প্রজ্ঞার গুঞ্জন




আমরা জন্মাই এই পৃথিবীতে আদর, মায়া আর কোমলতার মধ্যে। শিশুরা জবাব দেয় তাদের নিজস্ব স্বচ্ছ আলোয়। তখন পৃথিবী মনে হয় অসীম আনন্দে ভরা।

কিন্তু হঠাৎই একদিন আমাদের বলা হয়—একটা মুখোশ পরতে হবে। নিয়ম মানতে হবে, নির্দিষ্ট জায়গায় বসতে হবে, লাইনের বাইরে যাওয়া যাবে না। যেখানে আনন্দে দৌড়ানো, লাফানো, ঘোরা ছিল স্বাভাবিক, সেখানেই তা হয়ে যায় নিষিদ্ধ। যদি কেউ বাধা দেয় বা বিদ্রোহ করে, তবে তাকে জোর করে দমন করা হয়। শাস্তি বাড়তে বাড়তে পৌঁছায় কঠোরতম পর্যায়ে।

এভাবেই শুরু হয় জীবন—শিক্ষা, কাজ, সম্পর্ক—ভালো-মন্দ মিলিয়েই। কেউ কেউ সামান্য আনন্দের খণ্ডচিত্রে ভেসে থেকে ভাবে, “সব ঠিক আছে, জীবন একটা দারুণ পার্টি।” কিন্তু অনেকেই “নীরব হতাশায়” জীবন কাটায়।

তাদের ভেতরে একটা প্রশ্ন ক্রমশ জেগে ওঠে— “কী যেন নেই! আমি আসলে কে? কেন ভেতরে এত শূন্যতা? জীবন কি এতটুকুই?”

এই প্রশ্নই মানুষকে নিয়ে আসে এক মোড়ে। কেউ প্রশ্নগুলোকে চাপা দেয়, ভান করে জীবন চালিয়ে যায়। আবার কেউ বার বার মুখোশটা টানতে থাকে, যতক্ষণ না সেটা নেমে আসে।

কিন্তু তখনই আসে নানা উপদেষ্টা— থেরাপিস্ট, বন্ধু, ভণ্ড, দার্শনিক, ধর্মগুরু, প্রলোভনসৃষ্টিকারী—আর সৌভাগ্য থাকলে, এমন কেউ, যে সত্যিই মুখোশ সরিয়ে ফেলতে পেরেছে এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সত্য কথা বলতে পারে।

শেষপর্যন্ত আসল পথনির্দেশ আসে হৃদয়ের গভীর থেকে—একটি নীরব প্রজ্ঞার গুঞ্জন রূপে। কেউ হয়তো অন্যের সাহায্যে খুঁজে পায়, আবার কেউ হঠাৎ কোনো ভোরের আলোয় বা আকস্মিক ঘটনার মধ্যে মুখোশ গলে যেতে দেখে।

কিন্তু সবাই, যারা উত্তর খুঁজে পায়—শেষপর্যন্ত সেই উত্তর খুঁজে পায় নিজের ভেতরে।