এইভাবে মায়া অদ্বৈতের জন্য এক দার্শনিক সেতু হিসেবে কাজ করে—যা অপরিবর্তনীয় ব্রহ্ম ও পরিবর্তনশীল জগতের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে, অথচ ব্রহ্মের পরম, অবিভাজ্য, একক সত্যত্ব অক্ষুণ্ণ রাখে। মায়ার মাধ্যমে জগতের বহুত্ব বোঝানো হয়, কিন্তু চূড়ান্ত সত্য হিসেবে তা স্বীকৃত নয়। জ্ঞান অর্জনের পর মায়ার পর্দা সরে যায়, এবং আত্মা নিজের অভিন্নতা—“আমি ও ব্রহ্ম এক”—অপরোক্ষভাবে উপলব্ধি করে।
অদ্বৈত বেদান্তের জ্ঞানতত্ত্বের মূল ভিত্তি হলো—জ্ঞানের স্তরভিত্তিক বিশ্লেষণ ও উপহরণ (bādha)। “বাধ” (Bādha) শব্দের অর্থ—“নিবারণ”, “অতিক্রম” বা “সংশোধন”। যখন কোনো জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা পরে উচ্চতর জ্ঞান দ্বারা নিবারিত হয়, তখন তাকে বাধ বলা হয়। অর্থাৎ, কোনো কিছু দেখা বা জানার পর, যখন পরে বোঝা যায়—“ওটা আসলে অন্য কিছু ছিল”, তখন পূর্বের জ্ঞান বাধিত (sublated) হয়। অদ্বৈত বলে, বাস্তবতা উপলব্ধির জন্য বিভিন্ন স্তরে জ্ঞান কাজ করে; কিন্তু চূড়ান্ত সত্য (ব্রহ্ম) উপলব্ধি করা যায় কেবল শ্রুতি—অর্থাৎ উপনিষদের প্রত্যক্ষ বাণীর মাধ্যমে। অন্য কোনো প্রমাণ বা অভিজ্ঞতা সেই চূড়ান্ত জ্ঞানের সমান নয়।
জগত বা প্রপঞ্চ সম্পর্কে অদ্বৈতের অবস্থান হলো—এটি মিথ্যা (mithyā)। “মিথ্যা” মানে এখানে কেবল “ভুল” বা “মায়া” নয়; এর দার্শনিক সংজ্ঞা হলো অনির্বচনীয় (anirvacanīya)। অর্থাৎ জগৎকে সম্পূর্ণ সত্য (সৎ, sat) বলা যায় না, কারণ তা পরিবর্তনশীল; আবার সম্পূর্ণ অসত্যও (অ-সৎ, asat) বলা যায় না, কারণ তা অভিজ্ঞতায় ধরা পড়ে। এই দুই চরমের মধ্যবর্তী অবস্থাই হলো মিথ্যাত্ব—যেখানে কোনো বস্তুকে না সম্পূর্ণ স্বীকার করা যায়, না পুরোপুরি অস্বীকার।
অদ্বৈতের ত্রুটি তত্ত্ব “অনির্বচনীয় খ্যাতি” (Anirvacanīya Khyāti) এই ধারণাকেই যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করে। এখানে বলা হয়—যে-বস্তুটি দেখা যায়, কিন্তু জ্ঞান দ্বারা পরে নাকচ হয়, তার অস্তিত্ব “ব্যাবহারিক”, চূড়ান্ত নয়। যেমন আলো-অন্ধকারে দড়িকে ভুল করে সাপ মনে হওয়া। সাপ দেখা সত্য বলে মনে হয়, কিন্তু দড়ি চিনে ফেলার পর সেই সত্যতা বাতিল হয়ে যায়। অদ্বৈত বলে, জগৎও ঠিক তেমন—“দেখা যায়”, “কাজ হয়”, কিন্তু চূড়ান্ত ব্রহ্মজ্ঞান হলে তা উপহৃত হয়—অর্থাৎ তার মিথ্যা-স্বভাব প্রকাশিত হয়।
এই মিথ্যাত্ব বোঝাতে অদ্বৈত তিনটি দার্শনিক লক্ষণ নির্দিষ্ট করেছে।
প্রথমত, জগৎ সময়ের তিন কালে (অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ) স্থায়ী নয়—এটিকে বলা হয় ত্রিকালিক নিষেধ (traikālika-niṣedha)।
দ্বিতীয়ত, এটি এমন কিছু, যা সঠিক জ্ঞান (jñāna-nivartyatva) দ্বারা বিলুপ্ত হয়—যেমন জগৎ-বোধের স্থানেই ব্রহ্ম-বোধ উদয় হলে জগতের বিভ্রম সরে যায়।
তৃতীয়ত, মিথ্যা বস্তু সর্বদা উপহরণের বস্তুর সঙ্গে যুক্ত—অর্থাৎ যে-জ্ঞান তার বিপরীত সত্য দেখায়, সেটি আসল বাস্তবতাকে প্রতিষ্ঠা করে এবং মিথ্যাকে অতিক্রম করে।
এভাবে অদ্বৈতের চূড়ান্ত দাবি দাঁড়ায়—সমস্ত জগতই ব্রহ্মজ্ঞান দ্বারা উপহৃত বা নাকচযোগ্য। যখন ব্রহ্ম-স্বরূপ প্রত্যক্ষভাবে জ্ঞাত হয়, তখন জগতের পৃথক সত্যতা আর থাকে না। যা আগে বাস্তব বলে মনে হচ্ছিল, তা তখন দেখা যায় কেবল নাম-রূপের খেলা, আর ব্রহ্মের একক চেতনার বাইরে কিছুই নেই।
এই উপহরণ প্রক্রিয়া (bādha) তাই কেবল যুক্তি নয়—এটি মুক্তির পথ। যে-মুহূর্তে জ্ঞান-আলোয় অবিদ্যা ও মিথ্যা ভেদ বিলীন হয়, সেই মুহূর্তেই প্রকাশিত হয় অদ্বৈত সত্য—“আমি ও ব্রহ্ম এক”—যেখানে জানা, জানার বস্তু, ও জানন—সব একাকার হয়ে যায়।
অদ্বৈত বেদান্তে শ্রুতি—অর্থাৎ বেদ ও উপনিষদের বাণী—হলো চূড়ান্ত প্রমাণ (প্রমাণ বা pramāṇa)। যদিও এই দর্শন যুক্তি (tarka) ও অনুমান (anumāna) ব্যবহার করে প্রতিদ্বন্দ্বী দর্শনের বিরুদ্ধে নিজস্ব অবস্থান রক্ষা করে, তবুও অদ্বৈত দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করে—ব্রহ্মের জ্ঞান কেবল শাস্ত্র দ্বারা জানা যায়।
অদ্বৈতের মতে, যুক্তি কখনোই পরম সত্যকে স্থিরভাবে ধরতে পারে না। যুক্তির সীমা হলো এই—তা কেবল মনের মধ্যে ঘুরে বেড়ানো ধারণার জগৎ। যা ইন্দ্রিয়-বুদ্ধির গণ্ডির বাইরে, অর্থাৎ ব্রহ্ম, তা যুক্তির নাগালের বাইরে। এই কারণেই শঙ্করাচার্য ও পরবর্তী আচার্যরা বলেন—ব্রহ্ম সম্পর্কে জানার একমাত্র প্রামাণিক পথ হলো শ্রুতি। এই শ্রুতির মধ্যেই নিহিত আছে মহাবাক্যগুলি—যেমন “তত্ত্বমসি” (তুমি তা-ই), “অহম্ ব্রহ্মাস্মি” (আমি ব্রহ্ম), “অয়ম্ আত্মা ব্রহ্ম” (এই আত্মাই ব্রহ্ম) ইত্যাদি।
এই বাক্যগুলি শুধু উপদেশ নয়; এগুলি প্রত্যক্ষ প্রমাণের মতো কাজ করে, কারণ এগুলি কেবল কোনো বাহ্য জগৎ সম্পর্কে বলে না, বরং প্রত্যক্ষভাবে “আমি কে”—এই প্রশ্নের উত্তর দেয়। এই মহাবাক্যের অর্থ বোঝা মানে আত্মার প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করা, যা মুক্তির সূত্রপাত ঘটায়।
তবে শাস্ত্রকে কেবল বৌদ্ধিক পাঠ হিসেবে অদ্বৈত গ্রহণ করে না। যদি কেবল মহাবাক্য শুনলে বা পড়লেই মুক্তি মিলত, তবে সবাই সমানভাবে জ্ঞানী ও মুক্ত হতো। কিন্তু তা দেখা যায় না—এ থেকেই বোঝা যায়, শ্রুতির সত্য উপলব্ধি করতে হলে প্রয়োজন সাধনা (sādhanā)—একটি আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি। এই প্রস্তুতির মধ্যে পড়ে মনন (চিন্তা–পর্যালোচনা), চিত্তশুদ্ধি (অন্তরের স্বচ্ছতা), ও নিদিধ্যাসন (অভ্যাস–স্থিরতা)। এভাবে শ্রুতির অর্থ হৃদয়ে পরিণত হয় অভিজ্ঞতায়—তখন “শোনা সত্য” পরিণত হয় “দেখা সত্য”-এ।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তির ভূমিকা সীমিত হলেও অপরিহার্য। যুক্তি ব্রহ্মজ্ঞান সৃষ্টি করে না, কিন্তু তার পথ পরিষ্কার করে। যুক্তির কাজ হলো—অবিদ্যার তৈরি ভুল ধারণা ও দ্বৈত চিন্তাকে ভেঙে দেওয়া, যাতে শ্রুতি থেকে পাওয়া সত্য বোধ মনের মধ্যে প্রতিধ্বনিত হতে পারে। যেমন আয়নার ধুলো পরিষ্কার করলে মুখ দেখা যায়, তেমনি যুক্তি মনের বিভ্রম মুছে দিয়ে শ্রুতির প্রতিফলনকে উজ্জ্বল করে তোলে।
অতএব, অদ্বৈতের দৃষ্টিতে শ্রুতি হলো মূল প্রমাণ, আর যুক্তি হলো সহায়ক—যা সত্যের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে আনে, কিন্তু সত্যকে নিজে সৃষ্টি করে না। চূড়ান্ত উপলব্ধি আসে শ্রুতির বাণী ও সাধনার মিলনে—যখন বুদ্ধি স্তব্ধ হয়, এবং “শোনা সত্য” হয়ে ওঠে “প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা”—তখনই জ্ঞানের পরিণতি হয় মুক্তি।
অদ্বৈত বেদান্ত বাস্তবতাকে একক, অদ্বৈত ব্রহ্মে সীমাবদ্ধ করলেও, সে-ই একতার মধ্যেই অভিজ্ঞতার বিভিন্ন স্তরকে ব্যাখ্যা করতে তিনটি ভিন্ন মাত্রা বা স্তরের কথা বলে। এই স্তরগুলো ব্রহ্ম-জ্ঞান (চূড়ান্ত উপলব্ধি) দ্বারা “উপহৃত” বা বাতিলযোগ্যতার ক্ষমতার ভিত্তিতে গঠিত। অর্থাৎ, কোনো স্তরের সত্যকে উচ্চতর স্তরের জ্ঞান দ্বারা নাকচ করা গেলে, সেটি নিম্নস্তরীয় বা আপেক্ষিক সত্য হিসেবে গণ্য হয়।
সবচেয়ে উচ্চ স্তরে আছে পারমার্থিক সত্য (Pāramārthika Satyam)—এটি হলো ব্রহ্মের পরম সত্য, যা চিরন্তন, অবিভক্ত, শর্তহীন এবং অপরিবর্তনীয়। এই সত্যের মধ্যে কোনো ভেদ বা পরিবর্তন নেই। ব্রহ্মকে বলা হয় “অভ্যন্তরীণভাবে অ-উপহরণযোগ্য,” কারণ তার ওপর কোনো উচ্চতর জ্ঞান এসে তাকে বাতিল করতে পারে না। এটি সমস্ত অস্তিত্বের ভিত্তি, কিন্তু অন্য কোনো স্তরের ঘটনার দ্বারা একটুও প্রভাবিত হয় না। যেমন আকাশের ওপরে মেঘ আসে-যায়, কিন্তু আকাশ নিজে বদলায় না।
এর নিচে আছে ব্যাবহারিক সত্য (Vyāvahārika Satyam)—এটি সেই স্তর, যেখানে আমরা লেনদেন করি, সমাজ গঠন করি, সময়, স্থান, কারণ, ফল ইত্যাদি বুঝি। এটি আপেক্ষিক জগৎ—যা সব মানুষের কাছে সাধারণ অভিজ্ঞতা হিসেবে উপস্থিত থাকে। প্রকৃতির নিয়ম, বিজ্ঞান, নৈতিকতা, কর্মফল—সবই এই স্তরে সত্য। যদিও এটি কার্যকরভাবে বাস্তব, কিন্তু এটি শর্তনির্ভর এবং জ্ঞান দ্বারা উপহৃত হতে পারে। ব্রহ্মজ্ঞান অর্জিত হলে এই স্তর মায়া বলে প্রতিভাত হয়, কারণ তখন বোঝা যায়—এই সমস্ত নাম-রূপের জগৎ আসলে একক চৈতন্যের প্রতিফলন ছাড়া কিছু নয়।
সবচেয়ে নিচের স্তরটি হলো প্রতিভাসিক সত্য (Prātibhāsika Satyam)—এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ও অস্থায়ী সত্য। স্বপ্নে দেখা দৃশ্য, বিভ্রম, ভুল ধারণা—সবই এই স্তরে পড়ে। যেমন অন্ধকারে দড়িকে সাপ মনে হওয়া, বা দূর থেকে ঝিনুক দেখে রুপা মনে হওয়া। এই অভিজ্ঞতা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সত্য বলে মনে হয়, কিন্তু সঠিক জ্ঞান এলে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
অদ্বৈতের উপহরণ তত্ত্বে এই তিন স্তরের সম্পর্কটি খুব সূক্ষ্মভাবে বোঝানো হয় “ঝিনুক-রুপা” উদাহরণে। দূর থেকে কেউ ঝিনুক দেখে মনে করল, এটি রুপা—এটি হলো প্রতিভাসিক সত্য, কারণ এটি ভুল ধারণা। কাছে গিয়ে দেখা গেল—না, এটি আসলে ঝিনুক—এটি হলো ব্যাবহারিক সত্য, কারণ এটি সাধারণ অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলে যায়। কিন্তু এই ঝিনুকও ব্রহ্ম-জ্ঞানের দৃষ্টিতে এক মায়াময় প্রতিভাস; ব্রহ্ম-দৃষ্টিতে কেবল এক অদ্বৈত চৈতন্য ছাড়া আর কিছুই নেই—এটি হলো পারমার্থিক সত্য।
অদ্বৈতের যুক্তি বলে—যে-জ্ঞানের দ্বারা কোনো এক স্তরের সত্য বাতিল হয়, সেটিই উচ্চতর স্তর। যখন কোনো বিভ্রম (যেমন রুপা দেখা) ভাঙে, তখন ভুল ধারণার কারণ—অজ্ঞতা—নির্মূল হয়, এবং বিভ্রমও বিলীন হয়। এই কারণ-প্রভাব সম্পর্ক দেখায়—যেখানে অজ্ঞতা নেই, সেখানে ভ্রান্তির অস্তিত্বও থাকতে পারে না।
এই তিন স্তরের ধারণা বাস্তবতার প্রতি অদ্বৈতের সূক্ষ্ম দৃষ্টিকে বোঝায়। ‘জগৎ মিথ্যা’ বললেও অদ্বৈত কোনো অভিজ্ঞতাকে অবৈধ করে না; বরং বলে—সব অভিজ্ঞতাই স্তরভিত্তিক, আপেক্ষিক, এবং শেষপর্যন্ত ব্রহ্মে মিলিত। ব্রহ্ম-জ্ঞানই একমাত্র এমন উপলব্ধি, যা আর কোনো স্তরে নাকচ করা যায় না—কারণ সেটিই চূড়ান্ত, অপরিবর্তনীয়, স্বপ্রকাশ সত্য।
অদ্বৈত বেদান্তে “একাধিক অজ্ঞতার তত্ত্ব” (Nānā Ajnāna Pakṣa) একটি সূক্ষ্ম কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যুক্তিগত সমাধান—যা অবিদ্যা বা অজ্ঞতার প্রকৃতি নিয়ে দীর্ঘ বিতর্কের প্রতিক্রিয়া হিসেবে উদ্ভূত হয়।
অদ্বৈতের মূল কাঠামোতে বলা হয়, জগৎ ও সমস্ত ভ্রান্ত ধারণা অবিদ্যার কারণে দেখা দেয়। কিন্তু অবিদ্যা যদি একটিমাত্র, সর্বজনীন, সর্বসত্তায় ছড়িয়ে থাকা অজ্ঞতা হয়, তবে একটি নির্দিষ্ট অজ্ঞতা দূর হলে সব অজ্ঞতাই দূর হয়ে যাওয়ার কথা। উদাহরণস্বরূপ, ঝিনুক-রুপা বিভ্রমে যখন কেউ বুঝল যে, এটি রুপা নয়, ঝিনুক—তাহলে সেই অজ্ঞতা নষ্ট হলো। কিন্তু যদি অবিদ্যা এক ও সর্বজনীন হয়, তবে সেই নির্দিষ্ট উপলব্ধির সঙ্গে সঙ্গে সব অজ্ঞতাই বিলীন হয়ে যাবে, অর্থাৎ ওই ব্যক্তি ব্রহ্মজ্ঞ হয়ে যাবে! তাতে অদ্বৈতের মোক্ষ–সাধনার বিরলতা ও গাম্ভীর্য পুরোপুরি ভেঙে পড়বে—তাহলে প্রতিটি রৌপ্যভ্রম নিবারণকারীই ব্রহ্মজ্ঞ হবে, যা বাস্তবে কখনও ঘটে না।
এই আপাত-অযৌক্তিকতার সমাধান করতেই অদ্বৈত প্রবর্তন করে Nānā Ajnāna Pakṣa—অর্থাৎ “একাধিক অজ্ঞতার তত্ত্ব”। এই দৃষ্টিতে, অবিদ্যা কোনো একক সর্বজনীন অজ্ঞতা নয়, বরং প্রতিটি ভ্রান্ত উপলব্ধি নির্দিষ্ট একটি অজ্ঞতার দ্বারা উৎপন্ন। যেমন, একটি ঝিনুকে রুপা দেখা একরকম অবিদ্যা, অন্য ঝিনুকে রুপা দেখা অন্য রকম অবিদ্যা। প্রতিটি ভুল ধারণা তার নিজস্ব নির্দিষ্ট অজ্ঞতার ফল।
অদ্বৈত বেদান্তে অবিদ্যা বা অজ্ঞানকে কেন্দ্র করে বহু সূক্ষ্ম প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। প্রধান প্রশ্নটি হলো—এই অবিদ্যা কোথায় থাকে এবং এর সংখ্যা কত? এই প্রশ্নের উত্তরে দুইটি অবস্থান গঠিত হয়—’এক অজ্ঞান পক্ষ’ ও ‘নানা অজ্ঞান পক্ষ’। নানা অজ্ঞান পক্ষের মতে, অবিদ্যা এক নয়, বরং প্রতিটি জীবের নিজস্ব, স্বতন্ত্র এক একটি অবিদ্যা রয়েছে। প্রত্যেক জীব নিজ নিজ অজ্ঞান দ্বারা আচ্ছন্ন থাকে এবং সেই কারণে সে ব্রহ্মকে তার আসল রূপে উপলব্ধি করতে পারে না। এক জীবের অজ্ঞান অন্য জীবের অজ্ঞান নয়; প্রতিটি জীবের মানসিক ভ্রম, অভ্যাস ও সংস্কার ভিন্ন হওয়ায় তাদের অবিদ্যাও ভিন্ন ভিন্ন।