ভাবনা: সাতশো তেতাল্লিশ ............................................................... এক। তোমার সাথে যেটুকু সময় কথা না বলে থাকি বা থাকতে হয়, আমি ধরে নিই, সেটুকু সময়ের পুরোটাই জলে চলে গেছে। ভালোবাসার মানুষের সাথে কথা কখনও ফুরায় না, কথা চলতে চলতেই আয়ুই বরং ফুরিয়ে যায়। এই যে এত এত কথা, মাঝে মাঝেই তুমি পাগল হয়ে যাও শুনতে শুনতে, আর আমাকে তোমার বড়ো একঘেয়ে লাগে, জানি সবই। তারপরও এমন করি। কার পালা আগে, আমরা কে জানি! যদি সব কথা ফুরাবার আগে কথক ফুরিয়ে যায়, তবে এই জ্বালাগুলো মিটবে কীভাবে? যদি আমি ফুরিয়েও যাই, তবু ক্ষণে ক্ষণে, থেকে থেকে আমার এই কথাগুলো তোমাকে তোমার বাকি পথটুকু চলার সময়টাতে যেন বিভোর করে রাখে, এ-ই চাই। জানি, রাখবে। আমার ভালোবাসার উপর আমার সেই আস্থাটুকু আছে বলেই বুঝতে পারি এটা। দুই। আমি আমার ভালোবাসার মানুষকেই ভালোবাসি, আমার চিন্তায়, মননে, মস্তিষ্কে সে ছাড়া আর অন্য কেউই নেই, থাকে না কখনও মনের ভুলেও। কখনও আর কেউ আসেনিও, আসেও না। আমি যাকে ভালোবাসি, তার বুকে মাথা রেখে, আবার না রেখেও সব মুহূর্তে তাকে নিয়েই চিন্তা করি। আমার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে আমার কোনও আফসোস নেই। তার ব্যাপারে একটাই মাত্র অপ্রাপ্তি এই যে, তাকে আমি কাছে পাই না, এর বাইরে আর কিছুই নেই। আমার ভালোবাসার মানুষ আমাকে বোঝে না, খুব যন্ত্রণা দেয়, অনেক বিষয় তেমন একটা কেয়ারই করে না। এর অর্থ কোনওভাবেই এ নয় যে, সেই শূন্যতা আমি অন্য কারও কাছ থেকে পূর্ণ করব। এটাই যে ভালোবাসার শান্তি! যাকে ভালোবাসি, তার দেওয়া যন্ত্রণাতেও, কেবলই তাকেই ভালোবাসি। তার অনুপস্থিতিতে, তার অবহেলা ও উদাসীনতা গিলে সেই জায়গা অন্য কাউকে দিয়ে পূরণ করে হলেও তাকে মস্তিষ্কে রেখে দিতে হবে, এটা ভালোবাসা হতে পারে না। আমার ভালোবাসার মানুষ ভালো এবং খারাপ মিলেই একজন মানুষ, সে সব দিক দিয়ে মনমতো না হলেও তার কাছ থেকে না-পাওয়াগুলো সহ্য করতে করতেই একসময় সে আমার দিকে মনোযোগ দেবে, একসময় সে নিজেই নিজেকে পরিবর্তন করতে চাইবে সেই মানুষটির জন্য, যার ভালোবাসাকে সে অবহেলা করে এসেছে। কিন্তু তার জন্য ধৈর্য থাকা চাই। আরেকটা খুব পরিচিত বিষয় হচ্ছে, আমাদের সুখে-থাকাটা শয়তানকে যন্ত্রণা দেয়, এজন্য যখনই আমরা আমাদের ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে সুখে থাকি, তখনই শয়তান আমাদের মস্তিষ্কে নানাভাবে বাজে চিন্তা ঢোকাতে থাকে যেন আমরা এটি মনে করতে বাধ্য হই যে, আমি যার সাথে আছি, তার সাথে ভালো নেই। আমার ভালোবাসার মানুষ বুঝি অন্য কেউ! তিন। আমি নিজেই অনেক অস্বাভাবিক একটা মেয়ে। আমি তোমাকে ভালোবাসি, সেটা সত্যি, কিন্তু তার থেকেও বড় সত্যিটা হচ্ছে, আমি কখনও তোমাকে স্বাভাবিক ও সুন্দর একটা সম্পর্ক দিতে পারব না। আমার কোনও কিছুই স্বাভাবিক না, আমি নিজে যেসব অস্বাভাবিক কাজ করি, আমি নিজেই সেগুলি ঠিক করে জানি না। তোমার কাছে এসেছিলাম তোমাকে ভালোবেসে; ভেবেছিলাম, ভালোবাসা সব কিছু করতে পারে, সুতরাং অনেক অনেক ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে খুশি রাখব, তোমার সবচেয়ে কাছের আর সবচেয়ে ভালোবাসার হবার লোভও ছিল। তুমি আমাকে সব কিছু দিয়েছ, দিয়ে এসেছ। কিন্তু আমি তোমাকে আর যা-ই হোক, শান্তি দিতে পারছি না, আর পারব বলে মনেও হয় না। আমার অনেক ভুল আর দোষ আছে, যেগুলো আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমি তোমার সাথে যেমন আচরণ করি, আসলে আমি তার বাইরে কিছু না। তুমি আমাকে সুখী করতে পারলেও আমি তোমাকে সুখী করতে, তোমাকে শান্তি এনে দিতে পারব না, কারণ আমি ওসব বুঝিই না। আমাকে এভাবে গ্রহণ করে চালিয়ে যাবার থেকে আমরা এখনই আলাদা হয়ে গেলে অন্তত আমাদের ভালো কিছু স্মৃতি থাকবে। তুমি তোমার মতো করে ভালো থাকো, জান। আমাকে আমার উপরে ছেড়ে দাও। তুমি আমার জন্য যা-কিছু করেছ, তার সব কিছুর জন্য সারাজীবনই আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব, একদম আমার মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। প্রতিদিনের এসব অশান্তি আমার আর ভালো লাগে না, আমাকে আমার সব ভুলের জন্য ক্ষমা করে দিয়ো। ভালো থেকো। আমাকে আর কখনও ফোন কোরো না, লক্ষ্মী। নিজের যত্ন নিয়ো। ভালো থেকো। চার। আচ্ছা, আমি দিন দিন এত কিপটা কেন হয়েছি বা হচ্ছি, বলো তো? আমার তোমাকে কাউকে দিতে ইচ্ছে করে না, কারও সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছে করে না। জান, তোমার মাথায় এভাবে টাক পড়তে থাকলে যদি মেয়েরা তোমার উপর ক্রাশ কম করে খায়, তাহলে তুমি বাকি জীবনটা টেকো হয়েই কাটিয়ে দাও। তোমার ভুঁড়ি আরও বাড়ুক, তুমি দেখতে কালো হয়ে যাও, তোমার চোখে মুখে বয়সের স্পষ্ট ছাপ পড়ে যাক। তুমি দেখতে মোটা ও কুৎসিত হয়ে যাও, তা-ও তোমার উপরে কোনও মেয়ের নজর না পড়ুক। আমি তোমাকে কাউকে নিতে দিব না না না! এই পৃথিবীতে এরকম কিপটা না হয়ে কেউ কাউকে ভালোবাসতে পেরেছে কখনও? পাঁচ। আজকে জানলাম, যাকে আমি ভালোবাসি নিজের চাইতেও বেশি, নিজের সব কিছুর ঊর্ধ্বে, সেই মানুষটাকে আমার ভালোবাসার অনুমতিটুকুই কেবল আছে, আর কোনও কিছুরই কোনও অধিকার নেই। তাকে আমি কিছু বলতে পারব না, কিছু জানতে চাইলে জেরা-করা কিংবা কৈফিয়ত-চাওয়া হয়ে যাবে, তাকে যখন খুশি ফোন করতে কিংবা তার সাথে কথা বলতে পারব না, তাকে ইচ্ছেমতো দেখতেও পারব না, কাছে চাইতে পারব না! মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, আমি কি আসলেই তোমার ভালোবাসার মানুষ, না কি একটা শোপিস? ভালোবাসার মানুষ হিসেবে সবসময় যদি, আর পাঁচটা মানুষের সাথে যেমন আচরণ তুমি করো, ঠিক সেই আচরণটা আমার সাথেও করো, তাহলে আমি তো আলাদা কেউ না তোমার কাছে। যখন অনেক অনেক ভালোবাসি, এই যে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে তোমাকে ভালোবাসতে চেষ্টা করি, কই, তখন তো কোনও কিছু বলো না, তখন তো বলো না যে এত কেন ভালোবাসি? আমি কিছু জানতে চাইতে পারব না? কেন পারব না আমি? আমার ভালোবাসার মানুষ একটা কিছু জানতে চাইলে তাকে আমি মুখের উপর বলে দেবো, তোমার এমন জেরা করায় নিজেকে আমার সস্তা সস্তা লাগে? আর তুমিই বলো, এটা কি মেনে নেওয়ার মতো কথা? আচ্ছা, 'সস্তা লাগে' মানে কী? আমি যাকে পাগলের মতো ভালোবাসি, সে আমাকে আগের মতো সময় দিচ্ছে না, কথা বলছে না আগের মতো করে, কোনও কিছুই আর আগের মতো নেই, তারপরও আমি সব শুধু চুপ করে করে সহ্য করেই যাব? কিছুই জানতে চাইতে পারব না? জানতে চাইলেই সস্তা জেরা করা হয়ে যাবে? কিন্তু কেন? একটা কথা সারাজীবন মনে রেখো। কেউ যদি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসে, তাহলে তার ভেতরে তার ভালোবাসার মানুষকে, মানে তোমাকে হারানোর বিন্দুমাত্র ভয় হলেও থাকবেই! যদি তা না থাকে, এর অর্থ হচ্ছে, তোমার কোনও কিছুর প্রতি, তোমার থাকা না থাকার প্রতি সেই মানুষটার কোনও কিছুই এসে যায় না। ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয় থেকেই সে সবসময় মানুষটাকে দেখে রাখতে চায়, নিজের কাছে কাছে রাখতে চায়, সেই চেষ্টাটুকু অন্তত করে। এই সামান্য একটা জিনিস যদি তোমার ইগোতে লাগে, তাহলে এই জীবনে আমি মরে গেলেও তোমাকে আর কিচ্ছু জিজ্ঞেস করব না কখনও, থাকো তুমি তোমার মতো, দেখিই না কত পারো! ভাবনা: সাতশো চুয়াল্লিশ ............................................................... এক। এত রাতে আপনাকে কেন মনে পড়ছে, বলতে পারেন? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আপনি কেমন আছেন? আমাকে মনে পড়ে না আর? কাকে ভেবে দিন কাটাবেন আজকে? অন্য কেউ কি এসেই গেছে আপনার ঘরে? আপনাকে অনেক ভালোবাসে, তাই না? আমার চেয়েও বেশি? দেখেছেন, বলেছিলাম না, এরকম কেউ সত্যিই আসবে, আর সে এসে আমার জায়গাটা হুট করে দখল করে ফেলবে? অবশ্য দখল না, আমি নিজেই তো দিয়ে দিয়েছি আপনি আমাকে যা যা দিয়েছিলেন, তার সবটাই। আমি ভুল করে জীবনের সবচাইতে দামি জিনিসটা আপনার কাছে চেয়ে বসেছি। কেন চেয়েছি? আসলে তখন মনেই হয়নি যে, এরকম দামি একটা জিনিস খুব কাছের কারুর কাছে চাইতে হয়। অথচ এত দূরের কারুর কাছেই কিনা চেয়ে বসেছি! আপনি কি আমাকে ক্ষমা করবেন? আমি আর চাইব না কিছুই। ওটা চাওয়ার জন্য কত কথাই না শুনেছি! আপনার মনে আছে ওসব? আমার লিখতে গিয়েও হাত কাঁপছে কেমন, দেখুন না! দুই। আমার সাথে যেদিন কথা বলবে না, সেদিন রাত ১০টার ভেতরে সেটা জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে যে তুমি আজকে কথা বলতে পারবে না। কখনও সারা দিন পাগলের মতো কারও জন্য অপেক্ষা করে দেখেছ, কেমন লাগে প্রতিটি সেকেন্ড কারও জন্য, কারও কথা শোনার জন্য, কাউকে একটু দেখার জন্য বসে থাকতে? কেমন লাগে, জানো? তুমি কল্পনাও করতে পারবে না আমি কতটা ডেস্পারেট হয়ে তোমার ফোনের অপেক্ষায় থাকি প্রতিটা দিন, প্রতিটা মুহূর্ত। তোমার উপর রাগ, ক্ষোভ, অভিযোগ নিয়ে বলছি না, পাখি। সারা দিন অপেক্ষার পর যখন তোমার সাথে কথা বলার সময় আসে, তখন যখন তুমি জানাও যে আজকে তুমি কথা বলতে পারবে না, তখন যে কী পরিমাণ কষ্ট হয়, তুমি সেটা কখনও বুঝতে পারবে না, যদি তুমি কারও জন্য এভাবে অপেক্ষা করে না থেকে থাকো। আমার কথায় কষ্ট নিয়ো না, রেগে যেয়ো না, পাখি। তোমার অসুস্থতা আমাকে ভীষণ কষ্ট দেয়। আমি তোমার কাছে থাকি না, তোমার যত্ন করার, তোমাকে আদরে আহ্লাদে রাখার সৌভাগ্য আমার হয় না। তারপর যখন দূর থেকে তোমার এমন কথা শুনি, খুব কষ্ট হয়ে যায় সেগুলো হজম করতে। আমার যদি সব কিছু বলার আগে এটা ভেবে নিতে হয়, আমি এই কথা বললে যদি তুমি অসুস্থ হয়ে পড়ো, যদি তোমার আবারও শ্বাসকষ্ট হয়...এসব ভয় বরং আমাকে তোমার থেকে দূরে সরিয়ে দেবে, যেটা আমি চাই না। আমি একটা সুস্থ সম্পর্ক চাই তোমার কাছে। যা যেমন, ঠিক তেমনই চাই। তোমার ভালো দিক, তোমার সুখের দিক, কষ্টের দিক, তোমার যন্ত্রণা, তোমার ক্ষত, তোমার অভাব, তোমার আনন্দ সব কিছুতে আমার সমান অংশ আছে, কিন্তু সেটা আমাকে প্রপারলি দিচ্ছ না। তুমি যদি আমার সাথে রাগ করে সুস্থ থাকো, আমাকে কথা শুনিয়ে সুস্থ হও, তাহলে আমি তোমার সেই সুস্থতাই চাই। আবার আমাকেও তোমার কাছে সব কিছু বলতে পারার নির্ভয় আশ্বাসটুকু দিতে হবে, আমি আমাদের দুজনের কথা তোমাকে বলব না তো আর কাকে বলব? বান্ধবীর কাছে শেয়ার করব যে আমার ভালোবাসার মানুষ এমন করছে, কেন যে করে, তা বুঝতে পারি না? তারপর ওরা আমাকে বিভিন্ন বিষয় বোঝাবে, সেগুলো আমি আবার তোমার উপরে অ্যাপ্লাই করব, এসব চাও তুমি? আমি সাধারণত আমার ব্যক্তিগত বিষয় কারও সাথে শেয়ার করি না। তোমাকে আমি যেদিন থেকে ভালোবাসি, ভালোবাসব বলে তোমার সাথে কমিটেড হয়েছি, সেদিন থেকেই তোমাকে আমি নিজের অংশ হিসেবে ধরে নিয়েছি। আমি যদি তোমাকেই কিছু না বলতে পারি, তাহলে আমার পুরো পৃথিবীতে আর কাউকেই সে কথা আমি বলতে পারব না, এমনকি আমার বাবা-মায়ের কাছেও কক্ষনো না। সেখানেই যদি আমার এত সাত-পাঁচ হিসেব করে কথা বলতে হয়, আমার খুব কষ্ট হয় অতটা মাথায় রেখে কথা বলতে। তুমি আমার জান, আমার কলিজা, আমার পুরো পৃথিবী। তুমি আমাকে যদি তোমার সাথেই মন খুলে কথা বলতে না দাও, তাহলে আমি দম আটকে মরে যাব। আমি না বাঁচলে তুমি পারবে বাঁচতে? পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য একজন ভালোবাসার মানুষই যথেষ্ট বলে আমি মনে করি। তুমি আমার সেই একটা মানুষ। আমাকে আমার সেই মানুষের কাছ থেকে আলাদা করে দিয়ো না। তুমি বরং আমাকে মারো কাটো, যা খুশি করো, সেই অধিকার তোমার আছে, তবুও আমাকে সব কিছুতে তোমার কাছে রাখো। আমি তোমার থেকে দূরে সরে থাকতে পারি না, চাই না। তিন। একজন থেকে অন্যজনের পার্থক্য কোথায়, জানো? কোন ব্যাপারটা একজন মানুষকে আরেকজন থেকে আলাদা করে? আবেগ। মানুষের ভেতরের আবেগটাই তাকে অন্যের থেকে আলাদা করে চিনতে শেখায়, আলাদা করে, আলাদা করে জানতে শেখায়। একটা মানুষকে তার আবেগ থেকে কিছুটা সময়ের জন্য আলাদা করে ভেবে দেখো তো সে কেমন, তাহলে টের পেয়ে যাবে। এই যে আমি এতটা আবেগী, এতটা পাগলামো করি, আমার বয়সি আর পাঁচটা মেয়ের দিকে তাকালে হয়তো দেখবে, আমার শতভাগের পাঁচভাগও কেউ এমন করে না। আমি জানি সে-কথা। কিন্তু এ থেকে আমাকে আলাদা করে দেখো তো আমাকে আর চিনতে পারো কি না? তুমি এই আমাকে এতটা আবেগী যে ভাবো, এজন্যই হয়তো আমার কথাগুলোকে গুরুত্ব দাও না, সে কারণেই হয়তো চাইছ, আমার ভেতর থেকে এই আবেগ, বাড়তি আবেগগুলো মরে যাক। যাবে, অত দুশ্চিন্তার কিছু নেই। একটা মানুষকে মেরে ফেলার খুব সহজ পদ্ধতি এটা---তার আবেগটা ধ্বংস করে দেওয়া। আস্তে আস্তে দেখবে, তোমার ক্রমাগত অবহেলায় আমার আবেগগুলোও নষ্ট হয়ে যাবে, ধ্বংস হয়ে যাবে। আবেগকে নষ্ট করে ফেললে প্রধান যে সমস্যা, সেটা হচ্ছে, তাকে আর নতুন করে সৃষ্টি করা যায় না, কিংবা কোনওভাবেই সেই পুরনো আবেগ ফিরিয়ে আনা যায় না। তুমি যা খুশি, তা করতেই পারো আমার আবেগগুলো নিয়ে, কিন্তু একটা কথা জেনে রেখো, যদি এগুলো কোনও কারণে মরে যায়, যদি এই আবেগগুলো, যা তোমার কাছে অতিরিক্ত কিছু মনে হয়, সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে একটা সময় যখন তুমি এর অভাবটা উপলব্ধি করবে, তখন আর চাইলেও কিংবা হাজার অশ্রু বিসর্জন দিলেও সেগুলোকে আমি আর আগের মতো করে ফিরিয়ে আনতে পারব না। তুমিও তো জানো ভালোই, কোনও কিছু সহজে নষ্ট করতে পারার ক্ষমতা আমাদের থাকলেও সৃষ্টি করবার ক্ষমতা আমাদের নেই। সুতরাং যা খুশি আমার সাথে তুমি তা-ই করতে পারো, আমি সেক্ষেত্রে তোমাকে কিছুই বলব না। কিন্তু এর মূল্যটা সবার আগে তোমাকেই দিতে হবে, শুধু এটুকুই মাথায় রেখো। এই যে আমি বেঁচে আছি এখনও, আমার এই জীবিত থাকার কি কোনও মূল্যই নেই তোমার কাছে? জীবিত মানুষের মূল্য বুঝতে তুমি কি চাইছ যে আমি মরে যাই? থাক, আর কথা বলতে চাই না। মাফ চাই! আর কক্ষনো কথা বলতে এমন পাগলামি করব না। বললাম তো অনেক কিছুই এ জীবনে তোমাকে, কিন্তু তার একটাও আজ পর্যন্ত করতে পারলাম আর কই! সারাক্ষণ শুধু বলতেই থাকি, এই করব সেই করব। থ্রেটের উপরে থ্রেট দিতে থাকি, আর তুমিও বেশ ভালোই বুঝে গেছ যে, আমার এসব থ্রেটের কানাকড়িও দাম নেই, ওসব কেবল বলা পর্যন্তই। আমি তো তোমাকে ছাড়া জীবনে কোনও দিন থাকতেই পারব না, যেখানেই যাই, ঠিক তোমার কাছেই ফিরে আসব, আসতে বাধ্য। এজন্যই আমার কোনও থ্রেটও তোমার গায়ে লাগে না। আর এখন তো তোমার এই অবহেলা এমন একটা পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে তোমার এখন আমার মেসেজ চেক করার আর রিপ্লাই করারও সময় হয় না। অনেক অনেক ব্যস্ত তুমি এখন। করার মতো আরও অনেক কাজই আছে তোমার, যেগুলি আমার চাইতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ! ভাবনা: সাতশো পঁয়তাল্লিশ ............................................................... এক। প্লিজ, তুমি সুস্থ থাকো, ভালো থাকো। তুমি অসুস্থ থাকলে আমার সব কাজ আটকে থাকে। আমার পড়াশোনা, আমার পেইন্টিং, আমার বাসার কাজ সব কিছু একদমই বন্ধ হয়ে থাকে, আমি অন্য কোনও দিকে মনোযোগ দিতে পারি না। তুমি জানো না, যে কয়দিন তুমি অসুস্থ ছিলে, কথা বলোনি আমার সাথে, সে কয়দিন আমি প্রতিদিন তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েছি। কাল তোমার সাথে কথা বলে সারারাত আমি একটুও ঘুমাতে পারিনি, এর ফলস্বরূপ আজকে সারা দিন কাজ করেছি আর ঘুমিয়েছি। আজকে এর চেয়ে বেশি আর কিছুই করিনি। আমি তোমাকে অসম্ভব ভালোবাসি, যা তুমি এমনকি কল্পনাও করতে পারবে না। আমার সব কিছু তোমাকেই ঘিরে। আজকে কয়েক মাস আমি আব্বু আম্মু ছাড়া আর কারও সাথেই কথা বলি না। তোমার সাথে, তোমাকে ভালোবেসেই আমি বেঁচে আছি। বিশ্বাস আর ভরসা করার মতো আমার পুরো পৃথিবীতেই আর কেউই নেই। আমার সাথে কথা না বলে, আমার থেকে দূরে থেকে হলেও যদি তুমি সুস্থ থাকো, তাহলে তা-ই করো, আমার অসুবিধা নেই, এমনকি আমি তোমাকে এটা নিয়ে কোনও অভিযোগও করব না। তা ছাড়া আমাকে তুমি এভাবে অসুস্থ হয়ে প্রেসারে রেখো না। তোমার যত যা করার, যত অসুস্থ হবার, আমি তোমার সামনে সশরীরে যখন থাকি, তখন কোরো, তখন হয়ো। তাহলে আমি অন্তত তোমাকে সামলে নিতে পারব। দূর থেকে এসব শুনে শুনে হাত-পা ছোড়াছুড়ি করা, দুশ্চিন্তা আর কান্নাকাটি করা ছাড়া আমার আর কিচ্ছু করার নেই, এটা একটুখানি বোঝো। আমার ভালো লাগে না এসব শুনতে। একটা কথা ছিল। মাঝেই মাঝেই যখন আমি কোনও কারণে তোমার ফোন ধরতে না পারি, অথবা তোমাকে রিপ্লাই করতে কোনও কারণে একটু দেরি হয়, সেই অল্প সময়ের মধ্যেই তুমি অন্য কারও সাথে ফোনে ব্যস্ত হয়ে যাও। বিষয়টা আমার কাছে কেমন যেন মনে হয়। এত অল্প সময়ের মধ্যেই তুমি আবারও অন্য কোনও কলে ব্যস্ত হয়ে যাও? হয়তো তুমি সারা দিনে একটা সময়েই সবার সাথে কথা বলো। আমিই একমাত্র মানুষ নই, যে তোমার ফোনের জন্য অপেক্ষায় থাকে। এমনও হতে পারে। তুমি চাইলে আমাকে বকা দিতে পারো, আমার সাথে ঝগড়াঝাঁটিও করতে পারো, কিন্তু আমি, যেটা মনে এসে গেছে, সেটা না বলে থাকতে পারি না। জানিয়ে রাখি, আমি সন্দেহপ্রবণ মেয়ে না। আমার সাথে এমন অনেক কিছুই হয়ে এসেছে, যা আমাকে আমার কাছের মানুষগুলোকেও সন্দেহ করতে বাধ্য করে। আমি এক তুমি বাদে আর কাউকেই বিশ্বাস করতে পারি না। আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে পেরেছি, সত্যিই এটা আমার সৌভাগ্য, তোমার না। দুই। এই ভালোলাগা, এইসব মুহূর্ত, এই তুমি, এই আমি, এই মুহূর্তটা সবচাইতে দামি। এই ভালোটা থেকো তুমিও, এই ভালোলাগা থাকুক আমার হয়ে, এই ভালোবাসা থাকুক চিরটাকালই। তুমি আমার জীবনে আসার আগে কখনও আমি জানতামই না যে, আমি কাউকে এতটা ভালোবাসব, সত্যিই আমি এতটা ভালোবাসতে পারি! আমি অনেক বদলে গেছি, জানো? তিন। : অ্যাই, তুমি আমাকে 'বিলাই' ডাকবা না, বলে দিচ্ছি! নাহলে তোমার খবর আছে! মাথায় সবগুলা চুল দুইহাতের মুঠির ভেতরে নিয়ে খিঁচতে থাকব একদম! খবরদার, 'বিলাই' ডাকবা না, বলে দিলাম! : কেন, বিলাই ডাকলে কী হয়? আমি তোমাকে আদর করে একটুখানি বিলাইছানাও ডাকতে পারব না! : না, পারবা না, কারণ বিলাই ডাকলে আমার ইগোকে হার্ট করা হয়। পাগলকে পাগল বললে যেমন পাগলের মাইন্ডে লাগতে পারে, কুকুরকে কুত্তা বললে যেমন লাগতে পারে, আমার তার চেয়ে জঘন্য লাগে এটা শুনতে। তা ছাড়া পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত কোনও লাভারকে দেখছ যে তার ভালোবাসার মানুষকে 'বিলাই' ডাকে? বলো, শুনেছ কখনও? : কেন, বিলাই তো মেয়েদের বেলায় মানিয়ে যায় দারুণভাবেই! পৃথিবীর সব কিউট মেয়েই এক একটা বিলাই! এটা অনেক ভালো একটা নাম। তা ছাড়া তুমি আমাকে যে শাস্তি দিতে চাইছ, সেটা এখন তোমার পক্ষে করাও অসম্ভব, কেননা এই মুহূর্তে আমার মাথা তো ন্যাড়া, তোমার দুইমুঠির মধ্যে নিয়ে আরাম করে খিঁচার মতো চুল এখনও সেভাবে বড়ো হয়নি। সুতরাং আমি তোমাকে এই মুহূর্তে আরও পাঁঁচ বার 'বিলাই' ডাকলেও তোমার কিছুই করার নাই। বিলাই বিলাই বিলাই বিলাই বিলাই...ম্যাঁও! : অ্যাই শোনো, তুমি আমাকে যদি আর একটা বারও 'বিলাই' ডাকো না, তাহলে আমি...আমি তোমাকে 'হুলোবিলাই' ডাকব একদম! হুলোবিলাই হুলোবিলাই হুলোবিলাই হুলোবিলাই হুলোবিলাই...! ভাবনা: সাতশো ছেচল্লিশ ............................................................... এক। আগে আমি মন খুলে তোমাকে যা ইচ্ছে তা-ই বলতে পারতাম, কিন্তু এখন আমাকে প্রতিটি কথা বলার আগে অতটুকু সময়ের মধ্যেই অন্তত শত বার চিন্তা করে দেখতে হয়, এই কথাটা বললে তুমি কী ভাববে, তুমি কি রিঅ্যাক্ট করবে, অথবা তুমি কোনও কষ্ট পাবে কি না। আগে আমি তোমার ভাবনার জগতে অবাধে বিচরণ করতে পারতাম, কারণ তুমি আমার সব কথাকেই নিষ্পাপ হিসেবে নিতে। আর এখন আমি যা-কিছুই বলি, আমি তাতেই অপরাধী হয়ে যাই, অথচ আমি নিজেই বুঝি না আমি কী করলাম। আগে আমাকে কখনও তুমি কোনও কিছুর জন্য বিচার করতে না, কিন্তু আমি কী একটা যেন হয়ে গেছি তোমার চোখে যে আমার সব কথাই তুমি জাজ করো এখন। আমি যে তোমার চাইতে বয়সে অনেক ছোটো, আমার যে ভুল হবেই, তা তুমি হয়তো মানোই না। আমি তোমার গল্পের নায়িকাদের নিয়ে মজা করি তোমার সাথে, হয়তো তুমি এটা পছন্দ করো না, আমি তোমার সামান্য কিছু খুব সহজভাবে কেবল জিজ্ঞেস করলেও তুমি রেগে যাও, হয়তো তাতেও আঘাত পাও। আগে তোমাকে সব কিছু বলার অধিকার ও অনুমতি, দুটোই আমার ছিল, এখন হয় কোনওটাই নেই, নয়তো থাকলেও অকার্যকর। আচ্ছা, তুমি একটা বার ভেবে দেখো তো, আমি যদি কোনও কিছুই বলতে না পারি, তাহলে আমি কী নিয়ে তোমার সাথে কথা বলব? যে ভালোবাসে, তার কোনও অজুহাতের প্রয়োজন নেই ভালোবাসতে। আমি আগেও তোমাকে ভালোবেসেছি, এখন তো আরও বেশি ভালোবাসি, কিন্তু হয়তো সেখানে আমার কোনও একটা কিছুতে বার বার ভুল হয়ে যাচ্ছে, যার ফলে তুমি কোনও কথা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারো না, আর আমার কাছ থেকে সরে সরে থাকো। তোমার কোনও লেখা নিয়ে আমি আর ভালো খারাপ কোনওটাই বলব না, এমনকি ইনবক্সে কিছুই আর লিখব না। এই ফেইসবুক মেসেঞ্জারের চাইতেও আমার চাররুমের একলা জীবনটা সত্যিই অনেক ভালো। হয়তো আমার একা লাগে ভীষণ, হয়তো আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি, হয়তো আমি কারও কাছ থেকে আমার জন্য সত্যিকারের ভালোবাসাটা চাই, হয়তো আমি কারও সাথে কী করে মিলে চলতে হয়, তা জানিই না, হয়তো আমার বাসার মানুষের সাথেও আমার ঠিক যায় না, তারপরও সব কিছুর ঊর্ধ্বে আমার একলা জীবনটা ভালো। অন্তত কারও চাপিয়ে-দেওয়া কোনও কিছু আমাকে অনুভব করতে হয় না। আমি তো চেষ্টা করি তোমার মনমতো তোমার সাথে নিজেকে মানিয়ে চলতে, কিন্তু যত বারই যতভাবেই চেষ্টা করি না কেন, তত বারই আরও নতুন নতুন সমস্যার জন্ম দিই। আমি ফেইসবুকে, মেসেঞ্জারে আর আসব না। আমি যখন তোমাকে তোমার নায়িকাদের নিয়ে কিছু বলি, তখন হয়তো তুমি মনে মনে ভাবো, আমি নিজেই তো তোমার কাছে অমন করেই সব সহ্য করেও পড়ে থাকি, তোমার আমাকে প্রয়োজন নেই কোনও, তারপরও তোমার কাছেই বারে বারে ফিরে আসি, অথচ সেই আমিই অমন করে তোমার গল্পের নায়িকাদের নিয়ে নানান কথা বলে বসি! আসলে কী, জানো, যখন বলি, তখন হয়তো আমার মাথায় এটা কাজ করে না। সত্যিটা হলো এই, আমি সবই বুঝি। তুমি যেমন আমার সঙ্গে মজা করো, আমার হয়তো তেমন করে মজা করা হয় না, মজা করতে গিয়ে তোমাকেই আঘাত করে বসি, অথবা কোনটা নিয়ে মজা করতে হয়, সেটা এখনও আমার বুঝতে বাকি আছে। তোমার যখন ইচ্ছা হয়, ফোন দিয়ো, কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। কথা বলতে ইচ্ছা না করলে ফোন কোরো না, কোনও নির্দিষ্ট সময় অনুসরণ করেও ফোন করতে হবে না। আমার প্রতি তোমার কোনও দায়িত্ব নেই, কোনও দায়বদ্ধতাও নেই। তোমার যেভাবে খুশি সেভাবেই আমার সঙ্গে চাইলে থেকে যেয়ো, নয়তো সব কিছুই তোমার উপরে। আমি তোমাকে আঘাত করতে চাই না। আমার তোমার কাছ থেকে এক তুমি ছাড়া আর কিছুই চাওয়ার ছিল না, এখনও নেই। আর যেভাবে চেয়েছিলাম তোমাকে, সেভাবে তো পাবো না কখনও, সেটাও মেনে নিয়েছি। এখন কোনও কিছু নিয়েই আমার তেমন কষ্ট অথবা কোনও অনুভূতি নেই। সুতরাং তোমার যেভাবে চলার, তুমি সেভাবেই এগোও। প্রয়োজনে আমি তোমাকে তোমার পথে এগিয়ে দিয়ে আসব যদি তুমি চাও। এর বাইরে আমার আর কিছুই বলার নেই। তুমি আমাকে তোমার জীবনে যতটুকু প্রবেশাধিকার দেবে, আমি সেটুকুর বেশি কখনও আশাও করব না, একদম নিশ্চিত থাকো। তা ছাড়া এই পৃথিবীর কারও কোনও কিছুর প্রতি আমার বিন্দুমাত্রও প্রত্যাশা নেই, এমনকি ভালোবাসার প্রতিও না। দুই। আমি আমার বাবা-মাকেই বিশ্বাস করে প্রতারিত হই বার বার। আমি যাদের জন্য প্রতিনিয়ত নিজের সময়, নিজের জীবন ক্ষয় করে যাচ্ছি, তারা কেউ আমাকে ক্ষতবিক্ষত করতে একটা সুযোগও কখনও ছাড়ে না। এমনকি আমার হাসিমুখ দেখলে আমার আশেপাশের কারওই সহ্য হয় না, সকলেই আমার পেছনে উঠে পড়ে লেগে যায় যেন আমি হেসে খেলে বাঁচতে না পারি, যদিও আমার তাদের প্রতি দরদ এখনও আছে এবং আমি প্রতিনিয়ত আমার হক পর্যন্ত ছেড়ে আসছি তাদের ভালো রাখতে। আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছেই আমার কাছের এবং দূরের যারা কোনওভাবে আমার সাথে সম্পর্কিত, তাদের ভালো রাখতে। অথচ এটা সত্ত্বেও, সবাই যখন আমার সব কিছু কেড়ে নেয়, আমার এই আন্তরিকতাকে দুর্বলতা ভাবে, তখন আর কাউকে ইচ্ছে হয় না বিশ্বাস করি। আমার কারও প্রতি কোনও ক্ষোভ, ভয় কিছুই নেই, কিন্তু যার সবচেয়ে কাছের মানুষগুলোই এমন, তার পুরো পৃথিবীটাই প্রকৃতপক্ষে শূন্য। ভাবছি, কারও ইচ্ছেমাফিক আমি আর চলব না, কাউকে খুশি রাখার জন্য আর নিজেকে বদলাব না। আমি বার বার সবাইকে ক্ষমা করি, কিন্তু এটা করে বার বারই আমি নিজের ক্ষতি আরও বাড়াই, নিজের গর্ত নিজে নিজেই আরও গভীর করি। কিছু মানুষ আছে, যারা ক্ষমা পেয়ে গেলে ভেবে নেয়, এই ক্ষমাটা বুঝি তাদের প্রাপ্য ছিল! ওদের কষ্টের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিলে ওরা ধরে নেয়, কষ্টটা ওদের পাবার কথাই ছিল না! তাদের ভুলের পরিণাম তাদের বরং বুঝতে দেওয়াই উচিত। ভাবনা: সাতশো সাতচল্লিশ ............................................................... এক। মনে রেখো, আমি সবসময় তোমার ভালোবাসার মানুষই ছিলাম। আমরা বন্ধু কি ছিলাম কখনও? বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসায় যাওয়া যায়, কিন্তু ভালোবাসা থেকে বন্ধুত্বে ফিরে আসা যায় না কখনও। আমি তোমাকে আগে বন্ধু ভাবতাম, আর তুমি আমাকে, জোর করে হলেও, ভাবতে প্রেমিকা। অথচ এখন যখন আমি তোমাকে প্রেমিক ভাবতে শুরু করেছি, ঠিক তখনই তুমি আমাকে বন্ধু ভাবতে চাইছ? হয় এটা, বলো? আচ্ছা, তোমার কি মনে হচ্ছে যে আমি তোমাকে ভালোবাসার জন্য জোর করছি? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে! তোমার সাথে কথা না বলে আমি আর কিছুতেই থাকতে পারছি না। তুমি কি একটুও বোঝো না, আমার কতটা কষ্ট হচ্ছে? কেন বোঝো না তুমি? তুমি তো জানো, আমি পারি না তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে, তাহলে কেন এখনও এতদিন হয়ে যাচ্ছে, তবুও একটা ফোন করছ না? আমাকে তুমি কথা না বলে বলে কেন এতটা কষ্ট দাও? তোমার কি একটুও কষ্ট হয় না আমার জন্য? আমি তো তোমার সাথে কথা না বলে পারি না থাকতে, তাহলে তুমি কী করে পারো? তাহলে তোমার ভালোবাসাটাই-বা কেমন? কেন আমাকে এমন করে তোমাতে অভ্যস্ত করে ফেললে? আর ফেললেই যদি, কেন এখন সরে যেতে চাইছ? আসলে তুমি একটুও আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে চিন্তা করো না, এজন্যই বোঝো না কিংবা বুঝেও না বুঝে থাকার অভিনয় করো। আমাকে ইচ্ছা করে করে কষ্ট দাও তুমি। তোমার ভালো লাগে খুব আমার সাথে এমন করতে? আমি তাহলে আর কার সাথে কথা বলব? আমি তো তোমাকে ভালোবাসি, তুমিই আমার সব কিছু, তাহলে আমি অন্য কোথাও কেন কথা বলব? তোমার সাথে যেভাবে আমি কথা বলি, সেভাবে তো অন্য কারও সাথে কথা বলতে পারব না, বলবও না। তাহলে আমি আর কোথায় যাব, বলো তুমি? কেন ওরকম করে প্রশ্রয় দিলে দিনের পর দিন, যদি এখন আশ্রয় দিতেই না পারো? অনেক তো আমাকে কষ্ট দিয়ে দিয়ে মজা নিয়েছ, এখন তো একটা ফোন দাও! আর কখন, আর কত অপেক্ষার পর ফোন করবে আমাকে তুমি? আমি থাকতে পারছি না আর, প্লিজ, ফোন করো। আমার সাথে আদর করে কথা বলো। আমাকে ভালোবাসো। প্লিজ, কলিজাপাখিটা আমার! তুমি আমার আমার আমার। অন্য কেউ তোমার ধারে কাছেও যদি কখনও আসে, তাহলে আমি তাকে কতল করব, বলে দিলাম। আমি ছাড়া আর অন্য কেউ তোমাকে ‘জান’ বলে ডাকতে পারবে না, আমি ছাড়া আর অন্য কেউ তোমার বুকে যেতে দুই হাত দিয়ে শক্ত করে তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারবে না, আমি ছাড়া আর কেউ কক্ষনো তোমাকে ইচ্ছাখুশি মনভরে তোমার সারাশরীরে আদর করতে পারবে না, আমি ছাড়া আর কেউ তোমার ঠোঁটে চুমু খেতে পারবে না, আমি ছাড়া অন্য আর কেউ তোমাকে জান, কলিজাপাখি, সোনাপাখি, লক্ষ্মীসোনা, ময়নাপাখি, পাখি এসব নাম ধরে ডাকতে পারবে না না না! তুমি শুধু আমার জান, আমার একার জান তুমি, আমার একার কলিজাপাখি তুমি, আর কারও না, কক্ষনো না, কক্ষনো না, কক্ষনো না! আমার জানকে শুধু আমি একা ভালোবাসব, আমার জানপাখিটার যত আদর দরকার, সব আদর আমি একা করব, আমার জানপাখিটাকে কেবল আমিই বুকে জড়িয়ে চুমু খাব, আমার জানকে আমিই শুধু 'জান' বলে ডাকব, আমার জানকে আমিই শুধু ইচ্ছাখুশি বকতে পারব, আর কেউ না, কেউ না, কেউই না! আমার জান শুধু আমাকে আদর করবে, শুধু আমাকে শাসন করবে, শুধু আমাকে বকা দিবে, শুধুই আমাকে ভালোবাসবে। আমার জানকে যদি অন্য আর কেউ এসে অধিকার করতে চায়, আমি তাকে সত্যি সত্যি কতল করব। দরকার হয় তো, তারপর নিজেও মরে যাব! আমার কান্না পেলে কেবল আমিই আমার জানের বুকে গিয়ে কান্না করব। আমার যা খুশি, আমার যা ইচ্ছা হয়, আমার জানপাখিকে নিয়ে আমি তা-ই করব। তুমি আমার একার ভালোবাসা। আমার একার একার একার ভালোবাসা তুমি! আমি তোমার সাথে কথা বলতে না পেরে পাগলের মতো হয়ে যাই, অথচ তুমি এটা বোঝোই না। আমি যদি হঠাৎ করেই নেই হয়ে যাই, সেদিনও কি এমনই থাকবে তুমি? ভালোবাসার মানুষকে এতটা অসহায় কেন করে দিচ্ছ? না কি ভালোবাসা বলে আসলে কিছুই নেই, সবই আবেগ? আমি তো অতকিছু বুঝি না তোমার মতো, তুমিই সব কিছু ভালো জানো, জান! আমি শুধু বুঝি, তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকতে আমি পারব না তো পারবই না! দুই। এই জীবন থেকে কোথায় পালাই, বলো তো? চাইলে যে পালিয়ে বাঁচা যায় না, সে কি তোমার অজানা? চোখ দুটো বন্ধ করতেই তোমার মুখটি চোখের সামনে চলে আসে। মনে হয় যেন তোমার উত্তপ্ত নিঃশ্বাস আমার মুখের উপরে এসে এসে আছড়ে পড়ে। চাই না ভুলে থাকতে, আবার মনে করতেও চেষ্টা করি না কখনও, তবুও তো তোমাকেই ভেবে ভেবে কাটে সারাটা দিন। রাতে ঘুমাতে গেলে তোমার কথাগুলো গুনগুন করে কানে বাজে, এপাশ ফিরি, ওপাশ ফিরে শুই, আর ভাবি, চিন্তা করব না আর তোমার কথা, অন্য কিছু ভাবতে চেষ্টা করি, অন্য কারও কথা, অন্য কোনও অপ্রাপ্তি, অন্য কোনও ভালোলাগা, অন্য আরও অনেক কিছু চেষ্টা করি ভাবতে, যেন একটু নিস্তার পাই তোমার ভাবনা থেকে, কিন্তু কী জানি, ঘুরে ফিরে সেইসব কিছু তোমাতেই এসে ঠেকে, ঘুমের ঘোরে স্বপ্নের মাঝেও তোমার কণ্ঠ শুনি, শুনতে পাই, তুমি কথা বলছ আমার সাথে। চোখ বন্ধ করতেও ভয় পাই আজকাল, যদি তুমি এসে যাও! চোখ বন্ধ করি না, বইয়ের পৃষ্ঠায় মুখ লুকিয়ে পড়ে থাকি, ঘুমে ঢুলে পড়ে যাই, মাথাটা মনে হয় শূন্যে ভাসছে, দুলতে থাকে সারাক্ষণই, তবুও বালিশে ভীষণ ভয়, বালিশে মাথা পাততে ভয় হয় ভীষণ। মনে হয়, আমার বালিশের সাথেও তুমি লেপটে আছ। সচেতন কিংবা অচেতন, সবখানে তুমি, তুমি ছাড়া যেন কিছুই নেই কোথাও। তুমি ছাড়া বাকি সবই মিথ্যে আমার জীবনে। ভালোবাসা মানুষকে কী করে এমন অবুঝ এক শিশুর মতো করে দেয়, কখনও তা জানা ছিল না আগে। সব কিছু বুঝি, তারপরও মনে হয়, মন মানে না, বুঝতে চাই না কিছুই! বুঝতে চাই শুধু এই যে, তুমি ছাড়া আমি অচল হয়ে পড়েছি। যাব না যাব না করে করে কত বার যে মুখ ফিরিয়ে নিয়েও পারিনি মুখ ফিরিয়ে থাকতে, সে-কথা আমি আর আমার স্রষ্টা জানেন। গতকাল দুপুরের পর থেকে মাথাটা আর তুলতে পারছি না, কেন জানি না, মাথাটা শুধু ঘুরছে, দাঁড়াতে গেলে মাথা চক্কর দিয়ে পড়ে যাচ্ছি। আমি খুব চেষ্টা করছি তোমাকে ভুলে থাকতে, তোমার কথা মাথায় না আনতে, নিজেকে সুস্থ রাখতে খুব চেষ্টা করে যাচ্ছি আমি, আমি কাজ করতে চাইছি, অনেক অনেক কাজ, কিন্তু আমি যে উঠে দাঁড়াতেই পারছি না বিছানা থেকে, তাহলে আর কী দিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখি? আমার পুরো মস্তিষ্কজুড়ে তুমি, আমার সমস্ত হৃদয়, আমার আত্মা তোমার সাথে এমনভাবে গেঁথে গেছে যে আমি চাইলেও সেখান থেকে নিজেকে আলাদা করতে পারছি না। আমি সুস্থ থাকতে চাই, আমি তোমাকে ভুলে থাকতে চাই। মরে গেলে একদিনে একমুহূর্তে মরে যেতে চাই, কিন্তু প্রতি মুহূর্তের এই মৃত্যু আমি চাই না। আমার ভাষাগুলো থেমে যায় না কেন? তোমাকে কিছু না বললে আমার মাথায় কথাগুলো যন্ত্রণা দেয় আর দিতেই থাকে, আমাকে ঠিক থাকতে দেয় না ওরা, আমি পাগলের মত ছটফট করতে থাকি তোমাকে কথাগুলো বলতে না পেরে। মনে হয়, মাথাটা ছিঁড়ে খুঁড়ে কথাগুলো সব বেরিয়ে আসবে এক্ষুনি। আমি বাইরে বেরিয়ে পড়তে চাই, ভাবি, বাইরে বন্ধুদের সাথে কিছুটা সময় কাটালে হয়তো তোমাকে ভুলে থাকব কিছুক্ষণ হলেও! কিন্তু আমি যে বিছানা থেকে উঠতেই পারছি না! তুমি শান্তি চেয়েছ আমার কাছে, ভালোবাসার চাইতে তোমার কাছে শান্তি আগে, আমি তোমাকে শান্তি দিয়েছি। আর যা-ই হোক, আর কিছু দিতে না-ইবা পারি, আমি তোমাকে শান্তি এনে দিয়েছি, আমার জীবনের দামে হলেও আমার কাছে তোমার শান্তি আগে, তোমার সুখটা আমার কাছে মুখ্য, বাকি সব কিছু আমি মানিয়ে নিতে চাইছি, কিন্তু আমি পারছি না কেন? গত কয়েকদিন আমি কাঁদিনি বেশি; কেঁদেছি, কিন্তু অল্প, চেষ্টা করে গেছি কান্না চেপে যেতে, কারণ স্রষ্টা আমার কান্নার ক্ষমতাটুকু নিয়ে নিয়েছেন, মনখুলে চিৎকার করে কাঁদতে পারায় যে সুখ, সেই সুখও আমার স্রষ্টা আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছেন। এখন আমি আর কাঁদতে পারি না, কাঁদলে এতদিনে আরও আগেই অসুস্থ হয়ে খারাপ কিছু একটা ঘটে যেত, এজন্য কান্না চেপে, কান্নাকেগুলিকে চেপে গিলে ফেলতে চেষ্টা করছি। আমি কোনও দুশ্চিন্তায়ও জড়াইনি, কিন্তু তারপরও কেন যে উঠতে পারছি না বিছানা থেকে, কেন মস্তিষ্ক এমন অশান্ত হয়ে আছে, আমি সত্যিই জানি না। আমি সুস্থ থাকতে চাই, বাঁচলে বাঁচার মতো বাঁচতে চাই। নয়তো মরে যেতে আমার কোনও ভয় নেই। কিন্তু আমার এই প্রতি মুহূর্তের যন্ত্রণা থেকে আমি মুক্তি চাই। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তোমাকে ছাড়া, হয়তো এই মুহূর্তে মৃত্যু এলে মৃত্যুর এই কষ্ট থেকে বেঁচে যেতাম। সবাই বাঁচার জন্য মরতে চায় না, আর আমি কেবল বাঁচার জন্যই মরতে চাই! ভাবনা: সাতশো আটচল্লিশ ............................................................... তোমার ছেলেকে তোমার মতোই হতে হবে, এমন কোনও নিয়ম কি আছে? অনেক বিখ্যাত মানুষের ছেলে তাঁদের মতো হয়নি, তাতে কার কী? যে চোর কিংবা ডাকাত, তুমি কি চাও, তার সন্তান চোর অথবা ডাকাতই হোক? সব ডাক্তারের সন্তান যেমন ডাক্তার হয় না, তেমন অনেক ডাক্তারই আছেন, যাঁদের সন্তান তাঁদের মতোই ডাক্তার হয়েছেন। সন্তান কী হবে, তার চাইতে বড়ো বিষয় বোধহয়, সন্তানের ভেতর মনুষ্যত্ববোধটা ঠিক থাকবে কি না, সেটা। অনেক বাবা-মাকে দেখেছি, তেমন কিছু পড়াশোনা করেননি অথবা কিছুদূর করেছেন, তারপরও তাঁরা তাঁদের সন্তানদের অনেক ধৈর্য নিয়ে, অনেক আদর ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করেছেন। আবার এমনও দেখেছি, বাবা-মা দুজনেই অনেক ভালো পজিশনে আছেন, কিন্তু সন্তান এতটাই অসভ্য, বেয়াদব আর অনৈতিক, যা বলারও বাইরে। আমি জানি না, সবসময় যখন তুমি সন্তান নিয়ে এই কথাটিই বারে বারে বলো, যে সন্তানকে তার বাবা-মায়ের মতো হতে হবে, তার অর্থ আসলে কী! আরেকটা কথা বলতে চাই। সন্তানকে আদর-ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করলে আর যা-ই হোক না হোক, ভালো একজন মানুষ তো হবে, এটাই কি যথেষ্ট না? নিজেকে নিজের সন্তানের কাছে যত বড়ো বলে জাহির করবে, ততই তুমি তার ভেতরে একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করবে। তোমার সন্তানের বড়ো পরিচয়, সে তোমার সন্তান। এরপর যদি সে তোমাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে, তাহলে তোমার আরও একটা পরিচয় প্রকাশ পাবে তোমার সন্তানের মধ্য দিয়ে। তুমি হয়তো একজন ভালো বাবা হিসেবেও পরিচিতি পাবে। তাই বলে কি তুমি মানুষের ঊর্ধ্বে চলে যেতে পারবে? তুমি অনেক ভালো অবস্থানে আছ, তার অর্থ এটাই যে তুমি নিজেকে খুব ভালো করে ইউটিলাইজ করতে পেরেছ, তোমার সন্তান যদি নিজে নিজেকে ভালো করে ইউটিলাইজ করতে না পারে, তাহলে বাইরে থেকে খুব চেষ্টা করেও তুমি কতটা কী করতে পারবে? আর যখন তুমি বলো, অমুকের একটা সন্তানও অমুকের মতো হয়নি, তখন আসলে তুমি নিজের সন্তানকে তোমার মতো হতে অদৃশ্য এক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দাও। এটা কি যৌক্তিক? তুমি হয়তো পড়েছ, আমাদের মধ্য দিয়ে যারা আসে, তারা আসলে আমাদের সন্তানই নয়, তারা এই পৃথিবীর সন্তান। পৃথিবী তার নিজ প্রয়োজনে হয় তাকে গুছিয়ে নেবে, নয়তো তাকে ধ্বংস করে দেবে; সেটাও একটা উদ্দেশ্যেই। আমার মনে হয়, আমাদের সন্তান যদি আমাদের মতো না হয়ে থাকে, সেটা বড়ো একটা আশীর্বাদ, কেননা তা না হলে পৃথিবীতে যত গুণী মানুষ এসেছেন, তাঁদের চাইতে অমানুষের সংখ্যাই বেশি দেখে যে আসছি, ফলে তাঁদের সন্তানেরা সবাই যদি তাদের বাবার পথ ধরে হাঁটত, তাহলে ভেবে দেখো, পৃথিবীর অবস্থাটা কী হতো! আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে দুটো জিনিস নিয়ে, তা যতই আমার মনের মতো হোক না কেন, কখনও গর্ব করতে নেই। সে দুটো হচ্ছে সন্তান আর জীবনসঙ্গী। যে-কোনও সময় যে-কোনও মুহূর্তে এই দুটো মানুষ পুরোপুরি বদলে যেতে পারে ঠিক মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো। মানুষ বাবা-মা যেমনি নির্ধারণ করতে পারে না, তেমনি সন্তানকেও তার নিজের পছন্দের জীবনটা যাপন করতে দেওয়া কি অপরাধ? একা এসেছি, একাই চলে যাব, যেতেই হবে। যদি থাকেও মৃত্যুর পরে কোনও জীবন, তবে সে-পারেও তো নিজের হিসেব নিজেকেই ভোগ করতে হবে। যদি তাই-ই হয়, তাহলে কে আমার সন্তান আর কে অন্যের, তাতে কী এসে যায়? আর যদি না থাকে তেমন কিছু, তবে নিজের ইচ্ছেপুতুল করে রেখে দিয়ে সন্তানের জীবনটাকে নিজের মতো করে গড়তে গিয়ে তাকে তার জীবনে বাঁচতে না দেওয়ার তুমি কে? তুমি নিজে কতটা বেঁচেছ তোমার বাবা-মায়ের মনের মতো করে? এমনকি তুমি যদি তোমার বাবার মতোও হতে, তাহলে আর যা-ই হোক, তুমি যদি তখনও খুব ভালো একজন অন্য মানুষও হতে, তবুও কি আমরা আজকের তোমাকে পেতাম? যেহেতু উত্তরটা ‘না’, সেহেতু কখনও সন্তান নিয়ে, সে যেমনই হোক---ভালো অথবা খারাপ, তোমার মতো অথবা তোমার চাইতেও বেশি কিংবা তোমার বিপরীত; এসবের কিছুতে, কোনও প্রতিক্রিয়ায় কী এসে যায়? মৃত্যুর পর একটা ভালো বাবাও একটা খারাপ সন্তান রেখে গেলে যেমনি তিনি খারাপ হয়ে যান না, তেমনি একজন খারাপ বাবাও একজন ভালো সন্তান রেখে গেলে তার দুষ্কর্মের বোঝা কি পারেন নামিয়ে ফেলতে? বাবা-মায়ের জন্য সন্তান হয়তো তত বড়ো কিছু নয়, কিন্তু সন্তানের কাছে বাবা-মা অনেক অনেক বড়ো কিছু। কারণ তোমার হাতে যে শিশুকে অস্তিত্ব তুলে দিয়েছ, সে দায় পারবে কি এড়িয়ে যেতে? তোমার হয়তো আছে অঢেল, কিন্তু তার কী মূল্য, যদি তা সন্তানের কোনও কাজে না আসে? তোমার বাবা তোমাকে পড়াশোনা না করিয়ে যদি মুহুরির দলিললেখার কাজে নামিয়ে দিতেন, তাহলে কী করতে তুমি? তুমি যেখানে এসেছ, সেখানে তোমার বাবার কিছুটা অবদান, কিছুটা তোমার নিজের, বাকিটা হয়তো অদৃষ্টের। স্রষ্টায় বিশ্বাস করো কি না জানি না, অদৃষ্টে বিশ্বাস করো তো? না কি কেবলই পরিশ্রমে বিশ্বাসী? তাহলে যাও, কৃষিকাজে নেমে দেখো হয় কি না! নয়তো ক্রিকেট-প্র্যাকটিসে কী দোষ, স্ট্যামিনা তো ভালোই আছে তোমার! তোমার বাবা তোমার প্রতি যে দায়িত্ব পালন করেছেন, কেবল সেই দায়িত্বটুকু যথাযথ পালন করার দায়িত্বটুকু নিয়ে দেখো তো? বাকিটা সন্তানের উপরেই নাহয় ছেড়ে দিয়ো। যদি ভালো-খারাপ সৎ-অসৎ সবাইকে ওই মাটিতে মাটির সাথেই মিশে যেতে হয়, তাহলে কীসের এত হিসাব! মৃত্যুর পর কী হয়েছে, কী হচ্ছে, যারা মরে গেছে যুগ যুগ ধরে, তাদের কে দেখেছে? তোমার সব কিছু যদি তোমার সন্তানের পছন্দ না হয়, তখন? তবে কি, সে তোমাকে অন্য বাবাদের উদাহরণ দেবে, এটা চাও? তুমি কতটা স্বীকার করবে তোমার অপারগতা? সবসময় নিজেকে সন্তানের সাথে বিচার করে তুমি যে আগেই ওকে গভীর এক গর্তের সামনে এগিয়ে নিচ্ছ, সে খেয়াল আছে? তুমি পারবে তো বলতে জীবনশেষে, তুমি একজন ভালো বাবা হতে পেরেছ, যতদিন বেঁচেছ? সবশেষে বলি, নিজের সন্তানকে কেবল একজন মানুষ ভাবলে হয়তো এই কনফ্লিক্টগুলো মন থেকে চলে যাবে। এতক্ষণ যা যা বললাম, তার কোনওটাতেই মন ভরল না। জানি না কেন মনে হচ্ছে, অনেক কথা না বলাই থেকে গেল। আমার জীবনে যা-কিছু তোমার চোখে সুন্দর, তার সবই তোমার কাছে থেকে থেকেই শেখা। আমাকে অন্য কেউ কখনও কিছু শেখায়নি অথবা যা শেখানো হয়েছে, ওভাবে চললে আর যা-ই হোক, মানুষের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে বাঁচতে পারতাম না। অনেক কিছুর পরও আমি মানুষকে ভালোবাসতে পারি, এটা কোনও না কোনওভাবে তোমার দেওয়া একটা শিক্ষা। যত দিন যাচ্ছে, ততই চারপাশটা আরও রুদ্ররূপ ধারণ করে আমার সামনে এসে যায়, আর আমার পরীক্ষা আরও কঠিনতর হয়ে পড়ছে। হেরে যাব কি না জানি না, কিন্তু কেবলই টিকে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যতদূর মনে হচ্ছে, যতদূর চোখ যাচ্ছে, যতদূর বুঝতে পারছি, তা হলো, তুমি আমাকে সন্ন্যাসী বানিয়েই ছাড়বে! ভাবনা: সাতশো উনপঞ্চাশ ............................................................... এক। ধরো, তুমি দূরে কোথাও বেড়াতে যাচ্ছ। যে বাসে করে তুমি যাচ্ছ, তুমি যদি কোনওভাবে জানতে পারো, বাসটি যান্ত্রিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ, অথবা বাসটির ড্রাইভার ড্রাংক অবস্থায়, নয়তো শারীরিকভাবে অসুস্থ, তবে এমন কোনও বাসে তুমি জেনে বুঝেও উঠতে চাইবে? বাস ঠিক থাকলেও যাত্রাপথে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, তুমি মারা যেতে পারো, তবু বাসে ওঠার আগে তুমি ধরেই নেবে, তুমি মারা যাবে না, কারণ তোমার মনের শক্তি, অভিজ্ঞতা আর বিশ্বাস থেকেই কথাটি তুমি ধরে নিতে চাও। এমন কোনও চাকরি কি তুমি করবে, যে চাকরিতে প্রথম দিনই তোমাকে বলে দেওয়া হবে, তোমাকে কোনও বেতন দেওয়া হবে না, কিন্তু মাঝে মাঝে মন চাইলে, অথবা সম্ভব হলে তারা তোমাকে কিছু সম্মানি দেবে? করবে তুমি সে চাকরি? অথবা কোনও বন্ধ্যা নারীকে জেনে শুনে তুমি বিয়ে করবে? যে-কোনও সম্পর্কেই কমিটমেন্ট জরুরি। তুমি কমিটমেন্ট দিতে পারছ না, অথবা চাইছ না, এর অর্থ, তুমি দোদুল্যমান অবস্থায় আছ এবং যে-কোনও সময় সেটা বদলে যেতে পারে। হ্যাঁ, ভালো কিছুও হতে পারে, কিন্তু সাধারণত এসব ক্ষেত্রে নেগেটিভটাই বেশি ঘটে। আমি তোমাকে ভালোবাসি, সেজন্য আমি অন্য কোনও সম্পর্কে জড়াব না, সেটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি কোনওভাবেই তোমার অসম্মান করিনি। এখনই যদি আমি অন্য কোথাও জড়াই, এর অর্থ, আমি তোমার সাথে আমার একাকিত্ব শেয়ার করেছি শুধু। এটাকে ভালোবাসা বলে না। আমরা আমাদের আশেপাশের মানুষকে ভালোবাসি তাদের অজান্তেও, সেই ভালোবাসা আর আমাদের দুজনের মাঝের ভালোবাসাটা একটু ভিন্ন। যদি তুমি আমাকে তোমার আশেপাশের মানুষের মতোই ভালোবেসে থাকো, তবে সেটা ভিন্ন কথা। আমি যখন তোমাকে মৃত্যুর কথা বলি, তখন এ কারণেই বলি, কেননা আমি তোমার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকতে পারব না, ওরকম করে থাকাটা আমার কাছে মৃত্যুর সমান। এখন হয়তো থাকছি, কিন্তু কয়েক বছর গেলেই এটা আমার সহ্যের সীমার বাইরে চলে যাবে। আমি তখন তোমাকে জেরা করতে থাকব। তার চেয়ে ভালো না এখনই মরে যাওয়া? তুমি মরে গেলে যেমনি তুমি বেঁচে যাবে, আমি মরে গেলেও তেমনি এসব যন্ত্রণা থেকে বেঁচে যাব। পালিয়ে বাঁচার এটাই একমাত্র রাস্তা। আমার দু-দিন ধরে কিছু ভালো লাগছে না, কারণ আমি তোমার সাথে সম্পর্কে জড়াবার পর থেকে এমন বাজে ব্যবহার আগে কখনও করিনি। কিন্তু এভাবে থাকতে আমার কষ্ট হয়, আমি কী করব, বলো? আমি তো তোমাকে বলেছি, তোমাকে ছেড়ে যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব, আবার তোমার এসব মেনে নিয়ে আগের মতো হয়তো কিছুই আমি করতে পারব না। কিন্তু তার মানে এ-ও না যে, তোমাকে আমি ছেড়ে যাচ্ছি। আমি আসলে একটা অপ্রস্তুত পরিস্থিতিতে পড়ে গেছি। আমি তোমাকে ছাড়ব না, কারণ আমি অন্য কারও সাথে আর কখনও কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারব না। আমি নিজেকে ভালোভাবেই চিনি, আমার আবার কোনও সম্পর্কে জড়াবার ধৈর্য আর নেই, সেটা যে সম্পর্কই হোক না কেন, কিন্তু তোমাকে আগের মতো শক্ত করে আর ধরাও হয়তো আর হবে না। আমি জানি না, কিন্তু সব কিছু কীভাবে যেন শেষ হয়ে গেল! দুই। আমার একটা ঘর ছিল, যেখানে গেলে আমার সব ক্লান্তি ফুরিয়ে যেত। আমার একটা ভরসার জায়গা ছিল, যেখানে আমি আমার সব কিছু চোখ বন্ধ করে রেখে দিতে পারতাম। আমি ভেবেছিলাম, আমি আমার জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষকে পেয়েছি। আমার একজন পরম শ্রদ্ধার মানুষ ছিল, যাকে কোথাও-না-কোথাও আমি আমার বাবা-মায়ের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছি। গতকাল রাতে আমার সেইসব কিছু ভেঙে গেছে। এই মুহূর্তে আমার কোথাও যাবার জায়গা নেই। কেননা পৃথিবীতে এমন কোনও জায়গা হয়তো নেই, যা আমার শূন্যতাকে ভরে দিতে পারে, যেখানে গেলে আমার ক্ষতগুলো সেরে উঠবে। তবে আমি আর কখনও, কোনও দিনই, কোনও আশ্রয় চাই না। হয়তো আর কোনও দিন আমার পক্ষে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়াটা সম্ভবই না। তিন। যে মানুষটি বন্ধুত্বের বেশি কিছু চায় না, তাকে 'ভালোবাসি' বলে ফেললে, প্রায়ই, বন্ধুত্বটুকুও চলে যায়। অনেকেই আছে, যাদের দেখলে মনে হয়, সে বুঝি ভালোবাসা চায়, যদিও সে চায় আসলে বন্ধুত্ব। সে হয়তো বন্ধুত্ব রাখতে চায়, এর বেশি কিছু না। আবার অন্য মানুষটি চায় বন্ধুত্বের চাইতে বেশি কিছু। তখন সে বন্ধুত্বের চাইতে বেশি কিছু দেবার অভিনয়টা করে যায় সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার স্বার্থে। একসময় শুরু হয় ভুল বোঝাবুঝি; অতঃপর, বন্ধুত্বেরও ইতি! জোর করে ভালোবাসা পাবার চেষ্টা করার কোনও মানেই হয় না, তার চাইতে বন্ধুত্বের উষ্ণতাটুকু বাঁচিয়ে রাখা অনেক ভালো।