অবিদ্যা-তত্ত্ব-দীপিকা: নব্বই



অদ্বৈত ব্যাখ্যা করে যে, এই তিনটি শব্দ কোনো ত্রৈমাত্রিক গুণ নয়, বরং এক ও অভিন্ন সত্যের তিনটি অনুধ্যানযোগ্য দিক। “সৎ” হলো ব্রহ্মের অস্তিত্ব, “চিত্” তার চেতনা, আর “আনন্দ” তার অভিজ্ঞতামূলক পূর্ণতা। এগুলি আলাদা আলাদা কিছু নয়—যা সত্য, তা-ই সচেতন; যা সচেতন, তা-ই আনন্দময়। এই ঐক্যই প্রকাশিত হয় উপনিষদের মহাবাক্যে: “সত্যং জ্ঞানম্ অনন্তম্ ব্রহ্ম”—অর্থাৎ ব্রহ্মই সত্য, চেতনা, আর অনন্ত।

এইভাবে, “সৎ–চিত্–আনন্দ” কোনো বর্ণনামাত্র নয়; এটি পরম বাস্তবতার অভেদ স্বরূপের এক অনন্ত প্রতিফলন। যখন জীব নিজের চৈতন্যকে এই সত্তার সাথে অভিন্ন বলে উপলব্ধি করে, তখনই সে মুক্তি (mokṣa) লাভ করে—কারণ তখন সে জানে, “আমি ব্রহ্ম”—“অহং ব্রহ্মাস্মি”—আমি সেই চিরন্তন সৎ–চিত্–আনন্দ।

তিন প্রকার প্রাধান্যের দার্শনিক বিশ্লেষণ অদ্বৈত বেদান্তে বাস্তবতার স্তর ও জ্ঞানের গঠন বুঝতে একটি গভীর ভিত্তি দেয়।

প্রথমত, কারণ-প্রাধান্য (Kāraṇa–prādhānya) নির্দেশ করে সেই ontological priority—যেখানে কোনো বস্তু বা ফল তার উৎপত্তিকারী কারণের উপর নির্ভরশীল। যেমন ঘট (পাত্র) মূলত মাটি দ্বারা গঠিত; মাটি না থাকলে ঘটও থাকে না। এখানে মাটির অস্তিত্ব ঘটের চেয়ে প্রাধান্যশালী, কারণ ঘট কেবল নামমাত্র পার্থক্য—মাটিরই একটি রূপান্তর। কিন্তু অদ্বৈত বলে, এই মাটিও একটি আপেক্ষিক বাস্তবতা, কারণ মাটির অস্তিত্বও ব্রহ্মের উপর নির্ভরশীল। তাই ব্রহ্মই সর্বকারণ—sarva-kāraṇa-prādhānya—যে সমস্ত কারণেরও পরম কারণ, যার মধ্যে সমস্ত রূপ ও প্রক্রিয়া কেবল প্রতীয়মান। এই দৃষ্টিতে, জগতে যে-কোনো সৃষ্ট বা পরিবর্তনশীল জিনিসের কারণিক প্রাধান্য আপেক্ষিক; পরম প্রাধান্য কেবল ব্রহ্মের।

দ্বিতীয়ত, জ্ঞাতা-প্রাধান্য (Jñātṛ–prādhānya) হলো epistemic dominance বা জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রাধান্যের নীতি। এখানে বলা হয়, কোনো বস্তুর অস্তিত্ব তার জানার মধ্যে নির্ভরশীল। “যা জানা যায় না, তা অস্তিত্বশূন্য”—এই বোধ থেকেই অদ্বৈত ঘোষণা করে “jñānam eva sat”—জ্ঞানই অস্তিত্ব। জানার চেতনা (cit) সব কিছুর মুখ্য কারণ ও শর্ত; জ্ঞাত বস্তু কেবল সেই চেতনার প্রকাশ। বস্তুর অস্তিত্ব নিজে থেকে নয়, বরং চেতনার আলোয় প্রতীয়মান হওয়ার মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত। তাই জ্ঞাতার বা চেতনার প্রাধান্য জ্ঞাত বস্তুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ—এটি অদ্বৈতের মূল জ্ঞানতত্ত্ব। চেতনা নিজে স্বয়ংপ্রকাশ (svayaṁ–prakāśa)—তাকে অন্য কোনো আলোর প্রয়োজন নেই; বরং সমস্ত কিছু তার মধ্যেই প্রকাশ পায়। ফলে জ্ঞাতা ও জানা, অভিজ্ঞ ও অভিজ্ঞতা—সবই এক অনন্ত চেতনার প্রকাশমাত্র।

তৃতীয়ত, আধার-প্রাধান্য (Ādhāra–prādhānya) বোঝায় metaphysical dependence—যে-নীতি অনুসারে কোনো আরোপ বা বিভ্রমের ক্ষেত্রে আধারই প্রাধান্যশালী। যেমন, দড়ি-সাপ বিভ্রমে সাপের কোনো স্বাধীন অস্তিত্ব নেই; দড়িই একমাত্র বাস্তব আধার। সাপ কেবল আরোপ, দড়ির উপর ভ্রান্ত প্রতীতি। একইভাবে, সমগ্র জগৎ ব্রহ্মের উপর আরোপিত এক বিভ্রমমাত্র; জগৎ ব্রহ্মের উপর নির্ভরশীল, কিন্তু ব্রহ্ম কোনো কিছুর উপর নির্ভরশীল নয়। ব্রহ্ম অপরিবর্তনীয়, স্বয়ংপ্রতিষ্ঠিত (svataḥ-siddha) এবং স্বয়ংপ্রকাশমান (svayaṁ-prakāśa); জগৎ তার উপস্থিতিতেই প্রতীয়মান। অতএব, আধার হিসেবে ব্রহ্মই পরম প্রাধান্যশালী—Ādhāra-prādhānya।

এই তিনটি প্রাধান্য—কারণ, জ্ঞাতা ও আধার—অদ্বৈতের দার্শনিক স্থাপত্যে একসূত্রে গাঁথা। কারণ-প্রাধান্য ব্রহ্মের ontological সার্বভৌমত্ব বোঝায়; জ্ঞাতা-প্রাধান্য তার epistemic সর্বব্যাপিতা নির্দেশ করে; আর আধার-প্রাধান্য তার metaphysical অপরিহার্যতা প্রকাশ করে। এই তিনের মিলনেই ব্রহ্মের সর্বাঙ্গীণ প্রাধান্য প্রকাশিত হয়—সে কারণও, জ্ঞানও, আধারও। অদ্বৈতের পরম উপলব্ধি এই ঐক্যেই নিহিত—যেখানে কারণ ও কার্য, জ্ঞাতা ও জ্ঞেয়, আধার ও আরোপ সবই এক পরম চৈতন্যে (Cit-Brahman) লীন। তখন জগতের সব ভেদ ও সম্পর্ক বিলুপ্ত হয়ে যায়, এবং কেবল সেই অখণ্ড সত্যই অবশিষ্ট থাকে—সৎ–চিত্–আনন্দ ব্রহ্ম।

প্রত্যয় ও প্রাধান্য একই জ্ঞানের ভেতরে দুটি স্তরের প্রকাশ। প্রত্যয় হলো জ্ঞানের তরঙ্গ বা রূপ, আর প্রাধান্য নির্ধারণ করে সেই তরঙ্গে কোন উপাদান প্রকৃত—চেতনা, না বিষয়। সাধারণত জ্ঞানে বস্তু মুখ্য বলে মনে হয়, কিন্তু অদ্বৈত প্রমাণ করে যে, প্রকৃত প্রাধান্য চেতনার, কারণ বস্তু তার দ্বারা প্রকাশিত। তাই প্রত্যেক জ্ঞানে আত্মাই অন্তর্নিহিত; প্রত্যেক প্রত্যয় তারই প্রতিফলন। যখন এই বোধ আসে যে, প্রত্যয় মাত্রই চেতনার প্রতিফলন, এবং প্রত্যেক অভিজ্ঞতায় আত্মাই মুখ্য, তখন জীবের অজ্ঞানতা বিলীন হয়। সেই চূড়ান্ত প্রাধান্যের উপলব্ধিই অদ্বৈত সিদ্ধান্ত—চেতনা-প্রাধান্য (cit-prādhānya)—যেখানে সব প্রত্যয় আত্মায় লীন হয়, এবং জানা যায়, “সবই ব্রহ্ম।”

এই বক্তব্য আসলে এক অদ্বৈত অন্তর্দৃষ্টি প্রকাশ করে—অভিজ্ঞতা ও বস্তুর সম্পর্ক কোনো একমুখী নয়, বরং সহ-উদিত (sahotpatti)। জ্ঞান ও জানার বিষয় একে অপরকে শর্তায়িত করে; তাই তাদের মধ্যে অগ্রাধিকারের প্রশ্ন তোলাই ভুল। এভাবে অদ্বৈত বাস্তববাদ ও ভাববাদ উভয়কেই অতিক্রম করে এমন এক দৃষ্টিকোণ দেয়, যেখানে অস্তিত্ব (sat) ও চৈতন্য (cit) একই সত্যের দুই অবিচ্ছিন্ন দিক।

এখানে অভিজ্ঞতা (pratyaya) কেবল মানসিক প্রতিক্রিয়া নয়; এটি চেতনার প্রকাশরূপ, যার মধ্যে বস্তু প্রতীয়মান হয়। আর বস্তু বলতে যা বোঝানো হচ্ছে, তা জ্ঞানের বাইরে কোনো স্বতন্ত্র সত্তা নয়, বরং চেতনার মধ্যেই প্রতিফলিত রূপ। এই দৃষ্টিকোণে “জ্ঞাতা”, “জ্ঞেয়” এবং “জ্ঞানের প্রক্রিয়া”—তিনটিই একই চৈতন্যের অভিন্ন প্রতিফলন।

অদ্বৈত দর্শন তাই বলে, অগ্রাধিকার নির্ধারণের প্রচেষ্টা আসলে বিভেদের মনস্তাত্ত্বিক রূপ। যখন আমরা বলি, “এটি আগে” বা “ওটি পরে,” তখন আমরা চেতনার ঐক্যকে ভাগ করি, এবং জ্ঞান-প্রক্রিয়াকে দ্বৈত অভিজ্ঞতার মধ্যে ফেলে দিই। কিন্তু চেতনা নিজে কোনো ক্রম বা প্রাধান্য বহন করে না; সে এক সর্বব্যাপী সাক্ষী, যেখানে জানা ও জানার বিষয় একত্রে আলোকিত হয়।

এই অবস্থানকেই সমর্থন করে শ্রুতি ও আগম। শ্রুতি, যেমন উপনিষদ, ঘোষণা করে—“সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম”—অর্থাৎ সবই ব্রহ্ম। এর মানে, অভিজ্ঞতার ক্ষেত্র এবং অভিজ্ঞতার বস্তু, উভয়ই সেই এক চেতনার প্রকাশ। আগম বা শাস্ত্র সেই ব্রহ্মসত্যকে জীবনের আচারে ও অভিজ্ঞতায় প্রয়োগ করার পথ দেখায়।

“শ্রুতি (Śruti)” এবং “আগম (Āgama)”—এই দুটি শব্দ অনেক জায়গায় একে অপরের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হলেও, দর্শনশাস্ত্রের নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে এদের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে।

শ্রুতি (Śruti) শব্দের আক্ষরিক অর্থ “যা শোনা হয়েছে”—এটি সেই জ্ঞান, যা প্রথমে ঋষিদের অন্তর্দৃষ্টিতে (divya–dṛṣṭi) প্রকাশিত হয়েছিল, এ কোনো মানব-রচিত গ্রন্থ নয়। তাই শ্রুতি অপৌরুষেয় (apauruṣeya)—অর্থাৎ এটি মানুষের চিন্তা, রচনা বা অভিপ্রায় দ্বারা প্রণীত নয়। শ্রুতি মূলত বেদ (Veda) ও উপনিষদ (Upaniṣad)—এই গ্রন্থসমূহকে বোঝায়। এগুলিকেই চিরন্তন জ্ঞানের উৎস বলে মনে করা হয়, এবং এদেরই বলা হয় শব্দপ্রমাণ (Śabda–pramāṇa)-এর চূড়ান্ত রূপ।

অন্যদিকে, আগম (Āgama) শব্দের অর্থ “যা আগমন করে”—অর্থাৎ যা শাস্ত্রীয় পরম্পরায়, গুরু-শিষ্য বচনে, বা ঐতিহ্যিক শিক্ষার ধারায় আমাদের কাছে পৌঁছে এসেছে। অদ্বৈত বেদান্তে আগম শব্দটি প্রায়শই শ্রুতির সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু প্রসঙ্গভেদে এর অর্থ কিছুটা বিস্তৃত। আগম কেবল শ্রুতি নয়; এটি স্মৃতি (Smṛti), পুরাণ (Purāṇa), এবং তন্ত্র (Tantra) ইত্যাদিকেও অন্তর্ভুক্ত করতে পারে—যদি সেগুলি শ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।

অর্থাৎ, শ্রুতি হলো ঐশ্বরিক উৎস থেকে সরাসরি প্রাপ্ত প্রমাণ, আর আগম হলো শ্রুতির আলোকে ব্যাখ্যা, সংরক্ষণ ও প্রচারের ধারাবাহিক ঐতিহ্য। শ্রুতি সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের স্থান অধিকার করে; আগম সেই কর্তৃত্বকে ধারণ করে এবং বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে।

বেদান্তে বলা হয়—“Śrutiḥ tu vedāḥ, āgamaḥ tu vedārtha–pratipādakaḥ।” অর্থাৎ, শ্রুতি হলো বেদ নিজে, আর আগম হলো বেদের অর্থকে প্রকাশ করার ব্যাখ্যামূলক ধারাবাহিকতা।

তন্ত্র ও শৈব-বৈষ্ণব আগমগুলিতে আগম শব্দটি কখনও স্বতন্ত্র ধর্মগ্রন্থ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়—যেমন শৈব আগম, বৈষ্ণব আগম, শক্ত আগম ইত্যাদি—যেগুলি মূল বেদীয় নীতির সঙ্গে সংগতি রেখে বিশেষ উপাসনাপদ্ধতি ও দর্শন ব্যাখ্যা করে।

সংক্ষেপে বলা যায়—শ্রুতি হলো চিরন্তন ঐশ্বরিক প্রকাশ—জ্ঞান–প্রকাশের উৎস; আগম হলো সেই জ্ঞানের প্রবাহ, ব্যাখ্যা ও প্রচারের ঐতিহ্য। অদ্বৈতের দৃষ্টিতে দুটিই ব্রহ্ম-বিদ্যার বাহক: শ্রুতি দেয় সত্যের প্রত্যক্ষ বাণী, আর আগম রাখে সেই বাণীর জীবন্ত প্রয়োগ ও ধারাবাহিক অনুশাসন।

আগের বাক্যের সূত্র ধরে বলছি, অভিজ্ঞতা ও অভিজ্ঞতার বিষয়, এই দুইয়ের মধ্যে কোনোটির “অগ্রাধিকার নেই”—এই এক কথার মধ্যেই এক গভীর দার্শনিক উপলব্ধি লুকিয়ে আছে। এটি আমাদের শেখায়, জ্ঞান ও জগতের সম্পর্ক কারণ-ফলের নয়, বরং সহ-অস্তিত্বের; তাদের ঐক্যেই সত্য প্রতিষ্ঠিত। আত্মা ও ব্রহ্ম, চেতনা ও প্রকাশ—সবই একই সত্তার দুই পারস্পরিক দিক। যখন এই উপলব্ধি স্পষ্ট হয়, তখন জানা যায়, “যা জানে” ও “যা জানা যায়”—দুটিই একসাথে ঘটে, চেতনায় একসাথে অস্তিত্বশীল হয়—এটি প্রকৃতপক্ষে সেই এক অনন্ত চেতনার প্রতিফলনমাত্র।

“শাস্ত্রীয় উক্তিগুলির (Āgamas) পারস্পরিক বিরোধও ভুল।”—এই উক্তিটি গভীর অর্থে জানায় যে, ধর্মগ্রন্থের (Āgama বা Śāstra) ভেতরে কোনো প্রকৃত বিরোধ নেই। আপাতভাবে কিছু উক্তি একে অপরের বিপরীত মনে হলেও, তা আসলে প্রসঙ্গ, যোগ্যতা (adhikāra) ও উদ্দেশ্যের ভিন্নতার কারণে ঘটে। অদ্বৈত বেদান্তে শাস্ত্রকে সর্বোচ্চ প্রমাণ (śabda-pramāṇa) বলা হয়েছে, তাই তার প্রতিটি উক্তিরই একটি সুনির্দিষ্ট স্থান, উদ্দেশ্য ও প্রাসঙ্গিকতা আছে—কোনোটিই অর্থহীন বা পরস্পরবিরোধী নয়।

শাস্ত্রের বিভিন্ন বক্তব্য আসলে একই সত্যের ভিন্ন স্তরের ব্যাখ্যা। এক-একটি মন্ত্র বা বাক্য মানুষের আধ্যাত্মিক পরিপক্বতার ভিন্ন স্তরের জন্য প্রযোজ্য। যারা কর্মমুখী, তাদের জন্য শাস্ত্র আচারের নির্দেশ দেয়; যারা জ্ঞানান্বেষী, তাদের জন্য তা মুক্তির উপদেশ দেয়। এভাবেই একই শাস্ত্রে একদিকে "কর্ম করো", অন্যদিকে "কর্ম ত্যাগ করো"—এই দুই উক্তিও আসলে পরস্পরের পরিপূরক, বিরোধী নয়।

এই আপাত পার্থক্য বোঝার জন্য ব্যবহার করা হয় সামান্য-বিশেষ-ন্যায় (Sāmānya-Viśeṣa-Nyāya)—অর্থাৎ সাধারণ ও বিশেষ নিয়মের নীতি। এই ন্যায় বলে, সাধারণ বিধান সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য, কিন্তু যেখানে কোনো বিশেষ নির্দেশ আছে, সেখানে সেই বিশেষ নির্দেশই কার্যকর হয়। একটি উদাহরণ দিই—“শাস্ত্র সকলের জন্য ক্যান্ডি, কিন্তু রামের জন্য টফি।” অর্থাৎ সাধারণভাবে এক নিয়ম প্রযোজ্য, কিন্তু কোনো বিশেষ ব্যক্তির বা অবস্থার জন্য অন্য বিধান থাকলে সেটিই কার্যকর হবে।

এই নীতিটি একটি সূত্রে প্রকাশিত হয়েছে: “Viśeṣa-vyatirikte sāmānya-śāstra-pravṛttiḥ”—“যেখানে বিশেষ বিধান নেই, সেখানে সাধারণ শাস্ত্রই প্রযোজ্য।” এই যুক্তিগত নীতি ধর্মগ্রন্থের অভ্যন্তরীণ সংগতি রক্ষা করে এবং তার ব্যাখ্যার একটি নির্ভরযোগ্য ক্রম স্থাপন করে।

এই ব্যাখ্যার নীতি বৈদিক আচারের বাস্তব উদাহরণেও প্রযোজ্য। যেমন—
একটি নির্দিষ্ট নির্দেশ বলে: “তিনি অতিরাত্র যজ্ঞে ষোড়শিন পাত্র (সোমরসের ধারক) গ্রহণ করেন” (Atirātre eva śoḍaśinaṁ gṛhṇāti)।
একটি সাধারণ বিধান বলে: “সূর্য উদিত হলে তিনি আহুতি দেন” (Uditē juhoti)।
কিন্তু অন্যত্র বলা হয়েছে: “সূর্য উদিত না হলে তিনি আহুতি দেন” (Anuditē juhoti)।

এখানে মনে হতে পারে যে, এই নিয়মগুলো পরস্পরবিরোধী—কোথাও সূর্যোদয়ের পর, কোথাও সূর্যোদয়ের আগে আহুতির নির্দেশ। কিন্তু এই বিরোধের সমাধান করা হয়েছে “শাখা-অনুসারে (Śākhā-anusāra)”—অর্থাৎ বেদের যে শাখা থেকে মন্ত্র উদ্ধৃত, সেই অনুযায়ী প্রয়োগ ভিন্ন হয়। বেদের প্রতিটি শাখা (যেমন তৈত্তিরীয়, কাণ্ব, মাধ্যন্দিন প্রভৃতি) নিজস্ব আবৃত্তি ও আচারের ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে; তাই একটির নিয়ম অন্যটির বিরোধ নয়, বরং পৃথক শাখার জন্য পৃথক প্রয়োগ।