অবিদ্যা-বিদ্যা: ১১১



এইভাবে “স্যাদস্তি চ নাস্তি চ” জৈন দর্শনের মূল নীতিকে স্পষ্ট করে—অনেকান্তবাদ, অর্থাৎ কোনো সত্যই একমুখী নয়; সব সত্যই নির্ভর করে প্রেক্ষাপটের উপর। এখানে “দ্রব্য” (বস্তু), “ক্ষেত্র” (স্থান), “কাল” (সময়) ও “ভাব” (অবস্থা)—এই চারটি উপাদান মিলে নির্ধারণ করে, কোনো বক্তব্য কতখানি সত্য। একটি বস্তুর অস্তিত্বকে আমরা যদি অন্য বস্তুর প্রেক্ষিতে দেখি, তবে তা নেই; কিন্তু নিজ প্রেক্ষিতে দেখি, তবে তা আছে। জৈন চিন্তায় এই আপেক্ষিকতা কেবল যৌক্তিক তত্ত্ব নয়, বরং এক নৈতিক দৃষ্টিও—যেখানে প্রত্যেক সত্যের প্রতি সহিষ্ণুতা জন্মায়।

“স্যাদস্তি চ নাস্তি চ” আসলে আমাদের শেখায়, কীভাবে একই সঙ্গে দুটি আপাত-বিরোধী সত্যকে ধারণ করা যায়। এটি বলে—অস্তিত্ব ও অনস্তিত্ব কোনো পরস্পরবিরোধী বাস্তবতা নয়, বরং একে অপরের অন্তর্লীন দিক। জগতের প্রতিটি বস্তু, প্রতিটি ঘটনা, এমনকি প্রতিটি অভিজ্ঞতাও এই দ্বৈত সত্তায় স্পন্দিত—একদিকে “আছে”, অন্যদিকে “নেই”; একদিকে প্রকাশ, অন্যদিকে লয়।

জৈন দার্শনিক দৃষ্টিতে “স্যাদস্তি চ নাস্তি চ” মানে হলো—একই বস্তুর ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভিন্ন ভিন্ন সত্য প্রকাশ। যেমন, একটি গাছ বর্তমানে জীবন্ত—স্যাদস্তি, কিন্তু একই সঙ্গে তার পাতা ঝরে যাচ্ছে, তার কাঠ ভবিষ্যতের মৃত্যু ও পরিবর্তনের দিকে এগোচ্ছে—স্যাদ নাস্তি। সুতরাং গাছটি একই সময়ে আছে এবং নেই—আছে তার বর্তমান জীবনে, নেই তার ক্রমক্ষয়মান অংশে। এইভাবে বাস্তবতা কখনও একরৈখিক নয়; তা বহুস্তরীয়, যেখানে অস্তিত্ব ও অনস্তিত্ব যুগল নৃত্যে যুক্ত।

এই ভাবনা আমাদের শেখায় যে, বিশ্ব কেবল “আছে” বলেই নয়, বরং “নেই”-এর সম্ভাবনাতেও পূর্ণ। যেমন দিন ও রাত একে অপরকে ধারণ করে, তেমনি “আছে” ও “নেই”-এর এই পরস্পরবিরোধী একত্বই জীবনের ছন্দ সৃষ্টি করে। একটির মাধ্যমে অন্যটির অর্থ উজ্জ্বল হয়; “আছে”-এর তাৎপর্য বোঝা যায় কেবল তখনই, যখন “নেই”-এর সীমা অনুভূত হয়।

এইভাবে “স্যাদস্তি চ নাস্তি চ” জৈন দর্শনের গভীরতম সত্যকে প্রতিফলিত করে—বাস্তবতা কোনো একক রঙ নয়, বরং বিপরীতের সুষম সংলাপ। এটি আমাদের চিন্তার দ্বৈত প্রাচীর ভেঙে এমন এক দৃষ্টিতে নিয়ে যায়, যেখানে সবকিছু একই সঙ্গে রূপান্তরিত ও অবিচল, ক্ষণিক ও নিত্য, “আছে” ও “নেই”—এক নৃত্যমগ্ন ঐক্যে বাঁধা।

যেমন দিনের মধ্যে রাত লুকিয়ে থাকে, জীবনের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা, আনন্দের মধ্যে দুঃখের ছায়া—সবই একে অপরের সাপেক্ষে সত্য। তাই জৈন দৃষ্টিতে কোনো কিছুকেই সম্পূর্ণ মিথ্যা বলা যায় না, আবার কোনো কিছুকেই নিঃশর্ত সত্যও বলা যায় না। এইভাবে “স্যাদস্তি চ নাস্তি চ” অস্তিত্ব ও নাস্তিত্বের দ্বন্দ্বকে মিটিয়ে দেয় এক আপেক্ষিক ঐক্যে, যেখানে সত্য আর মিথ্যা, বাস্তব আর অবাস্তব, আলো আর ছায়া—সবই পরস্পরনির্ভর।

এই সূত্রের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য কেবল তত্ত্বজ্ঞান নয়, তা এক মানসিক সাধনাও। যিনি বোঝেন যে, কোনো বক্তব্যই পূর্ণ নয়, তিনিই নম্র হন, সহিষ্ণু হন, অন্যের দৃষ্টিকোণ শুনতে শেখেন। জৈন পণ্ডিত হরিভদ্রসূরি যেমন বলেছিলেন—“যিনি অন্যের দৃষ্টিকোণকেও সত্যের আংশিক প্রতিফলন হিসেবে গ্রহণ করেন, তিনিই প্রকৃত জ্ঞানী।” এই উক্তির মধ্যেই “স্যাদস্তি চ নাস্তি চ”-এর মর্ম লুকিয়ে আছে—যেখানে জ্ঞান ও সহিষ্ণুতা একে অপরের পরিপূরক।

অদ্বৈত বেদান্তের মতোই জৈন চিন্তা এখানে দ্বন্দ্বকে মুছে দেয়, কিন্তু পদ্ধতিটি ভিন্ন। বেদান্তে বিরোধ অবশেষে একত্বে লীন হয়—সবই ব্রহ্ম; কিন্তু জৈন দর্শনে বিরোধগুলি সহাবস্থানে থাকে—সবই প্রেক্ষাপটনির্ভর সত্য। “স্যাদস্তি চ নাস্তি চ” তাই কোনো নিষ্কর্ষ নয়, বরং এক চলমান উপলব্ধি, এক ক্রমবর্ধমান সত্যদৃষ্টি, যেখানে প্রতিটি মত, প্রতিটি অভিজ্ঞতা, প্রতিটি অবস্থাই সত্যের আংশিক প্রতিফলন।

এভাবে জৈন দার্শনিকরা মানবচিন্তার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে এক বিশাল দিগন্ত উন্মোচন করেছেন—দেখিয়েছেন, সত্য কখনও এক দৃষ্টিকোণ থেকে ধরা যায় না; তা সর্বদা বহু দিক থেকে বিকশিত হয়। মানুষের এক-চোখে-দেখা সত্য আংশিক, কারণ প্রত্যেক অভিজ্ঞতা নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপট, সময় ও অবস্থার সঙ্গে যুক্ত। যেমন আয়নায় প্রতিবিম্ব কেবল এক দিক দেখায়, তেমনি একক দৃষ্টি কেবল বাস্তবতার একটি অংশ প্রতিফলিত করে।

জৈন আচার্যদের মতে, জগৎকে সত্যভাবে বুঝতে হলে সমস্ত দিক—সমস্ত নয় (দৃষ্টিকোণ)—মিলিয়ে দেখতে হয়। তাঁরা বলেছেন, একদিক থেকে দেখা মানে আংশিক সত্য দেখা, আর সমস্ত দিক মিলিয়ে দেখা মানে পূর্ণ বাস্তবতা উপলব্ধি করা। এইভাবেই তাঁরা মানুষের জ্ঞানকে বহু-মাত্রিক ও সহিষ্ণু করে তুলেছেন—যেখানে “আমার দেখা সত্য” আর “তোমার দেখা সত্য”—দুটিই সমানভাবে প্রাসঙ্গিক, কারণ উভয়ই মিলেই বাস্তবতার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটায়।

এই উপলব্ধিই জৈন দর্শনের প্রাণ—যেখানে সত্য কোনো একচোখা ঘোষণা নয়, বরং বহু দৃষ্টির সমন্বিত প্রতিচ্ছবি, এক আয়নাগুচ্ছ, যেখানে প্রতিটি দৃষ্টি আংশিক আলো যোগ করে, আর সব মিলিয়েই জগৎ সম্পূর্ণভাবে প্রতিফলিত হয়।

আবার এমনও তো হতে পারে যে, বস্তুটি এমন অবস্থায় আছে, যা ভাষা বা চিন্তার দ্বারা স্পষ্টভাবে ধরা যায় না। যেমন ভোরবেলায় কুয়াশার মধ্যে ঘট অস্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে—তখন বলা কঠিন, “আছে” না “নেই।” এই অবস্থাকে বলা হয় অবক্তব্য (syād avaktavyaḥ)—অর্থাৎ, এমন এক সত্য, যা বচনে সম্পূর্ণভাবে প্রকাশযোগ্য নয়। এটি চতুর্থ দৃষ্টিকোণ—যেখানে বাস্তবতার সূক্ষ্মতা ভাষার সীমা অতিক্রম করে।

“স্যাদ অব্যক্তব্যঃ” (syād avaktavyaḥ)—এই সংক্ষিপ্ত অথচ গভীর উক্তিটি জৈন দর্শনের সপ্তভঙ্গী নয় বা সাতস্তরের আপেক্ষিক বিশ্লেষণের চতুর্থ সিদ্ধান্ত। এখানে “স্যাৎ” মানে “কোনো এক দৃষ্টিকোণ থেকে”, আর “অব্যক্তব্যঃ” মানে “যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না”—অর্থাৎ, এমন এক অবস্থা, যা বলা যায় না, কিন্তু অনুভূত হয়। এই ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে মানব-ভাষার সীমাবদ্ধতা এবং বাস্তবতার বহুমাত্রিক প্রকৃতি।

এমন এক অবস্থা, যা বলা যায় না, কিন্তু অনুভূত হয়—এই বাক্যের মাধ্যমে জৈন দর্শনের “স্যাদ অব্যক্তব্যঃ”-এর সূক্ষ্ম সত্যটি ধরা পড়ে। এখানে “অব্যক্তব্য” মানে শুধু “নির্বাক” নয়, বরং সেই অবর্ণনীয় স্তর, যেখানে ভাষা থেমে যায়, কিন্তু চেতনা জেগে থাকে। মানুষের ভাষা চিন্তাকে প্রকাশ করতে পারে, কিন্তু চেতনার গভীর অভিজ্ঞতা—যেখানে বিপরীতগুলো একে অপরের মধ্যে মিশে যায়—সেখানে শব্দের সীমা এসে যায়।

এই ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে দুটি মূল সত্য—মানব-ভাষার সীমাবদ্ধতা এবং বাস্তবতার বহুমাত্রিক প্রকৃতি। ভাষা রৈখিক, সে একসময়ে এক দিকই প্রকাশ করতে পারে; কিন্তু বাস্তবতা বহুমুখী, যেখানে “আছে” ও “নেই”, “এক” ও “অসংখ্য”, “স্থিতি” ও “পরিবর্তন”—সব একসঙ্গে থাকে। ফলে যখন জৈন দার্শনিক “স্যাদ অব্যক্তব্যঃ” বলেন, তখন তাঁরা বোঝান—যে-অবস্থায় এই সব দিক একই সঙ্গে সত্য, সেই অবস্থাকে ভাষা ধারণ করতে পারে না; সেখানে কেবল অনুভব করা যায়, বলা যায় না।

এই উপলব্ধি আমাদের চিন্তাকে বিনয়ী করে তোলে—আমরা বুঝতে শিখি, ভাষা সত্যের প্রতিফলন, কিন্তু সত্যের পূর্ণ রূপ নয়। শব্দ যা প্রকাশ করতে পারে, তা কেবল আংশিক; আর যা অনুভূত হয়, সেটিই প্রকৃত বাস্তব। এইভাবেই “অব্যক্তব্য” হয়ে ওঠে এক দার্শনিক নীরবতা—যেখানে শব্দ থেমে যায়, অথচ জ্ঞান সম্পূর্ণ জেগে থাকে।

“স্যাদ অব্যক্তব্যঃ” তখনই উঠে আসে, যখন কোনো বস্তু একসঙ্গে “স্যাদস্তি” (কোনো দৃষ্টিকোণ থেকে আছে) এবং “স্যাদ নাস্তি” (অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে নেই)—এই দুই অবস্থার সংমিশ্রণে অবস্থান করছে। তখন তাকে এককভাবে “আছে” বা “নেই” বলা যায় না, কারণ ভাষা, যা মানুষের চিন্তার বাহন, সে একসঙ্গে বিপরীত দুই অবস্থা ধারণ করতে অক্ষম। জৈন আচার্যদের মতে, বস্তু বহুপর্যায়ে ও বহুদৃষ্টিতে সত্য, কিন্তু ভাষা রৈখিক—একটি মাত্র ভাব বা দিক একসময়ে প্রকাশ করতে সক্ষম। তাই যখন আমরা এমন এক অবস্থার মুখোমুখি হই, যেখানে অস্তিত্ব ও অনস্তিত্ব উভয়ই মিলে গেছে, তখন শব্দ থেমে যায়, ভাষা ব্যর্থ হয়, এবং কেবল “অব্যক্তব্য”—অর্থাৎ “অবর্ণনীয়তা”—রয়ে যায়।

ধরা যাক, জ্যোৎস্না ভরা রাতে একটি হ্রদের উপর চাঁদের প্রতিবিম্ব। কেউ জিজ্ঞাসা করলে—“চাঁদ কি জলে আছে?” এক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়—“স্যাদস্তি”—চাঁদ আছে, কারণ আমরা তাকে দেখি। আবার অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে—“স্যাদ নাস্তি”—চাঁদ নেই, কারণ বাস্তবে সে আকাশে। কিন্তু যখন কেউ জিজ্ঞেস করে—“তাহলে আসলে সে কোথায়?” তখন উত্তর দাঁড়ায়, “স্যাদ অব্যক্তব্যঃ”—কারণ এই যুগপৎ সত্য ভাষায় পুরোপুরি ধরা যায় না।

“স্যাদ অব্যক্তব্যঃ”-এর মধ্যে রয়েছে জৈন দর্শনের গভীর জ্ঞানতাত্ত্বিক বিনয়। এটি বলে—জগৎ এমন এক অনন্ত রূপের সম্মিলন, যা মানুষের বুদ্ধি আংশিকভাবে জানতে পারে, কিন্তু ভাষা সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারে না। এই বোধ আনে অহংকারের লয়—জ্ঞানী সত্য উপলব্ধি করেও জানেন যে, তা তিনি পূর্ণভাবে ব্যক্ত করতে পারবেন না।

এই অব্যক্তব্য অবস্থা—যা বলা যায় না, কিন্তু গভীরভাবে অনুভূত হয়—আসলে জৈন দর্শনের অনেকান্তবাদ (anekāntavāda)-এর চূড়ান্ত প্রকাশ। অনেকান্তবাদ বলে, কোনো এক বক্তব্য, কোনো এক দৃষ্টিকোণ, কোনো এক অভিজ্ঞতাই কখনও পরম নয়; প্রতিটি সত্যই আপেক্ষিক, এবং প্রতিটি দৃষ্টিই সত্যের এক আংশিক প্রতিফলন। কিন্তু যখন মন এই সমস্ত আপেক্ষিক সত্যগুলির মধ্যে এক যুগপৎ সংগতি অনুভব করে—যখন উপলব্ধি ঘটে যে, “আছে” ও “নেই”, “প্রকাশ” ও “অপ্রকাশ”, “বচন” ও “নীরবতা”—সবই একই বাস্তবতার ভিন্ন ভিন্ন ছায়া, তখন ভাষা স্তব্ধ হয়ে যায়।

এই মুহূর্তেই জন্ম নেয় “স্যাদ অব্যক্তব্যঃ”—যেখানে চিন্তা ও বাক্য তাদের সীমা স্পর্শ করে এবং অভিজ্ঞতা একা দাঁড়ায় তার নিজস্ব দীপ্তিতে। জৈন দৃষ্টিতে এটি কেবল একটি যুক্তিগত নীতি নয়, বরং এক গভীর দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক উপলব্ধি যে, সত্য কখনও বলা যায় না, কেবল জাগ্রত চেতনায় অনুভব করা যায়। ভাষা যতই সূক্ষ্ম হোক, তা সর্বদা কোনো নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে গঠিত; কিন্তু সত্য হল সেই সামগ্রিক অনুভব, যেখানে সমস্ত দৃষ্টিকোণ মিলিত হয়ে এক পরম নীরবতায় লীন হয়।

জৈন পণ্ডিতরা তাই বলেছিলেন—“যেখানে চিন্তা ও ভাষা নিস্তব্ধ, সেখানে সত্য স্বয়ং প্রকাশিত।” এই বাক্যে “অব্যক্তব্য”-এর আসল রূপ ধরা আছে। এটি কোনো নির্বাক শূন্যতা নয়, বরং নীরব উপলব্ধির দীপ্তি, যেখানে ভাষা থেমে যায়, কিন্তু অভিজ্ঞতা কথা বলে। সেই নীরবতা জড় নয়—তা সচেতন, প্রত্যক্ষ, জাগ্রত। সেখানে না শব্দ আছে, না ধারণা; আছে কেবল উপস্থিতির পূর্ণতা—যা প্রকাশের চেয়ে অধিকতর জীবন্ত।

অদ্বৈত বেদান্ত ও জৈন দর্শন—দুই ধারাই মানুষের ভাষা ও চিন্তার সীমা উপলব্ধি করে এক গভীর নীরবতার দিকে পৌঁছাতে চেয়েছে, কিন্তু সেই নীরবতার প্রকৃতি ও অর্থ দুই দর্শনে ভিন্ন রূপে প্রতিফলিত হয়েছে।

অদ্বৈত বেদান্তে “যত্র বাচো নিবর্তন্তে, প্রত্যনু মানসা সহ” (তৈত্তিরীয় উপনিষদ, ২.৪) অর্থাৎ, "যেখান থেকে বাক্য বা কথা মন-সহ তাকে না পেয়েই ফিরে আসে।"—সেই পরম অভিজ্ঞতার প্রতীক, যেখানে সমস্ত ভেদবুদ্ধি লয়প্রাপ্ত হয়। এখানে নীরবতা মানে একত্বে বিলীনতা—ব্রহ্ম ও জগৎ, জান্তা (যে জানে—জ্ঞাতা বা জ্ঞানী চেতনা) ও জাননো (যাকে জানা যায়—জ্ঞেয় বা জানা-যাওয়া বিষয়), ভাবনা ও ভাষা—সব মিলেমিশে যায় এক অখণ্ড চেতনার সমুদ্রে। ভাষা ও মন ফিরে আসে, কারণ তারা দ্বৈততায় কাজ করে; কিন্তু ব্রহ্ম সেখানে এক ও অভেদ, যেখানে “বর্ণনাকারী” ও “বর্ণিত”—দু-জনেরই পার্থক্য মুছে যায়। এই নীরবতা তাই লয়ের নীরবতা, যেখানে সব দ্বন্দ্ব সমাধান হয়ে এক অদ্বৈত চৈতন্যে লীন হয়।