বেশ কিছুদিন কেটে গেল। যান্ত্রিক জীবনের গোলকধাঁধায় পড়ে সেদিনের মেয়েটি, সেই ঘটনা, আর খেলাচ্ছলে নিজের কাছে দেওয়া শপথের কথা ভুলে গিয়েছিলাম।
নিজের যোগ্যতা আর সামর্থ্যের গ্রহণযোগ্য সক্ষমতার পরিচয় দিতে গিয়ে তথাকথিত নিয়মে বাঁধা মেধার লড়াইয়ের বলি হয়ে গেলাম! এখানে শুধুই প্রতিযোগিতা, লেটার মার্ক তোলার হুড়োহুড়ি, পকেটখরচ-বাঁচানো দু-পয়সার বাদাম চিবিয়ে তিনগ্লাস পানি খেয়ে থিওরির পর থিওরি মুখস্থ করা, ভবিষ্যতে মোটা বেতনের চাকরির জন্যে প্রস্তুত হওয়া, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হাওয়া গায়ে লাগিয়ে নিজের মেধার মৌখিক লিফলেট বিতরণ করে দাপিয়ে বেড়ানো, সবশেষে নিজের মেধায় কেনা সার্টিফিকেট বগলে নিয়ে অন্যের অধীনস্থ হওয়া, নিজের স্বাধীনতার পরিপূর্ণ দাম দিয়ে বুদ্ধি, মেধা, শ্রম আর সৃজনশীলতাকে গলাটিপে হত্যা করা! এটাই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, সামাজিক এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার করুণচিত্র!
আমরা ছাপোষা শিক্ষার্থীরা দাবার ছকের বোঁড়ে মাত্র!
মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধির বিকাশ অথবা চর্চা কোনোটাই আমাদের ধাতে নেই।
ডবল জিপিএ ফাইভ নিয়ে ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন সেরা বিষয় নিয়েই পড়াশোনা করতে হবে, তবেই বাধ্য ছেলের সবগুণে তুমি গুণান্বিত, নইলে তুমি শুধুই অন্যের সাথে ক্রমাগত তুলনার পাল্লায় মাপার বস্তু হিসেবে পরিগণিত হবে।
যা তোমার পাকস্থলি-বিরোধী, তা-ই তোমাকে গিলতে হবে। বমি করবে? তাহলে ভাই তুমি তো সভ্য সমাজের অযোগ্য!
তুমি ফিজিক্সের সূত্র মুখস্থ করার চেয়ে বরং কবিতা লিখতে ভালোবাসো? তবে তুমি গুবরেপোকা!
অর্থনীতির হিসেব-কষা থেকে ছবি আঁকতে বেশি ভালোবাসো? তাহলে ভবিষ্যতে ভিক্ষে করে খেতে হবে, কারণ এদেশে শিল্পীর ভাত নেই!
ভালো অভিনয়-দক্ষতা আছে, তাহলে তুমি সং। সং মানে বোঝো? চোখে মুখে রং-মাখানো বিনা বেতনে মানুষের হাসির পাত্র! না, তুমি কিন্তু অভিনয়শিল্পী নও!
শিল্পীর, সাহিত্যের, প্রতিভার কোনো মূল্য এ যুগে নেই।
সাহিত্য পড়তে ভালো লাগত, কিন্তু সময়টাও বেয়াড়া ছিল—ব্যস্ততা সময় দিত না। গলাটা ভালো ছিল, অঙ্ক কষতে বসলে মাঝে মাঝেই গুনগুন করে গান গেয়ে উঠতাম! মা আর আপারা আমার গান শুনতে পছন্দ করত, বড়ো আপা আমার জন্মদিনে একটা হারমোনিয়াম উপহার দিয়েছিল, মা আর ছোটো আপা দিল তবলা! সময় থেকে ধার হিসেবে কিছুটা সময় নিয়ে হারমোনিয়াম আর তবলা বাজানো শিখেছিলাম। প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যায় আমাদের পারিবারিক আসর বসত, আমি গান গাইতাম; বড়ো আপা গীতিকাব্য ভালোই পাঠ করতে পারত, আর ছোটো আপা বাসার প্রায় সবাইকে মিমিক্রির মাধ্যমে অনুকরণ করে হাসাত।
আমার মা-ও ভালো গান করতে পারতেন, তবে আমাদের খুব একটা শোনাতে চাইতেন না, লজ্জা পেতেন। বাবাকে প্রায় প্রতিদিনই শোনাতেন, আমরা তিন ভাই-বোনেতে মিলে লুকিয়ে শুনতাম। গাজীপুরের বাসায় আসার পর ধীরে ধীরে সবার সাথে সম্পর্কটা সহজ হয়ে গিয়েছিল! নানুও মাঝে মাঝে এসে থেকে যেতেন, যখন আসতে পারতেন না, তখন আমিই চলে যেতাম ময়মনসিংহে আমার শেকড়ের কাছে!
এদিকে আমার আরেকটা ভাই পৃথিবীতে আসার অপেক্ষায়, সেই গল্পে আজ আর না যাই!
নানুর বয়সও বেড়েই চলেছে, শরীরে আগের মতো জোর পান না! কণ্ঠস্বর ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছিল, আর আমার প্রাণটাও যেন তার সজীবতা হারাতে লাগল! বেগম নাহার চৌধুরির স্পর্শ আমার প্রতিটি শিরা-উপশিরায় মিশে আছে, আমার অক্সিজেন আমার নানু; আমার নিঃশ্বাসে, আমার শক্তিতে আমার প্রতি পদক্ষেপে নাহার চৌধুরি আমার চিরসঙ্গী! সারাদুনিয়ার কাছে আমি অনাকাঙ্ক্ষিত হতে পারি, কিন্তু নাহার চৌধুরির কাছে আমিই কাঙ্ক্ষিত পরম যত্নের ধন! ওঁর কিছু হয়ে গেলে আমি সারাজীবনের মতো আশ্রয়হীন হয়ে যাব, এ-কথা কি বিধাতা বোঝেন না?
নানুর অসুস্থতা বাড়তে থাকে, তাই নানুকে সাথে করে গাজীপুরের বাসায় নিয়ে এলাম। শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেও মানসিকভাবে তিনি তখনও তেজোদীপ্ত তরুণী! আমাদের দক্ষিণদিকের ঘরটা নানুর জন্য প্রস্তুত করা হলো, এর পেছনেও নানুর একটা ফিলসফি আছে। নানু বলত, দখিনদিক হলো ভালোবাসার দিক! বসন্তের বাতাসে কিংবা শীতের হিমেল হাওয়ায় ভালোবাসা দখিনের জানলা দিয়েই আসে, ভ্রমরের গানে গানে ভালোবাসার সুর দখিনের কোনো পলাশবন থেকে ভেসে আসে! দখিনের জানলা দিয়ে অদূরে দৃষ্টি পেতে কীসের যেন অপেক্ষায় নানু অষ্টপ্রহর কাটিয়ে দিতেন। খুব একটা ঘরের বাইরে যেতে পছন্দ করতেন না, ফজরের নামাজ পড়ে খুব ভোরে দখিনের পথ ধরে কিছু সময় হেঁটে বেড়াতেন। সাথে কখনোই কাউকে নিয়ে যেতেন না; আমি প্রায়ই যেতে চাইতাম, কারণ ওঁর সব কাজই আমার ভালো লাগত, সব কিছুর মধ্যেই একটা গভীরতা অনুভব করতাম; শুধু মনে হতো, ওঁর সব কাজেই কোনো-না-কোনো অন্তর্নিহিত অর্থ লুকিয়ে আছে। ওঁর ব্যক্তিত্বে আমি বরাবরের মতো মুগ্ধ। স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বে উজ্জ্বল বেগম নাহার চৌধুরি!
যখনই বলতাম, আমায় আজ নিয়ে চলো, দখিনের পথ ধরে আমিও হাঁটতে চাই তোমার সাথে, তখনই বলতেন, দখিনের পথ একান্তই আমার, এই সময় একান্তই আমার। জানো, নানুভাই, একান্ত ভালো লাগার জিনিসগুলোতে অংশীদার বানাতে নেই, নইলে দেখবে, জিনিসগুলো তার নিজস্ব রং-রূপ-গন্ধ হারাবে। কেন ভাবছ, তোমার একান্তে-পাওয়া জিনিসগুলো সবার কাছেই একান্তের হবে! আমি ক্ষুধার্তের মতো ওঁর প্রতিটি কথা গলাধঃকরণ করতাম। এরপর আর কখনও ওঁর একান্তে-গড়া উদ্যানে প্রবেশ করতাম না। নানুকে নানুর মতো করে একাই ছেড়ে দিতাম!
তখন ওঁকে খুবই আনন্দিত মনে হতো। ধীরে ধীরে হাঁটতেন, কখনও দেখিনি তাড়াহুড়ো করতে, হোক ঝড়-বৃষ্টি কিংবা বজ্রপাত! ওঁর মনোযোগ এতটুকুও সরত না। ওঁর ভাষ্যমতে, ভালোবাসায়, ভালোলাগায়, কখনও তাড়াহুড়ো করতে নেই! শান্তমনে প্রতিটি সেকেন্ড উপভোগ করতে হয়, প্রতিটি নিঃশ্বাসে ভালোবাসার ঘ্রাণ নিতে হয়! হয়তো এটাই করতেন তিনি। যতক্ষণ দেখা যেত, ওঁর শুভ্র শাড়ির আঁচল আমি তাকিয়ে দেখতাম, একই ছন্দে হেঁটে বেড়াতেন তিনি। অবশ্য মানুষজনের আনাগোনা শুরুর আগেই ফিরে আসতেন। মানুষজনের মাঝে থাকতেন না, নির্জনেই থাকতেন বেশিরভাগ সময়। তবে এমনিতেও উনি পর্দা করতেন।
অনেক ছোটোবেলা থেকেই পর্দার আড়ালে থাকতে পছন্দ করতেন, সবসময় নামাজ, রোজা, কুরআন তেলাওয়াতেই মগ্ন থাকতেন, সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যে ওঁকে সবসময়ই তৃপ্ত দেখেছি। আমার দেখা সেরা পরহেজগার নারী উনি! ওঁকে কখনও মিথ্যে বলতে শুনিনি, তবু নামাজের বিছানায় অঝোরে অশ্রুপাত করতে দেখেছি; ওঁকে কখনও অভিনয় করতে দেখিনি, চোয়াল শক্ত করে কঠিন কঠিন সত্য বলতে দেখেছি; ওঁকে কখনও অপ্রয়োজনীয় কথা বলতেও শুনিনি! কখনও ঝগড়া করতে দেখিনি, কখনও দায়িত্ব থেকেও পালাতে দেখিনি! একজন দার্শনিক, একজন কবি, একজন ভালোবাসার দূত, শান্তিময় জীবনের অধিকারিণী, একটি নির্ভরযোগ্য আশ্রয়, একজন অভিভাবক, একজন পথনিদের্শক, একজন নাহার চৌধুরি! যতই বলব, উপমায় টান পড়ে যাবে, ওঁকে পুরোপুরিভাবে আবিষ্কার করতে একটা জীবন যথেষ্ট সময় নয়—উনি সর্বোপরি একটা বিশুদ্ধ আত্মা, একটা সম্পূর্ণ অধ্যায়, একটা মহাকাব্য!
আমার সৌভাগ্য, আমি ওঁর ছায়ায় বেড়ে উঠেছি। এখন মনে হয়, অনাকাঙ্ক্ষিত হয়ে ভুল করিনি! সৃষ্টিকর্তার প্রতিটি সৃষ্টির পেছনে, প্রতিটি কাজের পেছনে একটা সুনির্দিষ্ট কারণ থাকে—কথাটা আমি বিশ্বাস করি।
একদিন সন্ধেয় চা খেতে খেতে নানুর সাথে গল্প করছিলাম, কথায় কথায় হঠাৎ করেই সেদিন সেই মেয়েটির কথা মনে পড়ে গেল। মনে হলো, নানুই সেই মানুষ, যার কাছে আমি কোনো কারণ ছাড়াই আমার যত যুক্তিহীন প্রলাপ আছে, সব হড়বড় করে বলতে পারি। কোনো ভূমিকা না পেড়েই রুদ্ধশ্বাসে নানুকে সেদিনের ঘটনাগুলো বলে গেলাম। সব শুনে ওঁর মুখে মুচকি হাসির রেশ দেখে আশ্বস্ত হলাম। সেদিন নানু একটা কথা বলেছিলেন, যেটা আজও আমার মনে পড়ে। . . . ভুল বললাম! মনে পড়বে কেন? ভুলেছি কবে যে মনে পড়বে!
নানু বলতেন, নিজ থেকেই আসা রত্ন পায়ে মাড়াতে নেই!
এইচএসসি পরীক্ষার সময় খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। পড়াশোনা থেকেও র্যাংকিং নিয়ে চিন্তা হচ্ছিল বেশি। যা-ই হোক, দু-বছর যা করেছি করেছি, এবার আর ছাড় দেওয়া যাবে না। দেখতে দেখতে টেস্ট পরীক্ষার সময় হয়ে গেল! অস্থির হয়ে উঠলাম কীভাবে কী করব, এই চিন্তায়! অনেক বেশি চাপ হয়ে গেছে, একটু রিফ্রেশমেন্টের জন্য গাজীপুরে পাহাড়ের পথ ধরে হাঁটতে বেরিয়েছিলাম একদিন বিকেলবেলায়। বিপরীত দিক থেকে তিন-চারটে মেয়ে আসছিল! পাশ কাটিয়ে যেতেই একটা মেয়ে ডেকে উঠল!
- আরে, রাজি সাহেব যে! কোথায় যাওয়া হচ্ছে?
চমকে উঠলাম, এরা আবার আমার এই নাম জানল কীভাবে?! ভালো করে তাকিয়ে দেখি, সেদিনের মেয়েটাও আছে এদের মধ্যে! ইতস্তত করে জবাব দিলাম।
- একটু ওদিকে যাব।
-তা একাই যাবেন?
একা যাচ্ছি দেখেও এই প্রশ্ন করার কী কারণ থাকতে পারে, একমিনিট সময় নিয়ে এটাই ভাবলাম। পরে মনে হলো, ওরা মনে হয় আমার সাথে যেতে চাইছে, আর প্রস্তাবটা আমাকে দিয়েই দেওয়াবে, তাই এভাবে ঘুরিয়ে প্রশ্ন করল। যা-ই হোক, স্বেচ্ছায় আসা সুযোগ পায়ে ঠেলতে নেই...বললাম, কেউ সাথে যেতে চাইলে যেতে পারে।
প্রত্যাশিত জবাবে মেয়েটা অনেক খুশি হয়ে উঠল।
- তোরা এগিয়ে যা, আমি কিছুক্ষণ পরে জয়েন করছি।
- ঠিক আছে।
এই কথা বলে বাকিরা এগিয়ে গেল, আমি অবশ্য একটু অবাক হলাম। ভেবেছিলাম, ওরা চার জনেই যেতে চাইছে! তবে এমনটা ভাবারও তেমন কারণ নেই, প্রশ্নটা শুধু ও-ই করেছিল! মেয়েটার দিকে তাকিয়ে এসব হাবিজাবিই ভেবে যাচ্ছিলাম!
- এই যে, চিন্তাভাবনা শেষ হলে আমরা কি এবার যেতে পারি?
- ও, হ্যাঁ, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। চলো।
- আচ্ছা, আপনি এখনও আমার নাম জানতে চাইলেন না কেন? এমন কৌতূহলহীন মানুষ আমি আগে দেখিনি!
- আসলে এটা আমার কোনো কাজে লাগবে না, অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে। আর তা ছাড়া আমার মনেই থাকে না যে, নামটা জানতে হবে!
- আপনি দেখি আমার ভাবনা থেকেও অনেক বেশি ভিন্ন প্রকৃতির একজন মানুষ।
- তা-ই? তা কম-বেশি ভিন্ন ভাবারই-বা কী কারণ?
- নটরডেমের অধিকাংশ ছেলেদের সাথে মতিঝিল আইডিয়ালের মেয়েদের বন্ধুত্ব আছে; আর যাদের নেই, তারাও একসাথে আড্ডা দিতে আসে আমাদের সাথে। কিন্তু আপনাকে কখনও ধারেকাছেও ঘেঁষতে দেখিনি, তাই।
কারণটা শুনে একটু ভাব চলে আসল, মনে মনে বেজায় খুশিও হয়েছি। একটা মেয়ে এত কিছু খেয়াল করল আমার ব্যাপারে, ভাবতেই ভালো লাগছে। হালকা কেশে বড়োদের মতো ভাব নিয়ে উপযুক্ত একটা জবাব দেবার জন্যে প্রস্তুত হলাম।
- সবাইকে একই কাজ করতে হবে? এর খুব বেশি প্রয়োজন আছে কি?
- এ বাবা, আপনি তো একদম আমার দাদাভাইয়ের মতো কথা বলছেন!
বলেই মেয়েটা হেসে ফেলল।
কথাটা শুনে খুবই মর্মাহত হলাম, একটু ভাব নিয়ে বিজ্ঞদের মতো কথাটা বললাম, আর মেয়েটা কিনা হাসির পাত্র বানিয়ে দিল! একটু গম্ভীর হয়ে প্রশ্ন করলাম, তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?
- যাক, এতক্ষণে জনাবের দৃষ্টি পড়ল আমার উপর। আমি ক্লাস টেনে পড়ি, সায়েন্সে; আর আমিও ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল। স্যাররা আমাকে ভীষণ স্নেহ করেন। আর আমার হাতের লেখাও নাকি অনেক সুন্দর, সবাই তা-ই বলে! জানেন, একবার কী হয়েছে?
- না, জানি না। না, বলছিলাম…আমার কি জানার কথা?
হঠাৎ মেয়েটা চুপ হয়ে গেল; সে বুঝতে পেরেছে, একা একাই এতগুলো কথা বলে যাচ্ছে! আমি তো আদৌ ওসব জানতেও চাইনি! একটু বিব্রত হয়ে বলল, কিছু না। আচ্ছা বলছিলাম কী, আপনি তো এখনও আমার নামটা জানতে চাইলেন না!
বিস্মিত না হয়ে পারছিলাম না, আমাকে তার নাম বলতে এত আগ্রহ! নিজের সম্পর্কে আমাকে সব কিছু জানাতে এত তাড়া! আমাকে সব কিছু বলতে পারলেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে মেয়েটা! আমার কমনসেন্স বলে, আমি মেয়েটার সাথে মোটামুটি ভালো রকমেরই অভদ্রতা করেছি—সেদিনও, আর আজও করছি। তারপরও কেন মেয়েটা আমার সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলে যাচ্ছে! মনে হচ্ছে যেন কিছুই হয়নি! আমার এই অবহেলা সে অবহেলাই ভাবেনি, বরং আমার স্বভাব হিসেবেই নিয়েছে! যা-ই হোক, ও আবার বলা শুরু করার আগে আমিই মুখ খুললাম।
- বলো, তোমার নামটা শুনি।
- আমার নাম, কমলিকা। আদর করে সবাই কুমু বলে ডাকে। আমি দেখতে কুসুমের মতো সুন্দর কিনা, তাই। কুসুম বুঝেছেন তো?
- হ্যাঁ, বুঝেছি, ডিমের কুসুম!
আমার এহেন বুদ্ধিমত্তায় মেয়েটা তব্দা খেয়ে গেল! বড়ো বড়ো চোখ করে হতভম্বের মতো তাকিয়ে থাকল; একটা শব্দও সরল না মুখ থেকে!
দেখে বড্ড গোবেচারি লাগল! মাথার উপরে কয়েকটা কাক বিশ্রীরকমের শব্দ করে ঘুরে ঘুরে উড়তে লাগল। পথের শেষ মাথায় একা একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে শব্দহীনতার শিকার! কয়েকটি পদক্ষেপ পেছনে ফেলার আনন্দ নিয়ে আমি ছুটে চলেছি পথের অগ্রভাগে, প্রতি পদক্ষেপে নীরবতা ছেড়ে!
আমার বার বারই মনে হতে লাগল, হয় আমি মেয়েটাকে ভীষণ পছন্দ করি, নয় একটুও সহ্য করতে পারি না!