যুক্তির স্থানান্তর: নির্ভরতা মানেই উৎস আছে। এই তত্ত্ব একটি সূক্ষ্ম স্থানান্তর ঘটায়—আগে মিথ্যাত্ব যুক্তি নির্ভর করত নির্ভরতায় (dependence): যা নির্ভরশীল, তা মিথ্যা। এখন সেটি স্থানান্তরিত হয় উৎসে (origin): যা আত্মন থেকে উদ্ভূত এবং তাতে আরোপিত, তা স্বাধীনভাবে সত্য নয়। অর্থাৎ, ব্রহ্মণই একমাত্র স্বাশ্রয় (own-base), আর বাকি সবই তাতে আরোপিত প্রতীতি।
দার্শনিক পরিণতি: মহাবিশ্বের স্বাধীন অস্তিত্ব নেই; তা আত্মার বিকৃত প্রতিফলন। অধ্যাসের সর্বজনীনতা ব্যাখ্যা করে, কেন দুঃখ, কর্ম, জ্ঞান ইত্যাদি অভিজ্ঞতা সম্ভব হয়, যদিও ব্রহ্মণ নিজে নির্লিপ্ত। বহুত্বের মায়িকতা যুক্তিসিদ্ধ হয়—একের ওপর আরোপিত বহু। অতএব, জগৎ যতই বাস্তব মনে হোক, চূড়ান্ত সত্যে এটি কেবল আত্মার ওপর আরোপিত এক মায়াময় ছায়া।
অদ্বৈতের মতে—অধ্যাসই মিথ্যাত্বের সর্বজনীন প্রক্রিয়া। জগৎ আত্মার ওপর আরোপিত এক আপাত প্রকাশ, যার নিজস্ব কোনো আধার বা স্বাধীন সত্তা নেই। ব্রহ্মণই একমাত্র স্বাশ্রয়—চূড়ান্ত, মৌলিক, সর্বব্যাপী। “ব্রহ্মণই সত্য, জগৎ মিথ্যা”—কারণ জগৎ ব্রহ্মণের ওপর সর্বজনীন অধ্যাসের ফল, একের ভেতর বহুর ছায়া, মায়ার পর্দায় আত্মার নিজেরই প্রতিফলন।
মিথ্যাত্বের বিশ্লেষণ—ব্রহ্মণের পরম সত্যে প্রতিষ্ঠা। অদ্বৈত দর্শনে “মিথ্যাত্ব” নিয়ে এত বিশদ আলোচনা কোনো নেতিবাচক উদ্দেশ্যে নয়। এর লক্ষ্য হলো—যা মিথ্যা, তা শনাক্ত করা, যাতে যা সত্য—ব্রহ্মণ—তা অনাবৃত হয়। যখন সমস্ত নির্ভরশীল, অংশযুক্ত, বা মায়াময় সত্তাগুলি যুক্তি দ্বারা বাতিল হয়, তখন যা থেকে সব উদ্ভূত এবং যেখানে সব লীন—সেই ব্রহ্মণই অবশিষ্ট থাকে। এটাই জ্ঞান (jñāna) বা সত্য উপলব্ধির (realization) দার্শনিক গন্তব্য।
ব্রহ্মণই হচ্ছে অস্তিত্ব (Bhāva) ও অনস্তিত্ব (Abhāva)-এর একমাত্র আধার। অদ্বৈতের একটি মহত্তম ঘোষণা হলো—“ব্রহ্মণই সমস্ত সত্তার (bhāva) এবং অনস্তিত্বের (abhāva) একমাত্র আধার।” (sarveṣām api bhāvānām āśrayatvena brahma eva) এর মানে, যা-কিছু আছে (exists), এবং যা-কিছু নেই (does not exist)—দুটোরই ভিত্তি হলো ব্রহ্মণ। এটা শুধু দার্শনিক নয়, বরং অস্তিত্বতাত্ত্বিক (ontological) এক সুদৃঢ় বক্তব্য।
অস্তিত্বতত্ত্ব (Ontology) হলো দর্শনের সেই শাখা, যা জিজ্ঞেস করে—“কী সত্যিই আছে?” “অস্তিত্ব মানে কী?” “যা আছে, তা কীভাবে আছে, কেন আছে?” তাই অস্তিত্বতাত্ত্বিক অর্থ—“অস্তিত্ব সম্পর্কিত”, “অস্তিত্বের স্বরূপ ব্যাখ্যা করে এমন”, বা “সত্তার প্রকৃতি নিয়ে দার্শনিক বিশ্লেষণ।”
অদ্বৈত দর্শনে: ব্রহ্মণকে বলা হয় অস্তিত্বতাত্ত্বিক ভিত্তি (ontological ground)—কারণ সব কিছু তার ওপর নির্ভরশীল। দৈনন্দিনভাবে—যদি কেউ বলে “স্বপ্ন কি বাস্তব?”, তাহলে সে মূলত এক অস্তিত্বতাত্ত্বিক প্রশ্ন করছে—স্বপ্নের “অস্তিত্ব” কী ধরনের, তা জানতে চাইছে।
দড়ির ওপর সাপের ভ্রমে, “সাপ” কখনও বাস্তব ছিল না—কিন্তু “যে-আধারের ওপর” সেই ভ্রম দেখা গিয়েছিল, অর্থাৎ দড়ি—সে-ই ছিল বাস্তব। যখন ভ্রম মিটে যায়, তখন বলা যায়, “সাপ নেই”, কিন্তু “সাপের অনস্তিত্ব”ও “দড়ির ওপরেই” নির্ভর করে, কারণ অনস্তিত্ব জানার জন্যও (কল্পনায় আনার সুবিধার্থে) কোনো বাস্তব আধার লাগে। তেমনি, পুরো মহাজগত—যতক্ষণ উপলব্ধ, ততক্ষণ ব্যাবহারিক বাস্তব, আর যখন জ্ঞান উদয় হয়, তখন তার মিথ্যা প্রকাশও ব্রহ্মণের ওপরেই নির্ভরশীল। অর্থাৎ, মায়া থেকেও ব্রহ্মণকে বাদ দেওয়া যায় না।
দর্শনগত গভীরতা: দ্বৈত ধারণার অতিক্রম—“অস্তিত্ব” ও “অনস্তিত্ব”—এই দুই বিপরীত ধারণা আমাদের চিন্তার মূল কাঠামো। কিন্তু অদ্বৈত বলে, ব্রহ্মণ এই দ্বন্দ্বেরও অতীত। ব্রহ্মণ এমন এক পরম সত্তা, যাকে “আছে” বা “নেই”—কোনো দ্বৈত ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। কারণ “আছে” বললে সেটি কোনো কিছুর সাথে তুলনা ধরে নেয়, আর “নেই” বললে তা অনস্তিত্বের গণ্ডিতে পড়ে। কিন্তু ব্রহ্মণ চিরন্তন উপস্থিতি (ever-presence)—যা সব অবস্থাকেই ধারণ করে, কিন্তু নিজে তাদের দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়। এই অবস্থাই নির্গুণ ব্রহ্মণ (Nirguṇa Brahman)—যেখানে সমস্ত বর্ণনা, গুণ, ভাব, ও বিপরীত জুটি বিলীন হয়ে যায়।
মুক্তির পরিণতি (Soteriological Consequence): যখন সাধক এই উপলব্ধিতে পৌঁছে যে, জগৎ মিথ্যা, মায়ানির্ভর, কিন্তু ব্রহ্মণ সব কিছুর অন্তর্নিহিত আধার—তখন সে বুঝে ফেলে: “আমি (আত্মা) কখনও আসলে বদ্ধ ছিলাম না, মুক্তিও কোনো নতুন অবস্থা নয়—বরং, আমি সেই ব্রহ্মণ, যেখানে সব কিছু ওঠে, খেলে, লীন হয়।” এই উপলব্ধিই মোক্ষ (mokṣa)—যেখানে দ্বৈত ভাব, ভয়, আকাঙ্ক্ষা, কর্মফল—সব মিলিয়ে যায়। ব্রহ্মণ উপলব্ধি করা মানে, নিজের প্রকৃত স্বরূপে জেগে ওঠা।
ব্রহ্মণই সমস্ত সত্তা ও অসত্তার চিরন্তন ভিত্তি। অস্তিত্ব ও অনস্তিত্ব—উভয়ই ব্রহ্মণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এই উপলব্ধির মাধ্যমে মানুষ সমস্ত ভ্রম অতিক্রম করে ব্রহ্মণে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটিই অদ্বৈতের জ্ঞান–মুক্তির পথ (jñāna–mokṣa mārga)। এককথায়, “যা আছে, তা ব্রহ্মণ; যা নেই, তার অনস্তিত্বও ব্রহ্মণের উপরই নির্ভরশীল। তাই, ব্রহ্মণ একমাত্র সত্য—আর সেটি উপলব্ধ হওয়াই মোক্ষ।”
বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্লেষণ নয়, মুক্তির উপায়—অদ্বৈতের মিথ্যাত্ব-তত্ত্ব (doctrine of falsity) কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক কৌতূহল নয়। এর উদ্দেশ্য একটিই—“দুঃখ ও অজ্ঞানতার (saṁsāra) চক্র থেকে মুক্তি (mokṣa)।” অর্থাৎ, দর্শনের এই সমস্ত কঠোর যুক্তি, সংজ্ঞা, প্রমাণ, ও উদাহরণ একই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায়—জ্ঞান (jñāna) অর্জন, যা মুক্তি প্রদান করে।
জগতের প্রকৃতি—মিথ্যা, কিন্তু আপাতভাবে কার্যকর। মিথ্যাত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অদ্বৈত বোঝায়—এই দৃশ্যমান জগৎ অস্থায়ী (anitya), নির্ভরশীল (dependent) এবং শর্তসাপেক্ষ (conditional)। যতক্ষণ অজ্ঞানতা আছে, ততক্ষণ জগৎ বাস্তব বলে মনে হয়, কিন্তু জ্ঞানের আলোয় দেখা যায়—এটি চূড়ান্তভাবে অবাস্তব (pāramārthika-asatya)। এখানে কোনো নৈরাশ্য নেই, বরং বাস্তব ও আপাতের পার্থক্য উপলব্ধি করার মুক্তিদায়ক অন্তর্দৃষ্টি আছে।
মুক্তিদায়ক জ্ঞান (Brahma-Jñāna / Ātma-Jñāna)—যে-জ্ঞান জানে, “আমি ব্রহ্মণ; ব্রহ্মণ ছাড়া কিছুই নেই”, সেই জ্ঞানই মুক্তিদায়ক। এই জ্ঞান বুদ্ধিবৃত্তিক নয়, বরং অস্তিত্বগত উপলব্ধি (existential realization)। এটি সেই মুহূর্ত, যখন স্বতন্ত্র আত্মা (jīva) বুঝতে পারে—সে কখনোই আলাদা ছিল না, সে চিরকালই সেই ব্রহ্মণ। এই উপলব্ধিই অদ্বৈত অভিজ্ঞতা (non-dual realization), যেখানে “জ্ঞানী” ও “জ্ঞান” এক হয়ে যায়।
অজ্ঞানতার বিলুপ্তি ও মায়ার সমাধান: যখন সত্যিকারের জ্ঞান (Brahma-jñāna) উদয় হয়, তখন অজ্ঞানতা (avidyā)—যা মায়া, ভ্রান্তি ও বিভেদের মূল—স্বয়ং বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই জ্ঞানের আলোয় “আমি” ও “তুমি”-র ভেদ মুছে যায়, “আমার” ও “তোমার”-এর মালিকানা ভেঙে যায়, কর্মফল ও পুনর্জন্মের শৃঙ্খল (saṁsāra) ছিন্ন হয়। যেমন দড়ি-সাপের উদাহরণে আলো জ্বালালে সাপ অদৃশ্য হয়, তেমনি জ্ঞানের আলোয় জগৎ তার মিথ্যা স্বরূপে বিলীন হয়।
অদ্বৈতের অমোঘ ঘোষণা—“জ্ঞানই মোক্ষ” (Jñānam Eva Mokṣaḥ)। অর্থাৎ, মুক্তি কোনো ভবিষ্যৎ অবস্থা নয়, বরং জ্ঞানের তাৎক্ষণিক ফল। কোনো নতুন কিছু অর্জন করতে হয় না—শুধু অজ্ঞানতার পর্দা সরাতে হয়, যা আড়াল করে রেখেছিল আত্মার স্বরূপকে।
মুক্তির অবস্থা—অদ্বৈত পরিচয়ের প্রত্যক্ষ উপলব্ধি: যখন জ্ঞানী ব্যক্তি (jñānī) উপলব্ধি করে—“আত্মা (Ātman) আর ব্রহ্মণ (Brahman) এক ও অভিন্ন (non-different)”, তখন সমস্ত দুঃখ, ভয় ও সীমাবদ্ধতা লুপ্ত হয়। এই অবস্থায় জগৎ থাকে, কিন্তু তাকে আর আবদ্ধ করে না; অভিজ্ঞতা হয়, কিন্তু “আমি ভোগী” ধারণা থাকে না; কর্ম চলে, কিন্তু কর্মফল বেঁধে রাখতে পারে না। এটাই জীবন্মুক্তি (jīvanmukti)—জীবিত অবস্থাতেই মুক্ত অবস্থার উপলব্ধি।
“জীবন্মুক্তি” (Jīvanmukti) শব্দটি এসেছে দুটি অংশ থেকে—“জীবন্” (jīvan) = জীবিত অবস্থা, জীবনের সময়। “মুক্তি” (mukti) = মুক্তি, পরিত্রাণ বা মোক্ষ। অর্থাৎ, জীবন্মুক্তি মানে হলো—জীবিত অবস্থাতেই মুক্ত হওয়া। যিনি অদ্বৈত জ্ঞান (Brahma-jñāna) লাভ করেছেন, অর্থাৎ উপলব্ধি করেছেন—“আমি দেহ, মন বা ব্যক্তিত্ব নই; আমি চিরন্তন ব্রহ্মণ”, তিনি জীবিত থেকেও সংসারের বন্ধন, ভয়, কামনা, দুঃখ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। তাঁর শরীর-মন এখনও কাজ করে, কথা বলে, খায়, ঘুমায়, কিন্তু তিনি জানেন—“আমি এসব নই।” তাই তিনি জগতের মধ্যে থেকেও জগতের বাইরে।
যেমন পদ্মফুল জলেতে থাকে, কিন্তু জলে ভেজে না—তেমনি জীবন্মুক্ত ব্যক্তি সংসারে থেকেও সংসারে আবদ্ধ নন। অদ্বৈতমতে, মুক্তি মৃত্যুর পর নয়, বরং জ্ঞান উদয়ের সঙ্গেই ঘটে। যখন অজ্ঞানতা (avidyā) বিলুপ্ত হয়, তখন জানা যায়—“আমি চিরকালই মুক্ত ছিলাম; শুধু ভুলে গিয়েছিলাম।” এই অবস্থাকেই বলা হয় জীবন্মুক্তি।
উপনিষদ ও গীতায় বলা হয়েছে—জীবন্মুক্ত ব্যক্তি হলেন:
শান্ত (śānta)—মন সর্বদা স্থির ও প্রশান্ত,
অভয় (abhaya)—কোনো ভয় বা অনিশ্চয়তা নেই,
নির্লিপ্ত (asakta)—আনন্দ বা দুঃখে সমান অনুভবসম্পন্ন,
কৃতার্থ (kṛtārtha)—জীবনের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ।
তিনি কাজ করেন, কিন্তু কর্মফলে জড়ান না। (নিষ্কাম কর্ম)
জীবন্মুক্তি লাভকারী ব্যক্তিকে জীবন্মুক্ত বলা হয়। তিনি চূড়ান্ত সত্য (ব্রহ্ম) উপলব্ধি করেছেন এবং তাঁর কাছে জাগতিক অস্তিত্বের মায়া বা ভ্রম (মায়া) দূরীভূত হয়েছে। তাঁর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হলো:
ব্রহ্মজ্ঞান লাভ: তিনি উপলব্ধি করেছেন যে, তাঁর নিজস্ব আত্মা (আত্মা) এবং পরম সত্য (ব্রহ্ম) অভিন্ন ("অহম ব্রহ্মাস্মি")। তিনি তাঁর প্রকৃত স্বরূপ জেনেছেন।
কর্মফলের বিনাশ: অতীতের সমস্ত সঞ্চিত কর্মের (সঞ্চিত কর্ম) ফল বা প্রভাব তাঁর কাছে আর বন্ধন সৃষ্টি করে না। তিনি কেবল বর্তমান জীবন ধারণের জন্য নির্ধারিত কর্মফল (প্রারব্ধ কর্ম) ভোগ করেন, কিন্তু নতুন কোনো কর্মফল তৈরি করেন না।
অহংকার ও দ্বৈততা থেকে মুক্তি: তিনি ব্যক্তিগত অহংকার (অহং) থেকে মুক্ত। তিনি জগৎকে দ্বৈতভাবে (ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, আমি-অন্য) দেখেন না, বরং সর্বত্র একত্ব দেখেন।
সমতা ও নিরাসক্তি: তিনি সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি, প্রশংসা-নিন্দা—সব অবস্থাতেই সমতা বজায় রাখেন। তিনি জগতের প্রতি কোনো আসক্তি (রাগ) বা বিতৃষ্ণা (দ্বেষ) অনুভব করেন না।
জনকল্যাণ: যদিও তিনি ব্যক্তিগতভাবে মুক্ত, তবুও তাঁর সমস্ত কর্ম লোককল্যাণের জন্য হয়, কোনো ব্যক্তিগত লাভের জন্য নয়।
জীবন্মুক্তি এবং বিদেহ মুক্তি—উভয় ধারণাই মুক্তি বা মোক্ষকে নির্দেশ করে, কিন্তু তাদের সময় এবং প্রকৃতিতে মৌলিক ভিন্নতা রয়েছে।
১. জীবন্মুক্তি (Jīvanmukti): জীবন্মুক্তি মানে জীবিত অবস্থায় মুক্তি। এটি সেই আধ্যাত্মিক অবস্থা, যখন একজন ব্যক্তি দেহ ধারণ করে থাকা অবস্থাতেই চরম সত্য (ব্রহ্ম) উপলব্ধি করেন এবং জাগতিক বন্ধন, দুঃখ ও অজ্ঞানতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হন।
সময়কাল: জীবন্মুক্তি হলো সেই অবস্থা, যা ব্যক্তি তাঁর জীবদ্দশায় লাভ করেন। এই মুক্তি বর্তমান শরীর শেষ হওয়া পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই মুক্ত অবস্থাতেও শরীর কেন টিকে থাকে? কারণ, পূর্বের কর্মের ফল, যা এই জীবনকে শুরু করেছে (প্রারব্ধ কর্ম), তা যতক্ষণ না শেষ হচ্ছে, ততক্ষণ শরীর টিকে থাকে। মুক্ত ব্যক্তি এই প্রারব্ধ কর্মের ফলকে নিরাসক্তভাবে ভোগ করে যান।
প্রকৃতি: এটি মূলত জ্ঞানের দ্বারা অর্জিত উপলব্ধি। এই মুক্তির ফলে ব্যক্তি উপলব্ধি করেন যে, তাঁর আত্মা (স্ব) এবং ব্রহ্ম (পরম সত্য) একই। তিনি অহংকার বা দ্বৈততার ভ্রম থেকে মুক্ত হন।
ফল: জীবন্মুক্ত ব্যক্তি চরম আনন্দ (আনন্দ) এবং শান্তি লাভ করেন। তিনি আর কোনো নতুন কর্মফল তৈরি করেন না, ফলে ভবিষ্যতে আর জন্ম-মৃত্যুর চক্রে (সংসার) আবদ্ধ হন না।
২. বিদেহ মুক্তি (Videhamukti): বিদেহ মুক্তি মানে দেহত্যাগের পরে মুক্তি। এটি জীবন্মুক্তি অর্জনের চূড়ান্ত পরিণতি।
সময়কাল: বিদেহ মুক্তি তখনই ঘটে, যখন একজন জীবন্মুক্ত ব্যক্তি তার বর্তমান শরীরকে (দেহ) ত্যাগ করেন বা যখন প্রারব্ধ কর্মের প্রভাব সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়ে যায়।
প্রকৃতি: এটি স্থায়ী ও চরম মুক্তি। এই অবস্থায় মুক্ত আত্মা পুনরায় শরীর ধারণের সমস্ত সম্ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে ব্রহ্মে বিলীন হয়ে যায়। 'বিদেহ' অর্থাৎ দেহহীন অবস্থা।