মুক্তির ধারণা—নির্বাণ বনাম বোধি: হীনযানে নির্বাণ মানে দুঃখ ও তৃষ্ণার চূড়ান্ত অবসান। এখানে লক্ষ্য হলো মানসিক শান্তি—দুঃখমুক্ত ব্যক্তিগত অস্তিত্ব। মহাযানে মুক্তি মানে বোধি (জাগরণ)—চেতনার পূর্ণ প্রসার, যেখানে আত্ম-অন্যের ভেদ মুছে যায়। এখানে দুঃখমুক্তি মানে শুধু নিজের নয়, সমগ্র অস্তিত্বের প্রতি সহানুভূতি ও সম্বন্ধের উপলব্ধি। অতএব, মহাযানে মুক্তি সম্পর্কনির্ভর ও সর্বজনীন, যেখানে করুণা ও জ্ঞান সমানভাবে অপরিহার্য।
বুদ্ধের রূপ ও অবস্থান: হীনযানে বুদ্ধ একজন ঐতিহাসিক মানুষ, যিনি নির্বাণ লাভ করেছেন। তাঁর পরে আর কোনো “পরম বুদ্ধত্ব” নেই। কিন্তু মহাযান মতে, বুদ্ধ কেবল ঐতিহাসিক ব্যক্তি (গৌতম সিদ্ধার্থ) নন—তিনি এক বহুমাত্রিক বাস্তবতা, যিনি তিন স্তরে বিদ্যমান। এই তিন স্তর বা “দেহ” (kāya) হলো—
ধর্মকায় (Dharmakāya)—“পরম সত্য” বা “ধর্মদেহ”। “ধর্ম” মানে পরম সত্য, “কায়” মানে দেহ—অর্থাৎ, ধর্মকায় হলো বুদ্ধের পরম স্বরূপ, যিনি “অস্তিত্বের অদ্বৈত সত্য” স্বরূপে বিদ্যমান। এটি বুদ্ধের কোনো শারীরিক রূপ নয়; এটি চেতনার পরম, নিরাকার, অদ্বৈত স্বরূপ—যা সমস্ত অস্তিত্বের মূল নীতি। ধর্মকায়কে বলা হয় বুদ্ধত্বের ধ্রুব চেতনা, যা সময়, স্থান ও ব্যক্তিসীমার বাইরে। এটি মহাযানের ভাষায় শূন্যতার দেহ, যেখানে “বুদ্ধ” মানে পরম বাস্তবতা নিজেই। যেমন আলো সর্বত্র-বিরাজমান, কিন্তু পাত্রভেদে ভিন্ন ভিন্ন রূপ নেয়—তেমনি ধর্মকায় সর্বব্যাপী চেতনা, যার আংশিক প্রকাশ অপর দুই কায়।
সম্পোগকায় (Saṃbhogakāya)—“দিব্য” বা “আনন্দদেহ”। “সম্পোগ” মানে ভোগ বা আনন্দ, তাই সম্পোগকায় মানে—বুদ্ধের আনন্দ ও প্রজ্ঞার মহিমান্বিত রূপ। এটি দিব্য জগতে (বুদ্ধক্ষেত্রে) প্রকাশিত হয়, যেখানে বুদ্ধ স্বর্গীয় বোধিসত্ত্বদের শিক্ষা দেন। এটি মানবচক্ষে অদৃশ্য, কিন্তু উচ্চ আধ্যাত্মিক স্তরে থাকা বোধিসত্ত্বরা এই বুদ্ধরূপের সঙ্গে সংযোগ করতে পারেন। এটি ধর্মকায় ও নির্মাণকায়–এর মধ্যবর্তী স্তর—এক দিব্য, অলৌকিক রূপ, যেখানে বুদ্ধ করুণা ও প্রজ্ঞার প্রতীক হয়ে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ, অমিতাভ, বৈরোচন, অক্ষোভ্য প্রভৃতি “দিব্য বুদ্ধ”–গণ সম্পোগকায় স্তরের প্রকাশ।
নির্মাণকায় (Nirmāṇakāya)—“রূপান্তর দেহ” বা “ঐতিহাসিক বুদ্ধ”। “নির্মাণ” মানে সৃষ্টি বা প্রকাশ। নির্মাণকায় মানে—বুদ্ধের মানবরূপে প্রকাশিত দেহ। এটি সেই রূপ, যেভাবে বুদ্ধ মানুষদের সামনে আবির্ভূত হন—যেমন গৌতম বুদ্ধ, যিনি জন্ম, সংসার ও নির্বাণ লাভ করেছিলেন। এটি করুণার প্রকাশ—পরম চেতনা যখন নিজেকে মানুষরূপে প্রকাশ করে জীবদের শিক্ষা দিতে, তখন সেটিই নির্মাণকায়। এটি “ধর্মকায়”-এর প্রতিফলন, যেমন আকাশে সূর্যের প্রতিচ্ছবি জলে পড়ে—প্রতিচ্ছবিটি আংশিক, কিন্তু সূর্যেরই প্রকাশ।
এই তিন কায় একে অপরের থেকে আলাদা নয়। মহাযান বলে—এই তিন কায় তিনটি আলাদা বুদ্ধ নয়, বরং একই বুদ্ধচেতনার তিনটি স্তর বা দিক। ধর্মকায়—বুদ্ধের পরম, অদ্বৈত সত্য; সম্পোগকায়—সেই সত্যের দিব্য, করুণাময় প্রকাশ; নির্মাণকায়—সেই করুণার মানবরূপ প্রকাশ। এভাবে, বুদ্ধ একসঙ্গে অধিবিদ্যা (ধর্মকায়), আধ্যাত্মিক (সম্পোগকায়) এবং ঐতিহাসিক (নির্মাণকায়) স্তরে বিদ্যমান।
ত্রিকায় ধারণা বোঝায় যে—বুদ্ধ কোনো একক ব্যক্তি নন; তিনি এক সর্বব্যাপী চেতনা, যা বিভিন্ন স্তরে প্রকাশিত হয়। এইভাবে মহাযান বুদ্ধকে মানবসীমা ছাড়িয়ে পরম বাস্তবতার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। বৌদ্ধ ভাষায়—“ধর্মকায় সর্বত্র বিরাজমান, সম্পোগকায় করুণায় দীপ্ত, নির্মাণকায় মানবজগতে উদ্ভাসিত।” তিনটি মিলেই বোঝায়—বুদ্ধ কেবল অতীতের এক ঐতিহাসিক শিক্ষক নন, বরং এক চিরন্তন সত্যচেতনা, যা একই সঙ্গে নিঃশব্দ, করুণাময় ও জীবন্ত।
হীনযান যুক্তি, বিশ্লেষণ ও আত্মশুদ্ধির পথ। মহাযান অনুপ্রেরণা, করুণা ও পরম বোধির পথ। একটি বলে—“নিজেকে মুক্ত করো, তাহলেই জগৎ শান্ত হবে।” অন্যটি বলে—“জগৎকে মুক্ত করলেই নিজের মুক্তি পূর্ণ হবে।” একটিতে দৃষ্টি অভ্যন্তরে, অন্যটিতে দৃষ্টি সমগ্র জীবনে। হীনযান মানে ব্যক্তিগত মুক্তির পথ—যেখানে জ্ঞানই মুক্তি। মহাযান মানে সর্বজনীন জাগরণের পথ—যেখানে জ্ঞান ও করুণা অবিচ্ছেদ্য। দুটিরই লক্ষ্য এক—দুঃখের অন্ত ও চেতনার মুক্তি; কিন্তু একটির পরিসর সীমিত ব্যক্তির মধ্যে, আর অন্যটির দৃষ্টি প্রসারিত সমগ্র অস্তিত্বে। বুদ্ধের প্রথম বাণী ছিল—“সবই দুঃখ”; মহাযান তার বিস্তৃত অনুবাদ দেয়—“সবই পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত, তাই মুক্তিও হতে হবে সর্বজনীন।”
বজ্রযান (Vajrayāna / তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্ম): বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের তৃতীয় ধারা, যা তিব্বত, ভুটান, নেপাল ও হিমালয় অঞ্চলে বিকশিত হয়। “বজ্র” মানে অভেদ্য, অজেয়, আর “যান” মানে পথ বা বাহন। এই ধারার মূল লক্ষ্য—ত্বরিত মুক্তি, অর্থাৎ এক জীবদ্দশাতেই নির্বাণলাভ।
এর বৈশিষ্ট্য: ধ্যান, মন্ত্র, মণ্ডল, যোগ ও গুপ্ত আচার ব্যবহার করা হয়। শরীর, বাক্য ও মন—এই তিন শক্তিকেই জাগ্রত করে বোধি অর্জনের চেষ্টা। এতে হীনযানের শৃঙ্খলা ও মহাযানের করুণা—উভয়ই মিলিত। তান্ত্রিক পদ্ধতিতে “বুদ্ধত্ব” কেবল দূরের লক্ষ্য নয়, বরং “এই মুহূর্তে উপস্থিত চৈতন্য” হিসেবে দেখা হয়। বজ্রযান বলে—“সাধারণ জীবনই সাধনা; যে-মন নিস্তরঙ্গ, সেই মনই নির্বাণ।”
জেন (Zen / চ্যান বৌদ্ধধর্ম): চীনের চ্যান বৌদ্ধধর্ম থেকেই জেনের জন্ম; পরে এটি জাপান, কোরিয়া ও ভিয়েতনামের সংস্কৃতিতে বিকশিত হয়। “জেন” শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ধ্যান (Dhyāna) থেকে—অর্থাৎ “অন্তর্মুখী ধ্যান বা মনের সরাসরি দেখা”। এর মূল ভাব—“চিন্তা নয়, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা।” সত্য কোনো তত্ত্ব নয়; এটি এই মুহূর্তের নিখাদ উপস্থিতি। যুক্তি, ধর্মগ্রন্থ বা চিন্তার মাধ্যমে নয়—বরং অকথিত উপলব্ধি দিয়েই বোধিলাভ সম্ভব।
জেন শিক্ষার সারাংশ: “যদি তুমি বুদ্ধকে দেখো—তাঁকে ভুলে যাও। কারণ বুদ্ধত্ব তোমার মধ্যেই।” জেন মূলত মধ্যমক শূন্যতার চতুষ্কোটিবিনির্মুক্ত বোধকে জীবন্ত অনুশীলনে রূপ দেয়—মন চিন্তা থামালে যা থাকে, সেটাই “জাগ্রত মন”।
একযান (Ekayāna): “একযান” ধারণাটি আসে সদ্ধর্মপুণ্ডরীক সূত্র (Lotus Sutra) থেকে। এই সূত্রে বলা হয়—“সব পথ আসলে এক—বুদ্ধত্বের পথে।” অর্থাৎ, হীনযান, মহাযান, বজ্রযান—সবই বুদ্ধত্বের দিকে ভিন্ন ভিন্ন উপায়। একযান দৃষ্টিতে—মুক্তি ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত নয়, বরং সর্বজনীন চেতনার জাগরণ। সব প্রাণীর মধ্যেই বুদ্ধসত্তা আছে; তাই কোনো পথই ক্ষুদ্র নয়, শুধু চেতনার স্তর ভিন্ন।
“যান আলাদা নয়—চেতনার পরিপক্বতা আলাদা।” অর্থাৎ, জ্ঞান, করুণা, ও চৈতন্য—এই তিনের সমন্বয়েই পূর্ণ বুদ্ধত্ব। বজ্রযান—তান্ত্রিক সাধনা; ধ্যান, মন্ত্র ও যোগের মাধ্যমে ত্বরিত মুক্তি। জেন—চিন্তা ও ভাষার অতীত, প্রত্যক্ষ চেতনার জাগরণ। একযান—সব পথের ঐক্য; সকলেই বুদ্ধত্বের পথে ভিন্ন ভিন্ন স্তরে।
এখন দেখা যাক—হীনযান, মহাযান ও বজ্রযান (সঙ্গে জেন ও একযান) আসলে তিনটি আলাদা পথ নয়, বরং চেতনার পরিপক্বতার তিন স্তর—বুদ্ধধর্মের বিকাশের ইতিহাসে এগুলো একে অপরকে অতিক্রম করে, কিন্তু বিরোধিতা করে না।
প্রথম স্তর: শৃঙ্খলা ও ব্যক্তিগত মুক্তি (হীনযান / থেরবাদ): এটি বৌদ্ধচেতনার প্রাথমিক স্তর—যেখানে মূল লক্ষ্য নিজের দুঃখ থেকে মুক্তি। এখানে মন এখনো “আমি”–কে কেন্দ্র করে, তাই শৃঙ্খলা ও নৈতিক অনুশাসন অপরিহার্য। এর মূল বৈশিষ্ট্য: আত্মনিয়ন্ত্রণ, ইন্দ্রিয়সংযম, ধ্যান ও নৈতিকতা। এর লক্ষ্য: নির্বাণ—জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি। এর প্রতীক: অরহৎ, যিনি নিজের মন ও তৃষ্ণাকে জয় করেছেন। মনস্তাত্ত্বিক অর্থে: এটি ‘আত্মশুদ্ধি’-র স্তর—অহংকেন্দ্রিক দুঃখ উপলব্ধি করে মন সংযত হয়।
দ্বিতীয় স্তর: করুণা ও সমষ্টিগত মুক্তি (মহাযান): এখানে চেতনা “আমি”-এর গণ্ডি ছেড়ে সব জীবের মধ্যে নিজের বিস্তার দেখতে শুরু করে। নিজের মুক্তির পাশাপাশি অন্যের মুক্তিও সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এর মূল বৈশিষ্ট্য—আদর্শ: বোধিসত্ত্ব—যে নিজের নির্বাণ স্থগিত করে সকল প্রাণীর মুক্তির জন্য কাজ করে। দর্শন: শূন্যতা, চিত্তমাত্র, সকলের বুদ্ধত্ব। প্রতীক: অবলোকিতেশ্বর (করুণার প্রতিমূর্তি)। মনস্তাত্ত্বিক অর্থে: এটি ‘হৃদয়ের প্রসারণ’-এর স্তর—চেতনা এখন আর ব্যক্তিগত নয়, সর্বজনীন; প্রেম ও করুণা জ্ঞানের সঙ্গে একীভূত হয়।
তৃতীয় স্তর: ত্বরিত মুক্তি ও প্রত্যক্ষ চেতনা (বজ্রযান, জেন, একযান): এটি বৌদ্ধচেতনার পরিপূর্ণ স্তর—যেখানে মুক্তি কোনো ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নয়, বরং এখনই, এই মুহূর্তে উপস্থিত এক গভীর চেতনা। মূল বৈশিষ্ট্য—বজ্রযান: ধ্যান, মন্ত্র, যোগ—ত্বরিত উপলব্ধির পথ। জেন: চিন্তার অতীত, নীরব চেতনার প্রত্যক্ষ অনুশীলন। একযান: সব পথই এক—বুদ্ধত্ব সবার মধ্যে বর্তমান। মনস্তাত্ত্বিক অর্থে: এটি ‘উপস্থিতি ও ঐক্যের স্তর’—মন আর কিছু অনুসন্ধান করে না, কারণ সে জানে—“যা খুঁজছি, তা আমি নিজেই।”
“বোধিসত্ত্বের দশ ভূমি” (Daśa-bhūmi / দশভূমি), যা মহাযান বৌদ্ধধর্মে বোধিসত্ত্বের আধ্যাত্মিক বিকাশের দশ ধাপ বা স্তর হিসেবে বিবেচিত। এই ধারণাটি প্রধানত দশভূমি সূত্র (Daśabhūmika Sūtra) ও অবতংসক সূত্র (Avataṃsaka Sūtra) থেকে এসেছে। “ভূমি” মানে হলো—এক এক ধাপের “অভ্যন্তরীণ অবস্থান” বা “আধ্যাত্মিক স্তর”, যেখানে বোধিসত্ত্ব ধীরে ধীরে পূর্ণ বোধিতে পৌঁছান—অর্থাৎ পরিপূর্ণ বুদ্ধত্বে জাগ্রত হন।
“অবতংসক” শব্দের অর্থ হলো মালা, গহনা, ফুলের অলঙ্কার—এটি রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়—অনেক গুণ এবং বুদ্ধত্বের অলঙ্কার হিসেবে। অনেকে এটিকে বুদ্ধাবতংসকনামমহাবৈপুল্যসূত্র বলেও জানে। এটি একটি বিশাল হানিকর/বৈপুল্য সূত্র (Vaipulya Sutra)—অর্থাৎ, ধর্মের ব্যাপক পরিব্যাপ্তি প্রকাশ করে। অবতংসক সূত্রে জগৎকে এক অনন্ত আকাশের মতো চিত্রিত করা হয়, যেখানে প্রতিটি ঘটনা সবকিছুর সঙ্গে যোগাযোগ ও সমবহুলভাবে সম্পর্কযুক্ত।
দশভূমি সূত্র হলো বিশাল অবতংসক সূত্র (Avataṃsaka Sūtra)-এর একটি অংশ। “দশভূমি সূত্র” (Daśabhūmika Sūtra) শব্দের অর্থ—“বোধিসত্ত্বের দশটি ভূমি (স্তর) সম্পর্কিত সূত্র।” “দশ” মানে দশটি ধাপ বা স্তর। “ভূমি” মানে আধ্যাত্মিক অবস্থান বা “মাটির স্তর”—যেখানে বোধিসত্ত্ব দাঁড়িয়ে সাধনা করেন। অতএব, এই সূত্রটি বর্ণনা করে—একজন বোধিসত্ত্ব কেমন করে ধাপে ধাপে বুদ্ধত্বে পৌঁছান, এবং প্রতিটি স্তরে তাঁর জ্ঞান, করুণা ও শক্তি কীভাবে বিকশিত হয়।
বোধিসত্ত্বের দশ ভূমি (Daśa-bhūmi):
১. প্রমুদিতা ভূমি (Pramuditā-bhūmi)—আনন্দভূমি / Joyful Stage—এটি বোধিসত্ত্বের প্রথম জাগরণের স্তর। এখানে তিনি প্রথম উপলব্ধি করেন—সব জীবের মুক্তিই আমার উদ্দেশ্য। এই বোধ থেকে জন্ম নেয় অদম্য আনন্দ (প্রমুদিতা)—কারণ তিনি এখন নিজের মুক্তির সীমা অতিক্রম করে, অন্যদের মুক্তির আনন্দে অংশ নিতে শুরু করেছেন। এটি করুণার প্রথম বিকাশ, এবং অহংকেন্দ্রিকতা ভাঙার সূচনা।
২. বিমলা ভূমি (Vimalā-bhūmi)—নির্মল স্তর / Stainless Stage—এখানে বোধিসত্ত্বের নৈতিকতা সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ হয়ে ওঠে। তিনি আর কোনো পাপকর্ম, স্বার্থপর ইচ্ছা, বা বিভ্রান্তির দ্বারা কলুষিত হন না। মন, বাক্য ও কর্মে নির্মলতা আসে। এই স্তরে বোধিসত্ত্ব শীলপরমিতা (নৈতিক শুদ্ধি) সম্পূর্ণ রূপে প্রতিষ্ঠা করেন।
৩. প্রত্যা-নুপত্তি ভূমি (Prabhākarī-bhūmi)—প্রভাময় স্তর / Luminous Stage—এখন তাঁর চিত্ত দীপ্ত হয় প্রজ্ঞার আলোতে। অজ্ঞতার অন্ধকার সরে যায়। এই পর্যায়ে তিনি উপলব্ধি করেন—সব বস্তু পরস্পরনির্ভর, কোনো কিছুর স্বাধীন স্বরূপ নেই। এটি “শূন্যতার প্রজ্ঞা”-র প্রথম প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা।
৪. অর্চিষ্মতী ভূমি (Arciṣmatī-bhūmi)—দীপ্ত স্তর / Radiant Stage—এখন তাঁর জ্ঞান আগুনের মতো দীপ্ত হয়ে উঠে—যা সমস্ত মায়া, তৃষ্ণা ও ভ্রমকে দগ্ধ করে ফেলে। এই স্তরে বোধিসত্ত্বের করুণা ও প্রজ্ঞা এক হয়ে যায়। তিনি আর অন্ধকারে পড়ে থাকেন না, অন্যদের পথও আলোকিত করেন।
৫. সুদুর্জয়া ভূমি (Sudurjayā-bhūmi)—দুর্জয় স্তর / Hard-to-Conquer Stage—এই পর্যায়ে বোধিসত্ত্বের মন স্থির ও অবিচল হয়ে যায়। কোনো বিপর্যয়, প্রশংসা, নিন্দা বা প্রলোভন তাঁকে আর বিচলিত করতে পারে না। এখানে তাঁর সাধনা ধ্যান ও সমাধিতে গভীর হয়, এবং তিনি উপলব্ধি করেন—দুঃখ ও সুখ একই প্রবাহের অংশ।