অন্বেষণই সমাধান




যখন আমরা বিশ্বমানের ক্রীড়াবিদদের কথা ভাবি, তখন তাদের অসাধারণ সমন্বয় ও নিখুঁত সময়জ্ঞান আমাদের মনে ভেসে ওঠে। গোল করার সুযোগ তাদের কাছে আসে এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশে, আর—একটু মিস মানেই অনেকটা দূরে সরে যাওয়া!

এখন প্রশ্ন হলো—একে আধ্যাত্মিক অন্বেষণের সঙ্গে কীভাবে মেলানো যায়? ঠিক যেমন খেলাধুলায় সুযোগ একঝলকে আসে, তেমনি আত্মিক জীবনে জাগরণের জানালাও মুহূর্তের জন্য খুলে যায়। সময়জ্ঞান নিখুঁত না হলে সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়। আর মিস করলে সেটাও সমানভাবে দূরে সরে যাবার মতো।

অনেক শিষ্য, দীর্ঘদিনের সাধক বা গুরুভক্তদের মুখে প্রায়ই শোনা যায়—বছরের পর বছর গুরুসঙ্গে থাকা, দীর্ঘ ধ্যান, কঠোর জীবনযাপন—সবশেষে মনে হয়েছে শূন্যতা, অপূর্ণতা। ওরা বলে, “অন্বেষণই মূল সমস্যা। আসলে উপলব্ধি করার কিছুই নেই।”

আসলে অন্বেষণ ব্যাপারটা সমস্যা নয়, বরং এটাই হলো সমাধানের শুরু। অন্তরে যে অজানা আকাঙ্ক্ষা বা খোঁজ কাজ করে, অন্বেষণ তারই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। সমস্যা হয় তখন, যখন সত্যিকারের কোনো গাইড পাওয়া যায় না—যিনি বোঝাতে পারেন যে, হ্যাঁ, অন্বেষণ শুরুতে জরুরি, কিন্তু একসময় এটিকেও থামাতে হয়। না হলে জাগরণের সেই অদৃশ্য মুহূর্ত—যা কেবল সরাসরি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ঘটে—কখনও আসবে না।

যতক্ষণ না আমরা সম্পূর্ণ স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারি—যেন এক ধনুকধারী কারও মাথার ওপরে-রাখা আপেল নিশানা করছে—এমনকি কপালে তীর লাগার ঝুঁকিও নিচ্ছি, ততক্ষণ আমরা খুঁজতেই থাকব, খুঁজতেই থাকব, কিন্তু পাবো না কিছুই। যখন ভরসা যথেষ্ট হয়, অথবা ভেতরের হতাশা নিঃশব্দ দীর্ঘশ্বাস থেকে তীব্র চিৎকারে রূপ নেয়, তখন আমরা দাঁড়িয়ে যাই—ভেতরে বাইরে একেবারে নিস্তব্ধ, সম্পূর্ণ স্থির।

খারাপ খবর হলো—তীর এসে সত্যিই কপালের মাঝখানে লাগে। আমরা মারা যাই—আমাদের আগের সত্তা মরে যায়। কিন্তু তা নিছক “লাইট নিভে অন্ধকার হয়ে যাওয়া” নয়, বরং—“আলো জ্বলে ওঠা।”

পরের ধাপ? হ্যাঁ, সেটাই জাগরণের গল্প। আলোতে যেতে চাইলে অন্ধকারে ডুবতে হয়।