কণ্ঠ ১ (কোমল জিজ্ঞাসায়): যখন আমি দুঃখ পাই না, যখন চাওয়া ফুরায়—তখনই কি আসে শান্তি?
কণ্ঠ ২ (অনন্ত প্রশান্তির স্বরে): না, শান্তি নয়, তুমি তখন নিজেই হয়ে ওঠো—আনন্দ। তুমি যখন ভুলে যাও ‘তোমাকে’, তখনই জেগে ওঠে সেই 'স্বরূপে ফেরার সুখ'।
কণ্ঠ ১ (বিস্ময়ে): আনন্দ! কিন্তু আমি তো আনন্দকে ভাবি—হাসি, কোলাহল, উচ্ছ্বাস…
(কণ্ঠ ২): না, এই আনন্দ কোনো স্পর্শে আসে না, কোনো ঘটনার ফসল এ নয়। এ আনন্দই আত্মা—যা কিছু না হয়ে থেকেও সব।
কণ্ঠ ১ (আত্মার দিকে ফিরে তাকিয়ে): তাহলে আমি দেহে থেকে, এই আনন্দে থেকেও…বুঝি না কেন?
কণ্ঠ ২ (ধীরে, মৌনক্ষণের মতো): কারণ তুমি ‘আনন্দ খুঁজে বেড়াও’, নিজেই আনন্দ হও না। তুমি চাও, কিন্তু আত্মা তো চাওয়া নয়—সে নিজের স্বরূপেই পবিত্র পরিতৃপ্তি।
দু-জন একসাথে (ধ্যানমগ্ন গভীর সুরে): আমি নেই, আমি নেই—এই ভাবনায় নেই শান্তি। আমি আছি, আমি চৈতন্য, আমি ব্রহ্ম—এই অনুভবেই ফোটে আনন্দ।
কণ্ঠ ২ (একান্ত চেতনার স্বরে, ধীর উচ্চারণে—শান্ত ছন্দে, যেন সূর্য ওঠার আগমুহূর্ত): এই আনন্দ না আসে, না হারিয়ে যায়। এ আনন্দ আমি নিজেই—নিঃশব্দের আনন্দস্বরূপ। আনন্দ আমি—কারণ আমি কিছু নই, আনন্দ আমি—কারণ আমি সবই। চাওয়া নেই, পাওয়া নেই, আমি সেই আনন্দ—যা নিজের মধ্যেই থইথই। না জন্মে, না মরে, না হাসে, না কাঁদে—আমি সেই নিরাকারের গভীর হাসি, যা শুধু “আছে”।
কণ্ঠ ১ (বিস্ময়ে উদ্বেল): যেখানে যা দেখি—রাত্রি, আলো, জন্ম, মৃত্যু, প্রেম, বেদনা…সবই কি ব্রহ্ম?
কণ্ঠ ২ (নিরুত্তাপ গভীরতায়): হ্যাঁ। সবই ব্রহ্ম। তুমি যেমন ভাবো—"আমি এই দেহ", তেমনি সব কিছু ব্রহ্মের অনুভবমাত্র।
(কণ্ঠ ১): তবে অজ্ঞান? পাপ? ভুল? মায়া?
(কণ্ঠ ২): তা-ও ব্রহ্ম—ব্রহ্ম ছাড়া কিচ্ছু নেই। যা-কিছু বিভ্রান্তি—তা-ও ব্রহ্মের ছায়া, যা-কিছু বেদনা—তা-ও চৈতন্যের স্বপ্ন।
কণ্ঠ ১ (মৃদু স্তব্ধতায়): তবে কি বিভেদ বলে কিছু নেই?
কণ্ঠ ২ (স্নিগ্ধ দৃঢ়তায়): নেই। সাধু ও দুষ্ট, জ্ঞান ও অজ্ঞান, দিন ও রাত্রি—সবই একরূপে লীন। সকল গুণ-দোষ, জীবন-মরণ—ব্রহ্মেরই প্রকাশ।
দু-জন একসাথে (সমবেত সুরে, এক গভীর ঐক্যবোধে): এই জগৎ ব্রহ্ম। এই দেহ, এই মন, এই স্পর্শ, এই শব্দ—সবই ব্রহ্ম। যা-কিছু অনুভূত, যা-কিছু অচিন্ত্য—সবই ব্রহ্ম।
কণ্ঠ ২ (অন্তিম পঙ্ক্তিতে, দিগন্ত-পেরোনো শান্ত স্বরে, উদার ছন্দে, উদ্ভাসিত স্বরে): তুমি তাকাও—যেখানে তাকাও, ব্রহ্ম ছাড়া কিছুই নেই। আমি ব্রহ্ম, তুমি ব্রহ্ম, নির্বুদ্ধিতা ব্রহ্ম, প্রজ্ঞাও ব্রহ্ম। ভুল, পাপ, প্রেম, সংকল্প—সব তাঁরই বিকল্প রূপ। একই আলো, একই দীপ্তি—বহুর মাঝে অদ্বৈত এক সুর।