অন্তর্জাগরণ: চার



তুমি দাঁড়িয়ে আছ আয়নার সামনে, হৃৎস্পন্দন খুলে যাচ্ছে সুতো-কেটে-যাওয়া রিলের মতো, চোখ ক্রমাগত দুলছে প্রতিফলনের ওপর নির্ভর করে, যা একইসাথে ভয় দেখাচ্ছে আর আহ্বান করছে। তুমি অবশ্য এমন আশাও করো না যে, আয়না তোমাকে হাতে তুলে দেবে পরিপাটি উত্তর বা জাদুকরী কোনো সমাধান; তবুও তুমি কিছুটা ঝুঁকে পড়ো, হালকা শ্বাস টেনে প্রস্তুত হও ভালো কিছু শোনার জন্য, তখন আয়না অবশেষে সাড়া দেবে। আর সেই ক্ষণিকের ভঙ্গুর ফাঁকে—শ্বাস নেওয়া আর ছাড়ার মাঝখানে—তুমি বুঝতে পারো, যে-হাতুড়িটিকে এতদিন মরিয়া হয়ে খুঁজছিলে, সেই অচল কঠিন সরঞ্জাম, যা ভেঙে দেবে বাধার দেয়ালগুলোকে, তা কখনোই বাইরের কিছু ছিল না। তা বরাবরই লুকিয়ে ছিল তোমার কণ্ঠের ভেতর, অপেক্ষা করে ছিল সাহসের স্পন্দনে আঘাত করার শক্তি পাবার।

ভয় হঠাৎ ফিরে আসে স্ফটিকের স্বচ্ছতায়। তুমি কল্পনা করো সেই কোমল প্রজাপতিটিকে, যাকে একসময় কাচের আড়ালে রক্ষা করতে চেয়েছিলে—ডানা গুটিয়ে আছে প্রয়োজনাতিরিক্ত আঁটসাঁট বন্দিত্বে, কৃত্রিম আলোয় ঝিলমিল করছে। এখন, সমস্ত লুকোনো ও জমে-থাকা কোমলতা নিয়ে কাঁপতে কাঁপতে তুমি নামিয়ে দাও সেই ঢাকনা, আর তাকে উড়ে যেতে দাও। যদি তার ভঙ্গুর ডানার প্রথম ঝাপটানি দেখতে দেখতেই তোমার হৃদয় কেঁপে ওঠে, ভয় পেয়ে যাও—যদি নিষ্পাপ ভাবকে মুক্ত করে দাও, তবে তা আবার আহত হবে; অথবা তুমি নিজেই হয়ে উঠবে প্রচণ্ড হিংস্র এক প্রহরী, যে কিনা সদাপ্রস্তুত আঘাত হানতে—যে-কোনো সাহসী হাতকে ভেঙে ফেলতে, যে ছুঁতে চায় সেই অতিমাত্রায় উন্মুক্ত ভঙ্গুরতাকে। তুমি চিৎকার করতে চাও—“আমাকে ছুঁয়ো না!”—তার জন্যও, নিজের জন্যও—এটা জেনে যে, এই মুহূর্তে উড়ে যাওয়া মানে স্বাধীনতা আর বিপদ, দুই-ই একসাথে।

তোমার নিজস্ব হৃৎস্পন্দনের প্রতিধ্বনি মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতা কত সুন্দর অথচ ভীতিজনক হতে পারে। প্রতিটি ধ্বনি বাজে দূরের কামানের গর্জনের মতো, তুমি ঘুরতে থাকো এক নির্দয় অন্তরহিত চক্রে, যা তুমি নিজেই তৈরি করেছ। চারপাশের দেয়ালগুলো ক্রমাগত চাপ দিতে থাকে এক অদ্ভুত ক্ষুধা নিয়ে, অথচ বাতাসে ফিসফিস করে ওঠে বিদ্যুতের মতো এক প্রতিশ্রুতি—এক অঘোষিত কাঁপুনি, যা ইঙ্গিত দেয়, কোনো বিশাল ঘটনা অপেক্ষা করছে সামনের বাঁকে। তুমি ভাবো, শান্ত মুখোশটা—সেই সংযত শীতল আবরণ—তা আসলে কি তোমার আসল মুখ, না কি কেবলই এক মুখোশ, যা বশে রাখে ত্বকের নিচে গর্জন-করা আদিম ঝড়কে—এর উত্তর তোমার কাছে নেই। তোমার অস্তিত্বের প্রতিটি তন্তু কম্পিত হয় এক বেদনাদায়ক উপলব্ধিতে: সত্যিকারের কারাগার কেবল সেই ভয়ই, যা তুমি নিজের ভেতরে লালন করেছ। এক প্রচণ্ড স্পন্দনের পর যে-নিস্তব্ধতা নেমে আসে, তার ভেতরে গর্জে ওঠে এক কণ্ঠস্বর—অদ্ভুতভাবে স্বচ্ছ, অথচ কাকতালীয়ভাবে পরিচিত—ফিসফিস করে বলে: বিচারকের সবচেয়ে তীব্র দংশন তাদের জন্য, যারা নিজস্ব ত্রুটিপূর্ণ জীবন-প্রতিফলনকেই দণ্ডিত করে রাখে। আর তাই, প্রথম বারের মতো তুমি নত হও প্রার্থনায়—দূরের দেবতা বা দমনকারী প্রভুর কাছে নয়, বরং তোমার মনের অকৃত্রিম কাঁচা, অনলংকৃত সত্যের কাছে। সেখানে, স্বপ্নের ছায়াঘেরা মিনার আর আকাঙ্ক্ষার গলিত অগ্নিগহ্বরের মাঝখানে, তুমি প্রতিজ্ঞা করো কেবল সেই সত্তাগুলিকে মূল্যায়ন করার, যা সত্যিই তোমার প্রাপ্য: এ মুক্তির এক সুযোগ, যা গড়া বিনম্রতায়, আর কঠিন অভিজ্ঞতার উত্তাপে-গড়া প্রজ্ঞায়—যে-প্রজ্ঞা মুক্ত হয়ে বাঁচতে শেখায়, যার শক্তি দাবি করে একইসাথে আত্মসম্মান ও সংযম।

তারা বলে, সত্য তোমাকে মুক্ত করবে—কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, তুমি কে হতে পারতে, যদি নিজের প্রতারণার লোহার নিগড়ে বাঁধা না থাকতে, যা তোমার পাঁজর জড়িয়ে ধরেছে সাপের মতো পেঁচিয়ে? চোখের পেছনের আধো-অন্ধকার কক্ষে শেষ তালাটি দুলছে কিছু কাঁপা-কাঁপা শব্দের ওজনে, যা তুমি উচ্চারণ করতেও একদিন আপত্তি করেছ। তুমি দাঁড়িয়ে আছ সমস্ত অন্তরনিঃসৃত উন্মোচনের কিনারায়, তোমার আঙুল শক্ত করে ধরে আছে অপরাধবোধের শীতল দণ্ডকে, প্রস্তুত তাকে ছুড়ে ফেলে দিতে—এটা ভালোমতো জেনেই যে, সচেতনভাবে নাম উচ্চারণ করা তথা নিজেকে যথার্থ পথে চালিত করাই একমাত্র হাতুড়ি, যা ভেঙে ফেলতে পারে সেই দেয়াল, যা তুমি ভুল করে অত যত্নে তুলেছ। বাতাস ভারী হয়ে আছে প্রত্যাশায় আর ভয়ে, শ্বাসের ভেতর লেগে আছে পুরোনো অনুশোচনার ধুলো।

তুমি সেই অনুচ্চারিত শব্দগুলোয় দম বন্ধ করো, আর আটকে থাকো সেই জায়গায়—আত্মদণ্ড আর সম্ভাবনার ভঙ্গুর প্রতিশ্রুতির মাঝখানে। দেখবে, প্রতিটি অক্ষর হামাগুড়ি দেয় এক আহত পাখির মতো, কিংবা অনুশোচনাপূর্ণ পাপস্বীকারের মতো, ওরা গলা ফুঁড়ে বেরোতে চাইবে, তবু তুমি তা আটকে রেখো এ বিশ্বাসে যে, নীরবতাই তোমার একমাত্র ঢাল। সেই অনবদ্য মুক্তিতেই—যখন অবশেষে সঠিক সময়ে তুমি শব্দগুলোকে বাইরে আসতে দাও; প্রার্থনার মতো কোমলতায়—তুমি আবিষ্কার করো: তোমার সত্যগুলোকে জন্ম দেওয়া মানে নিজেকেও তাদের মধ্য দিয়ে পুনর্জন্ম দেওয়া। চারপাশের দেয়াল দ্রোহ করে, কেঁপে ওঠে, তারপর ধীরে ধীরে ধসে পড়ে ধ্বংসস্তূপে, ভেঙে-পড়া স্তম্ভগুলোর অবশিষ্টাংশ ঝরে পড়ে তোমার নিজের তৈরি মন্দিরের ভেতর। আর তুমি দাঁড়িয়ে থাকো সেই ধ্বংসস্তূপের কেন্দ্রে—সূর্যালোকের আঁকাবাঁকা রশ্মিতে আলোকিত, ভঙ্গুর অথচ দীপ্তিময়।

এখন আর কোনো বিকল্প রাস্তা নেই—তুমি গভীরভাবে শ্বাস নাও, সম্ভাবনার কাঁচা ঘ্রাণের স্বাদ নাও, আর পা বাড়াও সেই প্রবল স্রোতে, যা ছুটে চলেছে তোমার প্রাক্তন কারাগারের হাঁ-মুখ দিয়ে। তুমি অনুভব করো, এক অশাসিত সত্তা হবার জোয়ারে তুমি ভেসে উঠছ, প্রতিটি অনুক্ত অনুশোচনার বাঁধন ভেঙে যাচ্ছে একে একে ভঙ্গুর সুতোয় ছিঁড়তে ছিঁড়তে। করুণা ভেসে থাকে তোমার দৃষ্টির কিনারায়—এ যেন এক কোমল প্রতিশ্রুতি, যা জ্বলজ্বল করছে শেষ-অশ্রুর ওপারে। Break out! Break out! Break…—তুমি ফিসফিস করো চারপাশের গর্জনময় ঝড়ো বাতাসে, আর অবশেষে তোমার কণ্ঠস্বরই বয়ে নিয়ে যায় তোমাকে এক মুক্ত জগতে, যেখানে তোমার নিজস্ব সাহসের প্রতিধ্বনির নাম: স্বাধীনতা।

তবু ভদ্র করতালির শব্দ আর মেকি মাপাহাসির আড়ালে, তোমার হৃদয় বাজছে এক রণ-বাজনার মতো, প্রতিধ্বনিত হচ্ছে এক প্রাচীন গুহার ভেতর, যা কেটে নেওয়া কালো আগ্নেয় শিলার বুক থেকে। প্রতিটি বজ্রধ্বনি আঘাত করছে তোমার যত্নে-গড়া সংযমের শক্ত মার্বেল-মুখোশে, কেটে বানাচ্ছে ফাটলরাশি—যেখানে কাঁচা অসংস্কৃত ক্ষুধা ছুটে বেড়াচ্ছে তোমার মুখোশের তলে। চারপাশে ভদ্র হাসি ঢেউ খেলছে, মুখগুলো জ্বলজ্বল করছে সামাজিক শিষ্টতায়—কিন্তু ভেতরে ভেতরে তুমি এক কুণ্ডলি-পাকানো শিকারি—যার প্রতিটি মাংসপেশি টানটান, ইন্দ্রিয় শাণিত ক্ষুরধারের মতো। তুমি শ্বাস নাও ছোটোখাটো আলাপ আর উৎকৃষ্ট মদের সুগন্ধে, স্বাদ পাও শালীনতার, ফাঁপা মিষ্টতার, অথচ বুকের ভেতরের ঢাক একটানা ডাক দিচ্ছে, সাহস করছে তোমাকে মুক্ত করে দিতে সেই বুনো হতাশা থেকে, যা অনিরূপণীয় কাল ধরে খাঁচায় বন্দি।

এই ক্ষুধা এক জ্যান্ত সত্তা—এক পিচ্ছিল, লিকলিকে সাপ, যা কিলবিল করছে তোমার শিরায় শিরায়, যার জিভ ঝিলমিল করছে নিছক ভদ্র সম্মতির চেয়ে বেশি কিছু পাবার তৃষ্ণায়। এটি চলাচল করে প্রাচীন স্মৃতি হৃদয়ে নিয়ে—এ এক অরণ্যপ্রাণ প্রবৃত্তি, যা জন্মেছে হৃদয়ভঙ্গ আর টিকে থাকার ক্ষুধা থেকে, মাপা-মাপা প্রতিটি শ্বাসে যা আরও শক্ত করে তোমাকে পেঁচিয়ে ধরে। কখনো তুমি স্বাদ পাও তার ধাতব দংশনের—তার জিভে ক্ষুরধার তৃষ্ণা, বিগত আশার পচাগলা অবশেষ আর ধোঁয়াটে ঝাঁজ, যা দগ্ধ করে তোমার সংকল্পকে।

তোমার মন প্রাণপণে আঁকড়ে ধরে সভ্যতার মুখোশ—তুমি বাইরের জগতে নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করো, যেখানে সবকিছু নিখুঁত, ঝকঝকে, সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য দেখায়; কিন্তু এর আড়ালে লুকিয়ে আছে অস্থিরতা, দমিয়ে-রাখা প্রবৃত্তি বা ভেতরের গোপন সংগ্রাম—তবুও সেই সাপের হিসহিস প্রতিধ্বনিত হয় তোমার করোটির ভেতর—এ এক অবিরাম স্মারক, যে ঝলমলে সাফল্যের আড়ালে অপেক্ষা করছে এক ভয়ংকর ও মহিমান্বিত শক্তি, মুক্তি পাবার জন্য। আর যদিও তুমি দাঁড়িয়ে আছ সভ্যতার সবচেয়ে সূক্ষ্ম পোশাকে মোড়া এক শিহরনময় উচ্ছ্বাস আর ভয়ের সঙ্গে—তোমার দেয়াল একদিন ধসে পড়বেই, আর সেখান থেকে যা ছুটে বেরোবে, তা সকল বশ আর শেকল ছিঁড়ে-ফুঁড়ে তোমাকে নিয়ে যাবে অবারিত মুক্তি আর গৌরবের পথে।

তোমার শ্বাস—শান্তি ও নিয়ন্ত্রণের ছন্দোবদ্ধ তাল—এখন তোমার জিভের ডগায় ঝুলে থাকে…যেন সালফারের ঝাঁঝালো স্বাদ আর নিষিদ্ধ প্রতিশ্রুতির মতো। প্রতিটি নিঃশ্বাস দগ্ধ করে গলার পেছনের ভাগ, আহা, যেন তুমি গলিত অঙ্গার টেনে নিচ্ছ ভেতরে; আর প্রতিটি প্রশ্বাস কেঁপে ওঠে এমন এক অন্তরনিঃসৃত উন্মোচনের ভারে, যা উচ্চারণ করার সাহসও তুমি পাও না। এই মুহূর্তগুলোতে ভয় কিংবা উল্লাস আর আলাদা থাকে না; তারা মিলে যায় এক উজ্জ্বল অগ্নিকুণ্ডে—এ এক সর্বগ্রাসী দাহ, যা গ্রাস করে যুক্তিকে, আর নির্দয় ক্ষুধায় জ্বালানি জোগায় তোমার অন্ধকারতম প্রবৃত্তিকে। ওদিকে, ওপরে, ফ্লুরোসেন্ট আলো ঝাপসা হয়ে ওঠে প্রলোভনের গহ্বরের মতো, ওদের দ্যুতি কাঁপে তোমার দ্রুতগামী নাড়ির ছন্দে—নির্বাক সাক্ষী হয়ে সেই প্রলোভনাসক্ত শক্তির, যা একসময় তুমি দ্বিতীয় ত্বকের মতো গায়ে পরেছিলে। এখন, কাঁপা-কাঁপা আঙুলের ফাঁক গলে বেরোনো ধোঁয়ার মতো, সেই শক্তি সরে যাচ্ছে দূরে, রেখে যাচ্ছে তোমার গায়ে উন্মুক্ত আর দগদগে এক ক্ষত।

তোমার শিরায় ছুটে-চলা ঈর্ষা ও কর্তৃত্বের হিংস্র জোয়ারের নিচে লুকিয়ে আছে এক ভয়ংকর প্রতিদ্বন্দ্বী: লজ্জা। এটি সরীসৃপের মতো তোমার সমস্ত গা বেয়ে চলে, যেন পচনভোজী এক কীট, আর ঢুকে পড়ে আত্মার প্রতিটি গোপন ফাটলে। একনিঃশ্বাসে তুমি হয়ে ওঠো এক শিকারী—অধিকারের ক্ষুধায় উন্মত্ত, নখ প্রসারিত, শিকার ছিঁড়ে ফেলার প্রস্তুতিতে। পরের নিঃশ্বাসে তুমি হয়ে যাও কাঁপতে থাকা এক মৃতদেহ—ঠান্ডা, পরিত্যক্ত, চূড়ান্ত, যন্ত্রণাদায়ক ভোজের অপেক্ষায়। তুমি বহন করো বিপরীতমুখী দুটি অবয়বের অবস্থান—নেকড়ের ক্ষুধার্ত গর্জন, আর মেষশিশুর নীরব শূন্য দৃষ্টি—যা পড়ে থাকে প্রাচীন সত্তার ঝড় আর সভ্যতার ভঙ্গুর অবশিষ্টাংশের মধ্যে ছিন্নভিন্ন হয়ে।

মরিয়া হয়ে তুমি আঁকড়ে ধরো সংযমের লাগাম, আঙুল ফ্যাকাসে হয়ে আসে ছেঁড়া দড়ি আঁকড়ে ধরে রাখতে রাখতে। অথচ প্রতিটি ক্ষণ গড়িয়ে যায়, দড়ি ফসকে যায়, ভেতরের ছায়া প্রসারিত হয়ে হয় আরও লম্বা, আরও ঘন, যেন সে তোমাকে পুরোপুরি গ্রাস করতে চায়। মুক্তি, না বিনাশ—কোথায় শেষ হয় পরিত্রাণ? কোথায় শুরু হয় ধ্বংস? তুমি নিজেকে খুঁজে পাও এক ক্ষুরধার প্রান্তে—নৃত্যে মগ্ন, পতনের উল্লাসে মাতাল—আবার আতঙ্কে জমে বরফ হয়ে যাও; দেখো, দিগন্ত ধেয়ে আসছে মাটির কাছে।