কঠিন চীবর দান আসলে জীবনেরই প্রতিরূপ—যেখানে শীলের সংযম, সমাধির স্থিরতা, প্রজ্ঞার আলো, অনাসক্ত কর্মের নিঃস্বার্থতা ও অনিত্যতার বোধ একত্রে মিলিত হয়। বস্ত্র যেমন দেহকে আচ্ছাদন দেয়, তেমনি এই দানের মনোভাব মনকে আচ্ছন্ন করে শান্তিতে। এ যেন এক অভ্যন্তরীণ চীবর—করুণা ও সংযমের সূতোয় বোনা, অনিত্যতার রঙে রাঙানো—যেখানে মানুষ শেখে, দান মানে দেওয়া নয়, বরং নিজের অন্তরকে উন্মুক্ত করে রাখা।
বর্ষাবাসের পর সংঘে যে বিশেষ আনন্দ, তা কেবল নিয়মভঙ্গের ছুটি নয়; বরং নিয়মপালনের পুরস্কার—সামঞ্জস্য ও ঐক্যের ফল। দৃষ্টিগোচরে যেমন শোভাযাত্রা, দীপ, ফুল, ঢাক-কাঁসার মৃদু ধ্বনি, তেমনই অন্তর্দৃষ্টিতে এটি এক শৃঙ্খলাবদ্ধ মুক্তি। শৃঙ্খলা ছাড়া মুক্তি হলো অবক্ষয়, আর মুক্তি ছাড়া শৃঙ্খলা—কঠোরতার মুখোশ। কঠিন চীবর দান এই দুইয়ের সমীকরণ শেখায়: সংযমে গতি, করুণায় দৃঢ়তা, কর্মে নীরব আনন্দ।
এই কারণে কঠিন চীবর দান বার্ষিক আচার নয়—এটি এক প্রাত্যহিক অস্তিত্বশিক্ষা। আমরা শিখি, “থাকা”র ভিত না থাকলে “চলা” অর্থহীন; “করুণা”র হৃৎকমল না থাকলে “কর্ম” ধর্ম নয়। চীবরের কোমলতা যেমন দেহকে স্নিগ্ধ রাখে, তেমনি তার অন্তর্নিহিত “কঠিন”—ফ্রেমের দৃঢ়তা—চিত্তকে স্থির রাখে। এই দ্বৈত সংকেতটাই দানের সার—মনের নরমতা ও চরিত্রের দৃঢ়তা একত্রে থাকলেই জীবের প্রতি অবারিত দয়া কার্যকর হয়। শেষ পর্যন্ত আমরা দেখি, তিন রত্ন—বুদ্ধ, ধর্ম, সংঘ—কোনো বেদীর উপর দূরে বসে নেই; তাঁরা চীবর-তাঁতে বোনা। সুতোয় সুতোয়—করুণা, সংযম, প্রজ্ঞা—আমাদেরই জীবনে পরিধেয় হয়ে ওঠে।
জৈন ধর্মেও একই ধারণা বর্ষাবাস নামে বিদ্যমান, কিন্তু এখানে তার ব্যাখ্যা আরও সূক্ষ্ম—জৈন সন্ন্যাসীরা বর্ষাকালে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে অহিংসা ও করুণার সাধনা করেন। কারণ এই সময়ে প্রকৃতির প্রাণচাঞ্চল্য সর্বাধিক, ক্ষুদ্রতম জীবও জেগে ওঠে, তাই অসচেতনে হত্যা বা ক্ষতি করার আশংকাও বাড়ে। সেই কারণে জৈন ধর্ম এই সময়কে বলে “করুণার ঋতু”—যেখানে জীবের প্রতি সর্বোচ্চ সহানুভূতি প্রদর্শন করা হয়।
জৈন দর্শনের দৃষ্টিতে বর্ষাবাস বা এই চার মাসের স্থিতিশীল সময়কাল কেবল একটি আচারিক অধ্যায় নয়; এটি আত্মার গভীরতম পরিশুদ্ধির পর্ব। যখন প্রকৃতি নিজেই বিশ্রাম নিচ্ছে—বৃষ্টি পড়ছে, জীবজন্তু আশ্রয় নিচ্ছে, পথঘাট কাদা ও জলে ভরে গেছে—তখন সন্ন্যাসীও থেমে যান বাইরের পথচলা থেকে। কিন্তু এই থেমে থাকা বাইরের নয়, ভেতরের। জৈন সাধক এই সময় নিজস্ব অন্তঃযাত্রা শুরু করেন—একটি যাত্রা আত্মশুদ্ধি, প্রতিক্রমণ, জ্ঞানচর্চা ও ব্রহ্মচিন্তার দিকে, যার উদ্দেশ্য মোক্ষের পথে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।
প্রথমে আসে আত্মশুদ্ধি—যা জৈন ধর্মে জীবের মূল ধর্ম। জৈন তত্ত্ব বলে, প্রতিটি জীব আসলে শুদ্ধ চৈতন্যস্বরূপ, কিন্তু সে কষায় (রাগ, দ্বেষ, মায়া, লোভ)-এর দ্বারা আবৃত। এই কষায়ই বন্ধন সৃষ্টি করে, আর আত্মশুদ্ধি হলো সেই আবরণ ধীরে ধীরে অপসারণের সাধনা। সন্ন্যাসীরা এই সময়ে মন, বাক্য ও শরীরের প্রতিটি ক্রিয়াকে পর্যবেক্ষণ করেন—যেন কোনো সহিংস চিন্তা, বাক্য বা কর্ম তাদের আত্মাকে আবার কলুষিত না করে। আত্মশুদ্ধি মানে অপ্রমত্ততা—মনোযোগ ও সতর্কতায় বসবাস করা, যাতে অজান্তেও প্রাণহানি বা হিংসা না ঘটে।
জৈন ধর্মের মূল ভাবনা হলো, প্রতিটি আত্মা নিজে থেকেই পরিপূর্ণ, অসীম জ্ঞান, দর্শন, শক্তি ও আনন্দের অধিকারী। কিন্তু এই আত্মা যখন রাগ, দ্বেষ, মায়া, লোভ ইত্যাদি কষায়ে ঢেকে যায়, তখনই সে সংসারের বন্ধনে জড়িয়ে পড়ে। মুক্তি মানে এই কষায় ও কর্মের আবরণ ধীরে ধীরে ঝরিয়ে ফেলা।
এখানেই আসে “পুরুষার্থ” বা নিজস্ব প্রচেষ্টার গুরুত্ব। জৈন দর্শনে কোনো সর্বশক্তিমান ঈশ্বর নেই, যিনি করুণা করে আত্মাকে মুক্তি দেন। দেবতা বা তীর্থঙ্করগণ পথপ্রদর্শক মাত্র; তাঁরা নিজের সাধনার দ্বারা মুক্তি অর্জন করেছেন, অন্যের মুক্তি তাঁরা দান করতে পারেন না। তাই আত্মার মুক্তি কারও আশীর্বাদে নয়, নিজের সচেতন সাধনায়, নিজের আত্মবোধ ও সংযমে। এই প্রচেষ্টা—যাকে বলা হয় পুরুষার্থ—হলো জৈন ধর্মের মূল নীতি: “আমি-ই আমার ত্রাণকর্তা।”
এই পুরুষার্থ মানে কেবল ইচ্ছাশক্তি নয়, তা হলো সঠিক কর্ম, সঠিক জ্ঞান ও সঠিক দর্শনের সংগত সমন্বয়। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে জৈন সাধক সচেতন থাকেন যেন তাঁর মন, বাক্য ও কর্ম হিংসা, মিথ্যা, চুরি, কাম ও আসক্তি থেকে মুক্ত থাকে। এই নিয়মিত সতর্কতা, আত্মসমালোচনা ও সংযমই আত্মাকে ভারমুক্ত করে তোলে। ফলে বলা হয়—জৈন ধর্মে মুক্তি কোনো “দেব-অনুগ্রহে” নয়, বরং “আত্ম-উদ্যমে”; আত্মশক্তিই এখানে দেবত্বের প্রতিরূপ।
অর্থাৎ, “তাঁরা নিজেকে সামঞ্জস্যে ফেরান”—এই কথার মানে হলো, জৈন সন্ন্যাসীরা প্রতিদিন নিজেদের চিন্তা ও কর্মের সঙ্গে নৈতিক সামঞ্জস্য স্থাপন করেন, যেন তাঁদের ভেতরের আত্মা নিজের আসল দীপ্তিতে ফিরে আসতে পারে। এবং “আত্মার মুক্তি কোনো দেব-অনুগ্রহে নয়, বরং পুরুষার্থে”—এর অর্থ, মুক্তি কোনো বহিরাগত দয়া নয়; এটি নিজের চেতনার শুদ্ধি, নিজের প্রচেষ্টা, নিজের সত্যজীবনের ফসল।
এই আত্মশুদ্ধির এক কার্যকর উপায় হলো প্রতিক্রমণ—যা জৈন আচারপদ্ধতির হৃদয়। প্রতিক্রমণ মানে ফিরে দেখা, নিজের প্রতিটি দিনের কাজ, চিন্তা, বাক্য ও আবেগ পর্যালোচনা করা। এই প্রক্রিয়ায় সন্ন্যাসী বা গৃহস্থ নিজেকে প্রশ্ন করেন—আমি আজ কাউকে কষ্ট দিয়েছি কি না, কোনো জীবের ক্ষতি করেছি কি না, মিথ্যা বা অতিরিক্ত ভাষা ব্যবহার করেছি কি না, অজান্তে অহংকারে ভেসেছি কি না।
প্রতিক্রমণ (Pratikramaṇa) কেবল অনুতাপ বা দুঃখপ্রকাশ নয়, বরং আত্মসংযমের এক নতুন সূচনা। জৈন দর্শনের দৃষ্টিতে, মানুষ যতদিন জীবিত, ততদিন কোনো না কোনোভাবে ক্ষুদ্র পাপ, হিংসা বা অসততা ঘটে—কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে, কখনও অজান্তে। প্রতিক্রমণ হলো সেই সমস্ত কর্মের দিকে ফিরে দেখা, সেগুলোর দায় স্বীকার করা, এবং ভবিষ্যতে যেন আর না ঘটে—তার জন্য নতুন সংকল্প গ্রহণ করা।
অর্থাৎ, প্রতিক্রমণ মানে শুধু “আমি ভুল করেছি” বলা নয়; বরং “আমি নিজেকে পরিবর্তন করব” বলা। এই পরিবর্তনের অঙ্গীকারই আত্মসংযমের পুনর্নবীকরণ—যেখানে মানুষ নিজের মন, বাক্য ও কর্মকে আবার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি অসাবধানতাবশত কোনো ক্ষুদ্র প্রাণীর ক্ষতি করে ফেলে, প্রতিক্রমণে সে তার প্রতি অনুতাপ জানায়, নিজেকে স্মরণ করিয়ে দেয়—“আমি জীবহিংসা থেকে বিরত থাকব,” এবং এরপর আরও সতর্ক হয়ে চলে।
“পুনর্নবীকরণ” শব্দটির মূল অর্থ হলো—আবার নতুন করে গঠন করা, বা নতুন জীবন দান করা। এটি দুটি অংশে ভাঙলে বোঝা যায়—“পুনঃ” অর্থাৎ “আবার” এবং “নবীকরণ” অর্থাৎ “নতুন করে তোলা”।
এই শব্দের গভীর দার্শনিক মানে হলো—পুরোনো ভুল, অজ্ঞানতা বা ক্লান্ত অবস্থাকে ফেলে দিয়ে আত্মাকে নতুনভাবে জাগিয়ে তোলা। জৈন ধর্মে এটি কেবল বাইরের পরিবর্তন নয়; এটি অন্তরের পুনর্গঠন। যেমন একটি গাছ শুকিয়ে গেলে তাকে ছাঁটাই করলে আবার নতুন কুঁড়ি ফোটে, তেমনি আত্মাও প্রতিক্রমণের মাধ্যমে পুরোনো পাপ, অনুতাপ ও আসক্তির ভার ঝরিয়ে নতুন সততা ও সংযমে পুনর্জীবন লাভ করে।
অর্থাৎ, প্রতিক্রমণ হলো সেই “পুনর্নবীকরণ”—যেখানে মানুষ নিজেকে নতুন করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করে: আর হিংসা নয়, আর মিথ্যা নয়, আর আসক্তি নয়। এই পুনর্নবীকরণ মানে নিজের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক ভারসাম্যকে আবার ফিরিয়ে আনা—মন, বাক্য ও কর্মকে পুনরায় সঠিক পথে স্থাপন করা।
প্রতিক্রমণ কেবল অনুতাপ নয়, এটি আত্মার নবীকরণ—একটি নবজন্ম, যেখানে মানুষ তার অন্তরের পাপের ভার হালকা করে, চেতনাকে পরিষ্কার করে, এবং নতুন করে শুরু করার সাহস ফিরে পায়।
এই প্রক্রিয়ার ফলে আত্মা হালকা হয়, কারণ অপরাধবোধ বা পাপের ভার আর তাকে টানে না। অনুতাপ এখানে আত্মদণ্ড নয়, বরং আত্মশুদ্ধির উপায়। যখন কেউ নিজের দোষ অকপটে স্বীকার করে এবং আন্তরিকভাবে পরিবর্তনের অঙ্গীকার করে, তখন তার চেতনা নতুনভাবে উজ্জ্বল হয়—একটি নির্মল ও শান্ত অবস্থায় পৌঁছায়।
জৈন সন্ন্যাসীদের কাছে এই প্রতিক্রমণ প্রতিদিনের ধ্যানের মতোই অপরিহার্য, কারণ এটি তাঁদের সচেতন রাখে—প্রতিটি দিন যেন আগের দিনের চেয়ে কিছুটা বিশুদ্ধ হয়। জৈন তত্ত্ব বলে, পাপ স্বীকার ও ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়া আত্মার অগ্রগতি অসম্ভব, কারণ অস্বীকার মানেই অজ্ঞানতার পুনরাবৃত্তি। তাই প্রতিক্রমণ হলো আত্মার আয়না—যেখানে প্রতিদিন নিজের মুখোমুখি হয়ে মানুষ শেখে, কীভাবে নিজেকে ধীরে ধীরে মুক্তির দিকে এগিয়ে নেওয়া যায়।
জৈন দর্শনে জ্ঞানচর্চা বলতে বোঝানো হয় এমন এক অন্তর্মুখ অনুশীলন, যা আত্মাকে ধীরে ধীরে অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে সরিয়ে সচেতনতার আলোকের দিকে নিয়ে যায়। এটি কেবল শাস্ত্র পাঠ নয়; এটি আত্মবোধের এক জাগরণ প্রক্রিয়া। এই সময় সন্ন্যাসীরা নিজেদের জীবনকে জ্ঞানের পরীক্ষাগারে পরিণত করেন—তারা আগম (Āgama) ও সূত্র অধ্যয়ন করেন, গুরুজনের সঙ্গে তত্ত্ব-আলোচনা করেন, এবং সহসন্ন্যাসী বা শিষ্যদের সঙ্গে দর্শনীয় বিতর্কে অংশ নেন। এইভাবে জ্ঞান তাঁদের কাছে বইয়ের পৃষ্ঠা থেকে উঠে এসে জীবনের অভ্যন্তরীণ আলোয় পরিণত হয়।
এখানে প্রথমে বোঝা প্রয়োজন ‘দর্শনানুপ্রবেশ’ শব্দটির অর্থ। এটি দুই ভাগে গঠিত—‘দর্শন’ মানে সত্যকে দেখা বা উপলব্ধি করা, আর ‘অনুপ্রবেশ’ মানে সেই সত্যে প্রবেশ করা। অর্থাৎ, জৈন জ্ঞানচর্চা কেবল বাইরের জানাশোনায় সীমাবদ্ধ নয়; তা সত্যে বাস করার প্রক্রিয়া। যেমন কেউ জানে যে, অহিংসা মহৎ, কিন্তু যখন সে অহিংসা-ভাবনায় বাঁচতে শুরু করে, তখনই দর্শনানুপ্রবেশ ঘটে—জ্ঞান তখন জীবন হয়ে ওঠে।
জৈনরা বিশ্বাস করেন যে আত্মমুক্তির পথ তিনটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আছে—সম্যগ্দর্শন, সম্যগ্জ্ঞান ও সম্যগ্চরিত্র।
সম্যগ্দর্শন—এই শব্দটির অর্থই তার গভীর তাৎপর্য বহন করে: “সম্যক্” মানে সঠিক, সম্পূর্ণ বা নির্ভ্রান্ত; “দর্শন” মানে দেখা, উপলব্ধি, বা অনুধাবন। অর্থাৎ, সম্যগ্দর্শন হলো সেই দর্শনশক্তি, যা বস্তু, ব্যক্তি বা ঘটনা—সব কিছুকে যেমন আছে তেমনই দেখে, কোনো পক্ষপাত, অজ্ঞানতা, বা পূর্বধারণার পর্দা ছাড়া। এটি এমন এক আধ্যাত্মিক দৃষ্টি, যেখানে দেখা মানেই বোঝা, আর বোঝা মানেই মুক্ত হওয়া।
জৈন দর্শনে বলা হয়, মুক্তির পথে তিনটি মৌলিক স্তম্ভের মধ্যে সম্যগ্দর্শন প্রথম ও ভিত্তি—কারণ দেখা যদি বিকৃত হয়, জ্ঞানও বিকৃত হয়, আর আচরণও ভ্রান্ত হয়। তাই মুক্তির সূচনা ঘটে সঠিকভাবে দেখার মধ্য দিয়ে।
কিন্তু “সঠিক দেখা” মানে কেবল চোখের দেখা নয়; এটি অন্তর্দৃষ্টি—মন, চেতনা ও প্রজ্ঞার সমন্বিত উপলব্ধি। সাধারণ মানুষ জগৎকে দেখে নিজের ইচ্ছা, ভয় ও পক্ষপাতের আলোয়; সে যেমন দেখতে চায়, তেমনই দেখতে পায়। কিন্তু সম্যগ্দর্শী ব্যক্তি এই মানসিক বিকৃতি থেকে মুক্ত। তিনি জগৎকে দেখেন, কিন্তু নিজের আবেগ বা মতামত দিয়ে তা ঢেকে ফেলেন না। তাঁর দেখা নির্লিপ্ত, স্বচ্ছ ও করুণাময়।
এই দৃষ্টি মানুষকে শেখায়—বাস্তবতা একমুখী নয়, বরং বহুমুখী। প্রতিটি বস্তু, প্রতিটি ঘটনা নানা দৃষ্টিকোণ থেকে সত্য হতে পারে। তাই নিজের দৃষ্টিকে চূড়ান্ত বলে মনে না করে, অন্যের দৃষ্টিকেও স্থান দেওয়া সম্যগ্দর্শনের লক্ষণ। এখানেই জৈন দর্শনের অনেকান্তবাদ-এর মূল ভিত্তি—যেখানে সত্য এক নয়, বরং বহুপ্রসারিত, যেমন এক সূর্যের আলো অসংখ্য রঙে প্রতিফলিত হয়।
সম্যগ্দর্শন মানুষকে অহংকারমুক্ত করে, কারণ সে বোঝে—আমার দেখা সম্পূর্ণ নয়। সে বিনয়ী, কারণ সে জানে—প্রত্যেক প্রাণী, প্রত্যেক চিন্তা, প্রত্যেক অভিজ্ঞতার মধ্যেই সত্যের একটি দিক লুকিয়ে আছে। সে সহনশীল, কারণ সে অন্যের দৃষ্টিকে অস্বীকার করে না। এই দৃষ্টির মধ্যেই জন্ম নেয় করুণা ও অহিংসা—কারণ যে বাস্তবতাকে বহুমাত্রিকভাবে দেখে, সে কোনো কিছুকেই এককভাবে শত্রু বা মিথ্যা বলে ভাবতে পারে না।