আহা জীবন! তুই যেন এক চির-ধ্রুবতারা, ওই দূর থেকে ধেয়ে ধেয়ে-আসা হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার অচিন কোনও সুর।
হায়রে জীবন! তবুও তোর এত কীসের দাপট? এত কীসের অহম্?
মরীচিকার বেশে তুই রোজ গিলে নিস অগুনতি যাত্রীর তীব্র প্রপাত, চোখের পলকে জন্মকে করিস মিথ্যে শুধুই, দেখি, ভুল-ঠিকের ধন্দে কাটে পুরোটা সময়, তুই এমনই শেকল পরাস আর শেখাতে থাকিস--- এমন কী করে যায় ছায়া মাড়ানো রোজ রোজই!
জন্মেই দেখি, তুই একটা খাম দিয়ে গেলি এ দুহাতে, খুলে দেখি, ফাঁকা পুরোটাই, ওতে নেই যে কিছুই! নেই কোনও অক্ষর, কোনও শব্দ কিংবা কোনও নকশা পথের!
এই খামটা হাতে আমি কোন দিকে যাই? ওতে নেই যে কিছুই! আছে যা, তা কেবলই সাদা, শুভ্র সাদা! শূন্য-সাদা একটুকরো কাগজই কেবল!
মনে এল তাই, এখানে নেই তো কিছুই, তবে লিখতে কী আর দোষই-বা হবে? রোজ একটু-আধুটু করে লিখতে লিখতে যেদিন লিখেছি সবই, সেদিন তুই আবারও এলি! মুখের সামনে থিতু হয়ে বসে আমার ওই টুকরো-কাগজটিতে থুতু ছিটিয়ে ফেললি বলেই…এত্ত সোজা? তুই ভাবছিস যা, তার হবে না কিছুই! চেয়ে দেখ, ওইখানে বসে বিধাতা হাসেন!
করে ওই টুকরো-কাগজ ছিঁড়ে কুচিকুচি, আবার দিলি শূন্য আরেক টুকরো-কাগজ! আমি এই এতকাল লিখেছি আর লিখে চলেছি, অথচ তুই বললি হঠাৎ, লেখা আছে সবই নাকি অনেক আগেই! সবই তুই জানতিস যদি, তবে দিলি কেন ওই একটুকরো সফেদ কাগজ?
এতক্ষণে মৃদু হেসে জীবন বলে, আরে বোকা! না লিখতিসই যদি, তবে আর করতিস কী তুই শুয়ে বসে?
বুঝলাম শেষে, এই রংতামাশার ক্রম-মঞ্চায়ন দেখলেন উনি, শুনলেন উনি, হচ্ছে কী আর হবে কী-বা উনি তার জানতেন সবই, বললেন তবু…লিখো আর লিখতেই থাকো! জীবন মানে সেই হাতে নিয়তি লেখা, যেই হাতটি নয় আমারই!