বেদ ও ব্রহ্ম: দুই




অন্য এক মতে বলা হচ্ছে—আসলে যজ্ঞ বা আচারকর্ম মানুষকে আত্মজ্ঞান দেয় না, বরং আত্মজ্ঞানই মানুষকে আচারকর্মের যোগ্য করে তোলে। কীরকম? দেখা যাক।

কর্তা (যজমান) মানে, যিনি যজ্ঞ করেন। আত্মজ্ঞান লাভ করলে কর্তার ভেতরে অন্তঃশুদ্ধি ঘটে—অহংকার হ্রাস পায়, কামনা-বাসনা প্রশমিত হয়, মন ও ইন্দ্রিয় সংযত হয়। সাধারণ মানুষ কামনা ও ভোগলোলুপতার দ্বারা আচারকর্ম করে—ফলে যজ্ঞ অনেকসময় শুধু ভোগফলকামী হয়ে দাঁড়ায় (যেমন স্বর্গ, পশুধন লাভ ইত্যাদি)। কিন্তু আত্মজ্ঞানী হলে—সে ভোগের জন্য আচারপালন করে না, বরং কর্তব্য ও শাস্ত্রানুগ জীবনযাপনের অংশ হিসেবে করে; অর্থাৎ আত্মজ্ঞান তার দৃষ্টিভঙ্গি ও উদ্দেশ্যকে শুদ্ধ করে। সাধারণত বলা হয়—যজ্ঞ → মনশুদ্ধি → জ্ঞান। কিন্তু এখানে উলটোটা বলা হচ্ছে—জ্ঞান → মনশুদ্ধি → যজ্ঞে যোগ্যতা। আচারকর্ম জ্ঞানলাভ করায় না, বরং জ্ঞানলাভ করলে মানুষ সত্যিকারভাবে আচারপালনের উপযুক্ত হয়; কারণ আত্মজ্ঞান কর্তার অন্তঃশুদ্ধি ঘটায়, আর সেই শুদ্ধ কর্তার দ্বারাই যজ্ঞ শুদ্ধভাবে সম্পন্ন হতে পারে—আত্মজ্ঞান লাভ করলে কর্তার (অর্থাৎ যজমানের) শুদ্ধি ঘটে, তখন সে যজ্ঞও শুদ্ধভাবে করতে পারে।

এ বিষয়ে আরেক দল আচার্যের মত একটু ভিন্ন। তাঁরা বলছেন, যজ্ঞকর্ম আর আত্মজ্ঞান—এ দুটো সম্পূর্ণ আলাদা জগতের বিষয়। যজ্ঞ মানে কর্মশাস্ত্রের বিধান, আর আত্মজ্ঞান মানে উপনিষদের সত্য। যজ্ঞকর্ম দ্বৈততা প্রকাশ করে। যজ্ঞ সবসময় তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে: কর্তা—যে যজ্ঞ করছে। কর্ম—যে কাজ বা আচার সম্পন্ন হচ্ছে। ফল—যজ্ঞের ফল, যেমন স্বর্গ, ধন, পুণ্য ইত্যাদি। এই ত্রয়ী (কর্তা–কর্ম–ফল) ছাড়া যজ্ঞ হয় না। আর এই ত্রয়ী মানেই দ্বৈততা। অন্যদিকে, আত্মজ্ঞান মানেই অদ্বৈততা। এটি সেই উপলব্ধি, যেখানে বোঝা যায়—আত্মা ও ব্রহ্ম অভিন্ন, অদ্বিতীয়। এখানে কোনো কর্তা নেই, কোনো কর্ম নেই, কোনো ফলও নেই। সব দ্বৈত-বিভাজন বিলীন হয়ে যায় এক অখণ্ড চেতনায়।

যজ্ঞ দ্বৈততাকে ধরে রাখে, আর আত্মজ্ঞান দ্বৈততাকেই ভেঙে দেয়। যজ্ঞ সংসারধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ, আত্মজ্ঞান সংসারের ঊর্ধ্বে। তাই যজ্ঞ ও আত্মজ্ঞান—দুটো সম্পূর্ণ বিপরীত। যেমন আলো আর অন্ধকার একসাথে থাকতে পারে না, তেমনি দ্বৈত যজ্ঞকর্ম আর অদ্বৈত আত্মজ্ঞান একই জায়গায় মিলিত হতে পারে না। যজ্ঞকর্ম = কর্তা, কর্ম, ফল = দ্বৈততা। আত্মজ্ঞান = ব্রহ্ম ও আত্মার অভেদ = অদ্বৈততা। তাই এরা সম্পূর্ণ ভিন্ন জগতে অবস্থান করে, এদের মধ্যে কোনো যোগসূত্র নেই।

উপরের মতগুলির মধ্যে প্রথম মত গ্রহণযোগ্য নয়। যজ্ঞবিধানগুলো নিজ নিজ ফল (যেমন স্বর্গ, পশুধন ইত্যাদি) নিয়েই যথেষ্ট, এগুলোর আলাদা আরেকটি ফল খোঁজার প্রয়োজন নেই। আবার আত্মজ্ঞান বিষয়ক বিধি বা injunction (যেমন ব্রহ্মবিদ্যা অর্জনের জন্য ব্রহ্মচর্য, ইন্দ্রিয়সংযম ইত্যাদি) সেগুলোও নিজেই পূর্ণাঙ্গ, সেখানে যজ্ঞের কোনো প্রয়োজন নেই। তাহলে কীভাবে এদের ফল এক ধরা হবে?

যদি বলা হয়—“যজ্ঞের ফলে উল্লিখিত স্বর্গ, পশুধন ইত্যাদি আসল ফল নয়, বরং এরা অন্যকিছুর (আত্মজ্ঞানের) অধীন”—তবে সেটি যুক্তিসঙ্গত নয়। কেননা, যদি সমস্ত injunction ও prohibition-এর একমাত্র উদ্দেশ্য হয় নাম-রূপময় জগতের অস্বীকৃতি, তাহলে জীবজগতের জন্ম-মৃত্যু (সংসারের ওঠা-নামা) পূর্বকর্মের ফলের উপর নির্ভরশীল থাকবে না। এতে সংসার কার্যকারণশূন্য হয়ে যাবে। একইভাবে মুক্তিও কার্যকারণশূন্য হবে। আর তা হলে শাস্ত্রও অর্থহীন হয়ে দাঁড়াবে।

এখন বেদের কিছু বিষয় আপত্তি (Objection) ও খণ্ডনের (Reply) মাধ্যমে তুলে ধরছি।

আপত্তি: যজ্ঞকর্ম সংক্রান্ত বিধি-বাক্য বা injunction (যেমন—“যে স্বর্গ কামনা করে, সে যজ্ঞ করুক”)— এগুলোও আত্মজ্ঞান সম্পর্কিত; কারণ, এগুলো ফল (যেমন স্বর্গ) সম্পর্কে নির্দেশ দেয়। যেমন—কেউ যদি বলে: “তুমি কাঙ্ক্ষিত নগরে পৌঁছাতে চাইলে এই এই গ্রামের ভেতর দিয়ে যেতে হবে।” এখানে গ্রামের মধ্য দিয়ে যাওয়া মূল লক্ষ্য নয়; লক্ষ্য হলো নগরে পৌঁছানো। তবু গ্রাম পার হবার নির্দেশও সেই মূল নির্দেশের সাথে সম্পর্কিত। তেমনি, যজ্ঞফল (স্বর্গ, পশুধন ইত্যাদি) আসল লক্ষ্য নয়, আসল লক্ষ্য আত্মজ্ঞান। তাই যজ্ঞসংক্রান্ত বিধিগুলোও আত্মজ্ঞান সম্পর্কিত হিসেবে ধরা উচিত।

খণ্ডন: এই যুক্তি সঠিক নয়, কারণ গ্রামের উদাহরণে মূল লক্ষ্য হলো শহরে পৌঁছানো। গ্রাম পার হবার নির্দেশ কেবল অতিরিক্ত বা সহায়ক নির্দেশ—কারণ কেউ গ্রাম পার করতে চায় না, সে শুধু শহরে যেতে চায়। তাই গ্রামের নির্দেশ শহরে পৌঁছানোর নির্দেশের অধীন হয়ে যায়। কিন্তু যজ্ঞের ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা—যজ্ঞের ফল যেমন স্বর্গ ইত্যাদি, সেগুলো মানুষের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। তাই এগুলো কখনও “অতিরিক্ত” বা “অপ্রধান” বলা যায় না। এগুলো নিজেই পূর্ণাঙ্গ লক্ষ্য, যেগুলো মানুষ চায়। “যজ্ঞ আত্মজ্ঞানকে সাহায্য করে, কারণ স্বর্গ তো আসল লক্ষ্য নয়”—এই যুক্তি ভুল। যজ্ঞের ফল (যেমন স্বর্গলাভ) আসলেই মানুষের চাওয়া, তাই এগুলোকে “শুধুই যাবার পথে-পড়া গ্রামের মতো” ভেবে আত্মজ্ঞানের অধীন করা যায় না।

আপত্তি: যখন কাউকে কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছতে উদ্বুদ্ধ করা হয় এভাবে যে—পথে যে-গ্রামগুলো একে একে পড়বে, সেগুলোতে যাবার সুবিধাগুলো তাকে জানানো হয়—তখন সেই গ্রামসম্বন্ধীয় পূর্ববর্তী নির্দেশনাগুলো পরবর্তী নির্দেশনা তথা কাঙ্ক্ষিত ফললাভের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে পড়ে।

খণ্ডন: এটা ঠিক; কিন্তু সেখানে যা ঘটে, তা হলো—বক্তার উদ্দেশ্য অন্য কোনো প্রমাণ (জ্ঞানপ্রমাণ) দ্বারা জানা যায়। আসলেই, অন্য কোনো জ্ঞানপ্রমাণের দ্বারা এটাই জানা হয়: এই বিশেষ স্থানে পৌঁছলে বক্তার চাওয়া বস্তুটি লাভ করা যায়; সুতরাং বক্তার এ-ই উদ্দেশ্য। কিন্তু শুধু কথার (বাক্যবাণীর) দ্বারা এটা জানা যায় না।

এটা কেন অবশ্যই এমন হতে হবে, তার আরেকটি কারণও আছে। যখন প্রতিটি গ্রামেই কাঙ্ক্ষিত ফলের প্রাপ্তি ঘটতে দেখা যায়, এবং যখন বক্তা ও শ্রোতার উদ্দেশ্য যে, অন্য কোনো স্থানে পৌঁছতে হবে—সেটা অন্য কোনো জ্ঞানপ্রমাণ দ্বারা জানা যায় না, তখন নিকটবর্তী যারা কথাটা শোনে, তারা পূর্ববর্তী নির্দেশনাগুলোর অর্থ এটা বোঝে যে, কেবল সেই গ্রামগুলোর ফললাভেই উদ্দেশ্য সীমাবদ্ধ। তারা এটাও বোঝে যে, অন্য স্থানের ব্যাপারে যা নির্দেশনা, তা-ও সেখানকার নিজস্ব ফললাভের জন্যই।

যদিও বাস্তবে পূর্ববর্তী নির্দেশনাগুলিতে যেসব বস্তুকে বোঝানো হয়েছে, সেগুলো অন্য বস্তুর (শেষ লক্ষ্য) প্রাপ্তিতেও সহায়ক, তবু সেসব কথার দ্বারা যে-অর্থ বোঝানো হয়েছে, সেটাকে এভাবে ধরা হয় না। যেমন ধনসম্পদ অর্জনের নির্দেশনা যজ্ঞকর্মের জন্য সহায়ক হলেও, নির্দেশনাটির নিজস্ব উদ্দেশ্য যজ্ঞ নয়; ধনলাভই তার উদ্দেশ্য।

অতএব, বেদের injunction বা বিধানগুলির ক্ষেত্রে, তাদের অর্থ কেবল বাক্যের দ্বারা যেমন বলা হয়েছে, তেমনই ধরতে হবে—কারণ এখানে অন্য কোনো জ্ঞানপ্রমাণ পাওয়া যায় না। অধিকন্তু, যেহেতু পথে গ্রামগুলির বিষয়ে যে-নির্দেশ দেওয়া হয়, তার অর্থ বোঝা হয় কেবল সেই গ্রামগুলির ফললাভে, তাই যে-ব্যক্তি তা শোনে, সে সেই গ্রামগুলোতে যায় এবং কাঙ্ক্ষিত বস্তু লাভ করে। কিন্তু যদি ধরে নেওয়া হয় যে, নির্দেশনার উদ্দেশ্য কেবল শেষস্থানে পৌঁছনো, তাহলে সে গ্রামের দিকে যাবেই, এমন নয়। কারণ, শেষস্থানে পৌঁছনোই যদি একমাত্র উদ্দেশ্য হয়, তবে সে অন্য কোনো পথ দিয়েও যেতে পারে।

আবার, ব্যাখ্যা করতে হবে—কীভাবে যজ্ঞসংক্রান্ত injunction (বিধান) বাস্তব বিচারে আত্মজ্ঞান-লাভে সহায়ক হয়। যদি বলা হয় যে, এগুলো কামনা প্রভৃতি দ্বারা উদ্দীপ্ত দৃশ্যমান স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপকে বাধা দেয়—তবে সেটা নিষেধাজ্ঞার (prohibition) ক্ষেত্রে মানা যায়; কিন্তু injunction বা বিধান কীভাবে সেগুলোকে প্রতিরোধ করে, সেটি স্পষ্ট করতে হবে।

এর কারণ—এগুলো আসলে বিশেষ নিষেধাজ্ঞা নয়, কিংবা সীমাবদ্ধকারী বিধি-বাক্যও নয়; এরা যা-কিছু নির্দেশ করে, তা একেবারেই অজানা বিষয়। ইতিমধ্যেই পরিচিত কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে বিধি-বাক্যকে অবশ্যই কোনো কিছু বর্জনের অর্থে বোঝা যেতে পারে; যেমন অহিংসা পরম ধর্ম—সহিংসতায় লিপ্ত হয়ো না। এই বিধি দ্বারা হিংসাত্মক আচরণকে যার বর্জন করার ব্যাপারে নির্দেশ করা হচ্ছে। কিন্তু শাস্ত্রনির্দিষ্ট আচার ও কামনা-উদ্দীপ্ত স্বাভাবিক ক্রিয়া যদি একই ফলের দিকে নিয়ে যায়, তবে তাদের মধ্যে সংঘাতের কারণে স্বাভাবিক ক্রিয়াগুলির বিলোপ ঘটছে—এভাবে বলা যাবে না।

শাস্ত্রনির্দিষ্ট আচার, যেমন যজ্ঞ, দান, অগ্নিহোত্র—যেগুলো শাস্ত্রে বিধি-বাক্য দ্বারা নির্ধারিত। এগুলোর ফল হতে পারে স্বর্গ, পুণ্য বা মানসিক শুদ্ধি। কামনা-উদ্দীপ্ত স্বাভাবিক ক্রিয়া হচ্ছে স্বাভাবিক মানুষের প্রেরণাপ্রসূত কাজ—যেমন ধনলাভের জন্য পরিশ্রম, ভোগের জন্য ভ্রমণ, বা সংসাররক্ষার জন্য কর্ম। এগুলোও কামনার দ্বারা চালিত, এবং এর ফলও সুখ বা ভোগ হতে পারে। যদি দেখা যায়, শাস্ত্রবিধিত যজ্ঞ আর সাধারণ কাম্যকর্ম—দুটোই একই ফলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে (যেমন: ভোগ বা সুখপ্রাপ্তি), তখন প্রশ্ন উঠতে পারে: যেহেতু শাস্ত্রনির্দিষ্ট আচার আর স্বাভাবিক কাম্যকর্ম একই ফল দেয়, তাহলে কি এদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হলো? আর যদি দ্বন্দ্ব হয়, তবে কি স্বাভাবিক কাজগুলো (যেগুলো কামনার দ্বারা চালিত) বাতিল হয়ে যাবে?

এর উত্তর: না, স্বাভাবিক কাম্যকর্মগুলো শাস্ত্রীয় আচার দ্বারা বাতিল হয় না। কারণ, শাস্ত্রনির্দিষ্ট আচার নিজস্ব আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্যে প্রযোজ্য। আর স্বাভাবিক কাজগুলো প্রাকৃতিক কামনা ও প্রত্যক্ষ ফলের দ্বারা চালিত। তারা একই ফল (যেমন সুখ) লক্ষ্য করলেও, একে অপরকে নাকচ করে না। একটি সহজ উদাহরণ দেখি। শাস্ত্রীয় আচার: অগ্নিহোত্র করলে স্বর্গফল হবে। স্বাভাবিক ক্রিয়া: ধন উপার্জন করে ভোগ করলে সুখফল হবে। দুটোই আনন্দ/ভোগ আনতে পারে, কিন্তু যেহেতু উৎস ও উদ্দেশ্য আলাদা, তাই একে অপরকে বাদ দিয়ে দেয় না। শাস্ত্রীয় আচার (যজ্ঞাদি) আর স্বাভাবিক কাম্যকর্ম (সাধারণ ভোগমূলক কাজ) ফলের দিক থেকে এক জায়গায় মিললেও, তাদের মধ্যে সংঘাত নেই। তাই শাস্ত্রীয় বিধান আসার কারণে স্বাভাবিক কাজগুলো বাতিল হয়ে যায়—এমনটা বলা যাবে না।

শবরস্বামী বলেন—বিধি হলো এমন বাক্য, যা “এটা করো”—এই কর্তব্যবোধ জাগায়। উদাহরণ: “স্বর্গ কামো যজেত” → যে স্বর্গ কামনা করে, সে যজ্ঞ করুক। এখানে injunction (vidhi) নতুন একটা কর্তব্য স্থাপন করছে। অন্যদিকে, নিষেধ (Niṣedha) হলো এমন বাক্য, যা “এটা কোরো না”—এই বারণ বোঝায়। উদাহরণ: “মধু না ভক্ষেত” → মধু খেয়ো না। এটা কোনো কর্তব্য নয়, বরং নির্দিষ্ট একটি কাজকে স্পষ্টভাবে বন্ধ করছে। শবরভাষ্যে স্পষ্ট বলা আছে→ বিধি কোনোদিন নিষেধ হয়ে যায় না। উদাহরণ: যদি শাস্ত্রে বলা হয়, “অগ্নিহোত্র করো” → তার মানে অন্য যজ্ঞ বা অন্য কাজ নিষিদ্ধ, এমন নয়। অন্য কিছু সত্যিই নিষিদ্ধ করতে হলে শাস্ত্র আলাদা করে বলবে, “অমুক কাজ কোরো না।”

প্রশ্ন উঠেছিল: যদি শাস্ত্রনির্দিষ্ট যজ্ঞ (injunction) আর কামনা-প্রেরিত স্বাভাবিক ক্রিয়া (natural action) একই ফল আনে, তবে কি natural action নিষিদ্ধ হয়ে যায়? শবরভাষ্যের উত্তর: না। কারণ injunction কেবল নতুন কর্তব্য স্থাপন করছে, অন্য কোনো natural কাজকে বাতিল করছে না। injunction ≠ prohibition। বিধি (vidhi): কর্তব্য নির্দেশ → “এটা করো।” নিষেধ (niṣedha): বারণ নির্দেশ → “এটা কোরো না।” এরা একে অপরের স্থানে কাজ করে না। injunction কোনো কাজ নিষিদ্ধ করে না, শুধুই নতুন কর্তব্য বলে। prohibition আলাদা বাক্যে আসে, injunction থেকে জন্মায় না।