আত্মগত (নিজের ভেতরের) কারণের নতুন ধারণা (Radical Thesis): বস্তুনিষ্ঠ বা বাইরের জগতের কাঠামো যে আসলে দুর্বল, তা দেখানোর পর দার্শনিক আলোচনাটি বিশ্বের উৎপত্তি বা কারণ (Karana) সম্পর্কে একটি একেবারে নতুন ধারণা দেয়। এটি জোর দিয়ে বলে: "জগতের কারণ (Karana) হলো আমাদের ইন্দ্রিয় অঙ্গ (Indriyam)"। এই দাবিটি যুক্তিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত আমরা মনে করি, জগতের কারণ হলো কোনো বাহ্যিক, বাইরের উৎস—যেমন প্রকৃতি (জড়), কোনো সৃষ্টিকর্তা বা কোনো মহাজাগতিক শক্তি। কিন্তু এই নতুন দৃষ্টিকোণটি সেই ধারণা বদলে দিয়ে বলে, আমরা যে-জগৎ অনুভব করি, তার প্রধান এবং মূল কারণ হলো উপলব্ধির অভ্যন্তরীণ যন্ত্র—অর্থাৎ, আমাদের নিজেদের ইন্দ্রিয় অঙ্গগুলো। সংক্ষেপে, পৃথিবীর কারণ বাইরে নয়, আমাদের ভেতরেই—আমাদের চোখ, কান ইত্যাদি ইন্দ্রিয়ের মধ্যেই।
যদি আমাদের ইন্দ্রিয় অঙ্গগুলি (Indriyam) সত্যিই জগতের কারণ হয়, তাহলে এর যৌক্তিক অর্থ দাঁড়ায়:
জগতের কাঠামো: আমরা যেভাবে বিশ্বকে অনুভব করি, তা বাইরের কোনো স্বাধীন বা বস্তুনিষ্ঠ বাস্তবতা নয়, যাকে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি শুধু রেকর্ড করে। বরং, এই বিশ্ব মূলত আমাদের সংবেদনশীলতা এবং বুদ্ধি দিয়ে তৈরি-করা একটি কাঠামো।
দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি: এই ধারণাটি ভাববাদী বা আত্মগত দার্শনিক মতের সঙ্গে মেলে। এটি সেই সাধারণ ধারণাটিকে (সরল বাস্তববাদ) চ্যালেঞ্জ করে, যেখানে মনে করা হয় যে, আমরা বাইরের জগতকে সরাসরি ও নির্ভুলভাবে দেখতে পাই।
চেতনার সম্পর্ক: এর মানে হলো, আমরা যে অনুভূত বিশ্ব দেখি, তা আমাদের ভেতরের প্রক্রিয়া (ইন্দ্রিয়) থেকে তৈরি হওয়া ফল (কার্য)। ফলে, এই দৃশ্যমান জগৎ মানুষের চেতনা এবং তার সীমাবদ্ধতার সাথে গভীরভাবে যুক্ত।
জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমগুলোর সম্পর্ক:
অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা: যেহেতু জগতের কারণকে বাইরের উৎস থেকে সরিয়ে আমাদের ভেতরে (ইন্দ্রিয়ের মধ্যে) আনা হয়েছে, তাই অনুমান করে পাওয়া জ্ঞান (যা আমরা যুক্তি দিয়ে পাই) কেমন, তা এরপর খতিয়ে দেখা দরকার।
অনুমানের গুরুত্ব: দার্শনিক আলোচনা দ্রুত এই বিষয়টির উপর জোর দেয় যে, অনুমানের কার্যকারিতা (Anumanattinre karana) বোঝাটা খুব জরুরি। কারণ, অনুমান (Anumana) হলো ন্যায় বা মীমাংসা-র মতো অনেক ভারতীয় দর্শনে জ্ঞানকে সঠিক প্রমাণ করার একটি প্রধান মাধ্যম (প্রমাণ)।
সিদ্ধান্তের ভিত্তি: তাই, অনুমান করার ক্ষমতা বা শর্তটি (Karana) কী, তা প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। কারণ, এই শর্তটিই নির্ধারণ করে, অনুমানের মাধ্যমে পাওয়া সিদ্ধান্তগুলো কতটা সঠিক বা বৈধ।
আগের আলোচনা অনুযায়ী, যেহেতু ইন্দ্রিয় অঙ্গগুলিই আমাদের অনুভব করা জগতের মূল কারণ, তাই এর ফল হলো:
অনুমানের সম্পর্ক: আমাদের অনুমান করার ক্ষমতা নির্ভর করে আমাদের ইন্দ্রিয় এবং বুদ্ধি (জ্ঞানীয় যন্ত্র) কীভাবে কাজ করে, তাদের কী কী ক্ষমতা আছে এবং তাদের সহজাত দুর্বলতাগুলো কী—এই সব কিছুর ওপর। মন (Manas) যেহেতু সব তথ্যকে একসাথে করে, তাই সে-ও এর অন্তর্ভুক্ত।
আত্মগত নির্ভরতা: অনুমানের মাধ্যমে যে-জ্ঞান পাওয়া যায়, তা নির্ভর করে আমাদের উপলব্ধ তথ্যের ওপর। আর সেই উপলব্ধিই যেহেতু আমাদের নিজস্ব যন্ত্র (ইন্দ্রিয়) দ্বারা তৈরি, তাই আমাদের যুক্তিনির্ভর কাঠামোটিও মূলত আত্মগত অভিজ্ঞতা বা ভেতরের অনুভূতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
চূড়ান্ত উপসংহার: এর মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আমাদের ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা শুধু সরাসরি ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার মধ্যেই থাকে না, বরং তা থেকে পাওয়া বুদ্ধিভিত্তিক বা বিমূর্ত জ্ঞানের ভেতরেও ঢুকে পড়ে। এভাবেই জ্ঞানতত্ত্বীয় সমালোচনার একটি সম্পূর্ণ সমাপ্তি ঘটে।
সম্পর্কের ভাঙন থেকে ভাববাদের দিকে: এই পর্যন্ত আসা যুক্তিগুলোর একটি অখণ্ড দার্শনিক ধারাবাহিকতা আছে। তা হলো—বাইরের জগতের কাঠামো যখন ভেঙে পড়ে, তখন তার কারণ হিসেবে আমাদের ভেতরের বা আত্মগত কারণ-কেই মেনে নিতে হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি এভাবে ঘটে:
কাঠামোর অসংগতি: প্রথমত, প্রমাণ করা হয় যে, বাইরের জিনিসগুলো নিজেদের মধ্যে চূড়ান্ত সম্পর্ক (সম্বন্ধানুপপত্তি) যৌক্তিকভাবে বোঝাতে পারে না বলে বাস্তবতার কাঠামোই ত্রুটিপূর্ণ।
শৃঙ্খলার কারণ: দ্বিতীয়ত, ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও, জগতকে অভিজ্ঞতায় সুশৃঙ্খল ও বাস্তব মনে হয়। এই শৃঙ্খলা কেন এলো, তার একটা কারণ তো দিতেই হবে।
ভেতরের সৃষ্টি: উপসংহারে বলা হয় যে, এই আপাত শৃঙ্খলাটি অবশ্যই আমাদের মন ও ইন্দ্রিয় দিয়ে তৈরি বা চাপানো হয়েছে। তাই, ইন্দ্রিয় অঙ্গ (Indriyam)-কেই জগতের গঠনমূলক কারণ (Karana) হিসেবে ধরতে হবে।
এই পথ ধরে আমরা অ-দ্বৈতবাদী ভাববাদের এক গভীর রূপে পৌঁছাই। অর্থাৎ, জগত কোনো স্বাধীন সত্তা নয়, বরং এটি আমাদের ভেতরের জ্ঞান ও অনুভব যন্ত্রের ফল। এর ফলে, জগতের বাস্তবতা সেই চেতনা থেকে আলাদা নয়, যা এই জগতকে তৈরি করে এবং অনুভব করে।
অ-দ্বৈত সমালোচনার সারসংক্ষেপ: এই কঠোর দার্শনিক আলোচনায় প্রকাশিত জগত বা প্রপঞ্চ-এর বাস্তবতাকে একটি পাঁচ-ধাপের জটিল সমালোচনা দিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই সমালোচনা শুরু হয়েছে কেন জগৎকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা দরকার, তা দিয়ে; তারপর বাইরের বাস্তবতাকে প্রমাণ করার উপায়গুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং সবশেষে বাস্তবতার উৎস কোথায়, তা বদলে দেওয়া হয়েছে।
সমালোচনার মূল ভিত্তিগুলো: পুরো বিশ্লেষণটি এই পাঁচটি মূল বিষয়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে—
শুরুর কারণ (পদ্ধতিগত ভিত্তি): জগৎকে প্রথমেই একটি 'বিতর্কিত বিষয়' (বিবাদাস্পদী ভূতঃ) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার ফলে এটিকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তর্ক ও বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
জ্ঞানের দিক থেকে ব্যর্থতা (জ্ঞানতত্ত্বীয় ব্যর্থতা): প্রমাণ করা হয়েছে যে, জগত সাধারণ প্রমাণ বা জ্ঞানের উপায় (প্রমাণ) দিয়ে প্রতিষ্ঠিত নয় (প্রমাণ-সিদ্ধত্বাৎ)। কারণ, এটি আত্মা-র মতো স্বয়ং-প্রমাণিত (স্বপ্রকাশ) হওয়ার কঠিন পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।
আপেক্ষিকতা প্রমাণ (ইতিবাচক প্রদর্শন): দেখানো হয়েছে যে, সকল পদার্থ (দ্রব্যত্বাৎ)-ই বাতিলযোগ্য (বাধ/Badha)। তাই তারা চূড়ান্ত বাস্তবতার (পারমার্থিক সত্য) বদলে প্রচলিত বাস্তবতার (ব্যাবহারিক সত্য) মর্যাদা রাখে।
কাঠামোর দুর্বলতা (অসংগতি): প্রমাণ করা হয়েছে যে, কোনো কিছুর আলাদা অস্তিত্ব বা তাদের মধ্যেকার সম্পর্ক কখনোই যুক্তি দিয়ে চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করা যায় না (সম্বন্ধানুপপত্তি)।
কারণ পরিবর্তন (কার্যকারণের স্থান পরিবর্তন): বিশ্বের উৎপত্তির মূল কারণকে বাইরের জগৎ থেকে সরিয়ে নিজের ভেতরে আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইন্দ্রিয় অঙ্গ (Indriyam)-ই হলো এই জগতের মূল সৃষ্টিকারী (Karana), যা পরোক্ষভাবে আমাদের সব যুক্তিভিত্তিক জ্ঞানকেও প্রভাবিত করে।
এই পাঁচটি ধাপের যুক্তিনির্ভর বিশ্লেষণ প্রমাণ করে যে, জ্ঞান অর্জনের পদ্ধতি এবং অভিজ্ঞতার কাঠামো—এ সবই আমাদের ভেতরের আত্মগত বিষয় এবং ক্ষণস্থায়ী; অর্থাৎ, বাস্তবতার মূল প্রকৃতি নিয়ে এটি একটি গভীর ও আমূল অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান।
চেতনাকেই কেন বাস্তবতার মূল ভিত্তি মানতে হবে? চেতনা (আত্মা/ব্রহ্ম)-কে অস্তিত্বের একমাত্র চূড়ান্ত ভিত্তি হিসেবে শক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করাই হলো বাইরের জগতের সব দাবিকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাতিল করার প্রধান উদ্দেশ্য। এখানে দার্শনিক কৌশলটি হলো—ব্রহ্মই চূড়ান্ত সত্য (অ-দ্বৈত), এই কথাটা প্রথমে দাবি করা হয় না। বরং, প্রকাশিত জগতকে ব্যাখ্যা করার জন্য যতগুলো বিকল্প আছে, সেগুলোর ব্যাপক ব্যর্থতা প্রমাণ করার মাধ্যমেই এই সত্য প্রতিষ্ঠা করা হয়।
জগত ব্যর্থ হওয়ার চারটি কারণ:
প্রমাণে ব্যর্থতা: বিশ্ব সাধারণ প্রমাণের পরীক্ষায় (প্রমাণ-সিদ্ধত্বাৎ) উত্তীর্ণ হতে পারে না।
স্থায়িত্বে ব্যর্থতা: জগতের জিনিসগুলো চূড়ান্তভাবে টিকে থাকার পরীক্ষায় (বাধ) ব্যর্থ হয়।
সম্পর্কে ব্যর্থতা: জগতের ভেতরের কাঠামো বা সম্পর্কগুলো সুসংগত হওয়ার পরীক্ষায় (সম্বন্ধানুপপত্তি) ব্যর্থ হয়।
কারণে ব্যর্থতা: জগতের আপাত কারণ বস্তুনিষ্ঠতার পরীক্ষায় (ইন্দ্রিয়মই কারণ) ব্যর্থ হয়।
যেহেতু প্রপঞ্চ (প্রকাশিত জগত) বস্তুনিষ্ঠতা, জ্ঞান এবং কাঠামোর সব মাপকাঠিতেই অপর্যাপ্ত বলে প্রমাণিত হয়, তাই বাস্তবতার একমাত্র যে-অংশটি অক্ষত থাকে, তা হলো চেতনার স্বতঃসিদ্ধ বাস্তবতা (স্বপ্রকাশ)।
অতএব, এই চেতনাকেই অনিবার্যভাবে চূড়ান্ত সত্য হতে হবে। এই জটিল যুক্তিগুলোর একটাই লক্ষ্য: দার্শনিক বোঝাপড়াকে অ-দ্বৈতবাদের অনিবার্য সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাওয়া। এর স্থায়ী তাৎপর্যসমূহ নিম্নরূপ—
বিভ্রম দূর করা: এই বিশ্লেষণের পদ্ধতিগত প্রক্রিয়াটি আমাদের জীবন এবং অধিবিদ্যার (বাস্তবতা নিয়ে আলোচনা) জন্য গভীরভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই দর্শনগুলো প্রমাণ করে যে, বিশ্ব হলো আত্মগত বা ভেতরের পর্যবেক্ষকের ওপর নির্ভরশীল এবং উচ্চতর সত্যের কাছে বাতিলযোগ্য একটি আপেক্ষিক কাঠামো। এর মাধ্যমে বস্তুর স্বাধীন অস্তিত্বের যে ভুল ধারণা বা গভীর বিভ্রম আমাদের মধ্যে আছে, তা ভেঙে দেওয়ার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি হয়।
মনোযোগের পরিবর্তন: এর ফল কিন্তু শূন্যবাদ বা সব কিছু অর্থহীন হয়ে যাওয়া নয়। বরং এটি হলো আমাদের মনোযোগের আমূল পরিবর্তন। এটি ব্যক্তিকে সংবেদন ও বুদ্ধি দিয়ে পাওয়া ক্ষণস্থায়ী বা অস্থায়ী জিনিসগুলো থেকে সরিয়ে অস্তিত্বের চূড়ান্ত উৎস ও ভিত্তি, যা অপরিবর্তনীয় এবং স্বতঃসিদ্ধ বাস্তবতা, তার দিকে পরিচালিত করে।
আধ্যাত্মিক ভিত্তি: এই দার্শনিক কাঠামোটি আধ্যাত্মিক অনুশীলনের বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এর লক্ষ্য হলো আত্ম-জ্ঞান অর্জন। এই জ্ঞানই হলো সেই উপলব্ধি যা আমাদের দ্বারা অনুভূত ও নির্মিত জগতের বিলীন হওয়া বা বাতিল হওয়াকে (বাধ) সম্ভব করে তোলে।
শব্দের ভিন্নতা (শব্দান্তর) এবং বৈদিক ব্যাখ্যা: এখন আমরা দেখব, শব্দের ভিন্নতা বা 'শব্দান্তর' নীতিটি বৈদিক ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও তার ব্যাখ্যায় কেন এত গুরুত্বপূর্ণ।
'শব্দান্তর' কী? এর মানে হলো শব্দের ভিন্নতা-র নীতি। সহজভাবে, একই ধরনের শব্দ বা আচারের ক্ষেত্রে তাদের স্বতন্ত্র অর্থ বা আলাদা কাজ আছে—এটা ধরে নেওয়া।
কোথায় এই নীতি ব্যবহার হয়? এটি বৈদিক ব্যাখ্যার একটি মৌলিক নিয়ম। অর্থাৎ, বেদের মন্ত্র ও আচার-অনুষ্ঠানগুলি বোঝার জন্য এটি খুব জরুরি।
কারা এই নীতি নিয়ে কাজ করে? প্রধানত মীমাংসা দর্শন সম্প্রদায় এই নিয়মটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। 'মীমাংসা' মানে হলো "সমালোচনামূলক অনুসন্ধান" বা "চিন্তাভাবনা"।
মীমাংসা দর্শনের মূল ফোকাস কী? এটি কর্ম-মীমাংসা বা পূর্ব-মীমাংসা নামেও পরিচিত। এর মূল মনোযোগ হলো বেদের যে অংশগুলিতে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান (কর্ম) এবং তার নিয়মাবলী (যেমন ব্রাহ্মণ ও সংহিতা) নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, সেগুলির অর্থ সতর্কতার সাথে বিশ্লেষণ করা। এই বিশ্লেষণের লক্ষ্য হলো ধর্মের প্রকৃত স্বরূপ এবং আচারের কার্যকারিতা প্রতিষ্ঠা করা। মীমাংসা দর্শন বৈদিক আচার-অনুষ্ঠান (কর্ম) বোঝার জন্য 'শব্দান্তর' (শব্দের ভিন্নতা) নীতিকে একটি অত্যন্ত জরুরি ভিত্তি হিসেবে মনে করে, যা ধর্ম ও আচারের কার্যকারিতা নিশ্চিত করে।
শব্দের ভিন্নতা (শব্দান্তর)-এর মূল কাজ: যজ্ঞের পার্থক্যকরণ। 'শব্দান্তর' নীতিটি বৈদিক যজ্ঞগুলিকে (কর্ম) একে অপরের থেকে আলাদা করে চেনার জন্য অপরিহার্য।
'শব্দান্তর'-এর প্রধান ভূমিকা কী? এর মূল কাজ হলো, একটি যজ্ঞ (কর্ম) যেন অন্য যজ্ঞ থেকে আলাদা হিসেবে চিহ্নিত হয়, সেই পার্থক্য নিশ্চিত করা।
এই পার্থক্য কীভাবে তৈরি হয়? এই নীতি জোর দেয় যে, একটি যজ্ঞের বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত ক্রিয়াপদে সামান্য পরিবর্তন এলেও, তা সঙ্গে সঙ্গে একটি সম্পূর্ণ নতুন এবং আলাদা ধর্মীয় আচার হিসেবে গণ্য হবে।
কখন এই নিয়মটি বিশেষভাবে জরুরি? যখন দেখা যায় যে, দুটি ভিন্ন যজ্ঞের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য বাহ্যিকভাবে বা আপাতদৃষ্টিতে খুবই একই রকম মনে হচ্ছে। এই রকম ক্ষেত্রেও, শব্দের ভিন্নতা তাদের আলাদা করে দেয়।
এর উদ্দেশ্য কী? এই কঠোর ভাষাগত নিয়মটি মেনে চললে, প্রাচীন বৈদিক আচারের গভীর পবিত্রতা (আধ্যাত্মিক অখণ্ডতা) এবং সারমর্ম সুরক্ষিত থাকে। এটি নিশ্চিত করে যে যজ্ঞের পবিত্রতার সঙ্গে যেন কোনো আপস না হয়।