অন্যদিকে, যদি বলা হয় যে, জীব অবিদ্যার দ্বারা আবৃত, তবে আরেকটি জটিলতা দেখা দেয়—জীবাত্মা যেহেতু ব্রহ্মেরই অংশ বা স্বরূপ, তখন আত্মা-চেতনা কীভাবে ব্রহ্ম থেকে পৃথক সত্তা হিসেবে অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়? জীবাত্মা যদি ব্রহ্মের অভিন্ন অংশ হয়, তবে তার আবরণ মানে প্রকারান্তরে ব্রহ্মেরই আবরণ। এই বিভাজন বা পৃথকত্বের ধারণা অদ্বৈতের মূল প্রতিপাদ্য "একমেবাদ্বিতীয়ম" (এক, দ্বিতীয় নেই)-এর সঙ্গে সংঘাত তৈরি করে।
এই উভয় সংকটের সমাধানের জন্য অদ্বৈত-তত্ত্ব অবিদ্যার এক স্বতন্ত্র ব্যাখ্যা প্রদান করে। অবিদ্যাকে একটি নির্ভরশীল সত্তা (Paratantra Sattā) হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এর অর্থ হলো, অবিদ্যার নিজস্ব কোনো স্বাধীন অস্তিত্ব নেই; এটি ব্রহ্মের উপর নির্ভরশীল, কিন্তু ব্রহ্মকে প্রভাবিত করে না। এটি এমন এক আপাত বাস্তবতা (phenomenal reality), যা ব্যাবহারিক স্তরে (vyavaharika sattā) বন্ধন, দুঃখ এবং দ্বৈততার ভ্রম সৃষ্টি করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। এই ভ্রমের ফলেই জীব নিজেকে ব্রহ্ম থেকে ভিন্ন মনে করে এবং জাগতিক কর্মফলের চক্রে আবদ্ধ হয়।
কিন্তু অবিদ্যার এই আপাত অস্তিত্ব স্থায়ী নয়। যখন আত্মজ্ঞান উদিত হয়, যখন জীব তার প্রকৃত স্বরূপ, অর্থাৎ ব্রহ্মের সঙ্গে তার অভিন্নতা উপলব্ধি করে, তখন এই অবিদ্যা মেঘের মতো বিলীন হয়ে যায়। যেমন অন্ধকারে দড়িকে সাপ বলে ভ্রম হয়, কিন্তু আলোর উপস্থিতিতে সেই ভ্রম দূর হয়ে দড়ির প্রকৃত রূপ প্রকাশিত হয়; তেমনই জ্ঞানের আলোয় অবিদ্যার আবরণ সরে যায় এবং জীবের ব্রহ্মত্ব প্রকাশিত হয়।
অবিদ্যা না ব্রহ্মের অন্তর্গত, না জীবের স্বরূপ। বরং এটি তাদের মধ্যে এক সম্পর্কজনিত ছায়া, এক বিভ্রম যা অনন্ত (ব্রহ্ম) এবং সীমিত (জীব) এর সংস্পর্শে উদ্ভূত হয়। অবিদ্যা একটি "অনির্বচনীয়" সত্তা—যা সৎ (বাস্তব) বা অসৎ (অবাস্তব) কোনোটাই বলা যায় না। এটি এমন এক শক্তি, যা ব্রহ্মের শক্তি দ্বারাই প্রকাশিত, কিন্তু ব্রহ্মকে কলঙ্কিত করে না। এটি একটি মায়িক খেলা, যা ব্রহ্মের লীলার অংশ হিসেবেই বিদ্যমান থাকে, যতক্ষণ না আত্মোপলব্ধির মাধ্যমে এই খেলার অবসান ঘটে। এই জটিল ধারণার মাধ্যমে অদ্বৈত-বেদান্ত ব্রহ্মের অখণ্ডতা বজায় রেখে জীবের বন্ধন এবং মুক্তির প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করে।
অবিদ্যা তাই এক অদ্ভুত অবস্থান ধারণ করে—যা সত্যকে আচ্ছাদিত করেও নিজে সত্য নয়, এবং মিথ্যাকে উদ্ভূত করেও সম্পূর্ণ মিথ্যা নয়। এই সীমান্তবর্তী অস্তিত্বই জগতের কারণ, জীবের বন্ধন, এবং পরিশেষে মুক্তির অনুসন্ধানের প্রেরণা।
অসীম চৈতন্য বা শুদ্ধ চিৎ (Śuddha Cit) নিজে সীমাহীন, নিঃশর্ত, এবং অপরিবর্তনীয়। তবু অবিদ্যার কারণে, এই সীমাহীন চৈতন্যকে সসীম বলে মনে হয়। এই আপাত সীমাবদ্ধতার মাধ্যম হলো উপাধি (Upādhi)—যা কোনো সত্তাকে নিজস্ব প্রকৃতি ছাড়া অন্য কোনো সীমা আরোপ করে সীমাবদ্ধ করে তোলে। যেমন স্বচ্ছ স্ফটিকটি লাল ফুলের পাশে রাখলে লাল বলে মনে হয়, যদিও তা নিজে বর্ণহীন; তেমনি চৈতন্যও মনের উপাধির দ্বারা সীমাবদ্ধ বলে প্রতীয়মান হয়। উপাধি হলো চেতনার প্রতিফলনের ক্ষেত্র—একটি মানসিক আবরণ, যা আত্মার অপরিমেয় দীপ্তিকে সসীম আলোয় পরিণত করে।
মন বা অন্তঃকরণ (Antaḥkaraṇa) এখানে এক আয়নার মতো কাজ করে। এই মনের মধ্যে শুদ্ধ চেতনার যে-প্রতিফলন ঘটে, তাকেই বলা হয় “চিদাভাস” (Cidābhāsa)—অর্থাৎ, চেতনার আভাস বা প্রতিবিম্ব। এই প্রতিফলিত চেতনা নিজে শুদ্ধ আত্মা নয়, আবার নিছক জড়ও নয়; এটি মধ্যবর্তী—যেখানে চৈতন্য ও পদার্থ এক অদ্ভুত মিশ্রণে মিলিত হয়। এই চিদাভাসই “অহং” (Ego) বা “আমি”-চেতনতার উৎপত্তি ঘটায়—যে বলে, “আমি জানি”, “আমি অনুভব করছি”, “আমি কর্ম করছি”। চিদাভাসের উপস্থিতিই মনের সমস্ত ক্রিয়াকে সচেতন বলে তোলে; যেমন সূর্যের আলো ছাড়া আয়নায় কোনো প্রতিফলন থাকে না, তেমনি আত্মার প্রতিফলন ছাড়া মনও নিস্প্রাণ।
এই প্রতিফলনের মাধ্যমেই জন্ম নেয় জীব (Jīva)—চৈতন্য ও জড়ের যৌগ, যা অদ্বৈত ব্যাখ্যায় “চিৎ-জড়-গ্রন্থি” (Cit-Jaḍa-Granthi) নামে পরিচিত। এটি সেই “গ্রন্থি” বা গিঁট, যেখানে শুদ্ধ চেতনা (ব্রহ্ম) এবং অবিদ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ মন একত্রিত হয়। এর ফলেই অসীম আত্মা নিজেকে ব্যক্তি হিসেবে অনুভব করে, “আমি” এবং “আমার” বলে পার্থক্য সৃষ্টি করে।
ঈশ্বর (Īśvara) ও জীবের ভেদও কেবল উপাধির কারণে। যখন সেই চেতনা মায়ার মহাজাগতিক উপাধির অধীনে থাকে, তখন তা ঈশ্বর নামে পরিচিত হয়—যিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান, জগতের নিয়ন্তা। আবার একই চেতনা যখন অবিদ্যার ব্যক্তিগত উপাধির দ্বারা সীমাবদ্ধ, তখন তা জীব নামে প্রকাশ পায়—যিনি সীমিত জ্ঞান ও ভোগের দ্বারা আবদ্ধ। কিন্তু যখন দেখা যায়, উপাধি কেবল আপাত, তখন উভয়ই তাদের মূল আধারে বিলীন হয়—নির্গুণ ব্রহ্ম (Nirguṇa Brahman), যিনি কর্মকারীও নয়, ভোক্তাও নয়; তিনি নাম, রূপ ও দ্বৈততার অতীত। তখন বোঝা যায়, ঈশ্বর ও জীব কখনও পৃথক ছিল না; তাদের ভেদ কেবল উপাধি-জাত বিভ্রম।
এই বিভ্রম ভাঙার একমাত্র উপায় জ্ঞান—যা অদ্বৈতের ভাষায় “বাধা” (Bādha) নামে পরিচিত, অর্থাৎ জ্ঞানের আলো দ্বারা অবিদ্যার বিলোপ। অবিদ্যা কোনো আচার, উপাসনা, বা কর্মের দ্বারা দূর হয় না, কারণ এগুলি নিজেরাই অবিদ্যার অঙ্গ। যেমন অন্ধকার দূর করতে বাতি জ্বালাতে হয়, তেমনি অবিদ্যা দূর হয় কেবল আত্মজ্ঞান (Ātma-Jñāna) দ্বারা।
বাধা মানে ধ্বংস নয়, বরং অন্তর্দৃষ্টি—যেখানে মিথ্যা আপাত অস্তিত্ব সত্যের সামনে স্বয়ং মুছে যায়। যখন আলো একটি অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করে, তখন অন্ধকার কোথাও “যায়” না; এটি কেবল প্রকাশের বাইরে চলে যায়। ঠিক তেমনি, যখন জ্ঞান উদিত হয়, তখন অবিদ্যা কোনো চিহ্ন না রেখে বিলুপ্ত হয়—কারণ সেটি কখনও সত্যিকারের ছিলই না।
এই সত্য বোঝানোর জন্য শাস্ত্র শুক্তি-রজত-ন্যায় (Śukti-Rajata-Nyāya) বা ঝিনুক-রূপা উপমা ব্যবহার করে। কেউ অন্ধকারে ঝিনুক দেখে সেটিকে রুপা মনে করে। যতক্ষণ সত্য জানা যায়নি, রুপা বাস্তব বলে মনে হয়, আকাঙ্ক্ষা ও বিভ্রম তৈরি করে। কিন্তু যখন আলোর দ্বারা দেখা যায় এটি ঝিনুক, তখন “রুপা” মিথ্যা বলে প্রকাশ পায়; তবুও ঝিনুকটি থেকে যায়। একইভাবে, জগৎ মিথ্যা, এজন্য নয় যে, একেবারে নেই; আবার সত্য, এজন্যও নয় যে, স্বতন্ত্রভাবে আছে। এটি “অবস্থিত বিভ্রম”—যা জ্ঞানের অভাবে বাস্তব বলে প্রতীয়মান, কিন্তু জ্ঞান উদিত হলে নিজের স্থান হারায়। আত্মজ্ঞানী ব্যক্তি তাই জগৎ দেখে, কিন্তু তার দ্বারা প্রতারিত হন না; তার কাছে এটি নাম-রূপের এক মায়াবী নৃত্য, যার ভিত্তি কেবল ব্রহ্ম।
এই উপলব্ধি—“অহম ব্রহ্মাস্মি” (“আমি ব্রহ্ম”)—হল অবিদ্যা-বিলোপনের চূড়ান্ত বিন্দু। এখানে কোনো নতুন কিছু লাভ হয় না, বরং ভুল পরিচয়ের পর্দা সরে যায়। যে আবদ্ধ বলে মনে হচ্ছিল, সে কখনও আবদ্ধ ছিল না; যে মুক্তি চেয়েছিল, সে সর্বদা মুক্তই ছিল। কেবল জ্ঞানের আলোকেই এই সত্য প্রকাশিত হয়, এবং তখন সমগ্র অবিদ্যা-নির্মিত কাঠামো—জীব, জগৎ, ঈশ্বরের ভেদসহ—ভেঙে পড়ে। যা থাকে তা একমাত্র ব্রহ্ম—চৈতন্যস্বরূপ, শান্ত, অবিকৃত, অপরিমেয়, অনন্ত।
মুক্তি বা মোক্ষ (Mokṣa) কোনো নতুন অর্জন নয়, কোনো ভবিষ্যৎ ফল নয়—এটি কেবল নিজের প্রকৃত স্বরূপের স্বীকৃতি। এটি কোনো কর্মফল নয়, কোনো গন্তব্য নয়, বরং এক তাৎক্ষণিক উপলব্ধি যে, “আমি সর্বদা মুক্ত ছিলাম”। অবিদ্যা অনাদি (Anādi)—এর কোনো শুরু নেই; কিন্তু এটি অন্তবর্তী (Anta-vattā), অর্থাৎ এর সমাপ্তি আছে। সেই সমাপ্তির নামই বিদ্যা (Vidya)—আত্মজ্ঞান। জ্ঞান উদিত হলেই অবিদ্যা বিলীন হয়, যেমন অন্ধকার সূর্যের আলোয় মিলিয়ে যায়। মুক্তি কোনো যাত্রার পরিণতি নয়; এটি এক জাগরণ—যেখানে জানা যায়, আমি কখনও আবদ্ধ ছিলাম না।
জীবনমুক্ত (Jīvanmukta) তিনিই, যিনি অবিদ্যা বিলোপের পরও শরীররূপে ব্যাবহারিক জগতে (Vyāvahārika Sattā) অবশিষ্ট থাকেন, কিন্তু জানেন যে, এই জগৎ কেবল মায়া—এক আপাত প্রকাশ। তিনি কর্ম করেন, কথা বলেন, অনুভব করেন, কিন্তু তাঁর অভ্যন্তরে কোনো আসক্তি বা ভোগপ্রবণতা থাকে না। তাঁর কাছে পৃথিবী যেমন আগে দেখা যেত, তেমনি এখনও দেখা যায়, কিন্তু এখন সেই দৃষ্টি বিভ্রমমুক্ত—যেমন কেউ মরীচিকা দেখে, তবু জানে যে, তা জলের প্রতিচ্ছবি মাত্র, বাস্তব নয়। তাঁর কাছে সব অভিজ্ঞতা এক শান্ত নিঃস্পৃহ আলোকের মধ্যে ঘটে—যা কখনও স্পর্শিত হয় না, তবু সব কিছু আলোকিত করে।
এই মুক্ত অবস্থায়, যা জীবনের গভীরতম উপলব্ধির চূড়ান্ত প্রকাশ, বাসনা (Vāsanā)—সেই সুপ্ত এবং অন্তর্নিহিত প্রবণতাগুলি, যা অতীতে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও কর্মের ফলস্বরূপ মনের গভীরে প্রোথিত থাকে এবং চৈতন্যকে জাগতিক বিষয়ের দিকে আকর্ষণ করে—সেগুলি জ্ঞানের প্রখর আগুনে সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয়ে যায়। এই অগ্নি কেবল একটি রূপক নয়, এটি সেই প্রজ্ঞা, যা আত্ম-সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে উদ্ভাসিত হয় এবং সকল ভ্রম ও বন্ধনকে ছিন্ন করে দেয়।
কারণ-শরীর (Kāraṇa Śarīra), যা ছিল অবিদ্যা বা অজ্ঞানতার মূল বীজ, যার মধ্যে লুকিয়ে ছিল ভবিষ্যতের সকল কর্মফল এবং পুনর্জন্মের সম্ভাবনা, সেটি তার সমস্ত শক্তি এবং কার্যকারিতা হারায়। যেমন একটি বীজকে আগুনে পুড়িয়ে দিলে তার অঙ্কুরোদ্গমের ক্ষমতা চিরতরে লুপ্ত হয়, ঠিক তেমনই কারণ-শরীর তার পুনর্জন্মের কারণ হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এর ফলস্বরূপ, জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি মেলে, অর্থাৎ পুনর্জন্মের আর কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
উপাধিগুলি (Upādhi)—যেগুলি চৈতন্যকে মায়ার আবরণে আবৃত করে রেখেছিল, তাকে সীমাবদ্ধ করে ক্ষুদ্র ‘আমি’-তে পরিণত করেছিল—সেগুলি ধীরে ধীরে খসে পড়ে। এই উপাধিগুলি হলো সেই সকল শর্ত, গুণ, পরিচয় এবং জাগতিক সংযোগ, যা চৈতন্যকে তার বিশুদ্ধ অবস্থা থেকে বিচ্যুত করে। এই প্রক্রিয়াটি এমন যেন মেঘগুলি সূর্যের আলো থেকে সরে গিয়ে আকাশকে সম্পূর্ণভাবে মেঘমুক্ত করে দেয়। মেঘ যতই সূর্যকে ঢেকে রাখুক না কেন, সূর্যের স্বকীয় আলো কখনও ম্লান হয় না; মেঘ সরে গেলেই তার পূর্ণ জ্যোতি প্রকাশিত হয়। ঠিক তেমনি, উপাধিগুলি অপসারিত হলে শুদ্ধ চৈতন্য তার স্বকীয় মহিমায় প্রকাশিত হয়।
তখন যা অবশিষ্ট থাকে, তা হলো শুদ্ধ সাক্ষী চৈতন্য (Śuddha-Sākṣī-Caitanya)—যা কোনো কর্মে লিপ্ত নয়, কোনো ফলের প্রত্যাশায় নয়। এটি কেবল নিঃস্পৃহভাবে অবগত, কোনো কিছুতে আসক্তি বা বিতৃষ্ণা ছাড়াই সকল কিছুর সাক্ষী। এই সাক্ষীভাব হলো এমন এক অবস্থা, যেখানে চৈতন্য কেবল দেখে, কিন্তু কোনো কিছুতেই নিজেকে জড়ায় না। এটি নিছক অস্তিত্ব, যা সকল পরিবর্তন এবং বিনাশের ঊর্ধ্বে স্থিত। এই অবস্থাই পরম শান্তি, যা সমস্ত 'becoming' বা “হওয়া”-এর ঊর্ধ্বে। এই ‘হওয়া’ বলতে জাগতিক সকল পরিবর্তনশীল অবস্থা, জন্ম, বৃদ্ধি, ক্ষয় এবং মৃত্যুর চক্রকে বোঝানো হয়েছে। এখানে চৈতন্য কেবল স্বয়ং নিজের মধ্যে স্থিত থাকে, তার নিজের স্বরূপে প্রতিষ্ঠিত। এটি আত্মার প্রত্যাবর্তন, যেখানে কোনো দ্বৈততা বা বিভেদ থাকে না, কেবল অখণ্ড একত্ব বিরাজ করে।
আদি শঙ্কর এই অবস্থাকে অদ্বৈত দর্শনের চূড়ান্ত পরিণতি হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে, “যিনি জানেন, “আমি ব্রহ্ম”, তিনি শোক করেন না, ইচ্ছা করেন না; আত্মায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে তিনি চিরশান্তিতে থাকেন।” এই উক্তিটি মুক্ত পুরুষের মনের অবস্থাকে নির্ভুলভাবে তুলে ধরে। এই জ্ঞান কোনো সাধারণ তথ্য বা লৌকিক বুদ্ধি নয়, বরং এটি আত্ম-অনুভূতির এক গভীরতম উপলব্ধির ফল। এই উপলব্ধি অবিদ্যাকে (অজ্ঞানতা) ধ্বংস করে না, বরং প্রকাশ করে যে, অবিদ্যা কখনও সত্যিকার অর্থেই ছিল না। অবিদ্যা কেবল আলোর অনুপস্থিতি, যা অন্ধকারের মতো।