স্তব্ধ নীরব বালুচর---প্রাচীন। শনশন হাওয়ার রেশ---একটানা। হাজারো নক্ষত্ররাজি---ওদের ভিড়ে চিকচিক করে চন্দ্রদীপের শিখা। সাজছে অরণ্য কী এক অদ্ভুত রূপে---গহিন সে রাত্রিকন্যা পথ হারিয়ে থম মেরে থাকে! তীব্র জোছনা! তার আশীর্বাদে উদ্ভিন্নযৌবনা রাত্রি যেন---না যায় তাকানো চোখ মেলে, না যায় ফেরানো চোখ নেড়ে! বাঁধানো ঘাটে বাঁধা নৌকো---ভাঙা; নাবিক নেই, তবু যাত্রী আছে। এই যে, শুনছ? সে অকস্মাৎ ফিরে তাকায়, অমনি হেসে ফেলে...ফিক্! আচমকাতে সে হাসি স্রোতে যায় ভেসে...ওই দূরে। আমার দুচোখে তখন ঘূর্ণিবেগের প্রবল হাওয়া। এসব আমি দেখেও দেখি না ভুলেও হঠাৎ। কিন্তু কেন?...জানতে চাওয়ার সাহসই তো নেই! জানো, বড্ড ইচ্ছে করে, হঠাৎ তোমায় জাপটে ধরি, চুপটি করে বুকের কাছে মুখটা রেখে আড়চোখেতে তোমায় দেখি--- চিবুকে তোমার সমস্ত নৈঃশব্দ্য এসে মুখ থুবড়ে পড়ুক। ঠোঁট উলটে গাল ফুলিয়ে বায়না ধরি মাঝ রাত্তিরে--- আমায় তুমি কোলে নেবে?...এই শোনো না, সত্যি বলছি, আর কিছু নয়! একদিন ওই ঘাসের শিশির দেখবে ছুঁয়ে, আর সেখানটাতে হাঁটবে তুমি, তোমার গালটা ছুঁয়ে হাসব যখন, আমার কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলবে তুমি আলতো হেসে, এই…ভালোবাসি! ভালোবাসি! একটা জীবন---গল্প অনেক, পিঠও অনেক। যখন তুমি বলেই ফেলো---ভালোবাসি, মনে হতে থাকে, এ যেন শুধুই তীক্ষ্ণ উপহাস! আমার আমিকে, আমার আত্মাকে---দেখো না তুমি ভুলেও কখনও। তুমি আমার চোখ ভালোবাসো, জানি। আমি বেঁচে আছি বলেই তো ওরা জেগে আছে, তাই না, বলো? অথচ, এ দুচোখ কতটা ব্যথা আড়াল করে, তা-ই তুমি বোঝো না কখনও! এ কি উপহাস নয়, বলো? আড়ালে শুনেছি বহু বহু বার, প্রেম এসে তোমায় মাতাল করেছে কতশত বার! ষোড়শীর অমৃতঝরা হাসিতে মুগ্ধ তুমি অস্ফুট নীরবতায় নিভৃত প্রেমে রচেছিলে ভালোবাসার অমর পঙ্ক্তিমালা। বালিকার অধররসের পেয়ালা কেমন ভোলায় শুধু, সে মাতাল প্রেমে এত যে মধু, ভালো না বেসে যায় কি জানা! চোখের কায়া চৈতি দহনে পোড়ায় মায়া, তুমি যখন সামনে চলো! জলদর্শনে মরুপথিকের মেটে কি তৃষ্ণা কখনও, বলো? না হোক অমন অসীম অধীর অপার অতল, তবু পীড়িত বালুর মতোই ক্ষুধিত যৌবন যাচে তেষ্টার জল! হে আমার মাংসাশী প্রেমিক, আমায় করেছ উন্মুক্ত শ্রাবণের ঘন আঁধারে, বৃন্তে এঁকেছ চুম্বনক্ষত, করেছ দংশন পাঁজরসারিতে! পুরুষ কখনও জানতে পারে কি--- কত নিভৃত কান্না চাপা পড়ে আছে---যত হাসিখুশি সব নারীতেই! এ ঠোঁটযুগল কত বেদনায় নীল হলে পরে তোমায় নিবিড় জড়িয়ে চুম্বন করে---কখনও কি তার খোঁজ রেখেছ? পুরুষ তুমি, কত উপহাসে আমায় বাঁধো, অন্ধ সাপের মতোই অন্ধকারেও গর্ত খোঁজো! এ শরীর যেন স্বর্গসিঁড়ি, সে সিঁড়িটা মাড়িয়ে চলো ইচ্ছেমতোই---অথচ মুখেতে বলো, ভালোবাসি! তুমিই বলো, উপহাসে যার দিন কেটে যায়, রাত হলে সে ভালোটা বাসে কেমন করে? গল্পশেষে সব গল্পেরই--- হয় না যে শেষ, গল্প কিছু থাকেই এমন--- গল্পশেষেই রেশটা বরং দারুণ জমে! বৃষ্টিভেজা সে এক দিনে, মনখারাপের ঘরে, খুব ক্ষণিকের জন্য ভালোমনের অতিথি হয়ে-আসা... যেমনি সাজে প্রকৃতিটা, তেমনি করেই--- জীবনবৃষ্টি বর্ষা ঘুরে হেমন্তকালে পৌঁছে গিয়ে! এরই সাথে ঠান্ডামিঠে হাওয়া মনশরীরে কাঁপন ধরায়! আলোআঁধারির নেশা নেশা মায়া---সবই ভোলায়! আলোয় কেবলই আঁধারছায়া, মায়াভরা প্রতিটি ফোঁটায় বৃষ্টি নাচে কেমন করে--- সেইখানেতে খেলছে দেখি প্রিয় মানুষের মুখচ্ছবি! একাকী বিকেল---পুরনো। পিছলে বাতায়ন ওড়ে আকাশে স্থির দুটি চোখ, এক কাপ কফি; মোড়ানো উষ্ণ ধোঁয়ায়---তারই সাথে মৃদু আলাপন অবোধ চোখের---এই তো জীবন! জীবনআকাশ---মিথ্যে ফানুস ওড়ায়, ফাঁকিই বেশি---হৃদয় তো খুশি! সময় শেষে সময় ফেরে, তার সাথে হুঁশ। দেরি হয়ে যায়, আমার শুধুই দেরি হয়ে যায়---আজকে, সন্ধেবেলায় সূর্য খুঁজি, দুপুরবেলায় চাঁদকে। ধরো একদিন, সত্যিই যদি এঁকে ফেলি ভালোবাসা---তুলিতে নয়, হৃদয় দিয়ে--- পারবে সইতে? তোমার চোখের গভীর নদী শুকোবে না তো সেদিন হঠাৎ? খুব রাগ করে হারিয়ে বিবেক, এঁকেই সেদিন ফেলবে নাকি খুব দীর্ঘ ঘৃণার ছবি? আঁকলে এঁকো, ভয় করি না। পোড়া চোখ আর পুড়বে কীসে? সয়ে নেবে ঠিকই! আমি--- করেছিলেম ভুল... আগলে রেখে দোর, মধ্যরাতে চেয়েছিলেম--- শিশিরভেজা ভোর... শ্রান্ত মনে--- ভিজিয়ে আমার চুল।