এ কারণেই দৃষ্টিসংবেদন কখনও পুরোপুরি বস্তুগত নয়। দু-জন মানুষ একই জিনিস দেখে, কিন্তু উপলব্ধি ভিন্ন হয়—কারণ দেখা এখানে কেবল অপটিক্যাল নয়, মন ও চেতনার যৌথ প্রতিক্রিয়া। চোখ শুধু রূপের স্পর্শ পায়, কিন্তু মন সেই রূপকে অর্থ দেয়, এবং আত্মা সেই অভিজ্ঞতাকে চেতনার আলোর মধ্যে ধারণ করে।
যোগশাস্ত্রে এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় দৃষ্টিসংযোগ বা দ্রষ্টা-দৃশ্য-সংযোগ, যেখানে দেখা মানে এক প্রকার চৈতন্য-সঞ্চার। আর দৃষ্টিসংবেদন হলো সেই সঞ্চারের জ্ঞাপন—যেখানে রূপ, রশ্মি, মন ও আত্মা মিলিত হয়ে “দেখা” নামে এক অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করে।
দৃষ্টিসংবেদন কেবল চোখের কাজ নয়; এটি চেতনার এক অভ্যন্তরীণ কার্য, যার মাধ্যমে আত্মা নিজেরই এক অংশ—রূপ বা দৃশ্যকে—উপলব্ধি করে। চোখ কেবল জানালার মতো, মন হলো তার কাচ, আর আত্মা হলো ভেতরের আলো—যে আলোর কারণে সব দেখা সম্ভব।
দৃষ্টিসংযোগ বা দ্রষ্টা-দৃশ্য-সংযোগ হলো দেখার অভিজ্ঞতা ঘটার মূল দার্শনিক প্রক্রিয়া—যেখানে “দ্রষ্টা” (যিনি দেখেন), “দৃশ্য” (যা দেখা হচ্ছে), এবং “দর্শন” বা “সংযোগ” (দেখা ঘটার অবস্থা)—এই তিনটি উপাদান মিলিত হয়ে জ্ঞান বা অভিজ্ঞতার সৃষ্টি করে।
বেদান্ত বলে, পৃথিবীতে যা-কিছু দেখা, শোনা, জানা—সবই এই “সংযোগ”-এর মাধ্যমে ঘটে। কিন্তু এই সংযোগ বাহ্য নয়, এটি চেতনার অভ্যন্তরীণ প্রক্ষেপ।
“দ্রষ্টা” হলো আত্মা—শুদ্ধ চৈতন্য, যিনি নিজে অবিচল, কিন্তু যাঁর উপস্থিতিতে দেখা সম্ভব। “দৃশ্য” হলো সেই বস্তু বা রূপ, যা ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে প্রতিভাসিত হয়। আর “দৃষ্টিসংযোগ” হলো মন ও ইন্দ্রিয়ের যোগফল সেই মুহূর্ত, যখন আত্মার আলো দৃশ্যের উপর প্রতিফলিত হয়ে জ্ঞান বা উপলব্ধি সৃষ্টি করে।
“প্রতিভাসিত” মানে হলো—যা চেতনার আলোর মধ্যে প্রতীয়মান বা প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু বাস্তবভাবে স্বাধীন অস্তিত্ব নেই।
এই শব্দটি সংস্কৃত “প্রতিভাস” (প্র + ভাবস্ ধাতু) থেকে এসেছে, যার অর্থ “প্রতিফলন”, “প্রকাশ”, “illusion-like appearance”। বেদান্তে এটি বিশেষভাবে ব্যবহার হয় এমন কিছুর জন্য, যা দেখা যায়, অনুভব করা যায়, কিন্তু যা নিজের শক্তিতে নয়, অন্যের আলোকেই প্রকাশিত।
যেমন—দর্পণে মুখ দেখা যায়; কিন্তু সেই মুখ বাস্তবে সেখানে (দর্পণে) নেই, এটি কেবল প্রতিভাসিত। রাতে দড়িকে সাপ বলে মনে হয়—সাপটা প্রতিভাসিত, কারণ তার অস্তিত্ব আসলে দড়ির উপর নির্ভরশীল। তেমনি এই জগৎও ব্রহ্মচৈতন্যে প্রতিভাসিত—অর্থাৎ ব্রহ্মের আলোয় দেখা এক প্রতিফলনমাত্র।
শঙ্করাচার্য তাঁর ব্রহ্মসূত্র ভাষ্যে বারবার বলেন, “জগৎ প্রতিভাসিতম্, ন তু সত্যম্”—জগৎ কেবল চেতনায় প্রতিফলিত, স্বতন্ত্র সত্য নয়। অর্থাৎ, প্রতিভাসিত মানে—যা দেখায় বাস্তবের মতো, কিন্তু আসলে চেতনার প্রতিফলন; যেভাবে চাঁদের আলো আসলে সূর্যের প্রতিফলন, তেমনি জগতের অস্তিত্বও আত্মার আলোকেই দেখা যায়।
যোগসূত্রে (৩.৩৫) বলা হয়েছে—“দ্রষ্টৃদৃশ্যযোঃ সংযোগঃ হেতুরজ্ঞানাত্”—দ্রষ্টা ও দৃশ্যের সংযোগ অজ্ঞান বা অবিদ্যার কারণেই ঘটে। অর্থাৎ আত্মা (দ্রষ্টা) আসলে চির মুক্ত ও পৃথক, কিন্তু অবিদ্যার প্রভাবে সে নিজেকে দৃশ্য বা জগতের সঙ্গে একীভূত বলে মনে করে। এই বিভ্রম থেকেই “আমি দেখি”, “আমি ভোগ করি”, “আমি কষ্ট পাই”—এই ধারণাগুলি জন্ম নেয়।
শঙ্করাচার্য এই বিষয়ে বলেন—যখন আত্মা ও জগৎকে পৃথকভাবে দেখা যায়, তখন মুক্তি ঘটে; কিন্তু যখন তাদের সংযোগ অজ্ঞানতায় মিশে যায়, তখন সংসার সৃষ্টি হয়। এই সংযোগই অধ্যাস—যেখানে দ্রষ্টার গুণ দৃশ্যের উপর এবং দৃশ্যের গুণ দ্রষ্টার উপর আরোপিত হয়।
“দ্রষ্টার গুণ দৃশ্যের উপর এবং দৃশ্যের গুণ দ্রষ্টার উপর আরোপিত হয়”—এই কথাটি অদ্বৈত বেদান্তের এক মৌলিক ধারণা বোঝায়, যাকে বলা হয় অধ্যাস (adhyāsa) বা “ভুল আরোপণ”। এটি শঙ্করাচার্যের সমগ্র দর্শনের সূচনা বিন্দু।
এই ভাবের অর্থ হলো—আমরা জগতে যেভাবে অভিজ্ঞতা লাভ করি, তা বাস্তব নয়; বরং এক পারস্পরিক ভুল সনাক্তকরণ, যেখানে চেতনার গুণ পদার্থে, আর পদার্থের গুণ চেতনায় আরোপিত হয়।
“দ্রষ্টা” বলতে বোঝানো হয়েছে আত্মা—শুদ্ধ চৈতন্য, যিনি অপরিবর্তনীয়, নিঃস্পৃহ ও অক্রিয়। “দৃশ্য” হলো জগত—যা পরিবর্তনশীল, জড় ও নিত্যমিথ্যা।
নিত্যমিথ্যা (nitya-mithyā) শব্দটি বেদান্ত দর্শনের এক সূক্ষ্ম ও গভীর ধারণা, যা অবিদ্যা ও মায়া-র প্রকৃতি বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এর আক্ষরিক অর্থ—“চিরকাল মিথ্যা”, অর্থাৎ এমন কিছু, যা কখনও সত্য হয় না, যদিও প্রতীয়মান হয়।
বেদান্তে বাস্তবতার তিনটি স্তর ধরা হয়—(১) ব্যাপারিক বা ব্যাবহারিক সত্য (ব্যাবহারিক বাস্তবতা), (২) প্রাতিভাসিক সত্য (ভ্রম-নির্ভর বাস্তবতা), (৩) পারমার্থিক সত্য (চিরন্তন সত্য)।
এর মধ্যে পারমার্থিক সত্য কেবল ব্রহ্ম—যা সর্বকালে, সর্বত্র, অপরিবর্তিত থাকে; এটি সত্যম্ জ্ঞানম্ অনন্তম্ ব্রহ্ম (তৈত্তিরীয় উপনিষদ, ২.১.১)। অন্যদিকে, প্রাতিভাসিক ও ব্যাপারিক স্তরে যা দেখা যায়—জগত, দেহ, মন, সময়, স্থান—সবই পরিবর্তনশীল; এগুলি ব্রহ্মচেতনার উপর প্রতিভাসিত। তাই এগুলিকে বলা হয় মিথ্যা, অর্থাৎ যাদের অস্তিত্ব নির্ভরশীল, নিজের শক্তিতে নয়।
কিন্তু “মিথ্যা” মানে এখানে “পুরোপুরি অসত্তা” নয়, যেমন শিংওয়ালা ঘোড়া বা আকাশফুল—যাদের কোনো অস্তিত্বই নেই। বরং মিথ্যা মানে—যা দেখায় সত্যের মতো, কিন্তু জ্ঞানের আবির্ভাবে বিলুপ্ত হয়। যেমন দড়িতে সাপ দেখা গেলে সাপটি মিথ্যা; তা দড়ির উপর নির্ভর করে, নিজের কোনো স্বাধীন বাস্তবতা নেই।
“নিত্যমিথ্যা” মানে সেই জিনিস, যা সব কালে, সব অবস্থায়ই মিথ্যা—কখনোই সত্য হয় না। যেমন স্বপ্নে-দেখা হাতি জাগরণে মিথ্যা; কিন্তু জাগরণও, যখন ব্রহ্মজ্ঞান উদিত হয়, তখন মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। তাই শঙ্করাচার্য বলেন—“যদ্ অনিত্যং তদ্ মিথ্যা”—যা নিত্য নয়, তা মিথ্যা।
এই ধারণা থেকেই বেদান্তে বলা হয়—“জগৎ নিত্যমিথ্যা, ব্রহ্ম নিত্যসত্য।” জগৎ দেখা যায়, কিন্তু নিজের শক্তিতে টিকে থাকতে পারে না; এটি কেবল চেতনার প্রতিফলন। যেমন আয়নায় মুখ দেখা যায়, কিন্তু মুখের বাস্তবতা মুখেই থাকে—আয়নায় দেখা রূপ নিত্যমিথ্যা, কারণ এটি কখনও স্বতন্ত্র সত্য নয়।
অতএব, নিত্যমিথ্যা মানে এমন অস্তিত্ব, যা কখনও নিজের শক্তিতে টেকে না; যা কেবল ব্রহ্মচেতনার উপর নির্ভর করে প্রতীয়মান হয়; এবং জ্ঞানের আলোয় মিলিয়ে যায়। এই নিত্যমিথ্যাত্বই মায়ার প্রকৃতি—সে কখনও সম্পূর্ণ অসত্তা নয়, কিন্তু চিরকাল ব্রহ্মস্বরূপ সত্য থেকে পৃথক থেকেও কখনও সত্য হয় না।
অবিদ্যার প্রভাবে আত্মা (দ্রষ্টা) ও জগৎ (দৃশ্য) একে অপরের সঙ্গে মিশে যায়। তখন আমরা আত্মার গুণ—সত্তা, চেতনা, আনন্দ—জগৎ ও দেহের উপর আরোপ করি (“এই জগৎ সত্য”, “আমি জীবিত”, “আমি সুখী”)। আবার জড় দেহের গুণ—জন্ম, ক্ষয়, দুঃখ, ক্রিয়া—আত্মার উপর চাপিয়ে দিই (“আমি বুড়ো হচ্ছি”, “আমি অসুস্থ”, “আমি করেছি”, “আমি কষ্ট পাচ্ছি”)।
এই পারস্পরিক ভুল মিশ্রণই অধ্যাস। শঙ্কর তাঁর ব্রহ্মসূত্র ভাষ্যের উপোদ্ধাতে বলেন—“স্মৃত্যনুভয়োঃ সংসরগঃ অধ্যাসঃ”—অর্থাৎ স্মৃত ও অনুভূত বস্তুর (অতীত ও বর্তমানের) গুণাবলির পরস্পর মিশ্রণই অধ্যাস। (উপোদ্ধা—পূর্বকথা—যেখানে লেখক পাঠককে দার্শনিক প্রস্তুতি দেন, মূল আলোচনার ভূমি নির্মাণ করেন, এবং কীভাবে পরবর্তী তত্ত্বগুলি বোঝা উচিত, তা নির্দেশ করেন।)
যেমন দড়িকে সাপ বলে ধরা—এখানে দড়ির উপর সাপের রূপ আরোপিত হয়েছে। দড়ি স্থির, কিন্তু আমাদের মনে সঞ্চিত “সাপ” স্মৃতি তার উপর ভেসে উঠে। ফলে আমরা যেটা দেখি, সেটা সত্যিকারের দড়ি নয়, আবার সম্পূর্ণ কল্পনাও নয়—এ এক “অভ্রান্ত বিভ্রম”, এক প্রতিভাস।
তেমনি আত্মা ও দেহের সম্পর্কেও তাই ঘটে। আত্মা চিরজীব, কিন্তু দেহের মৃত্যুকে আমরা “আমার মৃত্যু” বলে মনে করি। আত্মা সুখস্বরূপ, কিন্তু দেহের ক্লান্তিকে “আমার কষ্ট” বলে ধারণা করি। আত্মা নিত্য নিস্ক্রিয়, তবু বলি “আমি কাজ করি”। এভাবেই দৃশ্যের গুণ দ্রষ্টার উপর, আর দ্রষ্টার গুণ দৃশ্যের উপর আরোপিত হয়।
এই আরোপই সমস্ত বন্ধনের মূল—এ থেকেই জন্ম নেয় “আমি-ভাব” (অহংকার) ও “আমার” ভাব (মমতা)। যখন জ্ঞান উদিত হয়, তখন এই আরোপণ ভেঙে যায়—তখন দেখা যায়, আত্মা কখনও দেহ নয়, কাজের কর্তা নয়, দুঃখী বা সুখী নয়; সে কেবল চিরসাক্ষী, চিরআলোক।
অহংকার ও মমতা—এই দুটি মানবচেতনার এমন সূক্ষ্ম গাঁথুনি, যা অবিদ্যার সবচেয়ে দৃঢ় প্রকাশ। এরা দু-জন যেন একে অপরের প্রতিচ্ছবি—একজন বলে “আমি”, আর অন্যজন বলে “আমার”—এই দুই মিলেই গড়ে ওঠে সংসারের সমগ্র অভিজ্ঞতা; জন্মায় বন্ধন, ভয়, আকাঙ্ক্ষা ও দুঃখ।
অহংকার (Ahaṅkāra) শব্দটি এসেছে “অহম্” (আমি) এবং “কার” (গঠন বা সৃষ্টি) থেকে। অর্থাৎ, যে-চেতনা “আমি” বলে নিজেকে সীমারেখায় আবদ্ধ করে ফেলে, সেটিই অহংকার। এটি চেতনার এক বিকৃতি, যেখানে শুদ্ধ আত্মা, যা সর্বব্যাপী ও অদ্বৈত, নিজেকে সীমাবদ্ধ সত্তা—দেহ, মন বা ব্যক্তিত্ব—হিসেবে ধরে ফেলে। যেমন আকাশ সীমাহীন, কিন্তু আমরা বলি “এ ঘরের আকাশ”, “ও নদীর ওপারের আকাশ”—তেমনি আত্মা অসীম, কিন্তু অবিদ্যার পর্দায় সে বলে, “আমি এই শরীর”, “আমি কর্তা”, “আমি ভোগী”।
বেদান্তে অহংকারকে সূক্ষ্ম শরীরের অন্তঃকরণের এক অংশ বলা হয়েছে—মন, বুদ্ধি, চিত্ত ও অহংকার—এই চার স্তরের মধ্যে অহংকার সেই কেন্দ্র, যেখানে “আমি”-বোধ জাগে। গীতা (৩.২৭) বলে—“অহংকারবিমূঢাত্মা কর্তাহমিতি মন্যতে”—অর্থাৎ অবিদ্যায় মোহিত মানুষ ভাবে “আমি-ই কর্তা”। বাস্তবে আত্মা কখনও কাজ করে না, কিন্তু অহংকার সেই নৈর্ব্যক্তিক চেতনার উপর কর্তা-ভাব আরোপ করে, ফলে বন্ধন জন্ম নেয়।
অহংকারই সমস্ত দ্বন্দ্বের মূল। এটি না থাকলে “আমি” ও “তুমি”, “আমার” ও “তোমার” বিভাজনই থাকত না। এই বিভাজনই জগতের অভিজ্ঞতার ভিত্তি—ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি সব অহংকারের কেন্দ্রেই ঘোরে।
বেদান্তে “অন্তঃকরণ” (অর্থাৎ অন্তরের যন্ত্র) বলতে বোঝানো হয় সেই সূক্ষ্ম মানসিক কাঠামো, যার মাধ্যমে আত্মা জগতের অভিজ্ঞতা লাভ করে। এটি চোখ-কান-নাক-জিহ্বা-ত্বকের মতো বাহ্য-ইন্দ্রিয় নয়; বরং ইন্দ্রিয় ও আত্মার মধ্যবর্তী এক সূক্ষ্ম স্তর—চেতনার অভ্যন্তরীণ যন্ত্র। এই অন্তঃকরণ চার ভাগে বিভক্ত—মন, বুদ্ধি, চিত্ত ও অহংকার—এদের প্রত্যেকটির কাজ আলাদা, কিন্তু পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত।
মন (Manas) হলো চিন্তা, সন্দেহ, ও ভাবনার কেন্দ্র। এটি জগৎ থেকে ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে আসা তথ্য গ্রহণ করে, বিকল্প বিচার করে—“এটা করব কি করব না?”, “এটা ভালো না খারাপ?”—এই দোলাচলের কাজ মন করে। তাই শাস্ত্রে মনকে বলা হয়েছে সংকল্প-বিকল্প-আত্মক—অর্থাৎ যেখানে সিদ্ধান্তের আগে ভাবনার দোলাচল ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাবে, “যাবো কি না”—এটাই মনের কাজ। কঠ উপনিষদে (১.৩.৩) বলা হয়েছে—“মনঃ প্রগৃহ্য”—অর্থাৎ মনই রথের লাগাম, যা ইন্দ্রিয়ের গতি নিয়ন্ত্রণ করে।
“সংকল্প-বিকল্প-আত্মক”, এই পদবন্ধটি বেদান্তে মনের প্রকৃতি বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এর অর্থ হলো—মন এমন এক সূক্ষ্ম অঙ্গ, যার স্বভাবই হলো সংকল্প ও বিকল্প করা, অর্থাৎ ইচ্ছা ও দ্বিধার দোলাচলে চলমান থাকা।
‘সংকল্প’ মানে ইচ্ছা বা মানসিক দৃঢ়তা—“আমি এটা করব”, “আমি ওটা পেতে চাই”, “আমার এই লক্ষ্য”—এই ভাব বা মানসিক প্রবণতাই সংকল্প। মন যখন কোনো কিছু অর্জনের দিকে প্রবণ হয়, তখন সে সংকল্প করে।
‘বিকল্প’ মানে সেই দোলাচল, যেখানে মন একের পর এক সম্ভাবনা নিয়ে ভাবে, তুলনা করে, সন্দেহ করে—“করব কি না”, “এটা ভালো না খারাপ”, “এ পথ ঠিক না অন্য পথ?”—এই দ্বিধা, চিন্তা ও অনিশ্চয়তার প্রবাহই বিকল্প।
‘আত্মক’ মানে যার প্রকৃত স্বরূপই, অর্থাৎ যার স্বভাবই এই দুই ক্রিয়ায় প্রকাশ পায়। তাই সংকল্প-বিকল্প-আত্মক মানে হলো—মন এমন এক চেতনা-অঙ্গ, যার স্বরূপই ইচ্ছা, সন্দেহ, তুলনা ও ভাবনার দোলাচল।