এ-বেলা পেরোলেই সন্ধের রক্তিমা ছাই-রঙে বদলে যাবে; ম্লান গোধূলির আলোতেও যেন চিকচিক করছে ওর কানের লতিতে জমে-থাকা একফোঁটা জল। এ অবধি আমার দেখা সমস্তটাই ছিল ভ্রান্তি; বৃষ্টিতে ভিজে-যাওয়া তার এলোমেলো চুলগুলো ছুঁতে না পারার আক্ষেপ প্রথম বারের মতন অনুতপ্ত করেছিল আমায়; আমার শত বিস্ময় ছাড়িয়ে সে-ই প্রথম এসেছিল আমার দুয়ারে, একদণ্ডও বিশ্রাম নিতে বড়ো অনিচ্ছে তার।
চলে যাবার আগমুহূর্ত পর্যন্তও সে হাসিমুখে আমায় বলেছিল, ভালোবাসতে কোনো যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। তবুও আমি মহানির্বোধের মতো তার কথার তোয়াক্কা না করেই ঠাঁই খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম এ ক্ষমতালোভী যোগ্যতার নিষিদ্ধ মোহে, যার কোনো কোণেই তাকে আর ফেরাতে পারিনি আমি; কেননা সেখানে কখনোই ছিল না আবেগের নিশ্চয়তা।
আজ ভাবি, কতই-না বায়না করেছিল সে, তার অভিলাষে আমার হাসির প্রফুল্লতায় পাওয়া আনন্দটুকু যেন শুধু তাকে দিই। নিষ্ঠুর কি এতটাই ছিলাম তবে? কেন রাখতে পারিনি সেদিন তার অসহায় আকুতি! কেবলই মনে হয়েছিল, শেষ বার ডানা ঝাপটানোর আগমুহূর্তে পাখিদের খুশির উৎসবে জমা-পড়ে-থাকা স্বস্তিটুকুও যেন কেড়ে নিয়েছিলাম আমি সেদিন। তাকে ভীষণ কাঁদতে দিয়েছিলাম সেদিন; চেয়েছিলাম, সে ভেঙেচুরে যাক, আবেগটুকু ধ্বংস করে বাস্তবতার দৌড়ে টিকে থাকায় মত্ত করে তুলুক নিজেকে, আমার আমাকে এতটাই দূরে সরিয়ে দিয়ে যাক যেন তার কষ্ট না হয় বাঁচতে।
আমার বিশ্বাস, সে একজন অনন্য মানুষ হয়ে উঠবে; তবে এখানে আমার আত্মত্যাগ কোথায়? এ স্তুতি কি সত্যিই আমার প্রাপ্য? কী ভাবছি এসব! তার ভালোবাসা যে আমার প্রতি একতরফা, এতদিন সে কথাই মেনেছি। তবু কেন মন চাইছে, আমায় সে সযত্নে আগলে রাখুক তার সবটুকু দিয়ে!