অবিদ্যা-তত্ত্ব-দীপিকা: আট



একটি তীক্ষ্ণ আপত্তি উঠতে পারে—যদি অবিদ্যা অনাদি হয়, তবে এটির শেষ বা উপশম কীভাবে হতে পারে? প্রচ্ছন্নভাবে অদ্বৈতী এই বলে এটিকে খণ্ডন করে যে, "ত্রুটিটি ঘটে না।" এই আপাত-বৈপরীত্যটি এটা বোঝার মাধ্যমে সমাধান করা হয় যে, "অনাদি" (Anādi) পরম অর্থে ব্রহ্মের "নিত্য" (Eternal)-এর সমার্থক নয়। কোনো কিছুর সময়গত শুরু না থাকলেও তার একটি নির্দিষ্ট সমাপ্তি থাকতে পারে। এটা বোঝাতে একটি শক্তিশালী সাদৃশ্য, যা প্রায়শই ব্যবহৃত হয়, তা হলো স্বপ্নের। স্বপ্নদ্রষ্টার কাছে একটি স্বপ্ন স্বপ্নাবস্থার প্রেক্ষাপটে বিদ্যমান এবং অনাদি, কিন্তু জেগে ওঠার সাথে সাথে এটি সম্পূর্ণরূপে উপশমিত হয় এবং বিলুপ্ত হয়ে যায়। একইভাবে, অবিদ্যা, অভিজ্ঞতাগত অভিজ্ঞতার দৃষ্টিকোণ থেকে অনাদি হলেও, চূড়ান্ত জ্ঞানের উদয়ের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে উপশমিত হয় এবং বিলীন হয়ে যায়। এর অনাদিত্ব তার কারণহীনতাকে বোঝায়, কিন্তু তার অনন্তকালকে নয়।

২. অসম্ভবনম (Impossibility) ঘটে না: “অসম্ভবনম” (Asambhavanam) শব্দটি এসেছে “সম্ভব” (sambhava—সম্ভাবনা, সম্ভাব্যতা) থেকে। এর অর্থ হলো—যেখানে কোনো কিছুর সম্ভাবনাই নেই, অর্থাৎ একেবারেই ঘটতে পারে না—সেই অবস্থা বা ধারণাকে বলা হয় অসম্ভবনম (Impossibility)। সম্ভব (sambhava): যা ঘটতে পারে, হওয়া সম্ভব। অসম্ভব (asambhava): যা ঘটতে পারে না, হওয়া একেবারেই অযৌক্তিক। অসম্ভবনম (asambhavanam): কোনো কিছুর সম্ভাবনাহীনতা, অঘটনীয়তা। ন্যায়-বৈশেষিক, বেদান্ত বা মীমাংসা আলোচনায় “অসম্ভবনম” প্রমাণতত্ত্ব ও বিতর্কে ব্যবহৃত হয়। যখন কোনো মত বা সংজ্ঞা এমন অবস্থায় পৌঁছায়, যেখানে যৌক্তিকভাবে তা কখনও সম্ভব নয়, তখন তাকে অসম্ভবনম বলে চিহ্নিত করা হয়। উদাহরণ: “অগ্নি শীতল”—এটি অসম্ভবনম, কারণ অগ্নির শীতলতা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়। শশকশৃঙ্গ (খরগোশের শিং)—স্বভাবত অসম্ভব বস্তু। অবিদ্যা নিয়ে আলোচনায়—যদি এমন সংজ্ঞা দেওয়া হয়, যা আত্মার ওপরও প্রযোজ্য হয়ে যায়, তবে সেটি অসম্ভবনম দোষ বলে ধরা হয়। অসম্ভবনম মানে হলো এমন কিছু, যা স্বভাবতই অঘটনীয়, যৌক্তিকভাবে বা বাস্তবিকভাবে কখনও সম্ভব নয়।

এটি এই উদ্‌বেগকে সমাধান করে যে, অবিদ্যার ধারণাটি নিজেই যৌক্তিকভাবে স্ববিরোধী বা কল্পনা-করা অসম্ভব কিছু হতে পারে। অদ্বৈত এর নিজস্ব পরিশীলিত কাঠামোর মধ্যে এর যৌক্তিক সংগতি দাবি করে এর মোকাবিলা করে। অবিদ্যার অনন্য সত্তাতাত্ত্বিক অবস্থান, যা অনির্বচনীয় (ব্যাখ্যাহীন বা বর্ণনা করা যায় না) হিসেবে বর্ণিত, এটি সমাধান করে। অবিদ্যাকে সৎ বা অসৎ কোনোটিই বলা যায় না, তাই এর প্রকৃতি বর্ণনা করা প্রচলিত যুক্তির সীমার বাইরে। এটি ব্রহ্মের উপর আরোপিত একটি শক্তি, যা বস্তুত নেই, কিন্তু অনুভূত হয়।

অজ্ঞান, যা অস্তিত্বও নয় অনস্তিত্বও নয়: এটি অবিদ্যার অনন্য এবং প্রায়শই চ্যালেঞ্জিং সত্তাতাত্ত্বিক স্থিতিকে নির্দেশ করে। এটি অনির্বচনীয়, অর্থাৎ এটিকে ব্রহ্মের মতো চূড়ান্তভাবে বাস্তব (সৎ) হিসেবে সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণনা করা যায় না, আবার এটিকে "আকাশ-কুসুম" বা "বন্ধ্যা নারীর পুত্র"-এর মতো সম্পূর্ণরূপে অনস্তিত্ব (অসৎ) হিসেবেও বর্ণনা করা যায় না। এটি একটি অদ্ভুত প্রপঞ্চগত বাস্তবতা ধারণ করে; এটি দুঃখ সৃষ্টি করার এবং জগৎ প্রক্ষেপ করার জন্য যথেষ্ট বাস্তব, কিন্তু এটি চূড়ান্তভাবে সত্য নয়। এটি একটি বিশেষ বর্গ, যা পরম বাস্তবতা এবং পরম অন-বাস্তবতা, উভয় থেকে আলাদা একটি ক্ষেত্রে বিদ্যমান। এটি "মিথ্যা" (Mithyā) নামে পরিচিত, যা ব্যাবহারিকভাবে বিদ্যমান, কিন্তু চূড়ান্তভাবে বাস্তব নয়। এই "অনির্বচনীয়তা" অদ্বৈত দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা অবিদ্যার সত্তাতাত্ত্বিক অসামঞ্জস্যকে ব্যাখ্যা করে।

অদ্বৈত বেদান্তে অবিদ্যাকে সংজ্ঞায়িত করার বহু প্রচেষ্টা হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি সংজ্ঞাই কোনো-না-কোনো যুক্তিগত দোষে আক্রান্ত। দর্শনে এই ধরনের চারটি প্রধান দোষ চিহ্নিত করা হয়—

১. অতিব্যাপ্তি (Ativyāpti)—যখন সংজ্ঞা আসল বিষয় ছাড়াও অন্য কিছুর উপর খাটে। সংজ্ঞা-প্রচেষ্টা: “অবিদ্যা হলো অনাদি ভাবরূপ সত্তা, যা জ্ঞানে নিবারিত।” সমস্যা: আত্মাও (Ātman) অনাদি ভাবরূপ সত্তা। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী আত্মাকেও অবিদ্যা ধরা হবে। ফল: সংজ্ঞা অতিরিক্ত বিস্তৃত—অতিব্যাপ্তি দোষ।

২. অব্যাপ্তি (Avyāpti)—যখন সংজ্ঞা আসল বিষয়ের সব দিককে ধরতে পারে না, অর্থাৎ অসম্পূর্ণ। সংজ্ঞা-প্রচেষ্টা: “অবিদ্যা হলো যা জ্ঞানে নিবারিত।” সমস্যা: ভ্রম (যেমন শুক্তিতে রূপা দেখা)–ও জ্ঞান দ্বারা নিবারিত হয়, কিন্তু ভ্রম অবিদ্যা নয়। ফল: সংজ্ঞা অসম্পূর্ণ—অব্যাপ্তি দোষ।

৩. বৈরুদ্ধ্য (Vairuddhya)—যখন সংজ্ঞা আসল বিষয়ের স্বরূপের সঙ্গেই বিরোধ করে। সংজ্ঞা-প্রচেষ্টা: “অবিদ্যা হলো শুদ্ধ চৈতন্য।” সমস্যা: চৈতন্য সর্বজ্ঞ ও স্বপ্রকাশমান, কিন্তু অবিদ্যা অজ্ঞতা ও আচ্ছাদন। ফল: সংজ্ঞা মূল প্রকৃতির বিপরীত—বৈরুদ্ধ্য দোষ।

৪. অসম্ভবনম (Asambhavanam)—যখন সংজ্ঞা এমন কিছু বলে, যা যৌক্তিকভাবে একেবারেই অসম্ভব। সংজ্ঞা-প্রচেষ্টা: “অবিদ্যা হলো সম্পূর্ণ অসৎ (অস্তিত্বহীন)।” সমস্যা: যা একেবারেই অস্তিত্বহীন, তা জগত সৃষ্টি বা আচ্ছাদন করতে পারে না। ফল: সংজ্ঞা একেবারেই অঘটনীয়—অসম্ভবনম দোষ।

সব সংজ্ঞাই কোনো-না-কোনো দোষে খণ্ডিত হয়েছে। তাই সিদ্ধান্তীরা বললেন—অবিদ্যা হলো অনির্বচনীয় (Anirvacanīya)। এটি পুরোপুরি সৎ নয় (কারণ জ্ঞান উদিত হলে দূর হয়)। আবার পুরোপুরি অসৎও নয় (কারণ এর কার্যকারিতা আছে, জগত প্রতীয়মান হয়)। তাই অবিদ্যা এক অনন্য সত্তা, যা ব্যাবহারিক স্তরে কার্যকর, কিন্তু পরমার্থত অস্তিত্বহীন। অবিদ্যার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে দার্শনিকেরা দেখলেন—প্রত্যেক প্রচেষ্টাই যুক্তিগত দোষে আক্রান্ত। তাই অবিদ্যার প্রকৃতি এককথায়—“অনির্বচনীয়”—না সৎ, না অসৎ, তবে অভিজ্ঞতায় কার্যকর।

অবিদ্যার প্রমাণ: অনুমানম (Inference)

অদ্বৈত বেদান্ত ঐতিহ্যগতভাবে কেবল দাবির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি তার দার্শনিক নীতিগুলি প্রতিষ্ঠার জন্য কঠোর যৌক্তিক পদ্ধতি ব্যবহার করে। এইভাবে, বেদান্তী দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেন, "অবিদ্যার কোনো প্রমাণ (প্রমাণম্) নেই, এমনটা সঠিক নয়। প্রমাণ আছে।" এটি অবিদ্যার অস্তিত্বকে বৈধ করার জন্য ব্যবহৃত শক্তিশালী যৌক্তিক কাঠামোকে তুলে ধরে। প্রাথমিক প্রমাণটি অনুমানম (inference)-এর মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়, যা ভারতীয় যুক্তিতে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত এবং গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি। এই অনুমানটি অবিদ্যার অস্তিত্বকে পরোক্ষভাবে প্রমাণ করে, কারণ প্রত্যক্ষভাবে তাকে দেখা বা অনুভব করা যায় না।

আসুন, আমরা অবিদ্যার জন্য এই অনুমিতিমূলক যুক্তিটিকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করি:

প্রতিজ্ঞা (Proposition): "দেবদত্তে স্থিত জ্ঞান, তাতে জ্ঞানের অভাব থেকে স্বতন্ত্র, কারণ এটি একটি অনাদি বাস্তবতার নিবর্তক, যেমন ঘটের জ্ঞান, ইত্যাদি।"

এই প্রতিজ্ঞাটি অবিদ্যার অস্তিত্বের মূল দাবি উপস্থাপন করে। এটি বলছে যে, দেবদত্তের মধ্যে যে-জ্ঞান বিদ্যমান, তা নিছক জ্ঞানের অভাব (যেমন অজ্ঞতা) থেকে ভিন্ন। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে, এই জ্ঞানটি একটি "অনাদি বাস্তবতার নিবর্তক"। "অনাদি বাস্তবতা" বলতে এখানে এমন কিছুকে বোঝানো হচ্ছে, যার শুরু নেই, অর্থাৎ যা চিরন্তন। "নিবর্তক" শব্দের অর্থ হলো এই, যা কিছুকে দূর করে বা বিলুপ্ত করে। অতএব, প্রতিজ্ঞাটি দাবি করছে, জ্ঞান এমন একটি চিরন্তন সত্তাকে বিলুপ্ত করতে সক্ষম, যা কেবল জ্ঞানের অভাব হলে সম্ভব নয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি ঘটের জ্ঞান ঘটের অভাবকে দূর করে না, বরং ঘটের অস্তিত্বকে প্রকাশ করে। কিন্তু অবিদ্যার প্রেক্ষাপটে, জ্ঞান সেই চিরন্তন অজ্ঞতাকে দূর করে, যা শুধুই জ্ঞানের অভাব নয়, বরং একটি সক্রিয় সত্তা। এটি অবিদ্যার স্বতন্ত্র অস্তিত্ব এবং তার নিবর্তক হিসেবে জ্ঞানের ভূমিকাকে প্রতিষ্ঠিত করে।

পূর্ণ অনুমান (The Full Inference) (অনুমানম): "দেবদত্তে স্থিত বিগীত জ্ঞান হলো দেবদত্তে স্থিত প্রমাভাব (জ্ঞানের অভাব) থেকে স্বতন্ত্র একটি অনাদির নিবর্তক (sublater), কারণ এটি প্রমাণ (valid knowledge), যেমন যজ্ঞদত্তাদিতে স্থিত জ্ঞান, ইত্যাদি।"

এই অনুমানটি ন্যায় দর্শনের পঞ্চাবয়বী বাক্যের অনুরূপ, যা একটি সুসংগঠিত যৌক্তিক যুক্তি উপস্থাপন করে এবং পূর্বের প্রতিজ্ঞাকে আরও বিস্তারিতভাবে প্রমাণ করে। এই অনুমানে পাঁচটি অংশ প্রচ্ছন্নভাবে বিদ্যমান, যদিও এখানে সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি অংশ বিশ্লেষণ করা যাক:

প্রতিজ্ঞা (প্রতিজ্ঞা বাক্য): "দেবদত্তে স্থিত বিগীত জ্ঞান হলো দেবদত্তে স্থিত প্রমাভাব (জ্ঞানের অভাব) থেকে স্বতন্ত্র একটি অনাদির নিবর্তক।"

এটি অনুমানের মূল থিসিস। "বিগীত জ্ঞান" বলতে বিতর্কিত বা বিশেষভাবে আলোচিত জ্ঞানকে বোঝানো হয়েছে। এখানে মূল দাবিটি হলো, দেবদত্তের মধ্যে যে বিশেষ জ্ঞান আছে, তা কেবল জ্ঞানের অভাব নয়, বরং একটি চিরন্তন সত্তার নিবর্তক, এবং এই জ্ঞান সেই অভাব থেকে ভিন্ন। এটি অবিদ্যার স্বতন্ত্র অস্তিত্বকে বোঝায়, যা কেবল জ্ঞানের অনুপস্থিতি মাত্র নয়, বরং একটি ইতিবাচক সত্তা।

হেতু (কারণ বাক্য): "কারণ, এটি প্রমাণ (valid knowledge)।"

এটি প্রতিজ্ঞার পক্ষে প্রদত্ত যুক্তি। বলা হচ্ছে, দেবদত্তের এই জ্ঞান যেহেতু 'প্রমাণ' অর্থাৎ বৈধ জ্ঞান, তাই এটি জ্ঞানের অভাব থেকে স্বতন্ত্র একটি অনাদির নিবর্তক। বৈধ জ্ঞান বস্তুনিষ্ঠ সত্যকে উদ্ঘাটন করে এবং ভ্রান্তিকে দূর করে। যদি জ্ঞান কেবলই জ্ঞানের অভাবকে দূর করত, তাহলে তাকে অনাদির নিবর্তক বলার প্রয়োজন হতো না। কিন্তু যেহেতু এটি প্রমাণ, তাই এটি এমন কিছুকে দূর করে, যা কেবল অভাব নয়, বরং একটি স্থিত সত্তা—এই সত্তাই হলো অবিদ্যা।

উদাহরণ (উদাহরণ বাক্য): "যেমন যজ্ঞদত্তাদিতে স্থিত জ্ঞান, ইত্যাদি।"

এই অংশটি হেতুর সঙ্গে প্রতিজ্ঞার অন্বয়কে স্পষ্ট করে। যজ্ঞদত্তের মতো অন্য ব্যক্তি বা স্থানে যে-প্রমাণ (বৈধ জ্ঞান) বিদ্যমান, তার দ্বারাও একই ধরনের নিবর্তন ঘটে। যেমন, যজ্ঞদত্ত যখন একটি রজ্জুকে সর্প বলে ভুল করে, তখন সেই সর্পের জ্ঞান (বা ভ্রান্তি) তার মনে একটি অভাব সৃষ্টি করে না, বরং একটি মিথ্যা সত্তা স্থাপন করে। যখন সে সত্য রজ্জুর জ্ঞান লাভ করে, তখন সেই জ্ঞান সর্প-ভ্রান্তিকে নিবর্তন করে, যা কেবলই জ্ঞানের অভাব ছিল না, বরং একটি বিশেষ মিথ্যা প্রতীতি ছিল। এই উদাহরণটি প্রমাণ করে যে, বৈধ জ্ঞান একটি বিদ্যমান ভ্রান্তিকে (অবিদ্যা) দূর করে, যা নিছক অভাব নয়।

উপনয় (প্রয়োগ বাক্য): (এখানে প্রচ্ছন্ন) "দেবদত্তের ক্ষেত্রেও এই প্রমাণ জ্ঞান একটি অনাদির নিবর্তক।"

এই অংশটি উদাহরণটিকে বর্তমান প্রতিজ্ঞার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে দেখায়। যেহেতু যজ্ঞদত্তের ক্ষেত্রে প্রমাণ জ্ঞান একটি অনাদির নিবর্তক হিসেবে কাজ করে, তেমনি দেবদত্তের প্রমাণ জ্ঞানও একইভাবে কাজ করবে।

নিগমন (সিদ্ধান্ত বাক্য): (এখানে প্রচ্ছন্ন) "অতএব, দেবদত্তে স্থিত বিগীত জ্ঞান হলো দেবদত্তে স্থিত প্রমাভাব (জ্ঞানের অভাব) থেকে স্বতন্ত্র একটি অনাদির নিবর্তক।"

এটি সম্পূর্ণ যুক্তির সারসংক্ষেপ এবং পূর্বের প্রতিজ্ঞার পুনরাবৃত্তি, যা সমস্ত যুক্তির পর নিশ্চিত সিদ্ধান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই অনুমানটি প্রমাণ করতে চায় যে, অবিদ্যা কেবল অজ্ঞতা (জ্ঞানের অভাব) নয়, বরং একটি স্বতন্ত্র, ইতিবাচক (ভাবরূপ) সত্তা, যা চিরন্তন এবং যা কেবল প্রমাণ বা বৈধ জ্ঞানের দ্বারাই দূর হতে পারে। এটি অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের অবিদ্যার ধারণার যৌক্তিক ভিত্তি প্রদান করে।

ভারতীয় যুক্তিবিদ্যা অনুসারে এই জটিল অনুমানটি সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করার জন্য, আমাদের এর অপরিহার্য উপাদানগুলিকে বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে:

১. পক্ষঃ (The Subject): বিগীতং দেবদত্ত-নিষ্ঠ-প্রমাণ-জ্ঞানম্ (দেবদত্তে স্থিত বিগীত জ্ঞান)