মায়াবী বন্দিশালা



: এই পৃথিবীতে তুই একজন, যাকে আমি চোখ বুজে বিশ্বাস করি। যত্নে-রাখা অর্কিডগুলো নির্জীব হয়ে গেলেও আমাদের ভালোবাসা কিন্তু এখনও জীবিত; যদিও আমার অর্ন্তদৃষ্টি বলে, তুই আমাকে কখনও ভালোই বাসতে পারিসনি। দুর্বার গতিতে নিঃশব্দের বেড়াজাল ভেঙে কেবল আমি তোর চোখে ছুঁইয়ে গেছি আমার সীমাবদ্ধতা; এর বেশি কিছুই যে করতে পারিনি, তবে সম্ভব হলে করতাম!

তুই তো জানিস, এই মুহূর্তে আমার মনের খুব কাছাকাছি তোকে রাখাটাও আমার জন্য ভীষণ পীড়াদায়ক; তবু আমি ঠাঁই খুঁজে বেড়াই তোর ঠোঁটে। এই একচিলতে অদ্ভুত অনুভূতির রেশ অসামান্য, যে-মোহের নজর এড়িয়ে যাবার পথ খুঁজতে চাইনি।

: তুই ভীষণ গভীর অনুভবে কথা বলতে শিখেছিস! এমনটাই আমি চেয়েছিলাম। তুই কি জানিস, আমি বরাবরই তোর ভেতরটা জুড়ে নিজেকেই দেখতে পাই।

: নিশ্চয়ই জানি। এই যে অভিশপ্ত গোরস্থানটা দেখছিস, এই মৃত সত্তা খুঁড়তে পোকামাকড়ের উন্মত্ততা, এই ক্ষতের ভিড়জুড়ে কী দেখতে পাস?

: কোলাহল থমকে নিস্তব্ধতার আড়ালে জমা ক্ষোভে ওদের আর্তনাদ। গা শিউরে উঠল হঠাৎই, যখন শুনতে পেয়েছি, ওরা তোকে ডাকছে!

: শুনছিস! ওরা আবারও ফিরতে চায় ভালোবাসার আত্মাহুতিতে! আচ্ছা মৃন্ময়, তোর কখনও মনে হয় না, আমার ভালোবাসা প্রকাশের এই ভঙ্গিমাটা ভীষণ ভূতুড়ে? আমি রোজ তোকে এই নির্জন পথে কেন ডেকে আনি? পথ যত গভীর হয়, তোর অস্থিরতা আরও বেড়ে চলে বহুগুণে। ঠিক তখনই শান্তির স্পর্শ পেতে ব্যাকুল হয়ে ওঠে আমার এ পরিত্যক্ত হৃদয়।

প্রিয় মৃন্ময়, তুই আমার আত্মার অংশ হয়েও আমার থেকে এককোটি আলোকবর্ষ দূরে নিজেকে সরিয়ে রাখতে সক্ষম। তবে যখন আমরা এই পথে হাঁটতে থাকি, কেবল তখনই আমাদের মাঝে বিন্দুমাত্র ব্যবধান থাকে না, আত্মশুদ্ধি পরিলক্ষিত হয়। তোর হাত স্পর্শ করলেই পালানোর সব পথ বন্ধ হয়ে যায়।

: একটু দূরে মুক্ত বিহঙ্গের ডানায় আলোকছটা দেখতে পাচ্ছিস?

: আমি চোখে দেখতে পাচ্ছি না কিছুই, মৃন্ময়! এমনটা তো হবার কথা নয়!