পিজার টুকরো




পরম আলোকপ্রাপ্তি বা জাগরণ বোঝাতে পিজার উদাহরণ ব্যবহার করা যাক। আমরা কেউই পুরো পিজা বা অন্য কারও প্লেটের পিজা দেখতে পাই না, কেবল নিজের প্লেটের টুকরোটি দেখতে পাই। অন্য টুকরোতে টপিং কী আছে বা ওটার সাইজ কেমন, এসব মাথায় না এনেই মনে হতে থাকে, আমার প্লেটের টুকরোটিই সেরা।

এখানেই প্রথম বিভ্রান্তি তৈরি হয়। আমার ধারণা, আমার অভিজ্ঞতাই আসল, অন্যদেরটা বাজে—এমন ভাবনা আসে, অথচ সত্যিকারের জাগরণে এরকম তুলনার কোনো স্থান নেই।

এর কারণ কী? আসল জাগরণ কোনো মতামত নয়, কোনো ধারণাও নয়। এটা সরাসরি অভিজ্ঞতা। আর যে-কেউই, যে সত্যি সত্যি সেই অভিজ্ঞতা লাভ করে, সে যে ধর্ম, সংস্কৃতি বা ভাষায় কথা বলুক না কেন—অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলা সকল বর্ণনায় মিল পাওয়া যায়, কারণ সত্য একটাই।

আরেক ধরনের বিভ্রান্তি আছে, যা তৈরি হয় বলার ধরনের কারণে।

যখন বলা হয়, “নিজের প্লেটের দিকে তাকালে পুরো পিজা দেখা যায় না”, তখন আসলে পৃথিবীর সব ঘটনা বা তথ্যকে বোঝানো হয়। সেটা আপেক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গি।

সত্যিই তো—মানুষ সব ঘটনা, প্রতিটি ক্ষুদ্র বিষয় পুরোপুরি জানতেই পারে না। কিন্তু যদি পিজাকে রূপক ধরা হয় পূর্ণ জাগরণের, তাহলে পুরো পিজা দেখা সম্ভব। তখন জাগরণ মানে পুরো সত্য দেখা। এটি আর টুকরো নয়, এটি সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা। এর জন্য শুরুতে ফিরে যেতে হয়—অখণ্ড পিজার দিকে তাকাতে হয়, স্লাইসের দিকে নয়।

জাগরণ মানে হলো ঈশ্বরের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া, বা যাকে যে-নামেই ডাকা হোক—ওই পরম চেতনায় একাত্ম হওয়া। তখন সব কিছুর অন্তরালে যে গভীর কার্যকারণ চলছে, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

এখন এখানেই আরেকটি সমস্যা দেখা দেয়—অহম্‌। যদি কেউ অহম্‌ থেকে বলে—“আমি সব জানি, আমি শ্রেষ্ঠ”—তাহলে সেটি দাম্ভিকতা শোনায়। কিন্তু যদি তা আসে আসল অভিজ্ঞতা থেকে, তবে সেটা নিছক এক প্রতিবেদন, যেখানে “আমি” বলে কিছু নেই, শুধু অভিজ্ঞতা আছে।

মানুষের চিন্তা ও যুক্তি সবসময় বলে—“সব কিছু ব্যাখ্যা করতে হবে, সব কিছু বোঝা সম্ভব।” কিন্তু সত্য হলো—পার্থিব জগতে অনেক কিছুই অমীমাংসিত থেকে যাবে। এখানে সব কিছু জানা সম্ভব নয়।

কিন্তু আধ্যাত্মিক জগতে যুক্তি বা বিশ্লেষণ চলে না। ওখানে জ্ঞান হয় একেবারে সম্পূর্ণ ও নিখুঁত। না হলে সেটা আলোকপ্রাপ্তি নয়।

এক দিক থেকে সত্য হলো—মানুষ সব কিছু বুঝতে পারে না (আপেক্ষিক সত্য)।
আরেক দিক থেকে সত্য হলো—জাগরণে সব কিছু একসাথে ধরা পড়ে (পরম সত্য)।
অর্থাৎ—বাস্তবতা একটাই; কিন্তু তাকে বোঝার দুটি রূপ আছে—একটি সীমিত, আরেকটি অসীম।

যেহেতু আপনি জানেনই না, কার স্লাইস কেমন, তাই কেবল নিজের স্লাইসটি নিয়ে মতামত দেওয়াই ভালো; ন্যূনতম‌ও বুদ্ধি থাকলে তুলনায় যাবেন না।