যে-জাদু সত্যি




একদিন, একটা অর্গানিক ফুডশপের চেকআউট লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল ছোট্ট একটি মেয়ে—বয়স তিন কি চার। পাশে দু-জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি কথা বলছিলেন, সম্ভবত মা আর তাঁর কোনো বন্ধু।

মেয়েটি মাঝেমধ্যে হাত নেড়ে অর্ধবৃত্ত আঁকছিল। কয়েক সেকেন্ড থেমে লোকজনের দিকে তাকাচ্ছিল, আবার হাত নেড়ে দিচ্ছিল। বাইরে থেকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন সে কোনো অদৃশ্য খেলার মধ্যে আছে।

আসল রহস্যটা স্পষ্ট হলো কিছুক্ষণ পর। স্বয়ংক্রিয় দরজা যখন মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে খুলে যাচ্ছিল, মেয়েটির কাচ্ছে মনে হচ্ছিল, সে হাত নেড়েই দরজা খুলছে। তার কাছে হাতটাই ছিল এক জাদুর ছড়ি। মেয়েটি খুব হাসছিল।

যখন বের হবার সময় এল, ইচ্ছাকৃতভাবে, স্বয়ংক্রিয় দরজাটি না খোলার মতো দূরত্বে থেমে ওরা দাঁড়াল। মায়ের দিকে মেয়েটি তাকাতেই মা ওকে দরজার দিকে ইঙ্গিত করলেন। সে তৎক্ষণাৎ হাত নাড়িয়ে “জাদুর ছড়ি” চালাল, আর দরজা খুলে গেল।

দরজা পার হয়ে মেয়ে ফিরে তাকাল রাজকীয় ভঙ্গিতে, যেন এক গর্বিত সম্রাজ্ঞী। মা আর তাঁর বন্ধুটি কৃতজ্ঞতার সাথে মাথা ঝোঁকালেন। মেয়েটি খুব খুশি হয়ে উঠল।

একটি ক্ষুদ্র ঘটনার মধ্যেই প্রকাশ পেল—জীবনের জাদু আসলে বিস্ময়ের চোখে দেখার ভেতরেই—শিশুর মতো বিশ্বাসে, যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত অবাক করে, প্রতিটি দৃশ্য অনির্বচনীয় আনন্দে ভরে তোলে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই জাদু হারিয়ে গেল কোথায়? কেন বড়ো হতে হতে জীবনের সেই বিস্ময় হারিয়ে গেল?

শৈশবের জাদু-কাল থেকে টেনে নামিয়ে আমাদেরকে বসানো হলো বিদ্যালয়ের বেঞ্চে, পরে কর্মজীবনের চৌকো কক্ষে। “চুপ করে বসো।” “মনোযোগ দাও।” “এটা বোকামি।” "ওটা কোরো না।" ইত্যাদি ইত্যাদি।

এভাবেই হারিয়ে গেল সহজাত বিস্ময়; তার জায়গা নিল কৃত্রিম নানান খেলা—হ্যাট থেকে খরগোশ বের করা, কাঠের বাক্সে মেয়ে দ্বিখণ্ডিত করার ভেলকি, আর সবচেয়ে বড় ভেলকি—শুধু যুক্তি আর প্রমাণকে সত্য বলে মানতে বাধ্য হওয়া।

কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—আসল জাদু কি ফেরত পাওয়া যায়? হ্যাঁ, যায়।

সেই জাদু হলো—পূর্ণ আত্মাকে পুনরাবিষ্কার করা, সেই সহজাত আলোকপ্রাপ্ত সত্তাকে জাগানো, যাকে জন্মগতভাবেই সব মানুষ ধারণ করে।

ধ্যানই হলো সেই জাদুর টিকিট। এর মূল্য হলো—অন্তরের গভীর আকাঙ্ক্ষা। আকাঙ্ক্ষা আবার ফিরে যাবার—সেই আনন্দময় উদ্যানের দিকে, যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত জাদুময়, প্রতিটি শ্বাস বিস্ময়ে ভরা।

যখন অন্তরে বা বাইরে এমন এক আহ্বান শোনা যায়, যেমন ভোরের রক্তিম সূর্যোদয়ে বা অন্তরের নিস্তব্ধ কণ্ঠে, তখনই দরজাটা আবার খুলে যায়। যাত্রার ডাক শোনা যায়—Step right up…ফিরে এসো জীবনের সেই আসল জাদুতে।