৩৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত কিছু পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণঃ
# কখগঘ এই সিরিয়ালটা বাম থেকে ডানে না দিয়ে উপরেনিচে দেয়াতে অনেক ক্যান্ডিডেটই অন্তত ৩-৪টা জানা প্রশ্নের উত্তর ভুল দাগিয়েছে। পিএসসি এই সাইকোলজিক্যাল গেমটা খেলবে, এটা কেউই ভাবতে পারারও কথা না। এরকম একটা প্রশ্নে ০.৫ নম্বরও অনেক! আপনি এই ধরাটা খেয়ে থাকলে নিজেকে ‘ইউনিক’ ভাবার কোনও কারণই নাই।
# প্রশ্নটি ‘এসো নিজে করি’ টাইপ কোনও প্রশ্ন না। তাই, আমি নিশ্চিত পরীক্ষার হলে পিন না শুধু, পালকপতনের নিস্তব্ধতা ছিল। কথা বলে লাভ না থাকলে তো প্রয়োজনে ‘ভুল বৃত্ত’ ভরাট করাও তো ভাল।
# কোচিং সেন্টার আর গাইডবই পড়েটড়ে তেমন কোনও কাজই হবে না, যদি না নিজের ‘হেডঅফিসে’ কিছু থাকে। যা কিছু সঞ্চয় করেছেন, তার চাইতে বেশি কাজে লেগেছে, যা কিছু সঞ্চয়ে আছে তা। ভাল প্রস্তুতি নেয়া অপেক্ষা ভাল পরীক্ষা দেয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। (সিভিল সার্ভিসের এন্ট্রি পরীক্ষা এমনই হওয়া উচিত) কীভাবে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পাওয়া যাবে, এটার ধরন, মানে প্রস্তুতিকৌশল নিয়ে নতুনভাবে ভাববার সময় এসে গেছে বোধ হয়। ‘অমুক কোচিং সেন্টারের সাজেশন এত পার্সেন্ট কমন’, ‘তমুক গাইডের এত সংখ্যক প্রশ্ন কমন’ এসব কথা বলার দিন শেষ হতে চলেছে, এটা মনে হল।
# এই পরীক্ষায় গণতন্ত্র আর সাম্যবাদের প্রতিফলন ঘটেছে। গণতন্ত্র কেন? The exam-scripts were the mistake-banks of the candidates, by the candidates, for the candidates. সাম্যবাদ কেন? যারা পড়াশোনা করে গেছে, তাদের যে দশা, যারা পড়াশোনা করে যায়নি, তাদেরও একই দশা। পড়াশোনা করা মানে, পড়াশোনা করা; সেটা এক সপ্তাহেরই হোক আর এক বছরেরই হোক।
# “এবারেরটা যেমনতেমন, ৩৬তমটা একেবারে ফাটায়ে দিব” যদি আপনি ভাবেন, আপনিই একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা পরীক্ষার হলে ২ ঘণ্টার বেশিরভাগ সময়ই শুধু এই কথাটাই ভেবেছে, তবে আমি বলব, আপনি ভুল ভাবছেন। আমার অনেকের সাথেই কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছে (যাদের বেশিরভাগই বুয়েট-মেডিক্যালের স্টুডেন্ট, মানে, আমাদের চোখে ‘ভাল স্টুডেন্ট’)। আমি আপনাদের নিশ্চিত করছি, ওই ভাবনাটি ছিল সার্বজনীন। বিশেষ পরিস্থিতিতে পৃথিবীর সব মানুষই একইভাবে ভাবে। পিএসসি চাইলেই সবাইকেই গণহারে ‘ধরা খাওয়া’তে পারে।
# ‘ভাব নেয়ার দিন শেষ, মেধায় চলুক বাংলাদেশ’ আমি জানি, এই কথাটি পিএসসি’র মাথায় নেই। আমি এমনিই বললাম। আচ্ছা, যদি অবচেতনভাবেও থেকে থাকে, মানে পিএসসি যদি চায়, ‘কাইজেন মেথডে’ পরীক্ষাপদ্ধতিতে সংস্কার আনবে, তবে আমি তাদেরকে সাধুবাদ জানাব। একইসাথে যারা পরীক্ষা দিচ্ছেন, তাদেরকে বলব, “ভাই, একথা ভাবাটা বোধ হয় ঠিক হবে না যে রিটেনে এতদিন ধরে যে স্টাইলে পড়ে সবাই পার পেয়ে গেছে, আপনিও সেভাবে পড়ে পার পেয়ে যাবেন।” একটু ভাবুন কীভাবে করে প্রিপারেশন নিলে ভাল হয়। সময় কম তো! যে চাকরিটা ৩০ বছর আরামে করবেন, সেটার জন্য ৩ মাসও একটু ভাবতে পারবেন না, তা কী করে হয়? ভাল কথা, ‘কাইজেন’ মানে হল, কোনও একটি সিস্টেমকে ধীরে ধীরে (রাতারাতি নয়) ক্রমাগত উন্নত করা।
# এ পরীক্ষায় ফার্স্ট পার্সন, সেকেন্ড পার্সন এবং থার্ড পার্সন—সবার অবস্থাই কমবেশি একই, মানে বাজে অবস্থা। যদি কেউ আপনাকে “কী পরীক্ষা দিয়েছ এসব! কিচ্ছু পার না! গাধা (কিংবা গাধী) একটা!” এই জাতীয় বকাঝকা দেন, তবে আমি শিওর, হয় উনি বিসিএস প্রিলি দেননি, অথবা উনি ৩৫তম বিসিএস প্রিলি দেননি। উনার কথায় কিছু মনে করবেন না, উনাকে নিজগুণে মাফ করে দিন। উনাকে এই ধরনের একটা প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে বলেন। দেখবেন, উনার নাকের পানি মুছে দেয়ার জন্য উনি কাউকেই পাশে পাবেন না।
# আপনাদের যেসব ফ্রেন্ড হাসিমুখে চাপাবাজি করছেন, “প্লাস-মাইনাস করে অ্যাট লিস্ট ১৫০ থাকবে”, তাদেরকে কিছুই বলার দরকার নাই। রেজাল্টটা বের হতে দিন। দেখবেন, এদের অনেকেই হাসিমুখেই ফেল মেরে বসে আছেন।
# একেকভাবে ভাবলে একেকরকম আনসার হয়, এমন প্রশ্ন অন্যান্যবারের তুলনায় এবার একটু বেশি ছিল। পিএসসি ইচ্ছে করেই এই গেমটা খেলে যাতে কেউ সেগুলো আনসার না করে সেজন্য। ওসব প্রশ্নের উত্তর পিএসসি যেটাকে ধরে নেবে সেটাই কারেক্ট। জানি, তারপরেও ছেড়ে আসতে ইচ্ছে করে না। লোভে পাপ, পাপে নেগেটিভ মার্কস। ব্যাপার না! সবাই-ই জেনেশুনে বিষপান করে।
# প্রশ্নটি ভালভাবে দেখলে খেয়াল করবেন, আপনার অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড যা-ই হোক না কেন, আপনি কোনও বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন না। চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন এরকমই হওয়া উচিত।
# এখন থেকে সবসময় পরীক্ষা এই স্টাইলেই হলে প্রশ্নব্যাংক, ডাইজেস্ট, জব সল্যুশন, কোচিং সেন্টারের রাজত্ব কমে যাবে কিংবা ওদেরকে সেবাদানের ধরন বদলাতে হবে। যে যা বলে তা-ই অন্ধভাবে বেদবাক্য হিসেবে বিশ্বাস করার দিন শেষ। আমরা চাই, শুধু মুখস্থবিদ্যার জোরে কেউ আমলাতন্ত্রে না আসুক।
কালকে থেকে শুরু করে আজকে পর্যন্ত অসংখ্য প্রশ্ন পেয়েছি। একটু ইজি কাজে বিজি ছিলাম, তাই ঠিকসময়ে উত্তর দিতে পারিনি। প্রশ্নগুলোর উত্তর উপরে দেয়ার চেষ্টা করেছি। এরপরও কোনও প্রশ্ন থাকলে জিজ্ঞেস করুন। আমি উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।
“৩৫তম বিসিএস প্রিলির কাট-অফ মার্কস কত হতে পারে?” মিলিয়ন ডলার কোয়েশ্চেন!!
সত্যি বলছি, আমি পরীক্ষা দিলে আমি নিজেও আদৌ পাস করব কিনা এটা নিয়ে চিন্তায় থাকতাম। প্রশ্ন দেখার পর আমার মনে হয়েছে, “আহা! যায় দিন ভাল, আসে দিন খারাপ। বড্ড বাঁচা বেঁচে গেছি!” তাই আপনি ভাবতেই পারেন, “হায়! আমার কী হবে!” আচ্ছা, একটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখেছেন? আপনার যে কাহিনী, সবারই কিন্তু কমবেশি একই কাহিনী। এর মানে কী দাঁড়ায়? আপনি কম মার্কস পেলে বেশিরভাগ স্টুডেন্টও কম মার্কস পাবে। ‘দশে মিলি করি ফেল’ হলে তো আর সমস্যা নাই, তাই না? মিলেমিশে ফেল করবেন, অসুবিধা কী? তাহলে কি পিএসসি সবাইকেই ধরে ধরে ফেল করাবে? এটা তো আর সম্ভব না। তাই, আপনার রিটেন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারার সম্ভাবনা একেবারে শুন্য না। আমি যদি এবারের ক্যান্ডিডেট হতাম, তবে আমি এটা কিছুতেই ভাবতে পারতাম না যে এবারের প্রিলির কাট-অফ মার্কস ৯৫’য়ের বেশি হবে, আমার নিজের পরীক্ষা যেমনই হোক না কেন!
গুড লাক ফ্রেন্ডস!!