আসুন, কিছু কার্টেসি শিখি। কোনো বিয়ে বা দাওয়াতে গেলে সেখানে যে-খাবারটা দেওয়া হয়, ওটার ততটুকুই পাতে নেবেন, ঠিক যতটুকু আপনি খেতে পারবেন; বরং প্রয়োজনের তুলনায় আরও একটু কম নিন। যদি আরও খেতে পারেন বা ইচ্ছে করে, তবেই আরও এক বার নিন পরিমাণমতো। রাক্ষসের মতো প্রয়োজনের বেশি খাবার পাতে নিয়ে, না খেয়ে নষ্ট করাটা চরম লেভেলের অভদ্রতা। আপনি যে-খাবারটা নষ্ট করছেন, ঠিক সেই খাবারের জন্য হোস্টের যথেষ্ট পরিমাণে অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। আপনি ফ্রিতে পাচ্ছেন মানে এ নয় যে, হোস্টও তা ফ্রিতে পেয়েছেন। কোনো বিয়েবাড়ি বা প্রোগ্রামে দেখা হলে, “আরে, তুমি শুকিয়ে গেছ কেন? খাও না? মুটিয়ে গেছ কেন? খাওয়া কমাও! মুখে ব্রণ কেন?” এসব প্রশ্ন করা মানে রীতিমতো আপনার বুদ্ধিহীনতার প্রমাণ দেওয়া। কারও সাথে দেখা হলে জাস্ট ‘কেমন আছেন’-এর সাথে আরও কিছু সৌজন্যমূলক কথার বাইরে দৈহিক, আর্থিক কিংবা ব্যক্তিগত কোনো প্রশ্নই করবেন না। জাস্ট এমন কিছু অবান্তর, অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন এড়ানোর জন্যও অনেক মানুষ কোনো প্রোগ্রামে যেতে সাহস পায় না। ভাবুন তো, স্রেফ প্রশ্ন এড়ানোর জন্যই মানুষ মানুষের সাথে দেখাসাক্ষাৎ করাও ছেড়ে দেয়! আপনার কোনো প্রশ্ন না থাকলে, কিছু বলার না থাকলে, আলাপ চালিয়ে নেবার মতো স্মার্টনেস না থাকলে বরং চুপ করে থাকুন, তবু কারও বিরক্তির কারণ হতে যাবেন না। নতুন বিয়ে-করা দম্পতিকে ফান করেও জিজ্ঞেস করবেন না, মেয়ের বাপের বাড়ি থেকে কী কী দিয়েছে, ইদে কী পাঠিয়েছে, কুরবানিতে গরু না কি ছাগল দিয়েছে, ইত্যাদি। এ ধরনের প্রশ্ন আপনার ছোটো মনমানসিকতার পরিচয় দেয়। এরকম প্রশ্নের বাণ থেকে বাঁচার জন্যও অনেক বাবা-মা মেয়ের বিয়ের পর সাধ্য না থাকা সত্ত্বেও এটা-সেটা পাঠাতে বাধ্য হন; এর জন্য অনেকসময় জমিজমা, ভিটেবাড়িও বিক্রি করতে বাধ্য হন। কিছু মানুষ একসাথে থাকলে সেখানে আলাদা করে শুধু এক জন বা দু-জনকে “তোমাকে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে।” জাতীয় কথাবার্তা বলবেন না। এর মানে হলো, ওই এক-দুজন ছাড়া বাকিদের সুন্দর লাগছে না বা তারা সুন্দর নয়। আপনার এ ধরনের কমনসেন্সহীন কমেন্ট অন্যদের ভেতর হীনম্মন্যতা তৈরি করে। মনে মনে তারা ভেবে নেয়, তারা দেখতে কম সুন্দর বা কম পরিপাটি। আপনি শোধরালে পুরো পৃথিবী শোধরাবে। আপনি পালটালে পৃথিবীর অনেক কিছুই পালটাবে। কমনসেন্স শেখার জন্য পিএইচডি লাগে না। সেই জ্ঞানের কোনো দাম নেই, যে-জ্ঞান কাণ্ডজ্ঞান শেখায় না। আপনি জাগলে পৃথিবীর অনেক মানুষের বাঁচতে সুবিধে হবে। এর কারণ, আপনার কাছ থেকে দেখেই আপনার প্রজন্ম-সহ অনেকেই এমন সব ফাতরামো শিখবে এবং এ ধরনের বাজে-জঘন্য ব্যাপারগুলোকেও স্বাভাবিক বলে ধরে নেবে। এ থেকে মুক্তির উপায়? বেশি কিছু নয়, আপনার মাথার ভেতরে হালকা মগজ থাকলেই চলবে। আবার মাথাভর্তি মগজ রেখেও যদি মগজের সঠিক ব্যবহার না করেন, তবে আপনার সেই মগজ আর গোয়ালঘরে পড়ে-থাকা পচা গোবরের মধ্যে তেমন কোনো তফাৎ নেই। আধুনিক মানুষের নলেজের কোনো অভাব নেই, শুধুই কমনসেন্সের অভাব। জ্ঞানের সমুদ্র হবার আগে কাণ্ডজ্ঞানের ডোবা অন্তত হোন। কাণ্ডজ্ঞানহীন জ্ঞানী লোকের জ্ঞান ধুয়ে জল খাওয়ার সময়ই-বা আছে কার, আপনিই বলুন!