অন্ধকার ছিঁড়ে খুঁড়ে চারিদিক নরম হয়ে ভোর আসে। আকাশ ফুঁড়ে রঙের পালক ছিটকে ছিটকে ভোর আসে। বয়েসি কাকের কর্কশ কণ্ঠে মৃদুহাওয়া ভেদ করে করে ভোর আসে। উড়ে-যাওয়া পাখিদের বিশ্বস্ত ডানায় চেপে চেপে ভোর আসে। ঠায় দাঁড়িয়ে-থাকা গাছেদের বারো রকমের সবুজ ছুঁয়ে ছুঁয়ে ভোর আসে। ঘাসের ফাঁকে ফাঁকে গেরস্ত পোকাদের জড়াজড়ির সঙ্গী হয়ে ভোর আসে। ফিকে-হয়ে-আসা বাড়িগুলোর দেয়ালের খসে-পড়া পলেস্তারায় ভর করে করে ভোর আসে। সঙ্গমে-অতৃপ্ত নারীটির অন্তহীন প্রগাঢ় দীর্ঘশ্বাসের খয়েরি খামে খামে ঘুরেফিরে ভোর আসে। আবছা ধূসর রাস্তায় দু-চারটে সাইকেল আর রিকশার চাকায় চাকায় লেপটে থেকে ভোর আসে। নক্ষত্রফোটা পাখিদের ডাকের অষ্টব্যঞ্জনে মিশে রৌদ্রপ্রসূতি আলো ফুটে ফুটে ভোর আসে। এক অপাপবিদ্ধ কবুতরের বুকের ওমের মধ্যে লুকিয়ে থেকে থেকে এই শহরে ভোর আসে। কারও সিগারেটের ধোঁয়ায়, কারওবা চায়ের লিকারে মায়া ছড়াতে ছড়াতে ভোর আসে। স্বর্গের ঘোরানো-সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে ঝাঁ চকচকে দেবদূতেরা এক-একটি ভোর আনেন। ভোর এই শহরের মানুষকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। কেউ কেউ ঘুম ভেঙে ভোর দেখে। কেউ কেউ ঘুমাতে না-পেরে ভোর দেখে। প্রথম দলটি সুখী শহরের মুখ আঁকে। দ্বিতীয় দলটি দুঃখী শহরের চোখ ঢাকে। দুই দলই ভোরের প্রাচীন সুতোয় গাঁথা।