আমার এই সামান্য আলোর খসড়া-জীবনে তুমিই এক অনন্য মানুষ, যে শুনতে পায় ভালোবাসায় সিক্ত যজ্ঞবেদির উপর দিয়ে আমার সতর্ক পদ-সঞ্চালনের শব্দটুকুও! তুমিই সে,---যে অনুভবে নেয় আমার সমস্ত নৈঃশব্দ্যের আওয়াজ, যে তাকে দেওয়া চিঠির শেষে লেপটে-থাকা আমার দীর্ঘশ্বাসকে বিদায় ভেবে ভুল করে বসেনি আজও! আমার বিষণ্ণ বেহালা যে সুরটা তোলে, সেই নিভৃত সুরের অর্থটাকে পালটায়নি যে, তুমিই তো সে! তুমিই আমার একটা মানুষ, যে মানুষটা... শত বৎসরের শত প্রতীক্ষার যে আবছা অস্তিত্বে আমার নীরব বসতি, তাকে বুঝে নিয়েছে হাজারটা বার, যে অস্তিত্বের খোঁজ পায়নি অন্য কেউই! ঝোপের আড়ালে পুজোর নৈবেদ্যে যে গাঢ় নীল অপরাজিতা লুকিয়েছে মুখ, তার খোঁজ পেয়েছে, বুকে যত্নে রেখে সাজিয়েছে ক্ষণ…দিন রাত্রি… সুবিশ্বস্ত প্রেম ঠোঁটের আকর্ষণের কাছে হার মেনে নিয়ে তার পুজোয় নিবেদিত ভালোবাসাকে দূরে ঠেলে দিতে পারবে না কখনওই। কেননা, আক্ষরিক অনুবাদে নয়, কেবল ভাবানুবাদেই বিশ্বাসী সে! জেনো, তোমাকে আমি প্রেমিক হিসেবে নয়, প্রাণের দেবতা হিসেবেই করেছি পুজো আজন্মই! সেখানে প্রেম যতটা, উপচারস্বরূপ ভালোবাসা ততোধিকই! কোনও চাহিদা তো নেই, রয়েছে কেবল ডালি ভরে ভরে শ্রদ্ধা আর বিশ্বাসটুকুই! তোমার দুচোখের কোণে যে বিশ্বাস অটুট, সাথে কিছু আনন্দ আর সুখের ছটা, ওরা সবাই একই সাথে আমার অশ্রুর বাষ্পকণাকে দিচ্ছে করে অপূর্ব আর অসামান্য...ক্রমেই কেবল। তোমার হৃদয়ে যে হলদে বসন্তের রঙে রাঙা হয়ে ছিল অনুভবটুকু, তার নিবিড় ক্ষতচিহ্নগুলি আজও আমি পরম যত্নে তুলে রেখেছি। হৃদয়ের গভীরে লিখে রেখো, প্রিয়… আমার--- প্রেম নয়, ভালোবাসা আছে; শরীর নয়, বিশ্বাসে মিশে থাকা শ্রদ্ধা আছে; কামনা নয়, স্বস্তি আছে; সরব উপস্থিতি নয়, অস্তিত্ব আছে; খুন নয়, মৃত্যুবেশী মাহাত্ম্য আছে! তুমি আমি যদি মিলে যাই এই জন্মের মতো, না, আমরা সন্ন্যাসীর কাছে ভিখ চাইব না কোনও ফাগুন; বরং, ফাগুনের হাওয়া মাতিয়ে রাখে যে ভালোবাসা, আমরা তাকে ভিজিয়ে দেবো শুধুই হৃদয়ের সিক্ততায়। নিরর্থক প্রেমের মিছিলে ছুটব না আর, প্রবর্তক হয়ে ভালোবাসার প্রবর্তনে পরিবর্তককে নেবো বরণ করে। ডেকো না তাকে…যাকে সবাই প্রেম বলে ডাকে, তাকে ডেকোই না আজ কোনও নামে ভুলে…এ মন বলে শুধু! তুমি যে পুজোর উপচারে সাজানো বেদিতে উপবিষ্ট এক গৃহদেবতা, সত্যি তোমাকে ডাকতেই নেই অমন করে ওদের মতন! গভর্নমেন্টের কোনও দফতরে কিংবা কোনও গোরস্থানের নেইমপ্লেইটগুলিতে কোনও লিপিবদ্ধকরণ হয়েছিল কি না আদৌ, তার খোঁজ আমরা জানি না কেউই… তবে আমরা এটুক যেন মনে রাখি, কখনও বেশি বাঁচবার তাগিদে মৃত্যুর মতন সেই আত্মতৃপ্ত ভালোবাসার স্বাদটুকু ভুলেও কখনও ভুলে যাব না! চিরাচরিত প্রেমের ক্যানভাসে নয় কিন্তু… অপরিমেয় শ্রদ্ধার ব্যাকগ্রাউন্ডের আদলে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব নিতে না-পারা বিশ্বাসের ক্যানভাসে ভালোবাসার ছবিটা ঠিকই এঁকে ফেলব…মনে থাকবে? ততদিন অপেক্ষা করবে তো আমার জন্যে? সবাই যখন চলে যাবে তাদের আয়ুক্ষয়ের হিসেবে মত্ত কোনও পৃথিবীতে, তখন রংতুলি নিয়ে, সমস্ত বিনিময়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো আমাদের একান্ত পৃথিবীতে লটকে-থাকা ক্যাম্বিসের সামনে দাঁড়িয়ে আমার জন্যে অপেক্ষা করতে ভুলে যেয়ো না যেন…কেমন?