অদ্ভুতপথ মূলত নিজের স্বাভাবিক জাগরণ ও সহজাত আধ্যাত্মিকতাকে পুনরাবিষ্কার করার পথ। এটিকে রহস্যময় বলা হয়, কারণ এটি দীর্ঘকাল মানুষের চোখ থেকে আড়াল ছিল। আড়াল হয়ে ছিল তখন, যখন মনে করা হয়েছিল যে, কেবল চিন্তাই সবকিছুর মূল—সাফল্যের নিশ্চয়তা, জীবনের নিরাপত্তা—সবই কেবল চিন্তার ভেতরে।
ফলে ভেতরের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কাজ ও চিন্তা হয়ে উঠেছিল একপেশে—বাম বা ডান হাতে, বাম বা ডান মস্তিষ্কে। জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিল পূর্ণতার ভারসাম্য। অদ্ভুতপথ সেই ভারসাম্যে ফেরায়, ফিরিয়ে আনে সহজাত জাগরণকে, আর সেই গভীর সংযুক্তিকে—নিজের সাথে, অন্যের সাথে, বিশ্বজগতের সাথে, এবং সেই রহস্যময় সত্তার সাথে, যাকে কেউ “ঈশ্বর” নামে, কেউ অন্য নামে ডাকে। এ পথ নিয়ে যায় এমন জীবনে, যা নির্ভার, অনায়াস।
জুতোর ফিতে বাঁধা শেখা, গাড়ি চালানো শেখা বা নাচের স্টেপ শেখার মতোই—যখন একবার ভেতরের সুইচ অন হয়ে যায়, অহংকারের কোলাহল থেমে যায়, তখন জীবন হয়ে ওঠে সহজ প্রবাহ। নতুন পথিকেরা তখন প্রশ্ন তোলে—“প্রায়োগিক দিকটা কী হবে? জীবনযাপন তো করতে হয়!”
কিন্তু অনায়াস মানে তো অকর্মণ্যতা নয়—বরং উলটোটা। যখন জীবনের অন্তসার পুনরাবিষ্কৃত হয়, তখন আর কোনো ভেতরের দ্বন্দ্ব থাকে না—“করব কি করব না” জাতীয় প্রশ্ন বিলীন হয়ে যায়। তখন নিজের সিদ্ধান্তের ওপর আস্থা জন্মায়। তখন প্রতিটি কাজ, প্রতিটি পদক্ষেপ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সঠিক দিকে এগোয়। এবং সবই ঘটে সমবৃত্তিতে, সমান মনের শান্তিতে।
বাসন ধোয়া হয়ে ওঠে জুতোর ফিতে বাঁধার মতোই সহজ, অথবা একটুখানি নাচের মতোই স্বাভাবিক।
এর জন্য শুধু পেরিয়ে যেতে হয় সেই অহম্-এর বিশাল প্রতিরোধী প্রাচীর। তাই ভালো হয়, যদি পাওয়া যায় এমন এক সহযাত্রী—যিনি এই পথ ধরে গিয়েছেন এবং আবার ফিরে এসেছেন। যিনি সত্যিকারের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারেন—গন্তব্যটা বাইরে নয়, সবই আসলে ভেতরে।