অবিদ্যা-তত্ত্ব-দীপিকা: উনিশ



অনুমান সম্পর্কিত উক্তিটি একটি গভীর দার্শনিক প্রশ্ন উত্থাপন করে, যা জ্ঞানের বৈধতা এবং তার উৎসের সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করে। এটি পরোক্ষভাবে এই ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করে যে, শুধু অনুমান বা যৌক্তিক যুক্তিবিদ্যা দ্বারা চূড়ান্ত সত্যে উপনীত হওয়া সম্ভব নয়। বরং, বৈধ জ্ঞানের জন্য অন্যান্য, সম্ভবত অধিকতর প্রত্যক্ষ বা অভিজ্ঞতামূলক প্রমাণ, যেমন উপলব্ধি (প্রত্যক্ষ) বা সাক্ষ্য (শব্দ) অপরিহার্য। এই দৃষ্টিভঙ্গি একটি দার্শনিক ব্যবস্থার মধ্যে জ্ঞানতাত্ত্বিক বৈধতার জন্য একটি আরও সূক্ষ্ম, সামগ্রিক এবং অগতানুগতিক পদ্ধতির ইঙ্গিত দেয়, যেখানে শুধুমাত্র অনুমানমূলক পদ্ধতির উপর নির্ভর করা হয় না।

এর অর্থ হলো, অনুমান যদিও সম্পর্ক এবং ফলাফল বুঝতে সাহায্য করতে পারে, তবে বাস্তবতা এবং অবাস্তবতার চূড়ান্ত প্রকৃতি উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে এর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশেষ করে মিথ্যাত্বের আত্মগত বা অভিজ্ঞতামূলক দিক সম্পর্কিত বিষয়ে অনুমান প্রায়শই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি মায়ার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, যেমন একটি মরুভূমিতে মরিচিকা দেখা, মিথ্যাত্বের একটি আরও শক্তিশালী এবং তাৎক্ষণিক সূচক হতে পারে, যা কেবল একটি যৌক্তিক যুক্তির চেয়ে বেশি কার্যকরী। একটি যৌক্তিক যুক্তি কেবল অসংগতি প্রমাণ করতে পারে, কিন্তু চূড়ান্ত অবাস্তবতা বা মিথ্যাত্বের আত্মগত অনুভূতি দিতে পারে না। এটি যৌক্তিক সংহতি এবং চূড়ান্ত সত্তাতাত্ত্বিক অবস্থানের মধ্যে একটি সমালোচনামূলক পার্থক্যকে তুলে ধরে।

তার্কিকরা, যারা অনুমানের গভীর বোদ্ধা এবং এর কার্যকারিতা সম্পর্কে অবগত, তারাও এর সীমানা স্বীকার করেন। বিশেষত যখন চূড়ান্ত বাস্তবতা কী এবং কী কেবলই মায়াময়—এই গভীর প্রশ্নটি নিয়ে কাজ করেন, তখন তারা অনুমানের সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করেন। তাঁরা জানেন যে, অনুমান যদিও প্রমাণের একটি শক্তিশালী মাধ্যম, তবে এটি সবসময় চূড়ান্ত সত্যের দ্বারে পৌঁছাতে পারে না। কিছু সত্য এমন, যা কেবল প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা বা আত্মোপলব্ধির মাধ্যমেই অনুধাবন করা সম্ভব। এই ধরনের ক্ষেত্রে, অনুমান কেবল একটি পথনির্দেশক হিসাবে কাজ করতে পারে, কিন্তু চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য অন্যান্য জ্ঞানতাত্ত্বিক পদ্ধতির সহায়তা প্রয়োজন হয়। এই বিষয়টি ভারতীয় দর্শন, বিশেষ করে অদ্বৈত বেদান্তে, যেখানে মায়া এবং ব্রহ্মের পার্থক্য বোঝাতে অনুমানের পাশাপাশি প্রত্যক্ষ এবং শ্রুতি (শাস্ত্রীয় প্রমাণ) কে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেখানে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক।

অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনে, অভিজ্ঞতামূলক জগতের চূড়ান্ত বাস্তবতার বিরুদ্ধে একটি কেন্দ্রীয় ও সুগভীর যুক্তি উপস্থাপন করা হয়, যা গভীরভাবে বিতর্কিত এবং চিন্তার খোরাক জোগায়। এই যুক্তিটি একটি শক্তিশালী উপমার মাধ্যমে ব্যক্ত করা হয়েছে: "বিবাদের বিষয় (বিবাদ-পদং) (বিতর্কিত বিমতং) মিথ্যা (মিথ্যা) কারণ এর দৃশ্যত্ব (দৃশ্যত্বাত), যেমন শুক্তি-রুপা (শুক্তি-রৌপ্যবৎ)।" এই যুক্তিটি শুক্তি-রুপার সুপরিচিত মায়ার সঙ্গে (যেখানে একটি ঝিনুককে ভুলবশত রুপার টুকরা হিসাবে প্রতীয়মান হয়) সমগ্র প্রপঞ্চ জগৎ-এর মধ্যে একটি প্রত্যক্ষ এবং চিত্রাত্মক সমান্তরাল টানছে।

শুক্তি-রুপা একটি ক্লাসিক উদাহরণ, যা অদ্বৈত বেদান্তের মূলনীতিকে তুলে ধরে। এই উপমাতে, একজন ব্যক্তি যখন অন্ধকারে বা অস্পষ্ট আলোতে একটি ঝিনুক দেখে, তখন সেটিকে রুপা বলে ভুল করে। এই ভুল উপলব্ধিটি সাময়িক এবং বাস্তবতার অভাবযুক্ত। যে-মুহূর্তে আলো আসে বা ব্যক্তি মনোযোগ-সহকারে পর্যবেক্ষণ করে, তখন সেই রুপার ভ্রম দূরীভূত হয় এবং ঝিনুকের আসল রূপটি প্রকাশিত হয়। এখানে, রুপাটি মিথ্যা, কারণ এর অস্তিত্ব কেবল উপলব্ধির উপর নির্ভরশীল (দৃশ্যত্ব)। এটি স্বাধীন, চূড়ান্ত বাস্তবতার অধিকারী নয়।

এই একই যুক্তি প্রপঞ্চ জগতের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হয়: "—জগতের (প্রপঞ্চং) মিথ্যা কারণ এর দৃশ্যত্ব, যেমন শুক্তি-রুপা।" এর অর্থ হলো, আমরা যা-কিছু দেখি, শুনি, স্পর্শ করি, স্বাদ গ্রহণ করি এবং অনুভব করি—অর্থাৎ আমাদের পঞ্চইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধ সমগ্র মহাবিশ্ব—তার একটি অন্তর্নিহিত বস্তুত্ব বা স্বাধীন অস্তিত্ব নেই। এটি কেবল চেতনার একটি প্রকাশ বা উপলব্ধির বিষয়।

অদ্বৈত বেদান্তের মতে, জগৎ ব্রহ্মের উপর আরোপিত একটি মায়িক সৃষ্টি। যেমন শুক্তি-রুপা মায়ায় অনুভূত রুপা মিথ্যা বলে বিবেচিত হয়, কারণ এটি কেবল উপলব্ধির একটি বস্তু (দৃশ্যত্ব)—যা একটি চেতনার কাছে উপস্থিত হয় কিন্তু সেখানে স্বাধীন, চূড়ান্ত বাস্তবতার অভাব থাকে—ঠিক তেমনি "বিবাদের বিষয়" (এমন কিছু, যা বিতর্কিত, অনুভূত বা অভিজ্ঞতার বস্তু হতে পারে) একই কারণে মিথ্যা বলে ঘোষিত হয়—এর অন্তর্নিহিত দৃশ্যত্ব।

এই যুক্তিটি অত্যন্ত গভীর দার্শনিক প্রভাব ফেলে। এটি আমাদের জাগতিক অভিজ্ঞতার প্রকৃতির উপর প্রশ্ন তোলে এবং আমাদের যা বাস্তব বলে মনে হয়, তার মৌলিক ভিত্তি পরীক্ষা করে। অদ্বৈত বেদান্ত দাবি করে যে, একমাত্র ব্রহ্মই সত্য, এবং জগতের একটি আপেক্ষিক, ব্যাবহারিক সত্যতা আছে, কিন্তু পরম সত্যতা নেই। জগতের দৃশ্যত্বই তার মিথ্যাত্বের প্রমাণ। এটি এমন একটি ধারণা, যা আধ্যাত্মিক মুক্তি এবং আত্ম-উপলব্ধির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসাবে বিবেচিত হয়, যেখানে ব্যক্তি এই মায়ার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে পরম সত্য ব্রহ্মের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করে।

আধুনিক বিজ্ঞান এবং দার্শনিক বিতর্কেও এই ধরনের ধারণাগুলির প্রতিধ্বনি দেখা যায়, যেখানে বাস্তবতা এবং উপলব্ধির মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়। যদিও অদ্বৈত বেদান্তের দৃষ্টিভঙ্গি আধিভৌতিক, এটি উপলব্ধির সীমাবদ্ধতা এবং আমাদের চেতনার ভূমিকা সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। এই যুক্তিটি কেবলমাত্র একটি দার্শনিক প্রবচন নয়, বরং এটি আত্ম-অনুসন্ধান এবং আধ্যাত্মিক জাগরণের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, যা আমাদের জাগতিক জীবনের উদ্দেশ্য এবং সত্যের প্রকৃতি সম্পর্কে মৌলিক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে উৎসাহিত করে।

এই গভীর এবং সুদূরপ্রসারী উক্তিটি কিছু প্রভাবশালী দার্শনিক ধারার একটি মূল নীতিকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা সমগ্র অনুভূত মহাবিশ্বের অন্তর্নিহিত মায়াময়, অ-চূড়ান্তভাবে বাস্তব, বা প্রপঞ্চগতভাবে নির্মিত প্রকৃতিকে স্থাপন করে। এই যুক্তিটি মনে করে যে, উপলব্ধির একটি বস্তু, এবং এইভাবে পরিবর্তন, অনিত্যতা এবং একটি উপলব্ধিকারী-র ওপর নির্ভরশীলতার অধীন এমন কিছু, চূড়ান্ত, অপরিবর্তনীয় বাস্তবতা ধারণ করতে পারে না। শুক্তি-রুপার উপমাটি বিশেষভাবে শক্তিশালী, কারণ এটি একটি সাধারণ, সম্পর্কযুক্ত মায়ার অভিজ্ঞতার মধ্যে একটি বিমূর্ত দার্শনিক ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করে, যা যুক্তিটিকে স্বজ্ঞাতভাবে বোধযোগ্য তবুও দার্শনিকভাবে গভীর করে তোলে। এটি শেখায় যে, জগতের প্রতি আমাদের অভিজ্ঞতা, শুক্তি-রুপার উপলব্ধির মতো, চূড়ান্ত বাস্তবতার একটি প্রত্যক্ষ উপলব্ধি না হয়ে একটি অধ্যাস বা একটি ভুল পরিচয়। এই যুক্তিটি শক্তিশালী, স্বাধীন বাহ্যিক জগতের সাধারণ জ্ঞানের ধারণাকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে, এবং আমাদের মনোযোগকে একটি গভীর, অপরিবর্তনীয় বাস্তবতার দিকে পুনর্নির্দেশিত করে।

যুক্তিবাদের প্রেক্ষাপটে, একটি তাৎক্ষণিক এবং মৌলিক প্রতি-যুক্তি উপস্থাপিত হয়, যা পূর্বোক্ত দাবির মূল ভিত্তিকেই চ্যালেঞ্জ করে। এই দাবিটি হলো: "প্রমাণিত হওয়ার বৈশিষ্ট্যটি (সাধ্যং) প্রতিষ্ঠিত হয়নি।" এই আপত্তিটি জগতের মিথ্যাত্বের জন্য পূর্বোক্ত যুক্তিতে একটি মৌলিক যৌক্তিক দুর্বলতাকে চিহ্নিত করে। "প্রমাণিত হওয়ার বৈশিষ্ট্যটি" বলতে এখানে বিশেষভাবে জগতের উপর আরোপিত "মিথ্যাত্ব" বা "মায়াময় প্রকৃতিকে" বোঝানো হয়েছে।

প্রতি-যুক্তিটি সমালোচনামূলকভাবে তুলে ধরে যে, যদি এই নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যটি—মিথ্যাত্ব নিজেই—যুক্তিটির প্রাথমিক ভিত্তিতে পর্যাপ্তভাবে, সুনির্দিষ্টভাবে এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে সংজ্ঞায়িত বা প্রতিষ্ঠিত না হয়, তবে জগৎ অন্তর্নিহিতভাবে মিথ্যা—এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি যৌক্তিকভাবে বা প্রমাণযোগ্যভাবে উপনীত হওয়া যায় না। এর অর্থ হলো, যে-কোনো সিদ্ধান্ত টানার আগে, যুক্তিবাদের মূল স্তম্ভ হলো যুক্তির প্রতিটি উপাদানকে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা। বিশেষ করে, "মিথ্যাত্ব" বলতে ঠিক কী বোঝায়, তা সংজ্ঞায়িত করার ওপর প্রমাণ সম্পর্কিত সকল উপলব্ধি সরাসরি নির্ভর করে।

মিথ্যাত্বের একটি স্পষ্ট এবং সর্বজনীনভাবে গৃহীত সংজ্ঞা ছাড়া, যা এর বিভিন্ন দার্শনিক সূক্ষ্মতাগুলিকে ব্যাখ্যা করে, যুক্তিটি আত্মগত, দ্ব্যর্থক এবং বস্তুনিষ্ঠ বৈধতার অভাবযুক্ত হয়ে পড়ে। তার্কিক পদ্ধতি দাবি করে যে, একটি যৌক্তিক যুক্তির প্রতিটি পদকে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে এবং সিদ্ধান্ত টানার আগে এর অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটি শুধু একটি দার্শনিক বিতর্কের বিষয় নয়, বরং এটি যৌক্তিক পদ্ধতির একটি মৌলিক নীতি।

প্রতি-যুক্তিটি মূলত "মিথ্যাত্ব"-র সংজ্ঞার ওপর একটি বস্তুনিষ্ঠ আলোচনার আহ্বান জানায়। এটি দাবি করে যে, যুক্তির প্রবক্তা এই মৌলিক যৌক্তিক পূর্বশর্তটি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সমালোচকরা মনে করেন, যদি "মিথ্যাত্ব" কী, তা নিয়েই স্পষ্টতা না থাকে, তাহলে জগতের মিথ্যাত্ব প্রমাণের পুরো প্রচেষ্টাটিই ভিত্তিহীন হয়ে পড়ে। এটি এমন একটি অবস্থা, যেখানে ধারণার অস্পষ্টতা যুক্তির দুর্বলতা তৈরি করে।

এই সমালোচনামূলক পদক্ষেপটি ধারণাগত কঠোরতার প্রতি তার্কিকের প্রতিশ্রুতিকে মূর্ত করে তোলে। এটি প্রাথমিক ভিত্তিটির নিছক গ্রহণযোগ্যতার পরিবর্তে ব্যবহৃত পদগুলির একটি গভীর নিরীক্ষাকে জরুরি করে তোলে। তার্কিকরা যুক্তি দেন যে, এমনকি সবচেয়ে বাধ্যতামূলক উপমা বা স্বজ্ঞাত যুক্তিগুলিও চূড়ান্তভাবে স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত এবং যৌক্তিকভাবে নির্ভুল ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। এই কঠোরতা ছাড়া, দার্শনিক আলোচনা কেবল ধারণাগত অস্পষ্টতার মধ্যে ঘুরপাক খাবে এবং কোনো দৃঢ় সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবে না।

অতএব, এই প্রতি-যুক্তিটি দার্শনিক আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে: যে-কোনো তাত্ত্বিক কাঠামোতে ব্যবহৃত মৌলিক ধারণাগুলোর স্পষ্টতা এবং সুনির্দিষ্টতা অপরিহার্য। এটি যুক্তিবাদের একটি মৌলিক নীতি, যেখানে প্রমাণ এবং সংজ্ঞার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ককে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যদি "মিথ্যাত্ব" নামক মৌলিক ধারণাটিই অস্পষ্ট থাকে, তাহলে জগৎ মিথ্যা—এই দাবিটি কেবল একটি অনুমান হিসেবেই থেকে যাবে, যা প্রমাণের কষ্টিপাথরে উত্তীর্ণ হতে পারবে না।

এরপর এই গুরুত্বপূর্ণ "প্রমাণিত হওয়ার বৈশিষ্ট্যের" (সাধ্যং) বিভিন্ন সম্ভাব্য ব্যাখ্যা এবং সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞাগুলির ওপর বিস্তারিত আলোচনা আসে, বেশ কয়েকটি সমালোচনামূলক ব্যাখ্যার উদ্‌ভব হয়, যার প্রতিটির যুক্তির বৈধতার জন্য স্বতন্ত্র প্রভাব রয়েছে:

এক। প্রমাণাগম্যত্বম (Pramāṇāgamyatvam)—জগৎ কেন মিথ্যা, তার একটি জ্ঞানতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: "প্রমাণাগম্যত্বম" ধারণাটি ভারতীয় দর্শনে, বিশেষত অদ্বৈত বেদান্তের প্রেক্ষাপটে, "জ্ঞানের বৈধ উপায়ে জানার যোগ্য না হওয়া"-কে নির্দেশ করে। এটি একটি গভীর জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রস্তাবনা, যা জাগতিক অভিজ্ঞতা ও তার বাস্তবতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এই ধারণার মূল ভিত্তি হলো, যদি জগৎকে মিথ্যা বা মায়া বলে গণ্য করতে হয়, তবে তার কারণ এই যে, এটি প্রত্যক্ষ উপলব্ধি (প্রত্যক্ষ), অনুমান (অনুমান) বা মৌখিক সাক্ষ্য (শব্দ)—এই তিনটি প্রধান বৈধ প্রমাণ বা জ্ঞান উপায়ের দ্বারা পুরোপুরি উপলব্ধি, যাচাই বা বোঝা যেতে পারে না।

জ্ঞানের প্রমাণের সীমাবদ্ধতা এবং জগতের 'মিথ্যাত্ব': প্রমাণ বলতে বোঝায় জ্ঞানের এমন সব বৈধ ও কর্তৃত্বপূর্ণ উৎস বা উপায়, যা দ্বারা আমরা কোনো কিছুকে সত্য বলে জানি বা বুঝি। ভারতীয় জ্ঞানতত্ত্বে, বিশেষত ন্যায়দর্শনে, এই প্রমাণগুলির উপর গভীর আলোচনা হয়েছে। কিন্তু "প্রমাণাগম্যত্বম" এই প্রচলিত প্রমাণের কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন তোলে, যখন তা জাগতিক বাস্তবতার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।