২. অপ্রমাণ-জ্ঞান-গম্যত্বম মিথ্যাত্বম (Falsity as being an object of Apramāṇa-jñāna (non-valid knowledge)): এই সংজ্ঞাটি ভারতীয় দর্শনের, বিশেষ করে অদ্বৈত বেদান্তের epistemology (জ্ঞানতত্ত্ব) আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি প্রস্তাব করে যে, কোনো কিছুকে মিথ্যা বলা হয়, যদি তা শুধুমাত্র অপ্রমাণ-জ্ঞান অর্থাৎ অ-বৈধ জ্ঞান দ্বারা পরিজ্ঞাত হয়। এখানে "মিথ্যা" শব্দটি পারমার্থিকভাবে অসৎ (wholly non-existent) অর্থে ব্যবহৃত নয়, বরং ব্যাবহারিক স্তরে বা অভিজ্ঞতার স্তরে যে-বস্তুর অস্তিত্ব নেই বা যার উপলব্ধি ত্রুটিপূর্ণ, সেই অর্থে ব্যবহৃত।
অপ্রমাণ-জ্ঞান-এর বিভিন্ন প্রকার: এই সংজ্ঞায় অপ্রমাণ-জ্ঞান বলতে শুধু একটি প্রকারের জ্ঞানকে বোঝানো হয় না, বরং বিভিন্ন প্রকারের ত্রুটিপূর্ণ বা অবৈধ জ্ঞানকে বোঝানো হয়। এর মধ্যে কয়েকটি প্রধান হলো:
ভ্রম (Erroneous Perception): এটি এমন একটি জ্ঞান, যেখানে একটি বস্তুকে ভুলভাবে অন্য বস্তু হিসেবে উপলব্ধি করা হয়। যেমন, দড়িকে সাপ বলে মনে করা। এই ভ্রম-জ্ঞান মিথ্যাত্বের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ, কারণ সাপের জ্ঞান এখানে অবৈধ। প্রকৃত অর্থে সেখানে কোনো সাপ নেই, তাই এই জ্ঞানটি মিথ্যা। এই ভ্রম-জ্ঞান মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার ত্রুটি বা পরিবেশগত কারণে উৎপন্ন হতে পারে। যখন বৈধ জ্ঞান (দড়ি) দ্বারা এটিকে বাতিল করা হয়, তখন এর মিথ্যাত্ব স্পষ্ট হয়।
সংশয় (Doubt): সংশয় হলো এমন এক জ্ঞান, যেখানে একটি বস্তুর সঠিক প্রকৃতি সম্পর্কে অনিশ্চয়তা থাকে। যেমন, অন্ধকারে একটি স্তম্ভ দেখে তা মানুষ, না কি খুঁটি, তা নিয়ে সন্দেহ। সংশয়ী জ্ঞান একটি বস্তুর দ্বৈত রূপ নিয়ে আসে, যা স্থির ও সত্য জ্ঞান নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো নিশ্চিত প্রমাণ (প্রমাণ-জ্ঞান) দ্বারা সন্দেহ নিরসন না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই জ্ঞানকে অপ্রমাণ বা মিথ্যা বলে গণ্য করা হয়। সংশয়ী জ্ঞান অস্থির এবং তা চূড়ান্ত সত্যের দিক নির্দেশ করে না।
স্মৃতি (Memory): স্মৃতির ক্ষেত্রে, এটি তখনই অপ্রমাণ-জ্ঞান হিসাবে বিবেচিত হয়, যখন এটি বর্তমান বৈধ উপলব্ধি দ্বারা সরাসরি যাচাই করা হয় না, বা যখন এটি ভ্রমাত্মক স্মৃতির দিকে পরিচালিত করে। সাধারণত, স্মৃতি নিজেই প্রমাণ-জ্ঞান নয়, কারণ এটি পূর্বে উপলব্ধ বিষয়ের পুনরাবৃত্তি মাত্র। যদি কোনো স্মৃতি বর্তমান অভিজ্ঞতা বা অন্য কোনো প্রমাণ দ্বারা বাতিল হয়ে যায়, তবে তা মিথ্যা জ্ঞান হিসেবে গণ্য হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ ভুল করে মনে রাখে যে, সে গতকাল একটি নির্দিষ্ট স্থানে ছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে প্রমাণ দ্বারা জানা যায় যে, সে সেখানে ছিল না, তবে সেই স্মৃতিটি মিথ্যা জ্ঞান হিসাবে বিবেচিত হবে।
ধারণার মূলভিত্তি: এই সংজ্ঞার পেছনের মূল ধারণাটি—মিথ্যা বস্তু হলো ত্রুটিপূর্ণ জ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার ফল। যখন আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয়, মন বা বুদ্ধি কোনো কারণে তার স্বাভাবিক কার্যকারিতা হারায়, বা ত্রুটিপূর্ণভাবে কাজ করে, তখনই মিথ্যা জ্ঞানের সৃষ্টি হয়। এই মিথ্যা জ্ঞান সাময়িকভাবে সত্য বলে প্রতীয়মান হতে পারে, কিন্তু কোনো একটি বৈধ জ্ঞান (প্রমাণ) দ্বারা তা বাতিল হয়ে যায়।
অদ্বৈত বেদান্তের প্রেক্ষাপটে: অদ্বৈত বেদান্ত মতে, ব্রহ্মই একমাত্র সত্য, এবং জগৎ মিথ্যা। এই "মিথ্যাত্ব" বলতে জগতের পারমার্থিক সত্তার অভাবকে বোঝানো হয়, ব্যাবহারিক সত্তার অভাবকে নয়। জগৎ ব্রহ্মের উপর আরোপিত একটি মিথ্যা প্রতীতি (illusion)। এই প্রতীতি অপ্রমাণ-জ্ঞান অর্থাৎ অজ্ঞান বা অবিদ্যা দ্বারা উৎপন্ন হয়। যেমন, ব্রহ্মকে অজান্তে জগৎরূপে দেখা, ঠিক যেমন দড়িকে সাপ বলে দেখা। যতক্ষণ পর্যন্ত আত্মজ্ঞান (ব্রহ্মজ্ঞান) না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত এই মিথ্যা জগতের জ্ঞান সত্য বলে প্রতীয়মান হয়। কিন্তু যখন ব্রহ্মজ্ঞান লাভ হয়, তখন এই জগতের মিথ্যাত্ব উদ্ভাসিত হয়। এই সংজ্ঞাটি জগতের এই মিথ্যাত্বকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি প্রদান করে।
অতএব, "অপ্রমাণ-জ্ঞান-গম্যত্বম মিথ্যাত্বম", এই সংজ্ঞাটি জ্ঞানতত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা, যা জ্ঞানের বৈধতা ও মিথ্যাত্বকে অপ্রমাণ-জ্ঞানের সাথে সম্পর্কযুক্ত করে। এটি আমাদের উপলব্ধি এবং বাস্তবতার মধ্যকার সূক্ষ্ম সম্পর্ককে বুঝতে সাহায্য করে এবং দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে মিথ্যাত্বের স্বরূপ উন্মোচন করে। এটি কেবল ত্রুটিপূর্ণ উপলব্ধির ধারণাই নয়, বরং অদ্বৈত বেদান্তের মতো গভীর দার্শনিক মতবাদগুলিতে মায়া বা অবিদ্যার ধারণাকেও দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।
তবে, এই সংজ্ঞাটিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ যৌক্তিক ত্রুটি রয়েছে, বিশেষত "অর্থান্তরের ত্রুটি" (proving something other than what is intended) বা "অনভিপ্রেত অর্থ" (অনভিলাষিতার্ধ-সিদ্ধিঃ) এড়ানো যায় না। এই সমস্যাটি দেখা দেয়, যখন সংজ্ঞাটি এমন একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, যা সংজ্ঞাকারীর মূল উদ্দেশ্য থেকে ভিন্ন। ফলস্বরূপ, যদি মিথ্যাত্বের প্রবক্তা এই সংজ্ঞা ব্যবহার করেন, তাহলে তিনি এমন কিছু প্রমাণ করে ফেলেন, যা তিনি আসলে প্রমাণ করতে চাননি।
উদাহরণস্বরূপ, স্মৃতি (স্মৃতি) সাধারণত অপ্রমাণ হিসাবে বিবেচিত হয়, কারণ এটি প্রত্যক্ষ, তাৎক্ষণিক উপলব্ধি নয়, বরং অতীতের অভিজ্ঞতার স্মরণ। যদি এই সংজ্ঞা অনুসারে স্মৃতিকে সর্বদা একটি মিথ্যা বস্তুকে প্রকাশ করত বলে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে এর পরিণতি মারাত্মক হবে: সমস্ত স্মরণীয় (স্মৃতিপ্রাপ্ত) বস্তু স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিথ্যা হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে এমনটা হয় না। একটি স্মরণীয় ঘট, যা আমরা অতীতে দেখেছি এবং এখন স্মরণ করছি, তার উপলব্ধি তাৎক্ষণিক না হলেও এটি অন্তর্নিহিতভাবে মিথ্যা নয়; ঘটটি অতীতে সত্যিই বিদ্যমান ছিল এবং এর অস্তিত্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।
এই সংজ্ঞাটি একটি সূক্ষ্ম অথচ গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য করতে ব্যর্থ হয়: একটি মায়ার অবাস্তবতা (যেমন দড়িতে সাপ দেখা, যেখানে সাপটি আসলে বিদ্যমান নেই) এবং একটি স্মরণীয় বাস্তব বস্তুর অ-তাৎক্ষণিকতার মধ্যে। দড়িতে সাপ দেখার ক্ষেত্রে সাপটি সম্পূর্ণভাবে অসৎ বা অবাস্তব, কারণ সেখানে কোনো সাপ নেই। কিন্তু একটি স্মরণীয় ঘটের ক্ষেত্রে ঘটটি অতীতে বাস্তব ছিল, শুধু এর বর্তমান উপলব্ধি তাৎক্ষণিক নয়। সংজ্ঞাটি এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য না করে উভয়কেই মিথ্যাত্বের একই পাল্লায় ফেলে দেয়, যা একটি ভুল সিদ্ধান্ত।
অতএব, এই সংজ্ঞাটি এমন একটি অনভিপ্রেত কিছু প্রমাণ করে যে—সমস্ত স্মরণীয় (স্মৃতিপ্রাপ্ত) বস্তু মিথ্যা—যা একটি অগ্রহণযোগ্য এবং অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। এটি শুধু বাস্তব অভিজ্ঞতার পরিপন্থী নয়, বরং দার্শনিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রেও মৌলিক ত্রুটিপূর্ণ। এই ধরনের ত্রুটিপূর্ণ সংজ্ঞা জ্ঞানতত্ত্বের ভিত্তিকেই দুর্বল করে দেয় এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে সঠিক পার্থক্য নির্ণয়ে বাধা সৃষ্টি করে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি—"বাস্তবতার বিপরীত মিথ্যাত্ব (সত্যত্ব-বিরুদ্ধম্) প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।" এর অর্থ হলো মিথ্যাত্বের যে-কোনো সুসংগত সংজ্ঞা অবশ্যই পরম বাস্তবতার (সত্যত্ব), যা ব্রহ্ম, প্রতিষ্ঠিত প্রকৃতির সাথে বিরোধিতা এড়াতে বা পুরো দার্শনিক ব্যবস্থাকে ক্ষুণ্ন করে, এমন যৌক্তিক ত্রুটির দিকে পরিচালিত করা এড়াতে সতর্কতার সাথে তৈরি করতে হবে। মিথ্যাত্ব প্রতিষ্ঠা ব্যাবহারিক দৃষ্টিকোণ থেকে জগতের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা নয়, বরং ব্রহ্মের সাথে সম্পর্কিত এর নির্ভরশীল, ক্ষণস্থায়ী এবং চূড়ান্তভাবে অ-পরম প্রকৃতিকে বোঝা। জগতের একটি প্রপঞ্চগত অস্তিত্ব রয়েছে, তবে চূড়ান্ত অস্তিত্ব নেই।
অর্থান্তর, যা আক্ষরিক অর্থে "অন্য কিছু প্রমাণ করা" বা একটি "অনভিপ্রেত অর্থ" প্রকাশ করে, ভারতীয় যুক্তিবিদ্যা (ন্যায় দর্শন) এবং দার্শনিক বিতর্কে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যৌক্তিক ত্রুটি (হেত্বাভাস) হিসেবে বিবেচিত হয়। এই ধারণাটি তখন উদ্ভূত হয়, যখন একটি যুক্তি তার নিজস্ব শর্তে হয়তো যৌক্তিকভাবে সঠিক মনে হতে পারে, কিন্তু শেষপর্যন্ত যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, তা বক্তার মূল উদ্দেশ্য থেকে ভিন্ন বা অপ্রাসঙ্গিক। এর ফলে বিতর্কের মূল বিষয়বস্তু থেকে সরে গিয়ে এমন একটি উপসংহারে পৌঁছানো হয়, যা কাঙ্ক্ষিত নয় এবং যা আলোচনার উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে।
ন্যায়শাস্ত্রে (Nyāya) হেত্বাভাস বলতে বোঝানো হয়—যখন কোনো যুক্তির হেতু (কারণ) আপাতদৃষ্টিতে প্রমাণস্বরূপ মনে হয়, কিন্তু আসলে তা ভ্রান্ত বা অকার্যকর। একে বলা যায় “fallacy” বা যুক্তিগত ভ্রম। হেত্বাভাস পাঁচ প্রকার:
সব্যভিচার (Savyabhicāra): যেখানে হেতু কখনো সত্যে খাটে, কখনো মিথ্যায় খাটে—ফলে অনিশ্চিত। উদাহরণ: “ধোঁয়া আছে, তাই আগুন আছে।” (কিন্তু ধোঁয়া ভেজা কাঠ থেকেও উঠতে পারে, যেখানে আগুন নেই।)
সত্প্রতিপক্ষ (Satpratipakṣa): যেখানে হেতুর সমান শক্তির বিপরীত হেতু পাওয়া যায়। উদাহরণ: “এটি স্থায়ী, কারণ দৃশ্যমান।” (কিন্তু স্থায়ী না-ও হতে পারে বলে সমান যুক্তি পাওয়া যায়।)
অসিদ্ধ (Asiddha): যেখানে হেতুই প্রতিষ্ঠিত নয়, ভিত্তিহীন। উদাহরণ: “আকাশে পদচিহ্ন আছে, তাই তা চলাচলযোগ্য।” (আকাশে পদচিহ্ন—এই হেতুই নেই।)
বাধিত (Bādhita): যেখানে হেতু অন্য প্রমাণ দ্বারা খণ্ডিত হয়। উদাহরণ: “অগ্নি শীতল, কারণ এটি পদার্থ।” (কিন্তু প্রত্যক্ষ প্রমাণে আগুন গরম—তাই হেতু খণ্ডিত।)
বিরুদ্ধ (Viruddha): যেখানে হেতু আসলে প্রমাণের বিপরীতে যায়। উদাহরণ: “ধোঁয়া আছে, তাই এখানে আগুন নেই।” (আসলে ধোঁয়া তো আগুনের উপস্থিতির প্রমাণ!)
অর্থান্তর তিনটি স্বতন্ত্র উপায়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। অবিদ্যা আলোচনার প্রসঙ্গে অর্থান্তরের তিনটি প্রকার (ভিন্নধর্মক, ভিন্নাধারণ, ভিন্নপ্রকৃত) ব্যাখ্যা করছি:
১. ভিন্নধর্মক (Bhinna-dharmaka)—যখন অবিদ্যা ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম দ্বারা ধরা হয়। উদাহরণ: অবিদ্যা আবরণ-শক্তি (আত্মাকে আচ্ছন্ন করার ক্ষমতা), অবিদ্যা বিক্ষেপ-শক্তি (ভ্রম বা জগত প্রতীয়মান করানোর ক্ষমতা)। এখানে “আবরণ” আর “বিক্ষেপ”—দুটি ভিন্ন ধর্ম। ফলে অবিদ্যা দুই অর্থে ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়।
২. ভিন্নাধারণ (Bhinna-ādhāra)—যখন অবিদ্যা ভিন্ন আধারে (substratum) কাজ করে। উদাহরণ: জীব-এর মধ্যে অবিদ্যা—সে নিজেকে দেহ-মন হিসেবে ভ্রান্তভাবে দেখে। ব্রহ্ম-এর সঙ্গে অবিদ্যা—ব্রহ্মে জগতের প্রতীয়মানতা (superimposition) ঘটে। অবিদ্যা এখানে একই শক্তি, কিন্তু দুই ভিন্ন আধারে তার কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে।
৩. ভিন্নপ্রকৃত (Bhinna-prakr̥ta)—যখন অবিদ্যা ভিন্ন প্রসঙ্গ বা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বোঝা হয়। উদাহরণ: ব্যাবহারিক স্তরে (vyāvahārika)—অবিদ্যা জগৎ সৃষ্টি করে—কার্যকর শক্তি। পরমার্থিক স্তরে (pāramārthika)—অবিদ্যা আদৌ নেই—জ্ঞানে নিবারিত। প্রসঙ্গ বদলালেই অবিদ্যা এক জায়গায় কার্যকর, অন্য জায়গায় অস্বীকৃত।
অর্থাৎ, ভিন্নধর্মক—অবিদ্যা ভিন্ন ধর্মে ধরা পড়ে (আবরণ ও বিক্ষেপ); ভিন্নাধারণ—অবিদ্যা ভিন্ন আধারে প্রতীয়মান (জীব ও ব্রহ্ম); ভিন্নপ্রকৃত—অবিদ্যা ভিন্ন স্তর বা প্রসঙ্গে ভিন্নভাবে দেখা হয় (ব্যাবহারিক ও পারমার্থিক)।
যদিও এই তিন পদ্ধতি এখানে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি, তবে এর তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। এটি দেখায় যে, যৌক্তিক ত্রুটিগুলি কতটা সূক্ষ্ম হতে পারে এবং দার্শনিক যুক্তিতে কতটা কঠোরতা প্রয়োজন। একজন প্রবক্তার উচিত তার যুক্তি এবং সিদ্ধান্তের মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট সামঞ্জস্য বজায় রাখা, যাতে অযাচিত এবং সম্ভাব্য ক্ষতিকারক প্রভাব এড়ানো যায়। অর্থান্তর কেবল একটি যৌক্তিক ত্রুটি নয়, এটি বিতর্কের স্বচ্ছতা এবং উদ্দেশ্যের উপর একটি গুরুতর আঘাত। ভারতীয় ন্যায় দর্শনে, হেত্বাভাস বা যৌক্তিক ত্রুটিগুলি সঠিক জ্ঞান অর্জনের জন্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। অর্থান্তর একটি হেত্বাভাস, যা বক্তাকে তার যুক্তি ও সিদ্ধান্তের মধ্যে স্পষ্ট সংযোগ রাখতে শেখায়। মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে গেলে যুক্তি দুর্বল ও বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।