অনন্ত জীবনের আকাঙ্ক্ষা




যখন একজন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে যে, এমন কিছু শক্তি আছে, যা বস্তুজগতকে ছাড়িয়ে যায়—অথবা অন্তত তেমনই মনে হয়—এবং সে যখন দেখে, কেউ কেউ একশরীরে অসীমকাল ধরে অবস্থান করতে পারে, তখনই তার মনে প্রবল ইচ্ছে জাগে সেই একই কাজ করার।

এর কারণ, প্রায়ই জন্ম ও মৃত্যু মানুষের বিবর্তনের পথে এক বিরক্তিকর ও অসুবিধাজনক ধাপের মতো মনে হয়। তাই অনন্ত জীবন তাকে আকর্ষণ করে, যেমন করে “চিরযৌবনের ঝরনা” একদিন আকৃষ্ট করেছিল অতীতকালের অভিযাত্রীদের। আজও মানুষ সেই একই উৎস খুঁজছে—অমরত্ব, চিরযৌবন, অনন্তকাল বেঁচে থাকার উপায়।

কিন্তু আসল কথা হলো, সবসময় মনে রাখতে হবে—এসব মহাশক্তি আসলে প্রভাব (effect) মাত্র। এদের আসল কারণ (cause) হলো আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সিদ্ধিলাভ। যদি কেউ সঠিকভাবে জীবনযাপন না করে, সঠিকভাবে চিন্তা না করে, আর নিজের নিম্নতর কামনা, বাসনা ও আবেগকে জয় করতে না পারে, তবে কেবল আধ্যাত্মিক শক্তির মাধ্যমে সে জীবনকে দীর্ঘায়িত করার আশা করতে পারে না।

মানুষের শেখার অনেক পাঠ আছে—শুধু এই জাগতিক স্তরে নয়, অন্যান্য জগতেও। অন্যজগতে সে শিক্ষা নেয়, অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে, এদিকে পৃথিবীতে তার পরবর্তী মানসিক উন্মোচনের জন্য প্রস্তুত হয়।

তাহলে ভেবে দেখুন—যদি তাকে বাধ্য করা হতো এই পৃথিবীতেই চিরকাল থেকে যেতে, পরিচিত কাউকে ছাড়াই, একঘেয়ে পুনরাবৃত্তির মধ্যে—তাহলে সে অচিরেই মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করত, যেমন আজ দীর্ঘজীবন পাবার জন্য প্রার্থনা করে।

চিরজীবনের আসল অর্থ কী? যখন মানুষ শিখে যায়—নিজের জন্য নয়, কেবল অন্যদের কল্যাণের জন্য বাঁচতে, যখন সে হয়ে ওঠে যুগ যুগ ধরে প্রাসঙ্গিক, যখন সে সম্পূর্ণভাবে নিজের স্বার্থপর বাঁচার আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করে, যখন সে মহাযোজনে (Great Plan) এতটাই অপরিহার্য হয়ে ওঠে যে, প্রতিটি মুহূর্তে তাকে প্রয়োজন হয় সকলের মঙ্গলের জন্য—তখনই সে সক্ষম হয় অনন্তকাল বেঁচে থাকতে। তখন সে কেবল এই জগতে নয়, অনেক ভবিষ্যৎ জগতেও থেকে যাবে—সদা কর্মরত, সদা প্রাসঙ্গিক, অমরত্বে প্রতিষ্ঠিত।