আইবিএ ভর্তি পরীক্ষার ডিফিকাল্টি লেভেল আমার কাছে কিছুটা overrated বলেই মনে হয়েছে৷ এটি কম্পিটিটিভ এক্জাম, এটা যতটা সত্য, রিয়েল কম্পিটিশনে আসার মতো ক্যান্ডিডেট খুব বেশি সাধারণতঃ থাকেনা, এটা আরো বেশি সত্য৷ বেশিরভাগ মানুষই এই এক্সামটা নিয়ে ভয় দেখাতেই বেশি পছন্দ করেন। যা জানেন, তা বলেন; যা জানেন না, তাও বলেন। ২টা ফ্যাক্ট শেয়ার করি।
• এই এক্সামে ৫০% ক্যান্ডিডেট যায় জাস্ট ঘুরতে, কোনও কারণ ছাড়াই, অনেকটা গেট-টুগেদার করতে। (মজার ব্যাপার হলো, এদের কেউ-কেউ সফলও হয়ে যায়! ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’ টাইপের আরকি! ওদেরকে কোনও গ্রামারে ফেলা যায় না। তাই ওদের সাফল্যে কষ্ট পেয়ে লাভ নাই।)
• রিয়েল কম্পিটিশনে আসার মতো ক্যান্ডিডেট থাকে মাত্র ৭% এর মতো।
এর মানে, আপনার কম্পিটিটর আপনি যতটা ভাবছেন, তত বেশি না। আইবিএ ভর্তি পরীক্ষার কোনও সুনির্দিষ্ট সিলেবাস নেই, তাই এই পরীক্ষায় ১০০% প্রস্তুতি নেয়া কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। মাথায় রাখুন, শতভাগ শিখেছি ভেবে তার ষাটভাগ ভুলে গিয়ে বাকী চল্লিশভাগকে ঠিক মত কাজে লাগানোই আর্ট৷ এই পরীক্ষায় ভাল করার জন্যে কী কী পড়বেন, সেটা জানার চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল, কী কী বাদ দিয়ে পড়বেন, সেটা ঠিক করা।
আমি এ সম্পর্কে বলার চেষ্টা করেছি। এই গাইডলাইনটা নিজের মত করে কাজে লাগাবেন। যতটুকু দরকার, ততটুকু নেবেন, বাকিটা ছুড়ে ফেলে দেবেন।
• আইবিএ’র বিবিএ+এমবিএ, বিআইবিএম’এর এমবিএম, ডিইউ’র ইএমবিএ, প্রাইভেট ভার্সিটির এমবিএ ভর্তি পরীক্ষার বিগত সব বছরের প্রশ্ন (সব না হলেও, অন্তত ১০-১৫ বছরের) ভালভাবে বুঝে সলভ্ করে ফেলুন৷ প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা নিন৷ এটা প্রস্তুতি শুরু করার প্রথম ধাপ৷
• GRE Wordlist শিখে ফেলা মানেই কিন্তু আইবিএ’তে চান্স পেয়ে যাওয়া নয়। মাথায় রাখবেন, GRE, GMAT’এর সবচেয়ে সহজ প্রশ্নগুলো আইবিএ’তে আসে। একটা প্রশ্ন আরো কয়েকটা প্রশ্নের সূতিকাগার। এর মানে হল, একটা প্রশ্নের উত্তরে যে কয়টা বাড়তি অপশন দেয়া থাকে, তার সব কয়টার অর্থই ইউসেজ সহ ভাল করে জেনে নেবেন।
• একটা secret শেয়ার করি। সাধারণত কোনও segment-য়েই ৫০% এর উপরে cut-off marks থাকে না। তাই, চেষ্টা করবেন, যাতে সব segment-এ অন্তত ৫০% মার্কস পেয়ে viva board পর্যন্ত পৌঁছানো যায়। আইবিএ ভর্তি পরীক্ষায় প্রত্যেক সেগমেন্টে আলাদা আলাদাভাবে পাস করতে হয়।
• কম্পিটিটিভ এক্জামগুলোতে ভাল করার ক্ষেত্রে প্রিপারেশনের চাইতে প্রিপেয়ার্ডনেসটা বেশি কাজে লাগে৷ I’m the best, এই ভাবটা এক্জাম হলে ধরে রাখুন৷ এটা ম্যাজিকের মতো কাজ করে! ‘আনকমন প্রশ্ন’ বলে কোনোকিছু নেই। পরীক্ষার হলে আনকমন প্রশ্নের উত্তর করার ক্ষমতা ভূতে যোগায়!
• Time Management. Because it does matter! এখন দেখা যাক, এর মানে কী? ২টা ব্যাপার মাথায় রাখবেন।
এক। যতটুকুই প্রিপারেশন নিন না কেন, এর maximum utilization করতে হবে। প্রস্তুতি নেয়া বড় কথা নয়, প্রস্তুতিকে ঠিকভাবে কাজে লাগানোই বড় কথা। আপনাকে প্রত্যেকটা segment-এ আলাদা আলাদাভাবে পাস করতে হবে। কাজেই আপনি যা পারেন, শুধু সেটার উপরেই পুরো effort দেয়া যাবে না। তাই, সময়টাকে ভাগ করে নেবেন। দুই। পুরো সময়ের দুই-তৃতীয়াংশ সময়ে যা যা পারেন, সব answer করে ফেলবেন। বাকি সময়ে left-out প্রশ্নগুলো answer করবেন।
• আইবিএ ভর্তি পরীক্ষায় ভাল করতে বেশি-বেশি questions solve করুন। প্রশ্ন বুঝে-বুঝে অনলাইনে নিয়মিত GRE+GMAT-এর প্রশ্ন সলভ্ করতে পারেন৷ (সব ধরনের প্রশ্ন নয়, যেগুলো পরীক্ষায় আসে, সেগুলো৷)
এখন কোনটা কোন বই থেকে কতটুকু পড়বেন, সেটা নিয়ে কিছু বলছি।
Verbal part
• Vocabulary. এটার জন্যে Barron’s GRE Wordlist, Word Smart দেখতে পারেন। হাতে সময় কম থাকলে বাজারের বইগুলোও দেখতে পারেন। শুরুতে Barron’s SAT এর hot prospectus এবং high frequency এর wordlist অবশ্যই দেখে নেবেন।
• Analogy part’টা GRE Big Book (old edition) থেকে দেখতে পারেন। কষ্ট কমাতে ২-১টা গাইড কিনে পড়তে পারেন।
• Sentence completion এর জন্যে GRE Big Book (old edition) দেখতে পারেন। এর আগে Barron’s SAT থেকে exerciseগুলি করে নিলে ভাল হয়।
• Sentence correction অংশটা Official GMAT থেকে পড়ুন।
• Comprehension part-টা IELTS-এর বই থেকে পড়লে লাভ হবে। এছাড়াও Official GMAT থেকে দেখতে পারেন, কারণ ওখানে IBA Admission Test এর ফরম্যাটে প্রশ্ন দেয়া আছে।
• Error Finding part-টা পড়বেন TOEFL-এর বই থেকে (যেমন, Cliff’s TOEFL)। Barron’s TOEFL-এর Essential Grammatical Rules অবশ্যই পড়ে নেবেন। S@ifur’s Grammar বইটা দেখতে পারেন।
Mathematics
S@ifur’s Math, S@ifur’s Geometry, Mentors’ QBank,NOVA’s GRE এই বইগুলো থেকে সলভ করতে পারেন। সময় পেলে ARCO SATও দেখতে পারেন।
Analytical Analysis
• Puzzle/Logical inference-এর জন্যে GRE Big Book দেখতে পারেন। বাজারের ২-১টা বইও সাথে রাখতে পারেন।
• Critical Reasoning-এর জন্যে GRE Big Book থেকে ছোট-ছোট comprehension + Official GMAT দেখতে পারেন।
আইবিএ ভর্তি পরীক্ষায় টেকার রহস্য হল, প্রচুর, প্রচুর এবং প্রচুর প্র্যাকটিস করা আর পরীক্ষার হলে অনুভূতিহীন হয়ে যাওয়া। খুব বেশি-বেশি প্র্যাকটিস করাই লাগবে, কারণ ‘প্রশ্ন কমন পড়া’ বলতে কিছু নেই এখানে, প্র্যাকটিস করলে মনে সাহসও থাকে, আর বুঝতেও পারবেন কিভাবে কী সলভ করতে হয়, আদৌ একটা কোশ্চেন সলভ করতে যাওয়া উচিত হবে, নাকি হবে না। ১০০% মার্ক্স নিয়ে কেউ আজ পর্যন্ত আইবিএ এর কোনও ভর্তি পরীক্ষায় কোয়ালিফাই করে নাই; বরাবরই ওই বস্তু ওই সময়ের মধ্যে অসম্ভব করেই ওই কোশ্চেনটা বানানো হয়েছে, হচ্ছে, এবং নিশ্চয়ই হবে। অনুভূতিহীন হয়ে যেতে হয় পরীক্ষার সময়ে, কারণ পরীক্ষা ভাল হচ্ছে মনে হওয়া শুরু করলে দেহমন নিজের অবচেতনেই রিল্যাক্স করতে শুরু করবে, আর আইবিএ-এর কোশ্চেন এমনই যে, আনসার যে ভুল হচ্ছে সেটা টের পাওয়া অত সোজা না, যতরকম ভুল উত্তর আসা সম্ভব, সবগুলোই অপশন-এ দেয়া থাকে খুবই নির্দয়ভাবে। আর যদি পরীক্ষা খারাপ হচ্ছে মনে করে নার্ভাস ব্রেকডাউন হয় তাহলে একজাম আর না দিয়ে বের হয়ে আসাই ভাল; সত্যি বলছি, নার্ভাস মানুষের জন্য আইবিএ না, টেকার আগেও না, পরেও না। টেকার আগে না, কারণ নার্ভাস থাকলে টেকাটা কঠিন। টেকার পরে না, কারণ নার্ভাস থাকলে টিকে থাকাটা কঠিন।
গুড লাক!!
পুনশ্চ।
লোভে পাপ, পাপে নেগেটিভ মার্কস। আইবিএ এর ভর্তি পরীক্ষায় মার্কিং করার সিস্টেমটা হল, প্রত্যেকটা সঠিক উত্তরের জন্য ১ নম্বর, আর প্রত্যেকটা ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ করে মাইনাস হবে; সোজা কথা, আপনার ৪টা ভুল উত্তরের জন্য একটা সঠিক উত্তরের নম্বর চলে যাবে। নম্বরগুলোর ব্যবধান অনেক ছোট, কিন্তু এই ০.২৫-এর ডিফারেন্সই রেজাল্টে আকাশপাতাল পার্থক্য তৈরি করে দেয়। হ্যাঁ, ঠিকই ভাবছেন, আপনি জাস্ট ছিটকে পড়বেন একটুখানি ভুলের জন্যও! কাজেই আনসার করার সময় খুব সাবধান। পুরো কোশ্চেন আনসার করে দিয়ে আসার কোনও প্রয়োজনই নেই, এটা আইবিএ’ও চায় না আপনার কাছ থেকে, শুধু যেটুকু শিওর হয়ে আনসার করতে পারবেন সেটুকু করলেই হবে, সেটা মোটামুটি ৬০% এর উপরে গেলেই আপনি নিজেকে সেফ ধরে নিতে পারেন। এগুলো একজাম দেয়ার কিছু tactics, কখন কোন কোশ্চেনটা কীভাবে আনসার করবেন, সেটা তখনই বুঝতে পারবেন, যখন আপনি আগে থেকেই অনেক-অনেক অনেক প্র্যাকটিস করে পরীক্ষার হলে ঢুকবেন, আগেও বলেছি। আরেক জন আপনাকে ধরে চামচ দিয়ে খাইয়ে দেবে, এটা যারা আশা করেন এবং সে আশায় হাঁ করে বসে থাকেন, সে সব নির্বোধ অলস মানুষের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা নয়।
Tips. লেখার স্টাইল ডেভেলাপ করার জন্য ডি এন ঘোষের College Essays বইটা নেড়েচেড়ে দেখবেন নাকি একটু?