শৈব কালী: চুরানব্বই



ভৈরবের দুই প্রধান দিক আছে—স্থিতি ও গতি, বা নীরবতা ও নাদ। তাঁর স্থিত রূপে তিনি নিঃশব্দ, অচল, সর্বব্যাপী; তাঁর গতিময় রূপে তিনি নাদময়, প্রাণময়, জাগতিক সৃষ্টির উৎস। তাই শৈবতত্ত্বে বলা হয়—“স্বয়ং ভৈরবই কাল”—অর্থাৎ সময় স্বয়ং ভৈরব, কারণ তাঁরই চেতনার স্পন্দনে কাল বা অনুক্রমের জন্ম হয়।

তাঁর প্রকৃতি হলো “নাদ ও প্রাণ”—ধ্বনি ও শক্তির মিলন। এই নাদই মহাশব্দ, আদিস্পন্দ, যেখান থেকে ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি ধ্বনি ও গতি উৎসারিত। প্রাণ হলো সেই নাদের শক্তি—যা জগতে প্রাণসঞ্চার করে।

কিন্তু এই ভৈরব-নীতি যত গতিশীল, তার তত গভীরে একটি নীরব কেন্দ্র আছে—সেই নীরবতাই কালী। যখন ভৈরবের সমস্ত নাদ ও প্রাণ, অর্থাৎ সমস্ত ধ্বনি ও জীবনীশক্তি কালী-র মধ্যে শোষিত হয়, তখন প্রকাশিত হয় অপ্রাণভূমি—অচল, অকাল, নিঃশব্দ চেতনার ভূমি, যেখানে ভৈরব নিজেই নিজের উৎসে বিলীন হয়ে যান। এই অবস্থায় কালী আর “অন্য” নন; তিনিই ভৈরবের অন্তরস্থ স্বরূপ, তাঁর আত্ম-প্রকাশের নীরব ভিত্তি। তাই তাঁকে বলা হয় “ভৈরবী”—ভৈরবের অন্তরশক্তি, আর কখনো “ভৈরবগ্রাসকারিণী”—যিনি ভৈরবের ক্রিয়া ও গতি নিজেই লীনে আনেন।

ভৈরবের এই দ্বৈত রূপ—স্থিত ও গতিময়—দর্শনের সমস্ত “চেতনা-বিশ্ব” সম্পর্কের মূল সূত্র। শৈব তত্ত্বে সৃষ্টি কখনও কোনো বাহ্যিক ঈশ্বরের কর্মকাণ্ড নয়; এটি ভৈরবের নিজেরই স্ববিমর্শ—নিজেকে দেখার, জানার ও অনুভব করার খেলা। এই জন্য তাঁকে “চিদানন্দরূপ”, অর্থাৎ চেতনা ও আনন্দের সমবায় বলা হয়।

সাধনায়, ভৈরব মানে সেই অভ্যন্তরীণ জাগরণ, যেখানে ব্যক্তি আত্মা নিজের সীমাবদ্ধতা ভেঙে উপলব্ধি করে যে “আমি-ই সেই পরম চেতনা”—যিনি একই সঙ্গে স্থির, জাগ্রত, চঞ্চল ও শূন্য। ভৈরব তন্ত্র-এর বিখ্যাত উক্তি—“ভৈরবো’হম্‌”—“আমি ভৈরব।”

এই বোধই মুক্তি, কারণ এখানে আর কোনো বিভাজন থাকে না—জীব ও ঈশ্বর, গতি ও স্থিতি, সময় ও কালাতীত—সব একাকার।

ভৈরব হলেন সেই পরম চেতনা, যিনি নিজেই সৃষ্টি, নিজেই সংহার, নিজেই শব্দ ও নীরবতা। তাঁর মধ্যে সমস্ত ভয় লীন হয়ে যায়, কারণ তিনিই ভয়ের মূল অজ্ঞতাকে গ্রাস করেন। তাঁর নাদময় রূপে তিনি জীবন; তাঁর নীরব রূপে তিনি কালী। ভৈরব তাই শুধুই দেবতা নন, বরং চেতনার এক মহাবিম্ব—যেখানে জগৎ, মন, ধ্বনি, প্রাণ—সব এক অনন্ত, জাগ্রত, মুক্ত চৈতন্যে বিলীন।

কাল ও কালী-র সম্পর্ক বোঝার জন্য তাঁদের কার্যকারিতাকে দুই স্তরে দেখা যায়—একটি হলো অভিজ্ঞতামূলক স্তর (phenomenal), আর অন্যটি অধি-অভিজ্ঞতামূলক স্তর (transcendental)। এই দুটি স্তর আসলে চেতনার দুটি ভিন্ন পর্যায়—একটি যেখানে চেতনা নিজেকে প্রকাশ করে ক্রমে, আর অন্যটি যেখানে সেই প্রকাশ নিজ উৎসে ফিরে গিয়ে ঐক্যে লীন হয়।

অভিজ্ঞতামূলক স্তরে কাল হলো চেতনার প্রক্ষেপণশক্তি (projective power)—যার মাধ্যমে পরম চেতনা নিজেকে বহির্মুখী করে তোলে। এই স্তরে চেতনা নিজের মধ্যে সীমা টানে, কেন্দ্র থেকে বহির্মুখী গতি সৃষ্টি করে, এবং সেই গতির ফলে উদ্ভূত হয় জগত, কার্যকারণ সম্পর্ক ও সময়ের ধারাবাহিকতা। কাল এখানে “সময়” হিসেবে অনুভূত হয়—একটি প্রবহমান অনুক্রম, যার মধ্যে একের পর এক ঘটনা ঘটে, স্মৃতি ও প্রত্যাশা গড়ে ওঠে, অভিজ্ঞতা সংগঠিত হয়।

এই স্তরে কালী সেই শক্তি, যিনি চেতনার নীরব ঐক্যকে বহির্জগতে ছড়িয়ে দেন—তিনি কালকে সক্রিয় করেন, তাঁর মধ্য দিয়ে চেতনা সৃজনের ছন্দে প্রবাহিত হয়। এই অবস্থাই “অনুলোম ক্রম” (descending order)—অর্থাৎ পরম চেতনা থেকে জগৎপ্রপঞ্চের দিকে নামা, একত্ব থেকে বহুত্বের দিকে প্রসার। এখানে কাল সময়ের প্রতীক, আর কালী সেই সময়ের অন্তর্গত গতি, প্রাণ ও সৃজনশক্তি।

“অনুলোম” শব্দটির আদি অর্থ হলো “অনুসারে” বা “প্রবাহের সঙ্গে”, অর্থাৎ যে গতি বা ক্রিয়া নিজের স্বাভাবিক দিকেই চলছে। সংস্কৃত anu মানে পরে বা অনুসরণ করা, আর loma মানে রোম বা প্রবাহের দিক। সুতরাং “অনুলোম ক্রম” বলতে বোঝায় সেই স্বাভাবিক গতি বা ক্রম, যেখানে চেতনা তার উৎস থেকে বহির্মুখী হয়ে জগৎ সৃষ্টি করে।

দর্শনের ভাষায়, অনুলোম মানে হলো চেতনার অবতরণধারা। পরম চেতনা বা শিবচৈতন্য, যা মূলত এক ও অবিভক্ত, নিজের অন্তর্গত সম্ভাবনাকে প্রকাশ করতে শুরু করে। এই প্রকাশ কোনো হঠাৎ উদ্গীরণ নয়, বরং ধাপে ধাপে, ক্রমান্বয়ে ঘটে। প্রথমে সে নিজেকে শক্তি হিসেবে অনুভব করে, তারপর স্পন্দ হিসেবে, তারপর তত্ত্বসমূহের মাধ্যমে নীতি ও উপাদানে বিভাজিত হয়, শেষে তা স্থূল জগতে—রূপ, শব্দ, ক্রিয়া ও দেহে—প্রকাশিত হয়। এই নামার, বিকাশের, বা প্রসারের প্রক্রিয়াই অনুলোম। অর্থাৎ এক থেকে বহু, কেন্দ্র থেকে পরিধি, নীরবতা থেকে শব্দ—এই ক্রমধারাই অনুলোম ক্রম।

তন্ত্র ও যোগদর্শনে এই ধারণার প্রতিফলন পাওয়া যায় শ্বাস বা প্রাণপ্রবাহের মধ্যেও। যখন শ্বাস ভেতর থেকে বাইরে যায়—অর্থাৎ প্রাণশক্তি কেন্দ্র থেকে বাহিরের দিকে প্রবাহিত হয়—তখন তাকে বলে অনুলোম। এটি চেতনার বহির্মুখতার প্রতীক, যেখানে প্রাণ বা শক্তি নিজের প্রকাশ ঘটায়। তার বিপরীত গতি, যখন শ্বাস বাইরে থেকে ভিতরে ফিরে আসে, তাকে বলে প্রতিলোম। সেই গতি চেতনার প্রত্যাবর্তন বা অন্তর্মুখতার প্রতীক। অনুলোম মানে সৃষ্টি, প্রতিলোম মানে লয়।

ক্রম দর্শনে অনুলোম ক্রমের বিশেষ তাৎপর্য আছে। এখানে বলা হয়, পরম চেতনা যখন নিজের ঐক্য থেকে জগৎপ্রপঞ্চের দিকে নামতে শুরু করে, তখন তার প্রতিটি স্তরে একটি “কালধারা” বা সময়ের প্রকাশ ঘটে। সময় মানে এখানে কেবল ঘড়ির চলন নয়; এটি চেতনার নিজের অভ্যন্তরীণ প্রসার, যার দ্বারা “আগে” ও “পরে”, “কারণ” ও “ফল”, “অন্তঃ” ও “বহিঃ”—এই পার্থক্যগুলো গড়ে ওঠে। এই প্রক্ষেপণশক্তির মাধ্যমেই চেতনা অভিজ্ঞতা লাভ করে, কারণ অনুলোম ক্রমে সে নিজের মধ্যেকার নিঃশব্দ ঐক্য থেকে বেরিয়ে বহুতে প্রসারিত হয়, আর সেই বহুতার মাধ্যমে নিজের অসীমতাকে প্রকাশ করে।

অনুলোম হলো সৃষ্টির প্রবাহ, সেই গতি, যার দ্বারা একত্ব থেকে বহুত্ব, শিব থেকে শক্তি, চেতনা থেকে বিশ্বে নেমে আসা সম্পূর্ণ হয়। আর তার বিপরীতে প্রতিলোম হলো মুক্তির প্রবাহ—যেখানে বহুত্ব আবার একে মিশে যায়, শব্দ আবার নীরবতায় লীন হয়, গতি আবার স্থিতিতে ফিরে যায়।

এই দুই ধারার মিলনেই কালী-র তত্ত্ব সম্পূর্ণ বোঝা যায়, কারণ কালীই সেই শক্তি, যিনি একদিকে অনুলোম ধারায় চেতনার প্রকাশ ঘটান, আবার অন্যদিকে প্রতিলোম ধারায় সমস্ত প্রকাশকে নিজের অন্তর্গত নীরবতায় ফিরিয়ে নেন।

কিন্তু যখন দৃষ্টি উলটো পথে ফিরে যায়—বহির্মুখ থেকে অন্তর্মুখে, জগৎ থেকে উৎসে—তখন একই কাল-নীতি সম্পূর্ণ রূপান্তরিত হয়। এই দ্বিতীয় স্তর হলো অধি-অভিজ্ঞতামূলক স্তর, যেখানে সময় আর ক্রম বা পরম্পরা নয়। এখানে চেতনা আর “আগে-পরে”, “গত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ”-এর ভেদে বিভক্ত হয় না; বরং সমস্ত মুহূর্ত, সমস্ত সম্ভাবনা একসঙ্গে উপস্থিত থাকে এক অবিভক্ত “মহা-বর্তমান”-এ। সময় এখানে কোনো স্রোত নয়, বরং এক স্থির দীপ্তি—যেখানে প্রতিটি ঘটনা নিজের পূর্ণতায় অনন্ত।

এই স্তরে কাল আর পরিমাপের একক নয়, বরং চেতনারই অসীম দীপ্তি—যা সমস্ত ক্রম, কারণ, ফল, গতি ও স্থিতি—সব কিছুকে নিজের আলোর মধ্যে ধারণ করে। কালী এই স্তরে সময়ের শক্তি হিসেবে নয়, বরং কালহীন চেতনার প্রতিমূর্তি হিসেবে প্রকাশিত হন—তিনি সেই মহাশক্তি, যিনি সময়ের ধারাকে নিজের মধ্যে গ্রাস করে তাকে চিরন্তন বর্তমান হিসেবে পুনঃপ্রকাশ করেন।

অভিজ্ঞতামূলক স্তরে কাল হলো সৃষ্টির প্রকৌশল—যার দ্বারা চেতনা নিজেকে প্রকাশ করে, আর কালী সেই প্রকাশের গতি। কিন্তু অধি-অভিজ্ঞতামূলক স্তরে, কাল ও কালী উভয়েই এক হয়ে যান চেতনার নিখাদ, কালহীন স্বরূপে—যেখানে আর কোনো গতি, কোনো সীমা, কোনো ক্রম নেই; কেবল এক অদ্বিতীয় নীরব দীপ্তি, যার মধ্যে সমস্ত সময়, সমস্ত সৃষ্টি, সমস্ত সম্ভাবনা একসঙ্গে স্থিত।

এই দুই স্তরের সমন্বয়েই প্রকাশ পায় কাল ও কালী-র পারস্পরিক পূর্ণতা। কাল বহির্মুখী, কালী অন্তর্মুখী; কাল প্রক্ষেপণ, কালী প্রত্যাহার; কাল সৃষ্টি, কালী লয়। কাল হলো বহির্মুখী সৃষ্টিশক্তির প্রতীক—যিনি চেতনার সম্ভাবনাকে প্রকাশে রূপ দেন; আর কালী সেই প্রত্যাহারশক্তি—যিনি প্রকাশিত সময় ও অভিজ্ঞতাকে পুনরায় অন্তঃচেতনার নিঃসীম কেন্দ্রে টেনে নেন।

“হে মা! এই কাল সংখ্যা দ্বারা প্রক্ষেপণ সম্পাদন করে; আর সেই উপলব্ধি হঠাৎই তিনটি উচ্চতর স্তরে ঘটে। সেই কাল প্রকৃতপক্ষে প্রভুর মধ্যে অক্রমিক, আর এই কালী হলো তার অন্তর্বলয়, তার প্রত্যাহারশক্তি।”

এখানে “কাল” ও “কালী”-র সম্পর্ককে মূলত শিব-শক্তি-তত্ত্বের দ্বৈত প্রবাহ হিসেবে দেখানো হয়েছে—যেখানে একদিকে কাল (Time) হলো পরম চেতনার বহির্মুখী গতি, আর অন্যদিকে কালী সেই গতির অন্তর্মুখী প্রত্যাহার। চিদ্গগন-চন্দ্রিকার (৪.৩৯) উক্ত অংশটি এই দুই বিপরীত প্রবাহকে একীভূত করে ব্যাখ্যা করে।

এই বচনের ভাবার্থ হচ্ছে—পরমেশ্বর বা শিবচেতনা নিজস্ব আনন্দে নিজেকে “সংখ্যা” বা “ক্রম”-এর আকারে প্রকাশ করেন। সেই ক্রম বা sequence-ই হলো কাল। কাল মানে শুধু সময় নয়, বরং চেতনার পরিমাপ-ক্ষমতা—যা ‘আগে-পরে’, ‘পূর্ব-পর’, ‘কারণ-কার্য’ ইত্যাদি ধারণা সৃষ্টি করে। এই প্রক্ষেপণই বিশ্ব-সৃষ্টির ধারা, যেখানে অনন্ত চেতনা সীমা ও রূপ ধারণ করে, অর্থাৎ অনন্তের মধ্যে সীমার বীজ স্থাপন হয়।

কিন্তু সেই একই চেতনা যখন নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়—অর্থাৎ সীমার বোধকে বিলুপ্ত করে অনন্তের স্বরূপে ফিরে যায়—তখন সেই প্রত্যাহারশক্তিই কালী নামে প্রকাশিত হয়। কালী এখানে কোনো পৃথক দেবী নন, বরং চেতনার অন্তর্বলয় বা inward curve, যিনি কাল-প্রক্ষেপিত সব ক্রম, সংখ্যা ও বিভাজনকে আবার নিজের মধ্যে টেনে নেন।

অর্থাৎ, কাল ও কালী একে অপরের অবিচ্ছেদ্য দিক—কাল হলো সৃষ্টি-ধারা, কালী হলো লয়-ধারা। কাল ব্যতিরেকে কালী প্রকাশিত হন না, আর কালী ব্যতিরেকে কাল স্থিত থাকতে পারে না। তন্ত্রদৃষ্টিতে, এটি শিবের পঞ্চকৃত্যের (সৃষ্টি-স্থিতি-সংহার-তিরোধান-অনুগ্রহ) তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের প্রতীক।

এইভাবেই চিদ্গগন-চন্দ্রিকা শ্লোকটি বলে—“কাল প্রক্ষেপণ করে”, অর্থাৎ বহির্মুখীভাবে মাপ ও ক্রম সৃষ্টি করে, কিন্তু সেই উপলব্ধি “তিনটি উচ্চতর স্তরে ঘটে”—যা ইঙ্গিত করছে, এই প্রক্ষেপণ কেবল বাহ্যিক নয়; এর মধ্যে সূক্ষ্ম, অতিসূক্ষ্ম ও পরম স্তরের অভিজ্ঞতা বিদ্যমান। শেষে বলা হয়েছে—“কাল অক্রমিক”—অর্থাৎ, ঈশ্বরের মধ্যে সময়ের কোনো ধারা নেই; তিনি অনন্ত বর্তমান। কালী সেই অনন্ত বর্তমানের কেন্দ্রীয় শক্তি, যিনি সময়ের সমস্ত মাপ-ক্রমকে বিলুপ্ত করে চেতনার অকাল, অনাদি, অদ্বৈত স্বরূপে ফিরিয়ে দেন।

ফলে এই উক্তির গভীর তাৎপর্য হচ্ছে—বিশ্ব সৃষ্টি ও বিলয় আসলে একই চেতনার দুই স্পন্দন, একদিকে প্রসারণ (কাল), অন্যদিকে প্রত্যাহার (কালী)। এরা বিপরীত নয়, বরং একেই চেতনার শ্বাস-প্রশ্বাস, যেখানে “কাল” নিঃশ্বাসের মতো সৃষ্টি-প্রসার ঘটায়, আর “কালী” প্রশ্বাসের মতো সবকিছু নিজের নিস্তব্ধ অন্তরে টেনে নেয়।

কাল ও কালী কোনো দুটি ভিন্ন সত্তা নয়; তারা এক পরম চেতনার দ্বৈত নাড়ি, দুটি বিপরীতগামী প্রবাহ—একটি বাহিরের দিকে, একটি অন্তরের দিকে। এই দ্বন্দ্বাত্মক সমন্বয়েই ভৈরবচেতনা পূর্ণতা পায়—যেখানে সৃষ্টির প্রতিটি গতি এক অন্তর্লীন নীরবতায় মিশে যায়, আর নীরবতার প্রতিটি বিন্দুতে স্পন্দিত হয় সৃষ্টির অশেষ সম্ভাবনা। কালী সেই পরম স্পন্দনের কেন্দ্র, আর কাল তার তরঙ্গ; কালী নীরবতা, কাল তার ধ্বনি। একে অপরের মধ্যে মিশে, তারা উদ্‌ঘোষ বা ঘোষণা করে এক চিরন্তন সত্য—চেতনা এক, তবে নিজেকে দ্বন্দ্বের নৃত্যে প্রকাশ করেই সে নিজের ঐক্যকে অনুভব করে।