আমি কিছু জিনিস মেনে চলার চেষ্টা করি। সেগুলির মধ্যে এই লেখাটি লেখার সময় মাথায় এসেছে, এমন কিছু-কিছু শেয়ার করছি:
এক। প্রতিদিন ঘুমান গড়ে সর্বোচ্চ ৬ ঘণ্টা। বেশি সময় নয়, ভালভাবে ঘুমানোই বড় কথা। ঘুমানোর সময় অবশ্যই মোবাইল সাইলেন্ট করে আর ল্যাপটপ দূরে রেখে ঘুমাবেন।
দুই। মোবাইলের ড্রাফ্টসে কিংবা একটা নোটবুকে আপনার মাথায় বিভিন্ন মুহূর্তে যে ভাল-ভাল কথা কিংবা চিন্তাভাবনা আসে, সেগুলি লিখে রাখবেন। সাধারণত খুব সুন্দর চিন্তাগুলি মাথায় দুইবার আসে না।
তিন। প্রতিদিন ৩০ মিনিট নিয়ম করে কোনও একটা মোটিভেশনাল বই পড়ুন কিংবা লেকচার শুনুন। এ সময় নিজের ইগোকে দূরে রাখবেন।
চার। কোনও সময় মন যদি খুব অশান্ত হয়ে যায়, এবং কিছুতেই সেটাকে শান্ত করা না যায়, তবে ১০ মিনিট হাঁটুন আর হাঁটার সময় নিজের পদক্ষেপ গুনুন। আরেকটা কাজ করতে পারেন। সেটি হল, মাথা থেকে সমস্ত চিন্তা বের করে দিয়ে মাথাটাকে সম্পূর্ণ ফাঁকা করে দিয়ে চুপ করে ১০ মিনিট আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা। বিবেকানন্দের পত্রাবলী কিংবা রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্র পড়তে পারেন, রবীন্দ্রসংগীত, কিংবা সফট মেলোডির ইন্সট্রুমেন্টাল শুনতে পারেন। মন শান্ত হয়ে যাবে।
পাঁচ। প্রতিদিন সকালে উঠে সেদিন কী কী কাজ করবেন, তা একটা কাগজে ১০ মিনিটে লিখে ফেলুন। কাগজটি সাথে রাখুন। আগের দিনের চাইতে অন্তত একটি হলেও বেশি কাজ করার কথা লিখবেন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মিলিয়ে নিন, সবগুলি করতে পেরেছেন কি না।
ছয়। স্টুপিডদের সঙ্গ এড়িয়ে চলুন কিংবা আপনার আশেপাশের লোকজনকে ভাল কিছু করার উৎসাহ দিন। আপনার আশেপাশের বন্ধুদের কাজ করার ধরন এবং সফল হওয়ার অভ্যেস আপনাকে প্রভাবিত করতে পারে। আপনার স্বামী যত স্টুপিড হবে, আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্টুপিড হওয়ার সম্ভাবনা তত বেড়ে যাবে। স্টুপিড স্ত্রী অপেক্ষা স্টুপিড স্বামী পরিবারের জন্য বেশি বিপদজনক। আমি ছোটবেলা থেকে বাবাকে দেখেছি, বাবা যতক্ষণ কাজে থাকেন, ততক্ষণই খুশিমনে থাকেন। তখন থেকে আমার মধ্যে এই ধারণা হয়ে যায়, কাজের মধ্যে থাকলে খুশি থাকা যায়। আপনার ফ্যামিলি থেকে যা শিখেছেন, সেটা থেকে বেরিয়ে আসা সহজ নয়। তাই আপনি এমন কিছু আপনার ফ্যামিলিতে করবেন না, যেটা আপনার পরবর্তী প্রজন্মকে ওভাবে করেই ভাবতে শেখাবে।
সাত। যে কাজটা করা দরকার, সে কাজে জেদি হওয়ার চেষ্টা করুন। কাজটার শেষ দেখে তবেই ছাড়ুন।
আট। যিনি আপনাকে তার জীবনে অপরিহার্য মনে করেন না, তাকে আপনার জীবনে অপরিহার্য মনে করার বাজে অভ্যেস থেকে সরে আসুন। যে মানুষটা আপনাকে ছাড়াই সুস্থভাবে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন, তার জন্যে দম আটকে মরে যাওয়ার তো কোন মানে হয় না। আপনি যত বেশি তার জন্য ফিল করবেন, তিনি তত বেশি এক ধরনের অসুস্থ জয়ের আনন্দ উপভোগ করবেন। ভুল মানুষকে ভুলে থাকতে জানাটা মস্ত বড় একটা আর্ট। আপনি কত সময় ধরে তার সাথে ছিলেন, সেটা বড় কথা নয়; বরং এখন এবং সামনের সময়টাতে কত বেশি তাকে জীবন থেকে ডিলিট করে থাকতে পারবেন, সেটাই বড় কথা।
নয়। খুব দ্রুত পড়ার অভ্যাস করুন। পড়ার সময় কীভাবে অপ্রয়োজনীয় অংশগুলিতে চোখ বুলিয়ে যেতে হয়, সেটা শিখুন। প্রয়োজনীয় অংশগুলি দাগিয়ে-দাগিয়ে বারবার পড়ুন এবং মাথায় সেগুলির একটা ফটোকপি রেখে দিন। এতে আপনার পড়ার কাজটা করার সময় কমে যাবে। বেঁচে-যাওয়া সময়ে আপনি বাড়তি কাজ করতে পারবেন খুব সহজেই।
দশ। আপনার বর্তমান অবস্থার দিকে তাকান। দেখবেন, কিছু-কিছু বিষয়ে স্রষ্টার অনুগ্রহে আপনি অনেক বিপদ কিংবা দুর্ভাগ্য থেকে বেঁচে গেছেন এবং ভাল আছেন। প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে শুকরিয়া আদায় না করে ঘুমাবেন না। কৃতজ্ঞতাবোধ সম্মান, মানসিক শক্তি এবং শান্তি এনে দেয়।
এগারো। দ্য সিক্রেট, আউটলায়ারস, দ্য সেভেন হ্যাবিটস অব হাইলি এফেক্টিভ পিপল, দ্য পাওয়ার অব নাউ, দ্য মঙ্ক হু সোল্ড হিজ ফেরারি, ইউ ক্যান উইন সহ বিভিন্ন মোটিভেশনাল বইপত্র পড়ুন। গ্রেটম্যানদের বায়োগ্রাফি বেশি-বেশি পড়ুন। দ্য প্রফেট, গীতবিতান এবং বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ অনুভব করে-করে পড়ুন। এসব বই পড়ার সময় অবশ্যই বিশ্বাস করে পড়তে হবে। যদি আপনি পৃথিবীতে সবকিছুই যুক্তি দিয়ে বিচার করেন, তবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটা আপনার জন্য কঠিন হতে পারে। তবে বইগুলিতে যা যা আছে, সেগুলির মধ্য থেকে আপনার দরকারি জিনিসগুলিকেই গ্রহণ করুন।
বারো। মাসে অন্তত দুইদিন রোযা রাখুন/উপবাস পালন করুন। এটা মানসিক শক্তি বাড়ায়, সহনশীল এবং বিনীত হতে শেখায়।
তেরো। ব্যাগে অন্তত একটি ভাল বই রাখুন আর সুযোগ পেলেই পড়ুন। মোবাইলেও পিডিএফ আকারে বই রাখতে পারেন।
চৌদ্দ। প্রতিদিন অন্তত একজন ব্যক্তিকে সাহায্য করুন কিংবা ক্ষমা করে দিন। এতে আপনার নিজের প্রতি সম্মানবোধ বাড়বে। নিজেকে সম্মান করুন সবচাইতে বেশি।
পনেরো। সপ্তাহে একদিন বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভোর হওয়া দেখুন। এটি আপনার ভাবনাকে সুন্দর করতে সাহায্য করবে।
ষোলো। একটা সহজ বুদ্ধি দিই: অন্য মানুষকে সম্মান করে না, এমন লোকের সঙ্গ অবশ্যই এড়িয়ে চলুন। উদ্ধত লোকের কাছ থেকে তেমন কিছুই শেখার নেই।
সতেরো। নিজের চারিদিকে একটা দেয়াল তৈরি করে রাখুন। সে দেয়াল-ঘেরা ঘরে আপনি নিজের মতো করে নিজের কাজগুলি করার জন্য প্রচুর সময় দিন। এতে আপনি অন্যদের চাইতে একই সময়ে বেশি কাজ করতে পারবেন। সবাইকেই সময় দিলে আপনি নিজের কাজগুলি ঠিকমতো করতে পারবেন না।
আঠারো। প্রতিদিন একটা ভাল বইয়ের অন্তত ৩০ পৃষ্ঠা না পড়ে ঘুমাতে যাবেন না। ফেসবুকিং করার সময় বাঁচিয়ে বই পড়ুন। বই পড়ে, এমন লোকের সাথে মিশুন। যে ছেলে কিংবা মেয়ে বই পড়ে না, তার সাথে প্রেম করার কিছু নেই। আর যদি ভালোবেসেই ফেলেন, তবে তাকে বইপড়া শেখান।
উনিশ। আপনার চাইতে কম মেধা আর বুদ্ধিসম্পন্ন লোকজনের সাথে সময় কম কাটান। তবে কখনওই তাদেরকে আঘাত করে কোনও কথা বলবেন না। একজন জ্ঞানী ব্যক্তির সাথে ২০ মিনিট কথা বলা ২০টা বই পড়ার সমান। ভুল লোকের সাথে সময় কাটানোর চাইতে একা-একা থাকা অনেক ভাল।
বিশ। প্রতিদিন আপনি যতটুকু কাজ করতে পারেন, তার চাইতে কিছু বাড়তি কাজ করুন। বাড়তি কাজটি ঠিকভাবে করতে পারলে নিজেকে কিছু-কিছু উপহার কিনে দিন, কিংবা করতে ভাল লাগে, এমন কোনও কাজ করুন।
একুশ। সপ্তাহে একদিন ঘড়ি এবং মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে একেবারে নিজের মতো করে সময় কাটান। সেদিন বাইরের পুরো দুনিয়া থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলুন এবং যা যা করতে ভাল লাগে কিন্তু ব্যস্ততার কারণে করা হয় না, সেসব কাজ করতে থাকুন।
বাইশ। মাথায় যদি কোন উল্টাপাল্টা কিংবা নেতিবাচক চিন্তা আসে, তবে সেটিকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করবেন না; বরং আপনি নিজে সেটি থেকে বেরিয়ে আসুন।
তেইশ। আপনার মোবাইল ফোনটা আপনার জন্য কেনা, অন্যের জন্য নয়। মাঝে-মাঝে বেছে-বেছে কল রিসিভ করুন। সাধারণত আমাদের বেশিরভাগ কলই গুরুত্বপূর্ণ হয় না, আর সময়ও নষ্ট করে। যে কলটি আপনার মন কিংবা মেজাজ খারাপ করে দেবে বলে আপনি আগে থেকেই জানেন কিংবা বুঝতে পারেন, অপরিহার্য না হলে সেটি রিসিভ করবেন না।
চব্বিশ। আপনি সম্মান করেন কিংবা পছন্দ করেন, এমন কোনও ব্যক্তির ১০টি ভাল গুণ কাগজে লিখে ফেলুন। এরপর আপনি বিশ্বাস করুন যে, সে গুণগুলি আপনার মধ্যেও আছে এবং যতই কষ্ট হোক না কেন, সে গুণগুলির চর্চা করতে থাকুন। উনি যেরকম, সেরকম হওয়ার অভিনয় করুন। উনি যেভাবে করে কাজ করেন, একই স্টাইলে কাজ করুন। এ কাজটি ২ সপ্তাহ করে দেখুন, নিজের মধ্যে একটা পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
পঁচিশ। মাঝে-মাঝে সফট মেলোডির ওরিয়েন্টাল কিংবা ওয়েস্টার্ন ইন্সট্রুমেন্টাল শুনুন; হেডফোনে কিংবা একা রুমে বসে। কিছু ভাল মুভি দেখুন। কিছু মাস্টারপিস পেইন্টিং দেখুন। এবং একটা কাগজে একটা ভাল মিউজিক শুনে কিংবা মুভি আর পেইন্টিং দেখে আপনার কী অনুভূতি হল, লিখে ফেলুন। এটা ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।
ছাব্বিশ। অন্যরা করার আগেই নিজেই নিজের বাজে দিকগুলি নিয়ে মাঝেমধ্যে প্রকাশ্যে ঠাট্টা করুন। এতে করে আপনার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়বে।
সাতাশ। প্রতিদিনই এমন দুটি কাজ করুন, যেগুলি আপনি করতে পছন্দ করেন না। করার সময় বিরক্ত লাগলেও থেমে যাবেন না। যেমন, এমন একটি বই পড়তে শুরু করুন, যেটি আপনার পড়া উচিত কিন্তু পড়তে ইচ্ছা করে না। কিংবা এমন একজনকে ফোন করুন যাকে ফোন করা দরকার কিন্তু করা হয়ে ওঠে না। কিংবা বাসার কমোডটি পরিষ্কার করে ফেলুন। এতে করে আপনার দ্রুত কাজ করার ক্ষমতা বাড়বে। যে কাজটি করতে গিয়ে অন্যরা ৩০ সেকেন্ডেই বিরক্ত হয়ে ছেড়ে দেয়ার চিন্তা করে, সেটি যদি আপনি অন্তত ২২ মিনিট ঝিম ধরে পারেন, তবে আপনি অন্যদের চাইতে নিশ্চিতভাবে এগিয়ে থাকবেন।
আটাশ। আপনি যেমন হতে চান, তেমন লোকের সাথে বেশি বেশি মিশুন। খেতে পছন্দ করে, এমন লোকের সাথে মিশে আপনি ওজন কমাতে পারবেন না।
উনত্রিশ। দিনে একবার টানা ৩০ মিনিটের জন্য মৌন থাকুন। ওইসময়ে কারওর সাথেই কোন কথা বলবেন না। খুব ভাল হয় যদি চোখ বন্ধ করে পুরনো কোনও সাফল্যের কিংবা সুখের কোন স্মৃতির রোমন্থন করতে পারেন। এটা মানসিক শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
ত্রিশ। প্রায়ই ভাবুন, আপনি এই মুহূর্তেই মারা গেলে আপনার পরিবারের বাইরে আর কে কে আপনার জন্য কাঁদবে। ওরকম লোকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কী কী করা যায়, ভাবুন এবং করুন।
একত্রিশ। আপনার হাতে মাত্র দুটো অপশন: হয় রাতে দেরিতে ঘুমাতে যান, অথবা সকালে ভোর হওয়ার আগে উঠুন। যদি রাতে সত্যিই একা থাকতে না পারেন, তবে সেকেন্ড অপশনটাই বেটার, কারণ বেশিরভাগ লোকই রাতে জাগে আর গল্প করে সময় নষ্ট করে। ভোরের আগে উঠতে পারলে, আপনাকে বিরক্ত করার কেউ থাকবে না, তাই আপনি পড়াশোনা করা ছাড়া আর তেমন কোনও কাজই পাবেন না।
বত্রিশ। আমরা যা-ই করি না কেন, সেটা যদি খুব উল্লেখযোগ্য কিছু হয়, তবে সেটা নিশ্চয়ই অন্তত ১০ বছরের ১০ হাজার ঘণ্টার পরিশ্রমের ফলাফল। পৃথিবীতে কেউই রাতারাতি কিছু করতে পারে না।
তেত্রিশ। কোনও একটা কাজ করতে হুট করেই পরিশ্রম করা শুরু করে দেবেন না। আগে বুঝে নিন, আপনাকে কী করতে হবে, কী করতে হবে না। এরপর পরিশ্রম নয়, সত্যিই কঠোর পরিশ্রম করুন।
চৌত্রিশ। পৃথিবীতে কেউই জিরো থেকে রাতারাতি হিরো হয় না। আপনাকে ঠিক করতে হবে, আপনি কোন ব্যাপারটাতে হিরো হতে চাচ্ছেন। আপনি যে বিষয়টাতে আগ্রহ বোধ করেন না, কিংবা যেটাতে আপনি গুরুত্ব দেন না, সেটাতে সময় দেয়া মানে, স্রেফ সময় নষ্ট করা। আপনি যেটাতে সময় দিচ্ছেন, সেটাই একদিন আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে চেনাবে। সে কাজটিতে আপনার সবটুকু পরিশ্রম, আন্তরিকতা আর সময় ঢেলে দিন।
পঁয়ত্রিশ। বুদ্ধিমত্তা আর অর্জনের মধ্যে সম্পর্ক খুব ভাল নয়। যার যত বেশি বুদ্ধি, সে তত বেশি এগিয়ে, এরকমটা সবসময় নাও হতে পারে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচাইতে ভাল রেজাল্ট-করা স্টুডেন্টদের শতকরা মাত্র ২০ ভাগ গ্রেটদের তালিকায় নাম লেখাতে পারে। বাকি ৮০ ভাগ আসে তাদের মধ্য থেকে যাদেরকে নিয়ে কেউ কোনওদিন স্বপ্ন দেখেনি। তাই শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও নিজের সাথে লড়াই করে যান।
হ্যাপি লিভিং!!