অন্ধকার খিলানের বিচ্ছুরিত স্বেদ

 
ছাদে বসে আছি। চারপাশটা আবছা অন্ধকার।
মাথার উপর একপৃথিবী-সমান রাক্ষুসে আকাশ, আমায় ক্রমশ গ্রাস করে নিচ্ছে…
তার বুকফুঁড়ে বিন্দু বিন্দু সব তারার সজ্জা।


এই আকাশের সবচে বড় তারাটি আমার দিকে ঠায় তাকিয়ে আছে।
মনে হচ্ছে, ও যেন তোমার কাছ থেকেই এই নির্লজ্জ স্বভাবটা পেয়েছে,
তাই তো আমার দিকে এমন নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে।


কিছুক্ষণ পর পর দখিনাহাওয়া গা ছুঁয়ে ছুঁয়ে আমায় মাতাল করে দিচ্ছে।
মনে হচ্ছে, ও বুঝি ভারি দুষ্টু হয়েছে ঠিক তোমারই মতো,
তাই তো একটার পর একটা অবাধ্য ছুতোয় কেমন ছুঁয়ে যাচ্ছে।


গোটা একটা থালার মতো চাঁদ। আকাশে।
প্রেমের জাদুমাখা আর একটা চাঁদ। আমার ঘরে।
আমার ঘরের চাঁদটা দেখে আকাশের চাঁদ ঈর্ষায় পুড়ছে!


ওই অদূরেই একটা সাদাটে বাড়ি। দেখা যাচ্ছে,
ব্যালকনিতে একজোড়া কপোত-কপোতী সন্ধেআঁধারে ব্যস্ত খুনসুটিতে।
আহা সে কী মাতাল মাতাল প্রেম! দেখেছি, আর
এই মনে নেশা জাগছে, হিংসে কাঁপছে, আমার চাঁদটার আদর পেতে খুব ইচ্ছে করছে!


আহা, কেমন হতো যদি এমন সময় তুমি পাশে থাকতে!
খুব আদরে জড়িয়ে ধরতে! কপালের চুল সরিয়ে, আমার চিবুকটা তুলে চুমু খেতে!


সত্যি যদি পাশে থাকতে,
আমার কোলে মাথা রেখে ওই চাঁদটাতে খুব বকে দিতে নাকি?
না কি ওই আকাশ থেকে টুক্‌ করে একটা কবিতা নামিয়ে ওকে আচ্ছা করে শুনিয়ে দিতে?


তুমি এখন কী করছ? ব্যস্ত নাকি?
কফির মগে ঠোঁট ছুঁইয়ে ধোঁয়াটা সরাচ্ছ বুঝি?
না কি ল্যাপটপের কিবোর্ডগুলো কটকট শব্দে অনবরত টিপে চলেছ?
গায়ে কী রঙের জামা গো? জামাটা ঢিলেঢালা? না কি আঁটসাঁট?
লুঙ্গি? না কি ইংরেজি বাবুদের মতো থ্রিকোয়ার্টার?
একটা পা আর একটার উপর? না কি পাশাপাশি? না কি বাঁ পা-টা চেয়ারের উপর ভাঁজ করে রেখে ডান পা-টা সমানে দোলাচ্ছ? না কি দুটোই ফ্লোরে নাচছে?
মাথায় কবিতা? না কি গল্প? না কি এমনিই কিছু কথা এসেছে অল্প?
শুরু করেছ? না কি করবে করবে করছ? না কি আজকে করবেই না আর? না কি লিখেই ফেলেছ, আর এখন ড্রাফট দেখছ?
মাঝে মাঝে ভাবতে ভাবতে ডানহাতের তর্জনীতে আর মধ্যমায় চুল পেঁচাচ্ছ?
না কি এসবের কিছুই করছ না, স্রেফ বসে আছ? তোমার ছাদবাগানটায় নাকি এখন?
মনটা উদাস নাকি? মনে কে উঁকি দেয়? আমি…না কি এমন কেউ, যাকে আমি চিনি না?


ইস্‌ যদি এমন যদি হতো,
চাইলেই তোমায় যখন তখন ছুঁয়েফেলা যেত!