৩৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার্থীদের জন্য (২য় পর্ব, প্রথম আলো)

প্রথম আলো’তে এই ধারাবাহিক লেখাটির মাধ্যমে ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার্থীরা কী কী বিষয় নিয়ে জানতে চান, সেটা জানতে চেয়ে ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। কমেন্টগুলির ভিত্তিতে আজকের লেখাটি সাজালাম।

1. আপনার লেখার কোয়ালিটি বাড়াতে দুটো কাজ করবেন। এক। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর কয়েকটি সোর্স থেকে পড়বেন। দুই। আপনার প্রস্তুতি যেমনই হোক না কেন, পরীক্ষার হলে ‘আই অ্যাম দ্য বেস্ট’ এই মনোভাবটি ধরে রাখবেন।

2. একটি প্রশ্নের জন্য যে সময়টি আপনি মনে মনে বেঁধে রেখেছেন, সে সময়ের মধ্যে কিংবা কাছাকাছি সময়ে যে করেই হোক, উত্তরটি লেখা শেষ করে দেবেন। একটি উত্তর বেশি ভাল করে লিখে আরেকটি উত্তর ছেড়ে আসা কিংবা কম লিখে আসাটা আত্মঘাতী। পরীক্ষা আবেগের জায়গা নয়, যেকোনো মূল্যে ফুল আনসার করার জায়গা।

3. ইংরেজিতে ভাল নম্বর পেতে চাইলে দুটো নীতি অনুসরণ করুন। এক। কোনো বানান ভুল করবেন না। দুই। ব্যাকরণগত ভুলবিহীন শুদ্ধ সহজ বাক্য লিখুন।

4. বিজ্ঞানে আগের বছরের প্রশ্নগুলি আর ২-৩টা গাইডের সাজেশনস্ সলভ করে ফেললে অন্তত অর্ধেক প্রশ্ন কমন পেয়ে যাওয়ার কথা। প্রয়োজনীয় চিহ্নিত চিত্র, সমীকরণ দিন।

5. প্রশ্ন কঠিন হবে কী সহজ হবে, এটা নিয়ে ভাবা মানে স্রেফ সময় নষ্ট করা। কারণ, লড়াইয়ের মাঠে সবার জন্যই একই নিয়ম, আপনার জন্য স্পেশাল কোনো প্রশ্ন পিএসসি করবে না। আপনি ঠিকঠাক উত্তর করতে না পারলে, সে সমস্যা আপনার।

6. সংবিধান মুখস্থ করার দরকার নেই। প্রশ্নের ধরণ স্টাডি করে গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদগুলি সম্পর্কে জেনে নিন, সেগুলিতে কী বলা আছে, ওইটুকু নিজের মতো করে লিখতে পারলেই চলবে।

7. যে টপিকগুলি চর্চা করার ব্যাপার আছে (যেমন, ব্যাকরণ), সেগুলি অবশ্যই অন্তত ৩টি গাইডবই থেকে চর্চা করবেন।

8. আপনি যদি কোনো একটি বিষয়ে খুবই দুর্বল হন, তবে সে বিষয়ে সবল হওয়ার চেষ্টা বাদ দিয়ে যে বিষয়টি আপনি ভালোভাবে পারেন, সেটি আরও ভাল করে পড়ুন। এতে আপনি প্রথম বিষয়ে যত নম্বর কম পাবেন, দ্বিতীয় বিষয়ে আরও কম সময় দিয়ে তার চাইতে বেশি নম্বর তুলতে পারবেন। সে বেঁচে যাওয়া সময় অন্য একটি বিষয়ের পেছনে দিন।

9. ১ পৃষ্ঠা তথ্যবহুল লেখা ৩ পৃষ্ঠা তথ্যবিহীন লেখার চাইতে ভাল নম্বর পেতে বেশি সহায়তা করে।

10. হাতের লেখা সুন্দর হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই, লেখা যেন পড়া যায়। আপনার ফন্টের আকার বেশি বড় হলে, আপনি আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীর চাইতে একই সময়ে কম লিখতে পারবেন।

11. কোনো একটি টপিক নিয়ে কম সময়ে অনেক বেশি জানার জন্য গুগলের সহায়তা নিন। প্রয়োজনে বাংলায় টাইপ করে অপশনস্ কাস্টমাইজ করে খুঁজতে পারেন।

12. মানসিক দক্ষতার জন্য অল্প সময়ে ভাল প্রস্তুতি নিতে ৩টা গাইডবইয়ের সব প্রশ্নোত্তর পড়ে ফেলুন।

13. আপনি অংক কম পারেন? আপনি অংকে ৫০ পাবেন না, ৩৫ পাবেন—এটা মেনে নিন। ১৫ নম্বরের জন্য যত বেশি টেনশন করবেন, অন্যান্য বিষয়ে আপনার ৫০ নম্বর হারানোর আশংকা তত বেশি থাকবে।

14. যারা ইংরেজিতে বেশি দুর্বল, তারা বিসিএস লিখিত পরীক্ষার জন্য দরকারি, এমন কোনো টপিক নিয়ে ভুল হোক, শুদ্ধ হোক, প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যয় করে ৫-৬ পৃষ্ঠা করে লিখবেন।

15. যারা যে বিষয়টিতে ভাল, তাদের সাথে পারতঃপক্ষে সে বিষয়ে আপনার দুর্বলতা নিয়ে এই সময়টাতে কোনো আলাপ করবেন না।

16. বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর উত্তরের শেষ প্যারায় বিভিন্ন কলামিস্ট, বিশেষজ্ঞ ও আপনার নিজস্ব মতামত এবং বিশ্লেষণ দিলে নম্বর বাড়বে।

17. একটা প্রশ্ন মুখস্থ করার চাইতে সে একইসময়ে কয়েকটা প্রশ্ন বিভিন্ন সোর্স থেকে পড়ে ফেলাটা বুদ্ধিমানের কাজ। আপনার রিডিং হ্যাবিট যত ভাল হবে, আপনার রাইটিং স্টাইল তত উন্নত হবে।

18. পরীক্ষায় মূল খাতায় চারদিকে মার্জিন করে আর অতিরিক্ত পাতায় চারদিকে ভাঁজ করে লিখতে পারেন। কোটেশন লিখতে নীল কালি ব্যবহার করুন।

19. গ্রন্থ সমালোচনা অংশের জন্য পরিচিত, গুরুত্বপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ও অন্যান্য ৩০টি উপন্যাস সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।

20. গভীর রাতে ঘুম তাড়াতে সহজ টপিকগুলি পড়ুন। ‘জাস্ট ৫ মিনিটের জন্য’ ফেসবুকে ঘুরে আসতে লগইন করবেন না।

21. কোন বিষয়ে কত পেতে পারেন, এটা নিয়ে একটা ছক করে ফেলুন। গড়ে আপনার নম্বর যেন ৬৫ এর নিচে না নামে।

22. কলিগরা আঁতেল বলুক আর যা-ই বলুক, চাকরিজীবীরা চাকরিতে যাওয়ার সময় সাথে করে বিসিএস এর গাইডবই নিয়ে যাবেন আর সুযোগ পেলেই পড়বেন।

23. আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি, রেফারেন্স বই পড়ার অতো সময় এখন আর নেই। গাইডবই আর ইন্টারনেট থেকে সাজেশনস্ ধরে ধরে পড়াশোনা করুন।

24. হাতের আঙুল আর কব্জি ব্যথা না করে এ পর্যন্ত কেউই চাকরি পায়নি, আপনিও পাবেন না। কোন প্রশ্নের উত্তর কত পৃষ্ঠা লেখা উচিত, এমন কোনো নিয়ম নেই। আপনার চিন্তা করার আর লেখার দ্রুততার উপরেই এটি সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে।

25. যাদের হাতের লেখা স্লো, তারা কম লেখার ক্ষতিকে পুষিয়ে নেবেন বেশি বেশি তথ্য-উপাত্ত আর উদ্ধৃতি দিয়ে।

আজ আর নয়। পরের পর্বে বাকি কথা হবে। হ্যাপি রিডিং!

লেখাটি গত ৩ জুন ২০১৬ তারিখ প্রথম আলো পত্রিকার ‘চাকরিবাকরি’ পাতায় এসেছিলো। লিংকটি:

http://www.prothom-alo.com/life-style/article/876343/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A7%A8%E0%A7%AB-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B6