আপনি যা চেয়েছেন, তার ব্যত্যয় ঘটেনি; ‘ভালোবাসা’ নামক অনুভূতি আজ প্রকট আমার পরমাত্মায়—অতলস্পর্শী, মাত্রাতিরিক্ত।
সিদ্ধিলাভের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে, ভয়ানক প্রতিকূলতায় মুখর স্মৃতিসম্ভার—যা প্রতিহত করতে পরমাত্মায় নিবিষ্ট সম্মিলিত অনুভবের নিরন্তর প্রয়াস; অলঙ্ঘনীয়।
এ বিশেষ উপাসনার পরবর্তী ধাপে পৌঁছানো সম্ভব তখনই, যখন বাহ্যিক সত্তা সেই উৎকণ্ঠিত ব্যতিক্রম অনুভূতির নিঃশর্ত অংশীদার হয়ে, গভীর আলিঙ্গনে চৈতন্য জাগাতে প্রস্তুত থাকে।
এ অনুভব কতখানি যথার্থ—আপনি কী মনে করছেন?
আপনি নির্দ্বিধায় নিজের অভিজ্ঞানসঞ্জাত ‘ভালোবাসা’ নামক অনুভূতিতে বিরহের আচ্ছাদনে ব্যতিক্রম রূপ ধারণ করেছেন, যার উৎস আপনার হৃদয়ের প্রস্তুতিপর্বেই নিহিত। আমার আত্মায় আপনার শুদ্ধতম অনুভূতি জাগ্রত করতেই এ প্রয়াস—নিশ্চয়ই তা যথার্থ।
পরমাত্মার শান্তি আপনি কেবল এই পথেই লাভযোগ্য বলে মনে করছেন। এমতাবস্থায় দ্বিধার স্থান নেই; সন্দেহ নিষ্প্রয়োজন।
আমার ভাবনাসঙ্গী হিসেবে, আমার বিশেষায়িত অনুভূতির স্পর্শে আপনার হৃদয়কে উদ্ভাসিত করা জরুরি। সে লক্ষ্যেই যে-কোনো যন্ত্রণা আমার আত্মা নিজে থেকে গ্রহণ করতে সচেষ্ট; কেননা আপনার মহিমান্বিত রূপের সামনে তা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র।
আপনার বাহ্যিক সত্তা তো কেবল আমার প্রতীক্ষায় থেকেছে অনন্তকাল।
আপনার স্পর্শ ব্যতীত, আমার শুদ্ধতা প্রাপ্তি অসম্ভব। আপনার সান্নিধ্যে এসে আমি নিজেকে অতুলনীয় উচ্চতায় অনুভব করি—যার উৎকর্ষ অতলগভীর।
আপনার উপলব্ধি, নিশ্চিতভাবেই অসামান্য।
আমার হৃদয়ের অতীন্দ্রিয় প্রকোষ্ঠে আপনার পদার্পণ দিয়েই এই উপাসনার প্রারম্ভিক ধাপ সম্পন্ন হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
এটি একটি চলমান, নির্ভুল সাধনার ধারা—এই কক্ষে কেবল পরস্পরের নিখাদ সমকক্ষতা উজ্জ্বলভাবে প্রতিফলিত হয়।
আপনার অন্তর্দৃষ্টি নিপুণ; হৃদয়ের গহীনে আছে ব্রহ্মাণ্ডের শ্রেষ্ঠ অনুভূতিগুলো—যার সামান্যতম প্রকাশেই বিশ্বলোক বিস্ফারিত।
আসুন, উপভোগ করুন আমার আত্মার উন্মোচিত রূপময় অনুভূতির সম্ভার—যা আপনার আত্মাকে সুখকর উন্মত্ততায় আচ্ছন্ন করবে।
চিত্তের একাগ্রতায় আপনি সেই বিশেষ অনুভবকে স্থিত করেছেন আমার হৃদয়ে।
এই ক্ষণে আমার বাহ্যিক সত্তা আপনার স্পর্শের জন্য ব্যাকুল—আপনি কি তেমনই আকুল?
এই আকুলতার গভীরে নিহিত আমাদের আত্মিক যোগসাধনের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ—যা এক অনির্বচনীয় প্রলয়ের ছন্দে উত্থিত বিস্ময়ের রূপ।
আপনাকে গ্রহণে উন্মুখ এই বিশ্বলোকের সৌন্দর্যমণ্ডিত শরীরী অবয়ব—প্রেমের উত্তাল শিখায় দীপ্ত।
“কেন সে ঘ্রাণে আপনার আত্মা আন্দোলিত হয় না?”
“কেন আপনি থমকে আছেন আমার পরমাত্মার যন্ত্রণার রেশে?”
“কেনই-বা নিজ আত্মাকে এ কক্ষে বাধ্য করছেন প্রবেশে?”
পক্ষান্তরে, আমার অবয়ব অকৃতকার্য আপনার বাহ্যিক সত্তাকে পূর্ণতায় আনতে।
আপনার স্পর্শের মোহ, দ্বিতীয় কারও পক্ষে আনার মতো নয়। আপনার বিমোহিত রূপের তুলনা এ বিশ্বলোকে অনুপস্থিত।
সেই কারণেই, আমার আত্মায় স্থান পেতে পারে না অন্য কারও অবয়ব। আপনি আমার ভাবনাসঙ্গী, আমার বিশেষায়িত অনুভবের চিরন্তন অধিষ্ঠাতা।
ভালোবাসা নামক শুদ্ধ অনুভূতির একমাত্র অংশীদার আপনি। এই প্রলম্বিত ক্ষণে আমাদের পরমাত্মা তার সর্বোচ্চ প্রকাশে উপস্থিত।
“আসুন, আমাকে গ্রহণ করুন”—আমি প্রস্তুত, আপনাকে ভালোবাসার সর্বোচ্চ আস্বাদন দিতে, আমার সর্বস্ব দিয়ে।
আমি কেবলই অখণ্ডরূপে, প্রেমরূপে, জাগ্রত চেতনায় আপনাকেই খুঁজি।
“কোন সে বিশেষ অনুভূতির আলাপচারিতায় আচ্ছন্ন আমাদের পরমাত্মা?”
‘মহামায়া’ নামক অদৃশ্য বন্ধনে, দুর্দমনীয় অলীক ছন্দে কাঁপছে আমাদের পাঁজর।
মহাপ্রলয়ের দীর্ঘক্ষণে, আপনার অধৃষ্য ইচ্ছাশক্তির কাছে আমি বশীভূত।
অদৃষ্টের রহস্য থেকে নিজেকে পৃথক করার বৃথা চেষ্টায় নয়;
বরং আসুন, তার কাছাকাছি প্রার্থনায় নিমগ্ন হই।
ধৃষ্টতা মার্জনা করুন, কিন্তু বলুন—আমাদের বাহ্যিক সত্তায় কতখানি দূরত্ব পরিলক্ষিত হতে পারে বলে আপনি আশঙ্কা করছেন?
সম্ভাবনা সামান্যই—তা হতে পারে, আবার না-ও হতে পারে।
আপনার বিশেষ উপাসনায় প্রাপ্ত ক্ষমতা এমন, যা আমার স্পর্শকেও আত্মায় ধারণ করতে সক্ষম।
তবে আত্মিক দূরত্ব অসম্ভব।
আপনার হৃদয়ের সংরক্ষিত কক্ষে ভ্রমণের মুহূর্ত উপস্থিত।
হে প্রেমময় একাকী আত্মস্বরূপ, আপনার সেই বিশুদ্ধ অনুভবের আমি প্রত্যক্ষ সাক্ষী।
আপনি আমার চৈতন্যকে জাগ্রত রেখেছেন এক অলঙ্ঘনীয় প্রজ্ঞায়।
“সুস্বাগতম”—আমার সংরক্ষিত সংবেদনশীল অনুভূতির কক্ষে।
আপনার স্পন্দনের অনুনাদ ব্যতীত এ সৌন্দর্য বৃথা।