অবিদ্যা-বিদ্যা: ২০


অচ্ছেদ্য, আদাহ্য, আক্লেদ্য ও অশোষ্য—এই চারটি শব্দ ভগবদ্গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ের ২৩তম শ্লোকে ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে শ্রীকৃষ্ণ আত্মার অবিনাশী ও অপরিবর্তনীয় প্রকৃতি ব্যাখ্যা করছেন। শ্লোকটি এমন—“নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি, নৈনং দহতি পাবকঃ। ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো, ন শোষয়তি মারুতঃ।।”—অর্থাৎ, এই আত্মাকে কোনো অস্ত্র কেটে ফেলতে পারে না, আগুন পোড়াতে পারে না, জল ভেজাতে পারে না, আর বাতাস শুকিয়ে দিতে পারে না।

অচ্ছেদ্য মানে যাকে কাটা বা বিভক্ত করা যায় না। আত্মা অচ্ছেদ্য, কারণ সে অখণ্ড চৈতন্যময় সত্তা। দেহ বা পদার্থের মতো তার অংশ নেই, তাই কোনো অস্ত্র বা শক্তি তাকে বিভক্ত করতে পারে না। চেতনা এক, অবিভাজ্য এবং সব অভিজ্ঞতার মধ্যে বিরাজমান; এই অখণ্ডতা থেকেই আত্মার অপরিবর্তনীয়তা বোঝা যায়।

আদাহ্য মানে যাকে পোড়ানো যায় না। আগুন জড় পদার্থকে দগ্ধ করতে পারে, কিন্তু আত্মা জড় নয়। সে চৈতন্যময়, আর চেতনা কখনও দগ্ধ হয় না। আগুন দেহকে পোড়ায়, কিন্তু দেহের ভিতরে যে-চেতনাকে আমরা ‘আমি’ বলে জানি, তাকে কোনো দহন স্পর্শ করতে পারে না। তাই আত্মা আদাহ্য, অর্থাৎ সে অবিকার ও অনাদি।

আক্লেদ্য মানে যাকে ভেজানো যায় না। জল যে-বস্তুতে প্রভাব ফেলে, সেটি স্থূল উপাদানবিশিষ্ট; কিন্তু আত্মা স্থূল নয়, তাই তাকে সিক্ত করা যায় না। এই উপমা দ্বারা বোঝানো হয়েছে, আত্মা এমন সূক্ষ্ম ও অতীন্দ্রিয় সত্তা যে, কোনো উপাদান বা প্রাকৃতিক শক্তি তার উপর কার্য করতে পারে না। জল, যা সমস্ত পদার্থকে আর্দ্র করে, তারও সেখানে কোনো প্রভাব নেই।

অশোষ্য মানে যাকে শুকানো যায় না। বাতাস স্থূল বস্তুকে শুকিয়ে দেয়, কিন্তু আত্মা পদার্থ নয়, তাই বায়ুও তার কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। এইভাবে আত্মা অক্ষয়, অনাদি ও অবিনশ্বর—যা-কিছু পরিবর্তিত হয়, তা জড়; কিন্তু আত্মা চিরন্তন চৈতন্যস্বরূপ।

এই চারটি গুণ আত্মার প্রকৃত স্বরূপকে বোঝায়—অখণ্ড, অবিকার, সূক্ষ্ম ও চিরন্তন। শঙ্করাচার্য গীতাভাষ্যে ব্যাখ্যা করেছেন, আত্মা নিত্য, শুদ্ধ, বুদ্ধ, মুক্ত; তাই তাকে কোনো ভৌতিক প্রভাব স্পর্শ করতে পারে না। অস্ত্র, আগুন, জল বা বায়ু—সবই স্থূল উপাদান, আর আত্মা তাদের অতীত, পরম চেতনা।

শ্রীকৃষ্ণ এই শ্লোকে বোঝাতে চেয়েছেন যে, আত্মা কোনো ভৌতিক উপাদানে প্রভাবিত হয় না। তাই দেহের জন্ম বা মৃত্যুর সঙ্গে আত্মার কোনো সম্পর্ক নেই। আত্মা না কাটা যায়, না পোড়ানো যায়, না ভেজানো যায়, না শুকানো যায়। সে সর্বত্র সমান, অপরিবর্তনীয় ও অবিনশ্বর—এই উপলব্ধিই আত্মজ্ঞান, যা মুক্তির দ্বার।

দেহ হলো উপাধি—একটি বাহ্যিক আবরণ, যার দ্বারা আত্মা প্রকাশিত হয়, কিন্তু দেহের পরিবর্তনে আত্মার কোনো পরিবর্তন হয় না। ছান্দোগ্য উপনিষদে (৬.৮.৬) বলা হয়েছে—“যেমন মাটির পিণ্ড নষ্ট হলে মাটির তৈরি সব রূপ নষ্ট হয়, তেমনি দেহ নষ্ট হলে দেহরূপ অভিজ্ঞতা শেষ হয়, কিন্তু যার মধ্যে সব রূপ প্রতিষ্ঠিত, সেই আত্মা নষ্ট হয় না।” আত্মা দেহের আশ্রয়দাতা, কিন্তু দেহের গুণে সে পরিবর্তিত হয় না। গীতায় (২.২০) শ্রীকৃষ্ণ বলেন—“আত্মা জন্ম নেয় না, মরে না; সে কখনও উৎপন্ন হয়নি এবং কখনও বিনষ্টও হবে না”—এতে আত্মার নিত্যত্ব ও অপরিবর্তনীয়তা স্পষ্ট হয়।

দার্শনিকভাবে স্থূল দেহ হলো অবিদ্যার প্রথম স্তর। এখানে আত্মা নিজের চেতনা দেহে আরোপ করে ও নিজেকে দেহ বলে মনে করে। এই ভুল আরোপণকেই শঙ্করাচার্য তাঁর ব্রহ্মসূত্রভাষ্যে (অধ্যাসভাষ্য) বলেছেন—“আত্মানাত্মনো ইতার ইতার ধর্ম অধ্যাসঃ”—অর্থাৎ, আত্মা ও অনাত্মার গুণাবলির পারস্পরিক আরোপণই অধ্যাস, যা বন্ধনের মূল। অবিদ্যার প্রভাবে আত্মা নিজেকে দেহ ভেবে সংসারের চক্রে প্রবেশ করে; আর জ্ঞানোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ভুল ধারণা ভাঙে ও আত্মা নিজের প্রকৃত রূপ উপলব্ধি করে—“আমি দেহ নই, আমি চিরন্তন চেতনা।”

এইভাবে স্থূল শরীর হলো আত্মার বাহ্যিক আবরণ, যা অবিদ্যার কারণে আত্মার সঙ্গে একীভূত বলে মনে হয়। জ্ঞান উদিত হলে বোঝা যায়—দেহ কেবল আত্মার যন্ত্র, আত্মা তার আলোক। দেহ নশ্বর, কিন্তু আত্মা অক্ষয়। আত্মা সেই অবিনশ্বর সত্তা, যা দেহের জন্ম-মৃত্যুর ঊর্ধ্বে চিরকাল অপরিবর্তিত ও আলোকময় থাকে।

সূক্ষ্ম শরীর বা লিঙ্গ শরীর হলো সেই অদৃশ্য গঠন, যা স্থূল শরীরকে চালনা করে এবং মৃত্যুর পর এই শরীরই নতুন স্থূল শরীর ধারণ করে। এটি প্রধানত দুটি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত: অন্তঃকরণ এবং প্রাণাদি পঞ্চক।

অন্তঃকরণ: অন্তঃকরণ হলো আমাদের মনস্তাত্ত্বিক যন্ত্র, যা চারটি প্রধান ভাগে বিভক্ত:

মন (Manas): এটি ইচ্ছা, সংকল্প, বিকল্প (সংশয়), এবং আবেগ উৎপন্ন করে। মন দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং বহিরাগত তথ্যের প্রাথমিক প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র। এটি ইন্দ্রিয়গুলোর মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে পছন্দ-অপছন্দ তৈরি করে।

বুদ্ধি (Buddhi): বুদ্ধি হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষমতা। এটি নিশ্চিত জ্ঞান (নিশ্চয়াত্মিকা বৃত্তি) প্রদান করে এবং সঠিক-ভুল, ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত বিচার করতে সাহায্য করে। এটি মনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর করে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সহায়তা করে।

অহংকার (Ahamkara): অহংকার হলো 'আমি' বোধ বা স্ব-পরিচয়ের অনুভূতি। এটি নিজেকে কর্তা এবং ভোক্তা হিসেবে অনুভব করায় এবং ব্যক্তিকে তার কর্মের সাথে যুক্ত করে। "আমি করছি" বা "আমি অনুভব করছি" – এই বোধ অহংকার থেকেই আসে। এটি ব্যক্তিকে তার নিজস্ব সত্তা সম্পর্কে ধারণা দেয়।

চিত্ত (Chitta): চিত্ত হলো স্মৃতি, অভিজ্ঞতা এবং সুপ্ত সংস্কারের ভাণ্ডার। এটি অতীতের সকল জ্ঞান ও অনুভূতির সঞ্চয়স্থল এবং ভবিষ্যতের কর্মফলের বীজ ধারণ করে। চিত্তে সঞ্চিত সংস্কারই ব্যক্তির প্রকৃতি ও প্রবণতা নির্ধারণ করে। বেদান্ত দর্শনে এই চারটি উপাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। "নিঃসঙ্গচিত্ত" বা "আমি মন, বুদ্ধি, অহংকার, চিত্ত নই"–এই উক্তিটি এই চারটি উপাদানের ঊর্ধ্বে থাকা আত্মাকে নির্দেশ করে, যা প্রকৃত সত্য এবং অবিনশ্বর। এটি আত্মানুসন্ধানের একটি মূল ভিত্তি, যেখানে ব্যক্তি নিজেকে তার মানসিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে তুলে ধরে।

সূক্ষ্ম শরীর মানে সেই দেহ, যা দেখা যায় না, কিন্তু যার মাধ্যমে জীব চেতনা প্রকাশ করে, চিন্তা করে, অনুভব করে এবং কর্মফল ভোগ করে। এটি দেহত্যাগের পরও থাকে এবং পুনর্জন্মের মাধ্যম হয়। শঙ্করাচার্য ও বেদান্তসার অনুসারে সূক্ষ্ম শরীরের উপাদান সংখ্যা সতেরো, যা চারটি ভাগে বিভক্ত—পাঁচ জ্ঞানেন্দ্রিয়, পাঁচ কর্মেন্দ্রিয়, পাঁচ প্রাণ এবং মন-বুদ্ধি অর্থাৎ দুই অন্তঃকরণ।

প্রথমে আছে পাঁচ জ্ঞানেন্দ্রিয়, যা দ্বারা জীব জ্ঞান গ্রহণ করে। এগুলি হলো—চক্ষু, কর্ণ, ঘ্রাণ, জিহ্বা ও ত্বক। চক্ষু দ্বারা রূপ জানা যায়, কর্ণ দ্বারা শব্দ, ঘ্রাণ দ্বারা গন্ধ, জিহ্বা দ্বারা রস, ত্বক দ্বারা স্পর্শ। এই পাঁচটি সূক্ষ্ম ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সূক্ষ্ম শরীর বাইরের জগৎ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এবং চেতনার অভিজ্ঞতায় রূপান্তর করে।

এরপর আছে পাঁচ কর্মেন্দ্রিয়, যা দ্বারা জীব কাজ করে। এগুলি হলো—বাক্, পাণি, পাদ, পায়ু ও উপস্থ। বাক্ দ্বারা কথা বলা হয়, পাণি দ্বারা ধরা বা কর্ম করা হয়, পাদ দ্বারা চলাফেরা হয়, পায়ু দ্বারা বর্জন হয়, আর উপস্থ দ্বারা প্রজনন ঘটে। এই পাঁচ কর্মেন্দ্রিয় সূক্ষ্ম শরীরকে কর্মক্ষম করে তোলে, যাতে জীব ভোগ ও কার্য সম্পাদন করতে পারে।

তৃতীয় শ্রেণি হলো পাঁচ প্রাণ—প্রাণ, অপান, উদান, সমান ও ব্যান। প্রাণ বায়ু হৃদয় ও ফুসফুসে অবস্থান করে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে। অপান বায়ু দেহের নিম্নাংশে থাকে ও বর্জন ও প্রজননের কার্য করে। উদান বায়ু গলায় থাকে, বাক্ উৎপন্ন করে এবং মৃত্যুকালে আত্মাকে উপরে তুলে নিয়ে যায়। সমান বায়ু নাভিতে থাকে ও হজম ও ভারসাম্যের কাজ করে। ব্যান বায়ু সমগ্র দেহে বিস্তৃত থেকে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে। এই পাঁচ প্রাণই সূক্ষ্ম শক্তি হিসেবে শরীরের ভিতর ক্রিয়াশীল থাকে।

শেষে আছে অন্তঃকরণ দুইটি—মন ও বুদ্ধি। মন চিন্তা, ইচ্ছা, সংশয় ও আবেগের কেন্দ্র। এটি বিভিন্ন ইন্দ্রিয় থেকে তথ্য গ্রহণ করে এবং বুদ্ধির কাছে পাঠায়। বুদ্ধি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, বিবেচনা করে এবং জ্ঞানকে স্থির করে। মন ও বুদ্ধি সূক্ষ্ম শরীরের অভ্যন্তরীণ যন্ত্র; এগুলির মাধ্যমেই জীব জানে, ভাবে ও ভোগ করে।

এইভাবে সূক্ষ্ম শরীরের উপাদান হলো—পাঁচ জ্ঞানেন্দ্রিয়, পাঁচ কর্মেন্দ্রিয়, পাঁচ প্রাণ, মন ও বুদ্ধি—মোট সতেরো।

সূক্ষ্ম শরীরই আত্মার অভিজ্ঞতার বাহন। স্থূল শরীর নষ্ট হলেও সূক্ষ্ম শরীর নষ্ট হয় না। এটি আত্মার সঙ্গে এক জন্ম থেকে আরেক জন্মে স্থানান্তরিত হয় এবং নতুন স্থূল শরীর ধারণ করে। মুক্তিলাভের সময়, অর্থাৎ আত্মজ্ঞান লাভের পর, এই সূক্ষ্ম শরীরই লয় পায়, কারণ তখন আর কোনো কর্মের বীজ অবশিষ্ট থাকে না, জীব ব্রহ্মে লীন হয়।

এই শিক্ষার উল্লেখ রয়েছে বেদান্তসারে, তত্ত্ববোধে, ব্রহ্মসূত্র ভাষ্যে এবং তৈত্তিরীয় উপনিষদের ব্রহ্মানন্দবল্লী অংশে, যেখানে প্রাণ, মন, বুদ্ধি প্রভৃতির বিশ্লেষণ দিয়ে সূক্ষ্ম শরীরের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

মন যেখানে বিকল্প-বিবেচনার দোলাচল করে, বুদ্ধি সেখানে সিদ্ধান্তে পৌঁছোয়; অহংকার “আমি”-ভাব গড়ে তোলে, চিত্তে স্মৃতি-সংস্কার সঞ্চিত থাকে। এই কার্যবিভাগ বেদান্তের প্রাথমিক গ্রন্থাদিতে অন্তঃকরণের স্বভাব হিসেবে ব্যাখ্যাত, যাতে মন-বুদ্ধি-অহংকার-চিত্ত চারটি উপকরণ হিসেবে পৃথক কাজ করে—অনুভব ধরা, বিচার করা, ‘আমি’-ভাব জুড়ে দেওয়া এবং ছাপ রেখে দেওয়া—এই ধারায়।

স্বপ্নাবস্থায় সূক্ষ্ম শরীরের কার্যকলাপ অত্যন্ত স্পষ্টরূপে পরিলক্ষিত হয়। যখন আমাদের বাহ্যিক ইন্দ্রিয়সমূহ এবং স্থূল দেহ নিস্তেজ ও নিষ্ক্রিয় থাকে, তখনও অভিজ্ঞতার প্রবাহ থেমে থাকে না। এই সময়ে মন তার নিজস্ব সংস্কার ও পূর্বলব্ধ জ্ঞান থেকে এক নতুন জগৎ রচনা করে, এবং সেই জগতের সকল ভোগ কেবল অন্তর্গত উপকরণের দ্বারাই সম্পন্ন হয়। মাণ্ডূক্য উপনিষদ এই স্বপ্নচেতনাকে "তৈজস" নামে অভিহিত করেছে। উপনিষদ জানায় যে, "যার ক্ষেত্র স্বপ্ন, যার জ্ঞান অন্তর্মুখী, যে সূক্ষ্ম ভোগ করে"—এই বিবরণ স্পষ্ট করে তোলে যে, স্বপ্ন-অভিজ্ঞতার মূল বাহনই হলো সূক্ষ্ম শরীর।

একই ভাব বৃহদারণ্যক উপনিষদেও সুন্দরভাবে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, স্বপ্নদ্রষ্টা ব্যক্তি "রথ, পথ, নগর ইত্যাদি" সৃষ্টি করে। এই উক্তিটি নির্দেশ করে যে, বাহ্যিক জগতে বস্তুর অস্তিত্ব না থাকলেও, অভিজ্ঞতার সম্পূর্ণতা মানসের গভীরে নিবিষ্ট থাকে। সূক্ষ্ম শরীর, যা স্থূল দেহের চেয়েও অধিক সূক্ষ্ম এবং চৈতন্যময়, এই স্বপ্নাবস্থায় সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং যাবতীয় মানসিক প্রতিচ্ছবি ও সংবেদনশীলতাকে বাস্তবে রূপ দেয়।

এই প্রক্রিয়াটি প্রমাণ করে যে, মানব অস্তিত্বের অভিজ্ঞতা কেবল জাগতিক ইন্দ্রিয়ের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং চেতনার গভীর স্তরেও এটি সক্রিয় থাকে, যেখানে মন তার নিজস্ব সৃজনশীলতা দিয়ে এক অনন্য অভিজ্ঞতার জগৎ নির্মাণ করে। এই সূক্ষ্ম শরীরের কার্যাবলী আমাদের চেতনার অসীম ক্ষমতা এবং ইন্দ্রিয়ের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে কীভাবে অভিজ্ঞতা অর্জিত হতে পারে, তা প্রদর্শন করে।

সূক্ষ্ম শরীরের সঙ্গে জড়ানো আছে প্রাণ-পঞ্চক—প্রাণ, আপান, ব্যান, উদান, সমান। প্রশ্ন উপনিষদ প্রত্যেকের অবস্থান ও কাজ আলাদা করে বলে: প্রাণ মুখ-নাসা-চক্ষে প্রবাহিত, আপান নিম্নদেশে স্থিত, সমান মধ্যদেশে আহার সমবণ্টন করে, ব্যান নাড়িপথে সর্বত্র পরিব্যাপ্ত, আর উদান ঊর্ধ্বগামী সঞ্চালক। এরা মিলেই জীবনের প্রাণচালনা রক্ষা করে।