আর ঠিক ১৩ দিন পরই প্রিলি; পরীক্ষার আগে একটু টেনশন করাটা একটা সাধারণ ভদ্রতা, আর ওটা করতেও তো ৩ দিন লাগে, সে হিসেবে প্রিলির বাকি আর ১০ দিন।
এই ১০ দিনে কী কী করা যায়?
এক। আবেগ কমান, সাধারণ জ্ঞান পড়া কমান। বিসিএস সাধারণ জ্ঞানে পাণ্ডিত্যের খেলা নয়।
দুই। আগে কী পড়েছেন, কিংবা পড়েননি, সেটা ভুলে যান। বেশি পড়লেই যেমন প্রিলি পাস করা যাবেই, এমনকিছু নেই; তেমনি কম পড়লেই যে প্রিলি ফেল করবেনই, তেমনকিছু নেই।
তিন। সামনের ১০ দিনে গুনে-গুনে অন্তত ১৬০ ঘণ্টা ঠিকভাবে পড়াশোনা করবেন, এর জন্য মানসিক প্রস্তুতি রাখুন। এটা করতে পারলে আগে কোনও কিছু না পড়লেও প্রিলি পাস করে যাবেন।
চার। ১০ দিনে বাসায় ৫০ সেট মডেল টেস্ট দেবেন।
পাঁচ। ভাল ১টা প্রিলি ডাইজেস্ট আর বিভিন্ন প্রিলি স্পেশাল সংখ্যা সলভ করুন। প্রিলির প্রশ্নব্যাংক আর ২টা জব সল্যুশন রিভিশন দিন।
ছয়। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হবেন না। এই ১০ দিন মোবাইল ফোন, টিভি, ফেসবুক, ইমো, ভাইবার, হোয়াটসআপ থেকে যতটুকু সম্ভব দূরে থাকলে আপনার জীবনযৌবন বৃথা হয়ে যাবে না।
সাত। কিছু-কিছু গাধামি থেকে সরে আসুন। সংবিধান, রাজধানী ও মুদ্রা, শাখানদী ও উপনদী, প্রকৃতি ও প্রত্যয় সহ কিছু ঝামেলামার্কা টপিক আছে যেগুলি মনে রাখতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়, অথচ মার্কস পাওয়া যায় ১-২। কী দরকার? সময়টা অন্য দিকে দিন, বেশি মার্কস আসবে।
আট। সকল ধরনের রেফারেন্স বই থেকে ১০০ হাত দূরে থাকুন। অত সময় নেই।
নয়। বেশি-বেশি প্রশ্ন পড়ুন, আলোচনা অংশটা কম পড়বেন।
দশ। এই ১০ দিনে পেপার পড়ার আর খবর শোনার কোন দরকার নাই।
এগারো। মানসিক দক্ষতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন এই দুইটি বিষয়ের কনফিউজিং প্রশ্নের উত্তর করবেন না। কমনসেন্স থেকে অনেক উত্তর পেয়ে যাবেন।
বার। যা কিছু বারবার পড়লেও মনে থাকে না, তা কিছু পড়ার দরকার নাই।
তেরো। কে কী পড়ছে, সে খবর নেয়ার দরকার নাই। যাদের প্রস্তুতি অনেক ভাল, তাদের সাথে এই ১০ দিনে প্রিলি নিয়ে কোন কথা বলবেন না।
চৌদ্দ। বিজ্ঞানটা শুধু প্রিলির প্রশ্নব্যাংক আর জব সল্যুশন থেকে পড়ুন।
পনেরো। পাটিগণিত বাদে গাণিতিক যুক্তির বাকিগুলি প্র্যাকটিস করুন।
ষোল। বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের জন্য শুধু সরকারী চাকরির প্রশ্নগুলি পড়ুন।
সতেরো। বাংলা ও ইংরেজি ব্যাকরণ আগে যা পড়েছেন, শুধু সেইটুকুই আরও একবার পড়ে নিন।
আঠারো। ডিসেম্বর বাদে গত ৫ মাসের সাধারণ জ্ঞানের তথ্যগুলি কোন একটি গাইড/বই থেকে এক নজর দেখে নিন।
উনিশ। ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মাধ্যমিকের সামাজিক বিজ্ঞান বইটি থেকে দেখতে পারেন।
বিশ। যে প্রশ্নগুলির উত্তর অনেকদিন ধরেই পাচ্ছেন না, সেগুলি নিয়ে ভাবা বন্ধ করে দিন।
এখন ৭ তারিখ বিকেল থেকে শুরু করে ৮ তারিখ পরীক্ষার হল থেকে বের হওয়া পর্যন্ত কী কী করতে পারেন, বলছি।
এক। থ্রি ইডিয়টস্ টাইপের কোন একটা মুভি দেখুন। কিছু সফট ইন্সট্রুমেন্টাল কিংবা রবীন্দ্রসংগীত শুনতে পারেন।
দুই। পুরোপুরিই মোবাইল ফোন আর ফেসবুক মুক্ত সময় কাটান।
তিন। পরেরদিনের জন্য পরীক্ষার হলের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখুন।
চার। রাতে হাল্কা খাবার খেয়ে ১০টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ুন। ঘুম না এলে স্নায়ু শিথিল করার মেডিসিন খেয়ে ঘুমাতে পারেন। প্রিলির আগের রাতে ভাল ঘুম না হলে যতই প্রস্তুতি থাক না কেন, পরীক্ষা খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমাবেন।
পাঁচ। পরীক্ষার দিন সকালে উঠে ১৫ মিনিট প্রার্থনা করুন। এরপর ফ্রেশ হয়ে হাল্কা নাস্তা করে হাতে ‘সময় নিয়ে’ (কোনোভাবেই ‘বইপত্র নিয়ে’ নয়) হলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ুন। বের হওয়ার আগে আরও একবার দেখে নিন, প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়েছেন কিনা।
ছয়। পরীক্ষার হলে যে ভাবনাটা সবচাইতে বেশি ম্যাজিকের মতো কাজ করে, সেটি হল ‘আই অ্যাম দ্য বেস্ট’ ভাবনা। আপনার চাইতে ভাল পরীক্ষা কেউই দিচ্ছে না, এটা বিশ্বাস করে পরীক্ষা দিন।
সাত। উত্তরপত্রে সেট কোড সহ অন্যান্য তথ্য ঠিকভাবে পূরণ করুন। এটা ভুল হলে সব শেষ।
আট। আপনি যে অংশটি সবচাইতে ভাল পারেন, সেটি আগে উত্তর করা শুরু করবেন। তবে এক্ষেত্রে কত নম্বর প্রশ্নের উত্তর করছেন আর কত নম্বর বৃত্তটি ভরাট করছেন, সেটি খুব ভালভাবে মিলিয়ে নেবেন।
নয়। সব প্রশ্নই উত্তর করার জন্য নয়। লোভে পাপ, পাপে নেগেটিভ মার্কস।
দশ। বুদ্ধিশুদ্ধি করে কিছু প্রশ্ন ছেড়ে না এসে উত্তর করতে হয়। এরকম ৬টা প্রশ্ন ছেড়ে শূন্য পাওয়ার চাইতে অর্ধেক ঠিক করে ১.৫ পাওয়া ভাল।
এগারো। সাধারণত যেকোনও বিষয় নিয়ে ২য় ভাববার সময় আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। প্রথম দেখায় যে প্রশ্নগুলির উত্তর পারেন না মনে হবে, সেগুলি মার্ক করে পরেরটায় চলে যাবেন। সময় নষ্ট করার সময় নেই।
বার। প্রশ্ন ভুল কী ঠিক, সেটা নিয়ে মাথাখারাপ করবেন না।
তেরো। বৃত্ত ভরাট করতে করতে ক্লান্ত? একটু ব্রেক নিন। চাকরিটা পেয়ে গেলে আপনার জীবনটা কীভাবে বদলে যাবে, কাছের মানুষগুলির হাসিখুশি মুখগুলি একবার কল্পনায় আনুন; ক্লান্তি কেটে যাবে।
চৌদ্দ। কয়টা দাগালে পাস, এমন কোন নিয়ম নেই। আপনি যেগুলি পারেন, সেগুলির উত্তর করবেন। এরপর যেগুলি একেবারেই পারেন না, সেগুলি বাদ দিয়ে বাকিগুলির ৬০ শতাংশ উত্তর করবেন।
পনেরো। কোন প্রশ্নেই বেশি গুরুত্ব দেবেন না। সহজ কঠিন সব প্রশ্নেই ১ নম্বর।
ষোলো। আপনার আশেপাশে কে কয়টা দাগাচ্ছে, কোনটা দাগাচ্ছে, সেদিকে তাকাবেন না। এতে আপনি বেশ কিছু জানা প্রশ্ন ভুল দাগাতে পারেন।
পরিচয় দেয়ার মতো একটা চাকরি সবারই হোক। সিভিল সার্ভিসে আপনাদের স্বাগত জানাই।
এই লেখাটি গত ২৫/১২/২০১৫ ইংরেজি তারিখ প্রথম আলো’র চাকরিবাকরি পাতায় ছাপা হয়েছিল। লিংকটি: