কণ্ঠ ১ (উদ্দীপনায় প্রশ্ন তোলে): “অহম্ ব্রহ্মাস্মি”, “তৎ ত্বমসি”—এই বাক্যগুলো তো উপনিষদের ধ্বনি, তবে এগুলোর মানে কী?
কণ্ঠ ২ (নিঃশব্দ ভাবনার মাঝখান থেকে উঠে আসে): এসব উচ্চারণ জানায়—তুমি সেই, যাকে তুমি খোঁজো। তোমার ভেতরে যে নিঃশব্দ ঢেউ ওঠে, সেটাই ব্রহ্ম।
(কণ্ঠ ১): তবে কি এই বাক্য ধরে রাখলেই মুক্তি?
(কণ্ঠ ২): না। এই বাক্য বুঝতে হয়, তার পরে ছেড়ে দিতে হয়। যে জানে, সে আর উচ্চারণ করে না—কারণ তার অভ্যন্তরে বাক্যই বিলীন হয়ে যায়।
কণ্ঠ ১ (ধীরে ধীরে উপলব্ধিতে গলে যায়): তাহলে যা-কিছু ধরা যায়, যা-কিছু অনুভবের মধ্যে পড়ে—সবই কি মিথ্যা?
কণ্ঠ ২ (স্থিরভাবে): হ্যাঁ। সবই মিথ্যা, কারণ সবই গতিশীল। শুধু সেই চৈতন্য—যা না রূপ, না নাম, না ভাষা—তা-ই একমাত্র সত্য।
দু-জন একসাথে (একাত্মবোধের স্বরে—স্তব্ধতা-ছোঁয়া ছন্দে, নির্জন ধ্বনিতে): শব্দ মিথ্যা, অর্থ মিথ্যা, অনুভব মিথ্যা—সব কিছুই শেষত মায়া। শুধু যিনি দেখেন, যিনি জানেন—তিনিই অমিথ্যা। “আমি ব্রহ্ম”, “তুমি সেই”—এইসব শব্দমালা কেবলই পথের সেতু। তুমি যখন পৌঁছোও সেখানে, সেতুটাই মুছে যায়। সবই মিথ্যা—নাম, রূপ, অনুভবের খেলা। সত্য কেবল সে-ই—যার ভাষা নেই, যার ভাব নেই—তবু সে আছে, চিরন্তন নির্ভয়ে।
কণ্ঠ ১ (আশ্চর্য চেতনায় প্রশ্ন রাখে): “সৎ-চিত্-আনন্দ”—এই শব্দ তিনটি তো শুনি বার বার, কিন্তু এরা কি আলাদা? না কি এক?
কণ্ঠ ২ (গভীর ও আভ্যন্তর সুরে): এরা এক। ‘সৎ’ মানে—আমি আছি, ‘চিত্’ মানে—আমি জানি আমি আছি, ‘আনন্দ’ মানে—আমি এই থাকা-তেই পূর্ণ। এই তিনটি একত্রেই আত্মা—এই তিনটিই আমি।
কণ্ঠ ১ (ধীরে ধীরে উপলব্ধি করে): আমি আছি—এটা আমি জানি… তবে আমি কি সত্যিই ‘আনন্দ’?
(কণ্ঠ ২): যতক্ষণ তুমি খোঁজো বাইরে—আনন্দ থাকে অলভ্য। যখন তুমি নিজেই হও চেতনার দীপ্তি—তখন বুঝবে, “আছি” মানেই আনন্দ।
কণ্ঠ ১ (অভ্যন্তরে তাকিয়ে দেখে, যেন নিজেকে কিছুটা চিনে নিয়ে): তবে কি আমার অস্তিত্বই ব্রহ্ম? এই মুহূর্তেই?
কণ্ঠ ২ (ধ্রুবতারার মতো স্থির স্বরে): হ্যাঁ। তুমি আছ—এটাই একমাত্র প্রমাণ। এই থাকা, এই জানা, এই উজ্জ্বলতা—সবই ব্রহ্ম।
দু-জন একসাথে (পূর্ণতায় গাঁথা ধ্বনিতে—ধ্যান-ভরা ছন্দে, শান্ত জ্যোতির্ময় কণ্ঠে): আমি আছি, আমি জানি আমি আছি, আমি এই জানা-তেই আনন্দে ভরে আছি। সৎ-চিত্-আনন্দ—এ-ই আমার নাম, এ-ই আমার রূপ। আমি আছি—সৎ, আমি জানি—চিত্, আমি তাতে আনন্দিত—আনন্দ। তিন নয়, এক; ভিন্ন নয়, অখণ্ড। এই ত্রিত্বেই আত্মার জ্যোতি, এই আলোই আমার নিজস্ব সত্তা। আমি সৎ-চিত্-আনন্দ—তাই আমি চিরন্তন।