একজন ব্রহ্মের কথা বলেন, অন্যজন শূন্যতার; একজন অস্তিত্বের ঐক্যে মুক্তি খোঁজেন, অন্যজন অস্তিত্বের অনস্তিত্বে প্রশান্তি খোঁজেন—তবুও উভয়ের নীরব গন্তব্য এক—দ্বৈততার অতিক্রম, অজ্ঞতার বিলুপ্তি, এবং চেতনার পরম স্বচ্ছতা।
ব্রহ্ম ও শূন্যতার ভাষার পার্থক্য: অদ্বৈত বেদান্ত “ব্রহ্ম” শব্দটি ব্যবহার করে—যা সৎ-চিৎ-আনন্দ, অর্থাৎ অস্তিত্ব, চেতনা ও আনন্দের অবিচ্ছেদ্য ঐক্য। মাধ্যমক “শূন্যতা” শব্দটি ব্যবহার করে—যা নিঃস্বভাবতা, অর্থাৎ সব সত্তার স্বতঃসিদ্ধ সারশূন্যতা। বাহ্যিকভাবে দুইটি শব্দ বিপরীত—একটি পূর্ণতার ইঙ্গিত, অন্যটি শূন্যতার। কিন্তু দার্শনিকভাবে দুটি একই বাস্তবতাকে দুই ভিন্ন দিক থেকে প্রকাশ করছে। অদ্বৈতের ব্রহ্ম সমস্ত গুণ, রূপ ও পার্থক্যের ঊর্ধ্বে; মাধ্যমকের শূন্যতাও সমস্ত গুণ, রূপ ও পার্থক্যের ঊর্ধ্বে।
অদ্বৈতের ব্রহ্ম কোনো নির্দিষ্ট বস্তু নয়, কোনো ব্যক্তিগত ঈশ্বরও নয়—বরং এমন এক বাস্তবতা, যা সমস্ত ধারণাকে অন্তর্ভুক্ত করে কিন্তু নিজে কোনো ধারণায় সীমাবদ্ধ নয়। মাধ্যমকের শূন্যতাও তেমন—এটি কোনো ‘নাস্তিত্ব’ নয়, বরং এমন এক অবস্থা, যেখানে সমস্ত সত্তা ও অসত্তা ধারণাই লুপ্ত। অতএব, উভয়েই “অধিভৌতিক বাস্তবতা” নয়, বরং অধিবিদ্যাগত উপস্থিতি নিয়ে কথা বলে—যা বোধের সীমা পেরিয়ে স্ব-চেতনতার নিস্তরঙ্গ অবস্থা।
অভিজ্ঞতার ঐক্যে মিলনবিন্দু: অদ্বৈতের পরম অভিজ্ঞতা হলো আত্মানুভূতি—“আমি ব্রহ্ম।” মাধ্যমকের পরম অভিজ্ঞতা হলো প্রজ্ঞা—“আমি কিছুই নই।” কিন্তু এই “আমি কিছুই নই”-এর গভীরতম তাৎপর্য হলো—যখন “আমি” নামক কেন্দ্রটি বিলীন, তখন যা অবশিষ্ট থাকে, তা অনন্ত সচেতনতা। এবং, সেটিই তো অদ্বৈতের ব্রহ্মস্বরূপ চেতনা।
অদ্বৈতে আত্মা ব্রহ্মের সঙ্গে অভিন্ন, মাধ্যমকে আত্মা স্বতঃসিদ্ধ নয়, বরং প্রতীত্যসমুত্পন্ন—কিন্তু ফলাফল একই—উভয়েই অহং-অতিক্রমী চেতনার কথা বলে। অদ্বৈত যাকে বলে “ব্রহ্মসাক্ষাৎকার”, মাধ্যমক তাকে বলে “শূন্যতার প্রত্যক্ষ উপলব্ধি”—দু-ক্ষেত্রেই মন ও ভাষা থেমে যায়, এবং চেতনা নিজের নিঃসীম স্বচ্ছতায় স্থির হয়।
নীরবতার দর্শনে ঐক্য: অদ্বৈত ও মাধ্যমক উভয়েই পরম সত্যকে নীরবতার মাধ্যমে প্রকাশ করে। শঙ্কর বলেন—“ব্রহ্মকে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না; যে জানে, সে বলে না; যে বলে, সে জানে না।” নাগার্জুনও বলেন—“যা বলা যায়, তা মিথ্যা; যা সত্য, তা বলা যায় না।” এই দুই বক্তব্য একে অপরের প্রতিবিম্বের মতো।
অদ্বৈতের নীরবতা আত্মস্বরূপ পূর্ণতার; মাধ্যমকের নীরবতা সমস্ত ধারণার অবসানের। কিন্তু উভয়েরই শেষপ্রান্তে যে-নিস্তব্ধতা, সেই নীরবতা নিজেই পরম প্রকাশ—যেখানে আর কিছু বলার থাকে না, কিছু জানারও থাকে না।
যুক্তি ও অনুধ্যানের সীমা অতিক্রম: অদ্বৈতের অনুধ্যান হলো “নেতি নেতি”—“এ নয়, ও নয়।” মাধ্যমকের বিশ্লেষণও একইভাবে “চতুষ্কোটিবিনির্মুক্ত”—অর্থাৎ “না অস্তি, না নাস্তি, না উভয়ম্, না নৈব উভয়ম্।” দু-পথই সমস্ত প্রস্তাব, যুক্তি, ও শ্রেণিবিভাগ ভেঙে দেয়। ফলত, উভয়ের চিন্তা এক “অবসানবাদী যুক্তি”—যেখানে যুক্তি নিজেকে অতিক্রম করে নীরব বোধে রূপ নেয়। এটি জ্ঞানের শেষ নয়, বরং জ্ঞানের পরিসমাপ্তি—যেখানে জ্ঞান নিজেকে পেরিয়ে এক নিঃশব্দ অন্তর্দৃষ্টিতে পরিণত হয়।
‘চতুষ্কোটি’ শব্দটি কোথা থেকে এল? দেখা যাক।
চতুষ্কোটি (Catuṣkoṭi) কোনো একক বৌদ্ধ উদ্ভাবন নয়; এর মূল শেকড় পাওয়া যায় প্রাচীন ভারতীয় যুক্তি ও বিশ্লেষণপ্রণালীতে, যেখানে দর্শনের প্রশ্ন সাধারণত চারটি বিকল্পে (koṭi) বিশ্লেষিত হতো। “কোটি” (koṭi) মানে সীমা, প্রান্ত, বা দিক—অর্থাৎ কোনো প্রস্তাব বা অনুমানের সম্ভাব্য চারটি যৌক্তিক বিকল্প।
প্রাচীন ভারতীয় চিন্তায় (উপনিষদ, সাংখ্য, ন্যায়, বৌদ্ধ অভিধর্ম ইত্যাদি), যখন কোনো বিষয় নিয়ে বিচার করা হতো, তখন বলা হতো—এটি আছে (asti), এটি নেই (nāsti), এটি আছে ও নেই উভয়ই (ubhaya), এটি না আছে, না নেই (anubhaya)। এই চারটি সম্ভাবনাই চিন্তার সীমান্ত নির্দেশ করে। এগুলিকে একত্রে বলা হতো—চতুষ্কোটি বা tetralemma (fourfold negation)।
প্রাচীন যুক্তিবিদ্যা ও বৌদ্ধ অভিধর্মে ব্যবহার: ন্যায় ও বৈশেষিক মতে, অস্তিত্ব (sat) ও অনস্তিত্ব (asat) দুটি পৃথক বাস্তব অবস্থা। বস্তু হয় আছে (উৎপন্ন), নাহয় নেই (অব্যক্ত)। তৃতীয় বা চতুর্থ কোনো সম্ভাবনা নেই। বৌদ্ধ অভিধর্ম মতে, বস্তু (ধর্ম) ক্ষণিক; তার অস্তিত্বও সম্পর্কনির্ভর—তবে তারা সাধারণত “অস্তি” ও “নাস্তি”-র মধ্যেই আলোচনা করত। কিন্তু মধ্যমক এই দুইয়ের সীমা অতিক্রম করে বলে—কোনো কিছু “অস্তি”, “নাস্তি”, “উভয়” বা “কোনোটিই নয়”—এই চার বিকল্পের কোনোটি দিয়েই সত্যকে ধরা যায় না।
“জগৎ কীসের থেকে জন্মায়?” নাগার্জুনের সময় ভারতীয় দর্শনে সবাই এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিল—এই জগৎ বা কোনো সত্তা কোথা থেকে আসে? চারটি সম্ভাব্য উত্তর ছিল—নিজ থেকে (নিজকারণ); অন্য থেকে (পরকারণ); উভয় থেকে (নিজ + অন্য); কোনোটি থেকেই নয় (অকারণভাবে)। এই চারটি বিকল্পই ভারতীয় দার্শনিক পরম্পরায় বিভিন্ন মত দ্বারা স্বীকৃত ছিল—কেউ বলেছিল, সত্তা নিজের থেকেই উদিত হয় (সাংখ্য, নিরীশ্বরবাদীরা); কেউ বলেছিল, অন্যের দ্বারা উদিত হয় (বৈশেষিক প্রভৃতি); কেউ বলেছিল, উভয় থেকেই (মিশ্রবাদী দৃষ্টিভঙ্গি); আর কেউ বলেছিল, কোনো কারণ নেই (অকৃতকারণবাদী নৈরাশ্যবাদ)।
নাগার্জুনের অবস্থান ছিল—সবগুলোই ভুল। নাগার্জুন বলেন, এই চারটি অবস্থার মধ্যে কোনোটি-ই টেকে না। তিনি যুক্তির মাধ্যমে দেখান, প্রত্যেকটি বিকল্পই আত্মবিরোধী।
(ক) যদি কোনো বস্তু নিজে থেকেই জন্মায় (স্বতঃসম্ভব), তাহলে জন্মের অর্থই থাকে না। কারণ, যা নিজে থেকেই বিদ্যমান, তার তো আবার “জন্ম” হওয়ার প্রয়োজন নেই। যেমন, যদি আগুন নিজেই নিজের মধ্য থেকে জন্মায়, তাহলে আগুন সর্বদা আগেই ছিল—তাহলে “জ্বলা” বলে নতুন কিছু ঘটল কি? অতএব, “নিজে থেকে উদিত” ধারণা যুক্তিসঙ্গত নয়—এটি অনন্ত, অকারণ, এবং পরিবর্তনের ধারণাকেই নষ্ট করে।
(খ) যদি কোনো বস্তু অন্য কিছুর থেকে জন্মায় (পরসম্ভব), তাহলে “অন্য” বলতে কী বোঝানো হচ্ছে? যদি “অন্য” জিনিসটি নিজে আবার অন্য কোনো কিছুর উপর নির্ভর করে, তাহলে আমরা এক অন্তহীন পশ্চাদ্ধারা (Infinite Regress)-তে পড়ে যাই—যার কোনো প্রথম কারণ থাকে না। যেমন, যদি বীজ থেকে গাছ হয়, তবে বীজ আবার কোথা থেকে এল? আর তার সেই উৎস? তাহলে কোনো একপর্যায়ে কারণ-প্রক্রিয়া নিজেই অযৌক্তিক হয়ে পড়ে। অতএব, “অন্য থেকে উদিত” ধারণাও টেকে না।
(গ) যদি কোনো বস্তু নিজে ও অন্য—উভয়ের থেকেই জন্মায় (উভয়সম্ভব), তাহলে আবার দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। কারণ “নিজে” ও “অন্য” দুটি পরস্পরবিরোধী ধারণা। এক জিনিস কীভাবে একই সঙ্গে নিজের কারণও হবে এবং অন্যের কারণও হবে? যেমন, একজন মানুষ নিজেকে জন্ম দিতে পারে না, আর অন্যকেও একই সময়ে জন্ম দিতে পারে না। অতএব, এই তৃতীয় বিকল্পও অসম্ভব।
(ঘ) যদি কোনো বস্তু কিছু থেকেও না জন্মায় (অকারণ), তাহলে সেটি একেবারে আকস্মিক, এলোমেলো ও অযৌক্তিক হয়ে দাঁড়ায়। তাহলে কোনো নিয়ম বা কারণ-ফল সম্পর্কই থাকবে না। যেমন, যদি কিছু একেবারে কারণ ছাড়াই হঠাৎ তৈরি হতে পারে, তাহলে আজ হঠাৎ এক গাছ ঘরের ভেতর জন্মাবে না কেন? অকারণ সৃষ্টি যুক্তিগতভাবে অনর্থক। অতএব, চতুর্থ বিকল্পও ব্যর্থ।
সব বিকল্প ভাষা ও চিন্তার সীমা: নাগার্জুনের সিদ্ধান্ত—এই চারটি বিকল্পই চিন্তার ও ভাষার কাঠামো থেকে আসে। কিন্তু বাস্তবতা (তত্ত্ব) চিন্তার বাইরে। তিনি বলেন—উৎপত্তি, বিনাশ, অস্তিত্ব, অনস্তিত্ব—সবই পারস্পরিক নির্ভরতা (প্রতীত্যসমুত্পাদ)। অতএব, কোনো বস্তু বা সত্তা “নিজস্ব স্বভাব” (স্বভাব-সত্তা) নিয়ে জন্মায় না। সব কিছু অন্য কিছুর দ্বারা নির্ভরভাবে উদিত, তাই কোনো কিছুকেই “স্বতন্ত্র” বা “চূড়ান্তভাবে” ধরা যায় না। এটাই শূন্যতা (Śūnyatā)—অস্তিত্বের না-থাকা নয়, বরং স্বতঃসিদ্ধতার অনুপস্থিতি।
দার্শনিক অর্থ: নাগার্জুন এখানে কোনো নৈরাশ্যবাদ দিচ্ছেন না। তিনি বলছেন—যে “উৎপত্তি” ও “অস্তিত্ব” আমরা ভাবি, সেগুলো কেবল ভাষার ও চিন্তার প্রক্ষেপণ। বাস্তবে কেবল সম্পর্ক ও শর্তের প্রবাহ আছে, যার কোনো স্বতন্ত্র কেন্দ্র নেই। অতএব, “কোথা থেকে আসে” প্রশ্নটিই ভুল প্রশ্ন। কারণ “আসা” ও “যাওয়া” কেবল আপেক্ষিক স্তরের ধারণা; পরম সত্যে কিছুই জন্মে না, কিছুই বিলীন হয় না—সবই নির্ভরতার নাচের মধ্যে চলমান।
নাগার্জুনের যুক্তি এক গভীর বিপ্লব—তিনি দেখান যে, সব দার্শনিক অবস্থাই চিন্তার দ্বৈত কাঠামোর মধ্যে আটকে থাকে। যখন মন এই দ্বৈততা অতিক্রম করে, তখনই দেখা যায়—শূন্যতা মানে অদ্বৈত—অস্তিত্ব ও অনস্তিত্বের মধ্যবর্তী মধ্যপথ।
ফলে, উৎপত্তি, অস্তিত্ব, অনস্তিত্ব—সব ধারণাই যুক্তির দিক থেকে আপেক্ষিক। সত্য কোনো “কোটি” বা সীমার মধ্যে পড়ে না—তাই সে “চতুষ্কোটিবিনির্মুক্ত”।
চারটি কোটি ভাঙার অর্থ:
নাগার্জুন এই চারটি বিকল্প একে একে ভেঙে দেন—
অস্তি (It exists): যদি সত্য স্বভাবতই থাকে, তবে পরিবর্তন অসম্ভব।
নাস্তি (It doesn’t exist): যদি কিছুই না থাকে, তবে অভিজ্ঞতাই মিথ্যা।
উভয় (Both): বিরোধে পতন ঘটে—কিছু একসাথে থাকতে ও না-থাকতে পারে না।
উভয় নই (Neither): তাহলে কোনো সম্পর্ক বা জ্ঞানই সম্ভব নয়।
এভাবে, চারটি যুক্তিই একে অপরকে বাতিল করে দেয়, এবং চিন্তার কাঠামো ভেঙে পড়ে। এই অবস্থায় মস্তিষ্ক থেমে যায়; চিন্তা থেমে গেলে, কেবল চৈতন্যমাত্রা অবশিষ্ট থাকে। এই অবস্থাকেই বুদ্ধ বলেছেন—“নির্বাণ”।
দার্শনিক উদ্দেশ্য—যুক্তি নয়, উপলব্ধি: নাগার্জুনের লক্ষ্য কোনো “নৈরাশ্যবাদ” তৈরি করা নয়; তিনি চেয়েছেন—চিন্তা ও ভাষার দ্বন্দ্ব অতিক্রম করে বাস্তবতাকে প্রত্যক্ষ করতে। চতুষ্কোটি এখানে একটি মানসিক কাঠামো, আর “চতুষ্কোটিবিনির্মুক্ত” হওয়া মানে—চিন্তা, ধারণা, তত্ত্ব—এই সব কিছুর সীমা পেরিয়ে নির্বিচার চৈতন্যে স্থিত হওয়া। এই অবস্থায় না কোনো “হ্যাঁ”, না কোনো “না”—কেবল এক নীরব জাগরণ। এটাই মধ্যমক প্রজ্ঞা।
চতুষ্কোটি ও মধ্যম পথ (Madhyamā Pratipad): বৌদ্ধ দর্শনের একটি মৌলিক স্তম্ভ হলো মধ্যম পথ (Madhyamā Pratipad), যা গৌতম বুদ্ধ নিজেই প্রচার করেছিলেন। তিনি দুটি চরম প্রান্তকে পরিহার করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবনধারা এবং দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বনের কথা বলেছিলেন। এই দুটি প্রান্ত হলো:
অস্তিত্ববাদ (śāśvata-vāda): এই মতবাদ অনুযায়ী, সব কিছু চিরন্তন এবং অপরিবর্তনীয়। আত্মা, জগৎ বা অন্য কোনো সত্তা অবিনশ্বর—এই বিশ্বাসই অস্তিত্ববাদ। এটি চরম স্থায়িত্বের ধারণা দেয়, যেখানে কোনো পরিবর্তন বা বিনাশের সম্ভাবনা নেই।
উচ্ছেদবাদ (uccheda-vāda): এর বিপরীতে, উচ্ছেদবাদ মনে করে যে, মৃত্যুতে সব কিছুর সম্পূর্ণ বিনাশ ঘটে। আত্মা বা সত্তার কোনো অস্তিত্ব থাকে না, এবং এই জীবনই শেষ। এটি চরম ক্ষণস্থায়িত্ব এবং শূন্যতার ধারণা দেয়।
বুদ্ধ এই দুই প্রান্তিক মতবাদকে পরিহার করে একটি মধ্যম পথের কথা বলেছিলেন, যা কোনো চরম বিশ্বাসে আবদ্ধ না হয়ে বাস্তবতাকে এর প্রকৃত রূপে উপলব্ধি করতে শেখায়। পরবর্তীকালে, মহাযান বৌদ্ধধর্মের অন্যতম প্রধান দার্শনিক নাগার্জুন (আনুমানিক ১৫০-২৫০ খ্রিস্টাব্দ) এই মধ্যম পথের ধারণাকে আরও বিস্তারিত ও গভীর করে তোলেন। তিনি কেবলই অস্তিত্ব ও উচ্ছেদবাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং আরও দুটি অতিরিক্ত সীমা অন্তর্ভুক্ত করে "চতুষ্কোটি" (Catuṣkoṭi) বা চারটি কোটির ধারণা প্রবর্তন করেন। এই চারটি কোটি হলো:
১. অস্তিত্ব (Is): কোনো কিছুর অস্তিত্ব আছে।
২. অনস্তিত্ব (Is not): কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই।
৩. উভয় (Both is and is not): কোনো কিছু একই সময়ে আছে এবং নেই।
৪. উভয় নয় (Neither is nor is not): কোনো কিছু আছে বা নেই—এর কোনোটির মধ্যেই পড়ে না।