিচ্ছে।
এভাবে প্রাচীন উপনিষদ থেকে আধুনিক অদ্বৈত, যোগাচার থেকে কাশ্মীর শৈব পর্যন্ত, সব ধারার মূল কথাটি এক: জগৎ কোনো বাহ্য বাস্তব নয়; এটি চেতনারই প্রতিফলন—চেতনা যেভাবে নিজেরই দিকে তাকায়, সেভাবেই জগৎ রূপ নেয়। “মাইন্ড-অনলি” মানে তাই ব্যক্তিগত মনের স্বপ্ন নয়, বরং সার্বিক চেতনার আত্মদর্শন। বেদান্তে একে বলে “ব্রহ্মদৃষ্টি”, কাশ্মীর শৈবে “চৈতন্যময় আভাস”, আর যোগাচারে “বোধমাত্রতা”—সব পথেই সত্য এক: জগৎ চেতনারই প্রকাশ, চেতনা ছাড়া কিছুই স্বতন্ত্রভাবে অস্তিত্বশীল নয়।
বোধমাত্রতা (Vijñapti-mātratā) শব্দটি বৌদ্ধ যোগাচার দর্শনের মূল ধারণা, যার অর্থ—“চেতনা-মাত্র” বা “বোধই একমাত্র সত্য”। এটি সেই তত্ত্ব, যা বলে, যা-কিছু আমরা দেখি, শুনি, অনুভব করি বা চিন্তা করি—সবই বোধ বা চেতনার প্রতিফলন; চেতনার বাইরে কোনো স্বতন্ত্র “বস্তু” নেই। এই ভাবটি বোঝার জন্য আগে একটু প্রেক্ষাপট দরকার। বৌদ্ধ দর্শনের প্রাথমিক ধারা, বিশেষত অভিধর্ম, জগৎকে বিশ্লেষণ করেছিল অসংখ্য ধম্ম বা উপাদানে—রূপ, বেদনা, সঞ্জ্ঞা, সংস্কার, বিজ্ঞান ইত্যাদিতে। কিন্তু যোগাচার শাখা, যা অসঙ্গ ও বসুবন্ধুর হাত ধরে বিকশিত হয়, এই বিশ্লেষণের চেয়েও গভীরে গিয়ে বলল—এই সমস্ত ধম্ম, এমনকি “বস্তু” ও “চিন্তা”-ও কেবল বিজ্ঞান বা বোধের অভ্যন্তরীণ প্রতীতি—অর্থাৎ cognitive representation। যখন আমি কোনো গাছ দেখি, তখন আমি গাছ নামক কোনো স্বতন্ত্র বস্তুকে “বাইরে” দেখি না; আমি যা দেখি, তা হলো গাছ-বোধের প্রতীতি, আমার চেতনার ভেতরে গঠিত এক প্রতিরূপ।
এখানে “বোধ” (বিজ্ঞান, vijñāna) কেবল চিন্তা নয়; এটি সচেতনতার সেই কার্য, যা অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করে। প্রতিটি দেখা, শোনা, ছোঁয়া, চিন্তা—সবই বোধের অভ্যন্তরীণ উদ্ভাস। “মাত্র” (mātra) উপসর্গটি বোঝায়—চেতনা ছাড়া অন্য কিছু নেই। ফলে বোধমাত্রতা মানে বোধই বাস্তব, বাকিটা বোধের প্রতিচ্ছবি।
ভারতীয় বৌদ্ধ দর্শনে, বিশেষত যোগাচার সম্প্রদায়ে, বাস্তবতার প্রকৃতি উপলব্ধির জন্য তিনটি স্তর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই স্তরগুলি আমাদের বাহ্যিক জগৎ এবং আমাদের চেতনার মধ্যে সম্পর্ককে গভীরতরভাবে বুঝতে সাহায্য করে।
প্রথমত, বহির্বস্তুবাদ (Bahir-artha-vāda): এই স্তরটি একটি প্রচলিত ধারণাকে উপস্থাপন করে, যেখানে মনে করা হয় যে, বস্তুসমূহ মনের বাইরে স্বতন্ত্রভাবে বিদ্যমান এবং মন কেবল সেগুলিকে প্রত্যক্ষ করে বা জানে। অর্থাৎ, আমরা যা দেখি, স্পর্শ করি বা অনুভব করি, তা আমাদের মন থেকে পৃথক একটি বাস্তবতার অংশ। এই ধারণাটি সাধারণ মানুষের কাছে সহজবোধ্য হলেও, যোগাচার মতবাদ এটিকে ভ্রান্ত বলে গণ্য করে। যোগাচারীরা যুক্তি দেন যে, যদি বস্তুর অস্তিত্ব মন থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন হতো, তাহলে বস্তুর জ্ঞান বা উপলব্ধি কীভাবে সম্ভব হতো? মন এবং বস্তুর মধ্যে এক গভীরতর সম্পর্ক বিদ্যমান, যা কেবল বাহ্যিক অস্তিত্বের ধারণার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায় না।
দ্বিতীয়ত, চিত্তমাত্রবাদ (Citta-mātra): বহির্বস্তুবাদের সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করে, যোগাচার সম্প্রদায় চিত্তমাত্রবাদের ধারণা দেয়। এই মতবাদ অনুযায়ী, যা-কিছু আমরা অভিজ্ঞতা করি, তা সবই চিত্ত বা মন থেকে উদ্ভূত। তবে এখানে "চিত্ত" বলতে কোনো ব্যক্তিগত, সংকীর্ণ মনকে বোঝানো হয় না। বরং, এটি একটি সমষ্টিগত চেতনা বা বোধের স্রোতকে নির্দেশ করে, যা সমস্ত সংবেদন, ধারণা এবং অভিজ্ঞতার মূল ভিত্তি। আমাদের ব্যক্তি অভিজ্ঞতাগুলি এই বৃহত্তর চিত্তের অংশবিশেষ মাত্র। এই স্তরে, বাহ্যিক জগতের অস্তিত্বকে পুরোপুরি অস্বীকার করা হয় না, বরং বলা হয় যে, তার উপলব্ধি বা অভিজ্ঞতা চিত্তের দ্বারাই গঠিত। যেমন, একটি স্বপ্নাবস্থায় আমরা যে-জগৎ দেখি, তা যেমন আমাদের মনেরই সৃষ্টি, তেমনি জাগ্রত অবস্থার জগৎও চিত্তের একটি অভিব্যক্তি।
তৃতীয়ত, বোধমাত্রতা (Vijñapti-mātratā): এটি যোগাচার দর্শনের আরও সূক্ষ্ম এবং গভীরতম স্তর। বোধমাত্রতা চিত্তমাত্রবাদ থেকে একধাপ এগিয়ে গিয়ে বলে যে, মন বা চেতনা কেবল "আছে" তাই নয়, বরং এটি নিজেকে "অভিজ্ঞতা" হিসেবেই প্রকাশ করে। এখানে মন এবং অভিজ্ঞতাকে অবিচ্ছিন্ন ও একীভূত সত্তা হিসেবে দেখা হয়। অর্থাৎ, জগৎ কেবল চিত্তের দ্বারা সৃষ্ট নয়, বরং জগৎ নিজেই সেই অভিজ্ঞতার ধারা। আমাদের প্রতিটি সংবেদন, চিন্তা, আবেগ, এবং উপলব্ধির সমষ্টিই হলো জগৎ। অন্যভাবে বললে, আমরা যা-কিছু অনুভব করি, তা মনের ভেতরেরই একটি প্রক্রিয়া, যা বাইরে দৃশ্যমান জগতের রূপ নেয়। এই বোধমাত্রতার উপলব্ধি আমাদের জাগতিক দুঃখ এবং বন্ধন থেকে মুক্তির পথ দেখায়, কারণ যখন আমরা বুঝতে পারি যে, বাহ্যিক জগতের কঠোর বাস্তবতা আসলে চেতনারই একটি প্রকাশ, তখন আমরা সেই প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখি। এটি শূন্যতার ধারণার সাথেও সংযুক্ত, যেখানে চূড়ান্ত অর্থে কোনো স্বতন্ত্র সত্তা নেই, কেবল নিরন্তর পরিবর্তনশীল চেতনার প্রবাহ।